মনের শান্তি কিভাবে আসে? হতাশা, টেনশন, দুশ্চিন্তা, মনের অশান্তি দূর করার আমল

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মনের শান্তি কিভাবে আসে?

হতাশা, টেনশন, দুশ্চিন্তা, মনের অশান্তি দূর করার আমল



يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ

হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে উপদেশ, আর অন্তরের রোগের জন্য আরোগ্য, এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।সূরা ইউনুস (১০:৫৭)

ভুমিকা: আজ আমি অন্তরের রোগের কোরআনে কি চিকিৎসার কথা আছে, এবং অন্তরের শান্তি লাভ করার জন্য আমাদের কি কি করা প্রয়োজন? আজকাল মানুষের মনে এত অশান্তি কেন? মানুষ হতাশ কেন? মানুষের টেনশন দিন দিন বাড়ছে কেন? কেন আজকাল মানুষ সামান্য কারনে খুন খারাবিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে? এর কারন কি? এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? সে বিষয়ে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ

 

অনেক সময় মানুষের মন পাথরের চেয়েও কঠিন হয়ে যায়

যেমন আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ৭৪ নং আয়াতের মধ্যে এরশাদ করেন

ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ فَهِىَ كَٱلْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً ۚ

এরপরও তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল, যা পাথরের মতো, বরং তার চেয়েও কঠিন।

পাহাড়েরও আল্লাহর ভয় আছে

পাথরের পাহাড়েরও আল্লাহর ভয় আছে কিন্তু অনেক মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় নাই, তাই কোরআন এর আয়াত শুনেও অনেকের মন ঘামেনা, মন নরম হয়না, যেমন সুরা হাশরের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

لَوْ أَنزَلْنَا هَٰذَا ٱلْقُرْءَانَ عَلَىٰ جَبَلٍۢ لَّرَأَيْتَهُۥ خَـٰشِعًۭا مُّتَصَدِّعًۭا مِّنْ خَشْيَةِ ٱللَّهِ

যদি আমি এ কুরআনকে কোনো পর্বতের ওপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি অবশ্যই দেখতে সে পর্বত বিনীত হয়ে আল্লাহর ভয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে

 

উহুদ পাহাড় নবীকে ভালোবাসে

অনেক মানুষ পাথরের চেয়েও শক্ত মনের হিংস্র তাই তারা নবীকে মহব্বত করতে পারেনা, অথচ উহুদ পাহাড় নবীকে মহব্বত করে, বুখারীর বণনা হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত আনাস (রা) বয়ান করেন নবী করিম () উহুদ পাহাড়ের ব্যপারে বলেন উহুদ পাহাড় আমাকে মহব্বত করে আর আমিও উহুদ পাহাড়কে মহব্বত করি

অনেক পাথরও নবীকে সালাম দেয়

মুসলিম শরীফের হাদিস- হযরত জাবের বিন সামুরা (রা) বয়ান করেন নবী করিম () এরশাদ করেন আমি মক্কায় একটি পাথরকে চিনি যে নবুয়তের আগে আমাকে সালাম আরজ করত আমি আজো সে পাথরটিকে চিনি সুবহানাল্লাহ,

দেখুন পাথরও নবীকে সালাম দেয়,  পাথরের চেয়ে কঠিন অন্তরের অনেক লোক আছে যারা নবীকে সালাম দিতে গড়িমসি করে

হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়েমেনির সাক্ষি:

যারা হজ ও ওমরা করেন তারা যদি একটি পাথর যার নাম হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়েমেনিকে পরিপূণ সন্মান করে এই ২টি পাথর উক্ত হাজির পক্ষে সাক্ষি দিবে, পাথর ২টির মুখ হবে, চোখ হবে, আর সন্মানিত হাজিদের পক্ষে সুপারিশ করবে

#তাহলে বুঝা যায়, পাহাড়, পাথর এগুলিও আল্লাহর ভয় রাখে, নবীর প্রতি মহব্বত রাখে, কিন্তু মানুষের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে যারা পাথরের চেয়েও কঠিন হৃদয়ের তাই আল্লাহ বলেন- সুরা বাকারার ৭৪ নং আয়াতে

وَإِنَّ مِنَ ٱلْحِجَارَةِ لَمَا يَتَفَجَّرُ مِنْهُ ٱلْأَنْهَـٰرُ ۚ

পাথরের মধ্যেও কিছু আছে, যেখান থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়;

وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَشَّقَّقُ فَيَخْرُجُ مِنْهُ ٱلْمَآءُ ۚ

আবার কিছু এমন আছে, যা ফেটে যায়, তখন তা থেকে পানি নির্গত হয়;

وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ ٱللَّهِ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

আর কিছু পাথর এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে ভেঙে পড়ে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে মোটেই গাফিল নন

শক্ত মনকে নরম করতে কি করবেন?

আর এই কঠিন পাথরের মত শক্ত মনকে নরম করাই হল প্রথম কাজ, আর সে কাজটি করতে হলে কি করতে হবে? ওয়াজ শুনতে হবে, যেমন সুরা বাকারার মধ্যে আল্লাহ এরশাদ করে বলেন

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ

হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে ওয়াজ (উপদেশ), আর অন্তরের রোগের জন্য আরোগ্য, এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।সূরা ইউনুস (১০:৫৭)

সুত্র; একসময় আমাদের দেশে প্রচুর ওয়াজ নসিহত হত, যা শুনে মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হত, এখন ওয়াজ নসিহত আছে কিন্তু মানুষ ওয়াজ শুনে কান সুখের জন্য, আল্লাহ আয়াতে কোরআনকে ওয়াজ বলেছেন, যাতে আমাদের অন্তরের রোগের শেফা আছে আফসুস আজ আমরা সে কোরআনকে ওয়াজ হিসেবে পড়ি না, যদি আমরা প্রতিদিন কোরআনকে বুঝে বুঝে পড়তাম তাহলে তা আমাদের মনকে নরম করে দিত, আমাদের মনের সকল রোগ দুর করে দিত

মনের অসুখ মনের রোগ কি জানেন?

মনের রোগসমুহ হল অহংকার, হিংসা বিদ্বেষ, লোভ, দুনিয়ার মহব্বত, মর্যাদা লাভের লোভ, খ্যতি সুনাম পদবীর লোভ এগুলিই হল আমাদের মনের বড় বড় রোগ, যে রোগ গুলি কোরআন আমাদের মন থেকে সমুলে উৎপাঠন করতে পারে

  

আজ মানুষের মনে এত অশান্তির কারণ কি?

আজকাল মানুষের টাকা পয়সার অভাব নাই, খাদ্য পানীয়ের অভাব নাই, ঘর বাড়ীর অভাব নাই, কিন্তু তারপর সকলের মনেই যেন শান্তি নাই, এক প্রকারের অশান্তি, বেসকুন, বে চাইন, হতাশা। তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তুমি হতাশ কেন? তোমার কিসের অভাব? সে বলতে পারবেনা, তার কিসের অভাব। আপনার এমন অনেক কোটিপতিকে দেখবেন যে এয়ারকন্ডিশ রুমে থাকে, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা আছে, খাদ্যের অভাব নাই, বাড়ী গাড়ীর অভাব নাই, কিন্তু তবুও কি এক অজানা টেনশনে রাতে ঘুমাতে পারেনা, ঘুমের ঔষধ খেয়েও ঘুমাতে পারেনা।

 

১) একমাত্র কারন হল আমাদের গুনাহ, গুনাহের কারনে আল্লাহ আমাদের মন থেকে শান্তি কেড়ে নিয়েছেন,

ظَهَرَ ٱلْفَسَادُ فِى ٱلْبَرِّ وَٱلْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِى ٱلنَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ ٱلَّذِى عَمِلُوا۟ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

স্থলে ও জলে বিপর্যয় প্রকাশ পেয়েছে মানুষের কৃতকর্মের দরুন, যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে (তওবা করে) সুরা রূম -৪১।

 

২) ২য় কারন হল আল্লাহ আমাদেরকে যে নেয়ামত দিয়েছেন সে নেয়ামতের শোকর আদায় না করা।

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِى لَشَدِيدٌ

তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা দিয়েছেন: তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে অবশ্যই আমি তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর

 

সুত্র: একটা সুত্র মনে রাখবেন অন্যের সুখ ছিনিয়ে যদি অন্যকে কাঁদিয়ে যদি আপনি বালাখানা তৈরী করেন সে বালাখানায় আপনি সুখ পাবেন না শান্তি পাবেন না। আর মানুষের মনে শান্তি পৌঁছাতে গিয়ে যদি আপনি নিজের বালাখানা ছেড়ে কুড়ে ঘরেও চলে আসেন সেখানেও আপনি সুখ পাবেন শান্তি পাবেন।   

 

আবু দুজানার একটাই আমল:

হযরত আবু দুজানা একজন সাহাবী তিনি এরশাদ করেন- হে আমার ভায়েরা তোমরা মনযোগ দিয়ে শুন, আমার কাছে বখশিশের একমাত্র আমল হল অথচ তিনি বদর উহুদ হুদায়বিয়া সহ অসংখ্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন, যা তার জন্য জান্নাত লাভের জন্য বখশিশের জন্য যথেষ্ট কিন্তু তিনি বলছেন আমার কাছে রবের ক্ষমা পাওয়ার মাত্র একটাই আমল আছে,  আর তা হল আমি আজ পযন্ত আমার হাত মুখ দিয়ে কাউকে কষ্ট পৌঁছাই নাই আর আমার অন্তরে কারো প্রতি কোন বিদ্বেষ নাই

হাদিসের শিক্ষা: আখেরাতে মুক্তির জন্য ২টি কাজ আমাদেরকে করতে হবে

) হাত মুখে কাউকে কষ্ট দেয়া যাবেনা

) কারো প্রতি মনের মধ্যে বিদ্বেষ ভাব পোষন করা যাবেনা

 

বতমানে এই ২টি শিক্ষা কেন প্রয়োজন?

দুনিয়াতে এখন সাহাবীর এই শিক্ষা খুবই প্রয়োজন, কারন এখন হাতে মুখে আমরা মানুষকে কষ্ট দিতে একটুও চিন্তা করিনা সামান্য কারনে মনের মধ্যে বিদ্বেষ গেঁথে রাখি আর তার কারনে শত্রুতামি, বিশৃংখলা, অশান্তি, মারামারি, খুনাখুনি পযন্ত সৃষ্টিহয়

 

আমাদের সপ্তাহের ঘটনা: সামান্য কারনে ৭ম শ্রেণীর ছাত্র তাদের সহপাঠীকে মেরে ফেলল, এসবই হল বিদ্বেষ এর কারনে একজন খতিবকে এলাকার লোকজন অপমান অপদস্থ করে হত্যা করেছে যার জন্য গোটা বাংলাদেশের মানুষ একদিকে আর অপরাধিরা এতই শক্তিশালী যে তাদেরকে প্রাশাসন আজো গ্রেফতার করতে পারলনা।  

হত্যাকারী অপরাধিদের পক্ষে যাব?

আল্লাহ সুরা নিসার ১০৭ নং আয়াতে বলেন:

"وَلَا تُجَادِلْ عَنِ ٱلَّذِينَ يَخْتَانُونَ أَنفُسَهُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ خَوَّانًۭا أَثِيمًۭا"

তোমরা তাদের পক্ষ নিওনা, যারা (মিথ্যা তথ্য দিয়ে) নিজেদের সাথে প্রতারণা করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসঘাতক পাপীদের পছন্দ করেন না।

মুসলমান মুমিন কাকে বলে?

আমার নবী এরশাদ করেবুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিস

المُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ

সেই ব্যক্তি মুসলিম, যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।

মুমিনের সংজ্ঞায় নাসাঈ শরীফের ৫০১০ নং হাদিস নবীজি এরশাদ করেন

عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «الْمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ»

মুমিন সেই ব্যক্তি, যার কাছ থেকে মানুষ তাদের জান ও মাল সম্পর্কে নিরাপদ মনে করে।

তাহলে আমার হাত জবান থেকে যদি আরেকজন মুসলমান নিরাপদ থাকে. আমি যদি আরেকজন মুসলমানকে হাতে জবান দিয়ে কষ্ট না দিই তবেই আমি মুসলমান হতে পারব,

আর মানুষ যদি আমার পক্ষ থেকে জান মালের নিরাপত্তা পায়, আমার কাছে যদি মানুষ নিজের জান মালকে নিরাপদ মনে করে তাহলে আমি মুমিন হতে পারব

 

এখন আমরা সামান্য মতের অমিল হলেই তাকে অপমান অপদস্থ মারধর, করা মিথ্যা অপবাদ দেয়া, সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে এক সেকেন্ডও চিন্তা করিনা 

নবীজির আজিমুশশান সুন্নত

তিরমজির ২৬৭৮ নং হাদিস একদিন নবীজি  হযরত আনাসকে বলেন-

"‏ يَا بُنَىَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تُصْبِحَ وَتُمْسِيَ لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لأَحَدٍ فَافْعَلْ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ لِي ‏"‏ يَا بُنَىَّ وَذَلِكَ مِنْ سُنَّتِي وَمَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي ‏.‏ وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ ‏"

 

হে বৎস! তুমি যদি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে কাটাতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ নেই, তাহলে তাই কর। তিনি আমাকে পুনরায় বললেনঃ হে বৎস! এটা হল আমার আজিমুশশান সুন্নাত। আর যে ব্যক্তি আমার আজিমুশশান সুন্নাতকে জীবিত করল, সে আমাকেই ভালবাসল, আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসল সে তো জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে।

এটাকে আজিজুমশান সুন্নত কেন বললেন?

সকাল সন্ধ্যা কারো প্রতি বিদ্বেষ থাকলে তা দুর করা, এই সুন্নতের উপর আমলকারী মানুষের খুবই অভাব, কারন দাঁড়ি রাখা সহজ, বিয়ে করা সহজ, তাহাজ্জুদ পড়া সহজ, গোপনে দান করা সহজ, কিন্তু মনকে সাফ করা, মানুষের প্রতি রাগ গোস্বা হিংসা বিদ্বেষ থাকলে তা দুর করা কঠিন, তাই নবী করিম (দ) এটাকে আজিমুশশান সুন্নত বলেছেন এবং এর পুরস্কারও জান্নাতের সবচেয়ে দামী স্থানকে নির্ধারণ করেছেন।

এই সুন্নতের লাভ কি ?

এই বিদ্বেষ থেকে যদি মনকে সাফ করতে পারেন তাহলে আপনি আরো হাজারো গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবেন

* গিবত থেকে বাঁচতে পারবেন,

* মিথ্যা অপবাদ দেয়া থেকে বাঁচতে পারবেন

* মিথ্যা কথা বলা থেকে বাঁচতে পারবেন

* টেনশন থেকে বাঁচতে পারবেন

* মানুষকে কষ্ট দেয়া থেকে বাঁচতে পারবেন

১টি মাস সকলে এই সুন্নতের উপর আমল করে দেখুন, দেখবেন আপনার মনের মধ্যে আল্লাহ কতটা শান্তি দান করেন।

ওলামায়ে কেরাম বলেন ৪টি কাজ করলে মনের প্রশান্তি আসে

) আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর যে সব জিম্মাদারী দিয়েছেন তা পালন করা, এবাদাতের পাশাপাশি আত্মিয় স্বজন, প্রতিবেশীর সাথে সকল মুসলমানের সাথে কল্যাণমুলক আচরণ করা

) জীবনে কারো কোন কথাকে নিজের উপর চাপিয়ে না নেয়া, যদি আপনি চিন্তা করে সে আমাকে এত বড় পাথর আমাকে মারল, আপন যিদি সে পাথরের নিচে নিজেকে নিজে নিয়ে আসেন আর টেনশন করতে থাকেন, তাহলে আপনি তো সে পাথরের নিচে দেবে যাবেন!, আপনি ভাবুন পাথর আমাকে মেরেছে আমি সামান্য সরে গেলাম পাথর জমিনে পড়লে আমি সে পাথরের উপর দাঁড়াব আর আরো উপরে উঠব, কিভাবে চড়বেন? বরদাশত করে ধৈর্য্য ধারণ করে

) পুরা কায়েনাতও যদি আপনার দুশমন হয়ে যায়, তবুও আপনি আপনার সকলের মঙ্গল কামনা করবেন কল্যাণ কামনা করবেন

) জিকির করাআর আল্লাহ বলছেন

الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে প্রশান্ত হয়; শুনে রাখো, আল্লাহর জিকিরেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।

এই ৪টি কাজ করতে পারেন তাহলে মৃত্যু পযন্ত আপনার মনে শান্তি বজায় থাকবে 

#নামাজও আল্লাহর জিকির, কোরআন তেলাওয়াতও আল্লাহর জিকির, আল্লাহর হকুম মেনে চলাও আল্লাহর জিকির

তখন সারা রাত জেগে কোরআন কেমনে পড়ত? মোবাইল বনাম কোরআন

আমরা বিভিন্ন বুযুগদের জীবনী যখন পড়ি তখন দেখি তারা সারা রাত নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে, তখন তা বুঝে আসত না, এখন যখন আমাদের নওযোয়ানদেরকে মোবাইলে ডুবে থাকতে থাকতে সারা রাত পার করে দিতে দেখি, তখন বুঝে আসছে, এ যুগের যুবকেরা মোবাইলকে তাদের দিল দিয়ে মন দিয়ে দেখে তাই কোন দিকে সময় চলে যায় তাদের খবর থাকেনা, আর আগের যুগের বুযুগরা কোরআন যখন পড়ত তা দিল দিয়ে মন দিয়ে পড়ত, তাতে তারা ডুবে যেত, তাই তাদেরও রাত কোন দিকে চলে যেত খবর থাকতনা

গুরুত্বপূর্ণ : আজ আমরা জিকির থেকে গাফেল আল্লাহ আমাদেরকে এমন সব মানসিক রোগ ঢেলে দিয়েছেন আমাদের মেজাজ চড়া করে দিয়েছেন, আমাদের ভিতর রোগ গোস্বা বেড়ে গেছে, হিংসা বিদ্বেষ বেড়ে গেছে, প্রতিশোধ পরায়নতা বেড়ে গেছে, মারামারি খুনাখুমি বেড়ে গেছে, লোভ বেড়ে গেছে তাই প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও হচ্ছে খুন মারামারা, ঝগড়া, বিবাদ বিশৃংখলা

আসুন আমরা কোরআন থেকে ওয়াজ বা উপদেশ গ্রহণ করি তাহলেই আমাদের মনের সকল রোগ গুলি থেকে আমরা শেফা লাভ করতে পারব- আল্লাহ বলেন

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ

হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে উপদেশ, আর অন্তরের রোগের জন্য আরোগ্য, এবং মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।সূরা ইউনুস (১০:৫৭)

মানুষ মসজিদে মিনিট দেরী হলে বিরক্ত হয় কেন?

একজন মুফতিকে প্রশ্ন করা হল হুজুর মানুষ ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়ে সেখানে সারাদিন বসে থাকে, কিন্তু মসজিদে এসে মিনিট দেরী হলেই এদিক সেদিক করতে থাকে বিরক্ত হয় কারন কি? তখন মুফতি সাহেব জবাব দিলেন, আল্লাহ তায়ালা ২টি রাস্তা তৈরী করেছেন একটি হল জাহান্নামের যা খুবই সুন্দর তবে তার মনজিল খুবই ভয়ংকর, আর অপরটি হল জান্নাতের যা খুবই কাটা ওয়ালা কিন্তু তার মনজিল খুবই মজাদার

বুখারী শরীফের 6487 নং হাদিসের বণনা

"حُفَّتِ الجَنَّةُ بِالمَكَارِهِ، وَحُفَّتِ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ"

জান্নাতের পথ কণ্টকাকীর্ণ (কষ্টসাধ্য) আর জাহান্নামের পথ মসৃণ ও আরামদায়ক মনে হয়

যেহেতু জান্নাতের রাস্তা জান্নাতের মজলিশ কাটাযুক্ত তাই সেখানে বিরক্তি আসবেই আর সে বিরক্তিকে কাটিয়ে যে ধৈর্য্য ধারণ করতে পারবেই সেই কামিয়াব

গুনাহের মধ্যে চুলকানির মজা আছে

মুফতি সাহেব গুনাহের উদাহারণ দিয়ে গিয়ে বলেন- গুনাহের মধ্যে খুজলি ওয়ালা, চুলকানি ওয়ালা, এলাজি ওয়ালা শান্তি আছে, যতক্ষন চুলকাবেন মনের মধ্যে শান্তি লাগবে, কিন্তু চুলকানি বন্ধ করলে দেখবেন সেখানে ঘা হয়ে গেছে, জ্বালা পুরা বেড়ে গেছে, গুনাহ থেকে মজা লাভ কারীর অবস্থাও তেমন, যতক্ষণ গুনাহ করতে থাকবে ততক্ষণ পযন্ত ভালো লাগবে, কিন্তু যখন বাধ্যক্য এসে যাবে, এই গুনাহের ঘা আপনাকে পেরেশান করবে

সে জন্য আল্লাহ বলেন-

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ

তোমাদের যেকোনো বিপদ যা তোমাদের উপর আপতিত হয়, তা তোমাদের নিজেদের হাতের কামাইয়ের কারণে, (সুরা শুরা ৩০)

সুরা দোহাতে হতাশা থেকে বাঁচার চিকিৎসা আল্লাহ দিয়েছেন

নবীজির কাছে ৪০দিন ওহি আসা বন্ধ ছিল এবং নবী মুহাম্মদ (সা)-এর হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কাফিররা এ অবস্থাকে নিয়ে উপহাস করত এবং বলত, “মুহাম্মদের রব তাকে ছেড়ে দিয়েছেন।মুহাম্মদকে যে শয়তান এসে শিক্ষা দিত সে তাকে ছেড়ে দিয়েছে, ইত্যাদি এই সময় নবীজি (সা.) খুব ব্যথিত হন, তাঁর মনে আশঙ্কা হয়আল্লাহ কি সত্যিই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছেন?

তখনই আল্লাহ এই সূরাটি নাজিল করেন নবীজির সান্তনা ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য এবং কিছু আমল এই সুরাতে আছে যা দ্বারা আমাদেরও কোন সময় ডিপ্রেশন হলে, হতাশা আসলে আমরা তা থেকে মুক্ত হতে পারি।

১) সুরাতে প্রথমে আল্লাহ সান্তনার বাক্য বলে নবীজিকে সান্তনা দিয়েছেন

1. وَالضُّحَىٰ
শপথ সকালবেলার,

2. وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَىٰ
আর শপথ রাতের, যখন তা নীরব ও শান্ত হয়।

3. مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَىٰ
আপনার রব আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং রাগও করেননি।

4. وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْأُولَىٰ
নিশ্চয়ই পরকাল আপনার জন্য ইহকাল অপেক্ষা উত্তম।

5. وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰ
আর শীঘ্রই আপনার রব আপনাকে এত কিছু দিবেন যে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।

২) ২য় পযায়ে আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবীজিকে পূর্বের অবস্থা মনে করিয়ে দিয়েছেন, যাতে শোকর আদায় করেন,

6. أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَىٰ
তিনি কি আপনাকে এতিম পাননি? অতঃপর আশ্রয় দেননি?

7. وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ
আর তিনি আপনাকে স্বীয় রবের প্রেমে আত্মহারা পেয়েছেন, অতঃপর নিজের দিকে পথ প্রদর্শন করেছেন।

8. وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَىٰ
আর আপনাকে অভাবগ্রস্ত পেয়েছেন, অতঃপর অভাব মোচন করেছেন।

এ ৩টি আয়াত দ্বারা প্রিয় নবীজিকে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের অবস্থা মনে করিয়ে দিয়েছেন, আমাদেরও উচিত বতমানে যা আছি তার থেকে যদি আমাদের পূর্বের অবস্থা খারাপ থাকত তখন পূর্বের হাকিকতের কথাগুলি মাঝে মাঝে চিন্তা করা, আগে আমি কি ছিলাম এখন আল্লাহ আমাকে কি করেছেন। তখন অটোমেটিক শোকর আসবে আর ডিপ্রেশন দুর হয়ে যাবে।

# আগে ভাড়া ঘরে থাকতেন এখন নিজের ঘর হয়েছে, তা ভেবে শোকর করুন,

# অনেকের সন্তান নাই আল্লাহ আপনাকে সন্তান দিয়েছেন তা ভেবে শোকর করুন,

# অনেকের দুই বেলা খাবার নাই আপনি দুই বেলা নয় বরং ৫ বেলা খেতে পারছেন সে জন্য শোকর করুন,

# অনেকে হাসপাতালে পঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে আপনাকে আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন তা ভেবে শোকর করুন,

৩) এর পর ৩য় অংশে হতাশা ও দুশ্চিন্তা দুর করার জন্য আল্লাহ ৩টি আমলের কথা বলেছেন যেমন

9. فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ
অতএব, এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না।

10. وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ
আর ভিক্ষুককে ধমক দিবেন না।

11. وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ
আর আপনার প্রভুর নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।

সুতরাং সুরা দোহার মাধ্যমে আমাদের জন্য শিক্ষা হল যখনই মনের মধ্যে হতাশা আসবে, দুশ্চিন্তা আসবে তখন আমরা আমাদের পূর্বের অবস্থার সাথে বতমান অবস্থাকে কমপেয়ার করব, এটা এমনও হতে পারে আমি যখন দুনিয়াতে এসেছিলাম তখন আমার ১টি কাপড়ও ছিলনা, আমি নিজে চলতে পারতাম না, আল্লাহ আমাকে চলার শক্তি দিয়েছেন, এসব চিন্তা করতে হবে আর এতিমের প্রতি দয়া করতে হবে, ভিক্ষুকের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে আর আল্লাহর নেয়ামতের শোকর আদায় করতে হবে, তাহলে ইনশা আল্লাহ সকল ডিপ্রেশন দূর হয়ে যাবে।

ভিক্ষুকের হক আছে: ভিক্ষা করা ইসলাম সমথন করেনা, কিন্তু তারপরও যদি কেহ ভিক্ষা করে তাদেরকে ধমক দেয়া যাবেনা, হাদিস শরীফে আছে

«السَّائِلُ حَقٌّ، وَإِنْ جَاءَ عَلَى فَرَسٍ»

ভিক্ষুকের হক রয়েছেeven যদি সে ঘোড়ায় চড়ে আসে।

আমরা ভিক্ষককে ধমক দিয়ে বলি তোমার হাত পা সব আছে কাজ করে খেতে পারোনা, এভাবে ধমক দিয়ে থাকি, অনেক সময় মসজিদে মানুষ ভিক্ষা করে, তাদের উচিত মসজিদের ইমামকে বলা ইমাম সাহেব বলে দিবেন, নামাজের সালাম ফিরানোর পর নিজে দাঁড়িয়ে মসজিদে ভিক্ষা না চেয়ে মসজিদের ইমামকে বলবেন ইমাম সাহেব মুসল্লীদেরকে বলে দিবেন।

এতিমের সাথে জান্নাতে নবীর সম্পর্ক: যারা এতিমদের অভিভাকত্ব করেন তাদের ব্যপারে নবীজি ঘোষনা করেন

আমি এবং এতিমের অভিভাবক (বা লালনপালনকারী) জান্নাতে এভাবে থাকবএ কথা বলে তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যম আঙ্গুল দেখিয়ে সামান্য ফাঁক করে দেখালেন। সহীহ বুখারী হাদীস নম্বর: ৫৩০৪

সবশেষে ভয়, দুশ্চিন্তা, হতাশা, টেনশন থেকে মুক্তির সবচেয়ে দামী হাদিসটি বলে শেষ করব

তিরমিজি শরীফের ২৫১৬ নং হাদিস

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كُنْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَقَالَ ‏ "‏ يَا غُلاَمُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ্ তাআলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তাআলা তোমাকে রক্ষা করবেন।

احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ

তুমি আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ্ তাআলাকে তুমি কাছে পাবে।

إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ

তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তাআলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ্ তাআলার নিকটেই কর।

وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ

আর জেনে রাখো, যদি সকল উন্মাতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্যে লিখে রেখেছেন।

وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ ‏"‏ ‏

 অপরদিকে যদি সকল ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ্ তাআলা তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।

আল্লাহকে বিচার দিলেও আল্লাহর সাহায্য আসেনা কেন?

আর আল্লাহর সাহায্য তখনই নেমে আসবে যখন আপনি সবকিছুতে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিবেন। 

احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ

তুমি আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ্ তাআলাকে তুমি কাছে পাবে।

আজকের বক্তব্যের মুল পয়েন্টগুলি হল

)   অন্তরের রোগের আরোগ্যের জন্য আমাদেরকে কোরআন থেকে ওয়াজ বা উপদেশ গ্রহণ করতে হবে (সুরা ইউনুস ৫৭)

) আমাদের মনের বড় বড় রোগসমুহ হল, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, মর্যাদা, খ্যাতি, সুনাম, পদবীর লোভ যার চিকিৎসা কোরআন এর মধ্যে আছে তাই আমাদেরকে সব সময় বুঝে বুঝে কোরআন পড়তে হবে।

) আজকাল মানুষের মনে বেশী অশান্তির কারন হল গুনাহ গুনাহ থেকে তওবা করে ফিরে আসলেই আমাদের মনের অশান্তি আল্লাহ দুর করে দিবেন (সুরা রূম ৪১)

) মনের অশান্তির আরেকটি কারন হল নেয়ামতের নাশুকরী, এই নাশুকরির কারনে শাস্তি স্বরুপ আল্লাহ আমাদের মনে হতাশা, দুশ্চিন্তা, টেনশন ঢেলে দিয়েছেন

) হাদিসের ভাষায় মুসলমান এর সজ্ঞা হল যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ সেই মুসলমান, আমরা যারা মুসলমান দাবী করি আমাদের হাত ও মুখ দ্বারা যেন অন্য কোন মুসলমান কষ্ট না পায় সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে

) নবীজি বলেন যে সকাল বিকাল আমার আজিমুশশান সুন্নত  মন থেকে হিংসা বিদ্বেষ পরিস্কার করে মনকে সাফ করে সে আমার সঙ্গে জান্নাতে একসাথে থাকতে পারবে (তিরমিজি ২৬৭৮)

) মনের অশান্তি দুর করার জন্য মনকে শান্তি দেয়ার জন্য সদা আল্লাহর জিকির করতে হবে, নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির তসবিহ, সৎ উপদেশ এসব কাজ করতে হবে

) হতাশা থেকে বাঁচার জন্য সুরা দোহা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, নিজের অবস্থা আগে কেমন ছিল এখন কেমন আছে তা তুলনা করে মনকে শান্তনা দিতে হবে, এতিমকে সাহায্য করা, ভিক্ষুককে সাহায্য করা, ও নেয়ামতের শোকর করতে হবে।

) সদা আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ রেখে কাজ করতে হবে, যে কোন কাজ করার আগে চিন্তা করতে হবে এ কাজে আমার আল্লাহ কি খুশি হবেন? নাকি নারাজ হবেন? তারপর দুনিয়ার সকলেও যদি আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তখন আপনি আল্লাহকে আপনার কাছে পাবেন। সুতরাং আপনার কোন ভয় নাই

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

তোমরা দুর্বল হয়ো না, হতাশ হয়ো না; যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরাই শ্রেষ্ঠ ও বিজয়ী হবে (সুরা আল ইমরান ১৩৯)

 

দুশ্চিন্তা, হতাশা, ঋণের ভার ও মানবিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতেন আমরাও সব সময় এই দোয়াটি পড়ব

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

বাংলা অনুবাদ:

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই

  • চিন্তা ও দুঃখ থেকে,
  • অক্ষমতা ও অলসতা থেকে,
  • কাপুরুষতা ও কৃপণতা থেকে,
  • ঋণের ভার ও মানুষের অত্যাচার থেকে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.