সাবধান! ৭টি কাজ করলে আমলনামায় কোনো আমল অবশিষ্ট থাকবে না
সাবধান! ৭টি কাজ করলে আমলনামায় কোনো আমল অবশিষ্ট থাকবে না
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদিসে সাতটি ভয়ংকর অপরাধের কথা বলেছেন, যা মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। এগুলো জানা এবং এসব থেকে বেঁচে থাকা ঈমানদারের জন্য জরুরি। আসুন আমরা এই সাতটি ধ্বংসাত্মক অপরাধ চিনে নিই এবং নিজেদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করি, ইনশাআল্লাহ।
১. আল্লাহর সাথে শিরক করা
শিরক হলো আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা।
উদাহরণস্বরূপ: ৩০টি রোজা রেখে ঈদের দিনে পিতার কবর জিয়ারত করতে গেলেন — এটি ভালো কাজ। তবে কবর জিয়ারতের সময়, আশেপাশে কেউ না দেখে কবরের সামনে সেজদা করলেন, তাহলে এটি শিরক হয়ে যাবে। মানুষ না দেখলেও, মহান আল্লাহ সবকিছু দেখেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
"আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে — যদি আপনি শিরক করেন, তবে অবশ্যই আপনার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।"
(সূরা যুমার, আয়াত ৬৫)
শিরক করলে কোনো আমল অবশিষ্ট থাকবে না — এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলও না! তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
২. জাদু করা
জাদু করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।
অনেক সময় দেখা যায়, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা হিংসার কারণে কেউ অন্যের উপর জাদু করে তার জীবন বরবাদ করে দেয়। মনে রাখবেন, আল্লাহ যার জন্য যাকে নির্ধারণ করেছেন, তাকেই তিনি দেন। জাদুর মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা ধ্বংসের পথ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
"যে ঘরে সূরা বাকারার তিলাওয়াত করা হয়, সেখানে জাদুকর বা গণক কিছুই করতে পারে না।"
রক্ষা পাওয়ার আমল:
প্রতিদিন ফজরের পরে ৩ বার:
-
সূরা ইখলাস (কুল হু আল্লাহু আহাদ)
-
সূরা ফালাক
-
সূরা নাস
এভাবে প্রতিদিন সুরক্ষার আমল করুন।
৩. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
"যদি কেউ একটি চুরুই পাখিকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করে, কিয়ামতের দিনে সে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে।"
কাজেই, মানুষ হত্যা তো আরো বড় অপরাধ। দুনিয়া ও আখিরাত — দুই জগতে ধ্বংসের কারণ।
৪. সুদ খাওয়া
সুদভিত্তিক লেনদেন ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
সুদ খেলে দুনিয়া বরবাদ হয়, আখিরাতও বরবাদ হয়।
আল্লাহ আমাদেরকে সুদের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
(বিশদ জানতে সুদের ওপর আলোচনা করা দীর্ঘ বয়ান শুনুন।)
৫. এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
"যারা এতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের পেটে আগুন ভর্তি করে।"
(সূরা নিসা, আয়াত ১০)
এতিমের সম্পদ হক্কের সাথে রক্ষা করা আমাদের ঈমানের দাবি।
৬. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
জিহাদ মানে সন্ত্রাস নয়; বরং জিহাদ হলো সত্যের জন্য সংগ্রাম করা ও অন্যায় দূর করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
"যে ব্যক্তি জিহাদ করেনি এবং জিহাদের সংকল্পও করেনি, সে মুনাফিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে।"
জিহাদের উদ্দেশ্য রাখতে হবে, যদিও বাস্তবে সুযোগ না আসে।
৭. সতীসাধী মুমিন নারীর উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া
মুমিন নারীদের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া মহাপাপ।
কারো বিয়েতে ঈর্ষাবশত গুজব ছড়ানো, সন্দেহের বশে কথা বলা — এগুলো মারাত্মক গুনাহ। আল্লাহ তাআলা এর কঠিন শাস্তি ঘোষণা করেছেন।
শেষ কথা
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এই সাতটি অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিজ্ঞা করুন। আমলনামাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে, এগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
বলুন:
"ইনশাআল্লাহ! আমরা এই সাতটি অপরাধ থেকে নিজেদের রক্ষা করবো এবং অন্যকেও রক্ষা করার চেষ্টা করবো।"
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই