আল্লাহ গুনাহগারের দোয়া কেন শুনেন? আল্লাহ কার দোয়া বেশী শুনেন
আল্লাহ গুনাহগারের দোয়া কেন শুনেন? আল্লাহ কার
দোয়া বেশী শুনেন
আল্লাহ গুনাহগারের দোয়া কেন কবুল করেন, আল্লাহ কি করলে আমাদের দোয়া কবুল করবেন, আমাদের নবী নিজের আওলাদ ও পরিবারের জন্য কেন দারিদ্রতার দোয়া করেছেন? আমরা কি আমল করলে আল্লাহ আমাদের মনের আশা পুরন করবেন, আমাদের ভাগ্য পরিবতন করে দিবেন সে বিষয়ে আজ একটি চমৎকার কোরআনী আমল আপনাদের সাথে শেয়ার করব- আশা করি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন।
আমরা বলি আমি
গুনাহগার আল্লাহ কি আমার দোয়া কবুল করবেন? অথচ আল্লাহ এরশাদ করেন
أَمَّنْ يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوۤءَ
কষ্টে-দুঃখে পতিত অসহায় যখন তাঁকে
ডাকে, তিনি কি তার দোয়ায় সাড়া দেন,
আল্লাহ
তায়ালা দোয়া কবুল হওয়ার জন্য ঈমানের শর্তও লাগান নি, তবে মুমিন কাফের নারী পুরুষ
সকলের জন্য একটি শর্ত আছে তা হল- চোখের পানি ফেলতে হবে, আবার এমনটি নয় যে জায়নামাজ
বিছিয়ে তাতে বসে দুই চোখের পানি ফেললেন আর জায়নামাজের নিচে টাকা পয়সা এসে জমা হয়ে
যাবে, চাইতে হবে। হাদিস শরীফে আছে – আল্লাহ তায়ালা বলেন (কাম তাতাজাইয়্যানু লিন নাস? ) যখন
তোমরা মানুষের কাছে যাও কতটা প্রস্তুতি গ্রহণ কর, সাজগোছ কর? কতটুকু মেকাপ কর?
(ফাহাল তাতাজাইয়্যানু লি আজলি?) কখনো কখনো আমার জন্যও প্রস্তুতি গ্রহণ কর, আমার
জন্যও মেকাপ কর। আর আল্লাহর জন্য প্রস্তুতি হল মেকাপ হল মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ,
মুহাম্মদি মেকাপ গ্রহণ কর তাহলে আল্লাহ তোমার দিকে মহব্বতের দৃষ্টিতে তাকাবে। আমার নবীকে আল্লাহ
এতই ভালোবাসেন যে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নবীর প্রাণের কসম খেয়েছেন, আমার নবী
নবুয়তের পর মাত্র ২৩ বছর বলেছেন আল্লাহ সে নবীর সে বলার কসাম খেয়েছেন, অথচ নুহ (আ)
৯৫০ বছর বলেছেন আল্লাহ নুহের বলার কসাম করেননি। রব্বে করিম কোন নবীর রাসুল হওয়ার
কসম উঠান নাই, তেমনি ভাবে কোন আসমানি কিতাবের কসম উঠাননি, তবে আল্লাহ তার প্রিয়
নবী মুহাম্মদ (দ) এর কিতাবের কসম খেয়েছেন (এয়াসিন ওয়াল কুরআনিল হাকিম) তেমনি ভাবে
কোন নবীর শহরের কসম খান নি, আমাদের নবীর শহরের কসম খেয়েছেন, (লা উকসিমু বিহাজাল
বালাদ ওয়াআনতা হিল্লুন বিহাজাল বালাদ) যে নবীর প্রতিটি বিষয়ের ব্যপারে আল্লাহ কসম
খাচ্ছেন সে নবীকে কি জানার জন্য কখনো চেষ্টা করেছেন? অথচ এখন নবীজির জীবনী জানা
অনেক সহজ। হাতে মোবাইল আছে সে মোবাইলের মাধ্যমে জানা সহজ হয়ে গেছে।
একবার
জান্নাতি নারীদের সরদার হযরত ফাতেমা (রা) অসুস্থ ছিলেন, নবীজি (দ) যখন ফাতেমার
অসুস্থতার কথা শুনলেন তাকে দেখতে গেলেন, নবীজির সাথে একজন আরব সরদার ইমরান বিন
হোসেন ছিলেন, নবীজি বাহির থেকে আওয়াজ দিলেন বেটি আমি কি ঘরের ভিতর আসব? আমার সাথে
ইমরানও আছে, তখন হযরত ফাতেমা জবাব দিলেন আব্বাজান আমার কাছে বড় কোন চাদর নাই যে যা
দিয়ে আমি পর্দা করতে পারব। অথচ তিনি হলেন জান্নাতির নারীদের সরদার, তিনি হলেন
মুহাম্মদ মুস্তফার কলিজার টুকরা। তখন হুজুর (দ) নিজের কাঁধে থাকা চাদর খানি ভিতরে
হাত বাড়িয়ে দিলেন, আর ফাতেমা সে চাদর দিয়ে নিজেকে ঢাকলেন, আর হুজুর (দ) ভিতরে
প্রবেশ করলেন আর শারিরিক অবস্থার খবরাখবর নিলেন, তখন ফাতেমা কান্না জড়িত কন্ঠে
বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ শারিরিক অসুস্থতার সাথে সাথে ক্ষুধার জ্বালাও আছে, কিন্তু
ঘরে খাবার মত কিছু নাই, তখন আমাদের নবীর দু চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পরল, নবীজি আদরের
কন্যাকে সান্তনা দিয়ে বলেন (হাব্বিনি আলাইকে এয়া বুনায়্যাতি) হে আমার প্রিয় কন্যা,
দুঃখ নিওনা (ওয়াল্লাজি বাআছা আবাকে বিল হক – মা জুকতু মিন ছালাছাতে আইয়্যামিন দাওয়াক) সে
জাতের কসম যার কজ্বায়ে কুদরতে আমার জান, আমিও ৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে একটি লুকমাও
খাইনি। কে তিনি যিনি ৩ দিন যাবৎ ১টি লোকমাও খাননি তিনি হলেন সে নবী যে নবীর এমন
প্রসংশা আল্লাহ করেছেন অন্য কোন নবীর ব্যপারে এত প্রসংশা করেননি। যেমন সুরা নজম এর
মধ্যে আল্লাহ বলেন
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى
নক্ষত্রের
কসম, যখন
অস্তমিত হয়।
مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى
তোমাদের
সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى
এবং
প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
কোরআন ওহী, যা
প্রত্যাদেশ হয়।
عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى
তাঁকে
শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,
ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَى
সহজাত
শক্তিসম্পন্ন, সে
নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।
وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَى
উর্ধ্ব
দিগন্তে,
ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى
অতঃপর নিকটবর্তী
হল ও ঝুলে গেল।
فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
তখন দুই
ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।
فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى
তখন আল্লাহ
তাঁর বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।
مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى
রসূলের
অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে।
أَفَتُمَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى
তোমরা কি
বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে?
وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى
নিশ্চয় সে
তাকে আরেকবার দেখেছিল,
عِندَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى
সিদরাতুলমুন্তাহার
নিকটে,
عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى
যার কাছে
অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।
إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى
যখন
বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল।
مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى
তাঁর
দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।
لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى
নিশ্চয় সে
তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।
যে নবীর এত প্রসংশা আল্লাহ করেছেন, সে নবী ফরমাচ্ছেন ৩ দিন যাবৎ কোন কিছুই খাননি। আমাদের নবী নিজের পরিবার সন্তানের জন্য দোয়া করে বলেন- (আল্লাহুম্মা আজআল রিজকা আলে মুহাম্মদিন কুতা) হে আল্লাহ মুহাম্মদের পরিবারকে রুজি/
রিজিক ততটুকু করে দিন যতটুকু প্রয়োজন হয়। এমন দোয়াকি আমরা আমাদের সন্তানের
জন্য করতে পারব? নবীজি নিজের আওলাদদের জন্য এমন দারিদ্রতার
দোয়া করার কারন হল, যাতে কিয়ামতের দিন উম্মত নবীজিকে বলতে না
পারে – এয়া রাসুলাল্লাহ আপনার আওলাদগন দুনিয়াতে আরাম আয়েশ করেছেন আর আমরা কষ্টে দিনাতিপাত
করেছি।
যে নবী চাইলে
১০ মাইল দৈর্ঘ্য ওহুদ পাহাড়কে আল্লাহ স্বর্ণে পরিণত করে দিতেন- সে নবী দারিদ্রতাকে পছন্দ করেছেন, ক্ষুধার
জ্বালা সহ্য করেছেন, নিজের আওলাদদের জন্য কোনমতে দিনাতিপাত করতে
পারে এমন রিজিকের দোয়া করেছেন, সে নবীর কাছে আমাদের আত্ম সমর্পন
করতে হবে সে নবীর ফয়সালাকে আমাদের মেনে নিতে হবে তবেই আমাদের জন্য আল্লাহ রহমতের দরজা
খুলে দিবেন- আল্লাহ আমাদের ফরিয়াদ শুনবেন, আল্লাহ আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিবেন, আল্লাহ সুরা
নিসার ৬৫ নং আয়াতে এরশাদ করেন
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ
حَتّٰى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي
أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
তোমার প্রভুর কসম! তারা কখনোই
মুমিন হতে পারে না—যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদের বিষয়ে
তোমাকে (হে নবী) বিচারক না মানে; অতঃপর তুমি যে ফয়সালা করো,
সে বিষয়ে নিজেদের মনে কোনো সংকোচ অনুভব না করে এবং সম্পূর্ণভাবে
আত্মসমর্পণ না করে।”
কোন মন্তব্য নেই