কোন আমল করলে কি ছাওয়াব ও ফজিলত। ১০০টি আমল। ২য় পর্ব







মসজিদ পরিচ্ছন্ন করার ফজিলত
মহানবীর (দ) মসজিদ পরিস্কার কারী নারীকে
জান্নাতে দেখতে পাওয়া

তাবরানি কবির হাদিস নম্বার ১১৬০। ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন এক নারী (উম্মে মেহজান) মসজিদ
ছাফ সাফাই করত, যখন তার ইন্তেকাল হয়ে গেল, মাহবুবে দানায়ে গুয়ুব, মানাজ্জাহুন আনিল
উয়ুব (দ) কে তার মৃত্যুর ব্যপারে খবর না দিয়ে তাঁকে রাতেই দাফন করা হল, সকালে যখন
হুযুর (দ) খবর শুনলেন তখন তিনি সাহাবায়ে কেরামকে নেয় সে নারীর কবরে গেলেন এবং তার
কবরের উপর তার জানাযা পড়লেন, এবং এরশাদ করলেন এই মহিলাকে আমি মসজিদ সাফাই করার
কারনে জান্নাতে দেখতে পাচ্ছি। (সুবহানাল্লাহ)

আত তারগিব ওয়াত তারহিবের ৪ নম্বার
হাদীসে - আরো আছে- মহানবী (দ) সাহাবাদের প্রশ্ন করলেন এটা কার কবর সকলে বলল উম্মে
মেহজানের তখন নবী (দ) বললেন সে মহিলা যে মসজিদ ছাফ করত? সাহাবা জবাব দিল হ্যাঁ,
তখন নবী (দ) বললেন কাতার হও এবং তিনি সে কবরে জানাযা পড়ালেন, আর জানাযার পর সে
নারীকে ডাক দিয়ে বলেন তুমি কোন আমলটি ভালো করেছ? তখন সাহাবা বলল এয়া রাসুলাল্লাহ
সে কি আপনার কথা শুনতে পাচ্ছে? তখন হুযুর (দ) বললেন তোমরা তার চেয়ে বেশী শ্রবণকারী
নও। হাদীসের রাবি বলেন তখন নবী (দ) বললেন সে আমার প্রশ্নের জবাবে বলেছে মসজিদ
সাফাই করা।
ফেরাউনের বাঁদির ঘটনা
ফেরাউন যে একমাত্র মানুষ যে বলেছিল (আনা রাব্বুকুমুল আলা) আমি
সবচেয়ে বড় খোদা (নাউজুবিল্লাহ) আর মানুষের মধ্যে নিজেকে খোদা হওয়ার দাবী একমাত্র ফেরাউনই
করেছিল। সে ফেরাউনের বাদী মুসা (আঃ) এর কলমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল। ফেরাউন এ কথা শুনে
তাকে গ্রেফতার করে নিল, তার ২টি মেয়ে ১টি দুধ পান করত, ১টি সাথে চলত, সে তার দরবারে
বড় কড়াইতে তেল গরম করতে লাগল, সে গরম তেলের সামনে তাকে বলল যদি মুসার রবকে মান্য করে
তাহলে প্রথমে তোমার মেয়েদের এই গরম তেলে জ্বালিয়ে দিব তারপর তোমাকে জ্বালাব, আর আমাকে
রব মানলে তোমার ঘরকে সোনা চান্দিতে ভরিয়ে দিব।
তখন সে মা জবাব দিল হে ফেরাউন আমার মাত্র ২ কন্যা যদি আমার
কাছে ১০০টি সন্তান হত তাহলে আজ আমি আল্লাহর নামে কুরবান করে দিতাম। আল্লাহু আকবার।
একথা বলার সাথে সাথে ফেরাউন তার মেয়েদের উত্তপ্ত তেলে নিক্ষেপের
হকুম দিল, তখন জল্লাদ বড় মেয়ের পা ধরে লটকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, মেয়েটির হাত নিচে ঝুলছিল,
আর এ অবস্থায় গরম উত্তপ্ত তেলের দিকে নিয়ে যেতে লাগল, আর সে ছোট্ট মেয়ে চিৎকার করে
আম্মা আম্মা বলে কাঁদতে লাগল, তখন মায়ের একটি কথায় সে মেয়েটির জান বেঁচে যেত, তারপর
সে মা ঘরে গিয়ে তওবা করে নিতে পারত, কিন্তু মা নিজের চোখে নিজের আদরের সন্তানকে গরম
তেলে জ্বলতে দেখল, আল্লাহ সে মায়ের চোখের পর্দা সরিয়ে দিলেন ফলে মা নিজের চোখে নিজ
মাসুম বাচ্চার রুহকে বের হতে দেখলেন, আর সে রূহ মাকে আহ্বান করে বলে দিল (ইসবির এয়া উম্মি ফাইন্না
লাকে মিনাল আজরে কাজা ওয়া কাজা) আম্মা ভয়ের কিছু নাই সবর করুন জান্নাত তৈরী
আছে।
এভাবে ২য় মেয়েটিকেও পায়ের উপর লটকিয়ে নিয়ে যেতে সময় সে কাঁদতে
লাগল, তাকে তেলে ঢালার সাথে সাতে রূহ বের হয়ে গেল আর সে রূহ মাকে বলতে লাগল (ইসবির এয়া উম্মি ফাইন্না লাকে মিনাল আজরে কাজা ওয়া কাজা) আম্মা
ভয়ের কিছু নাই সবর করুন আপনার জন্য জান্নাত তৈরী হয়ে আছে।
হে আমার ভাই ও বোনেরা! মনে রাখবেন আল্লাহকে পাওয়া এটা আমাদের
সকলের জন্য মেরাজ। আর আল্লাহকে হারিয়ে ফেলা আমাদের জন্য ধ্বংসের একমাত্র কারন।
আল্লাহ তায়ালাকে পেয়েছেনতো সব কিছুই পেয়েছেন আল্লাহকে হারিয়েছেন
তো সবকিছুই হারিয়েছেন।
সবশেষে যখন সে মাকে গরম তেলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচিছল সে মা
ফেরাউনকে ১টি অনুরোধ করল বলল আমাকে যখন গরম তেলে জ্বালানো হবে আমার ও আমার মেয়েদের
হাড্ডিগুলি একত্রে এক জায়গায় দাফন করে দিতে বলবেন, ফেরাউন বলল তোমার এই শেষ ইচ্চা পুরণ
করা হবে,
সে ঈমানদার নারীর সামনে মৃত্যু কিন্তু একটুও আফসুস নাই, কারন
যখন আল্লাহ পাওয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তখন মৃত্যুও মধুর মনে হয়। আর যখন আল্লাহর সাথে
নাফরমানি হয় তখন মৃত্যুকে বড় ধরনের আযাব মনে হয়।
তাঁদের মৃত্যুর পর সবগুলি হাড্ডি একত্রে দাফন করে দেয়া হল,
হে আমার ভায়েরা এই ঘটনার ২ হাজার বছর পর দুনিয়ায় মুহাম্মদ (দঃ) তশরীফ আনেন, ৪০ বছরে
নবুয়ত প্রাপ্ত হন, আরো ১০ বছর পর মেরাজ হয়, সুতরাং সে ঘটনার ২০৫০ বছর পর মেরাজের রাতে
আমার নবীর সওয়ারি বায়তুল মাকদাস যাচ্ছিল মিসরের কাছে গেলে নবীজি বললেন হে জিবরিল এখানে
আমি জান্নাতের খুশবু অনুভব করছি, তখন জিবরিল আরজ করল এয়া রাসুলাল্লাহ ফেরাউনের এক বাঁদি
ছিল, যে আল্লাহ সাথে নিজের প্রাণের সওদা করে গেছে, নিজের সন্তানদের প্রাণও কুরবান দিয়েছেন,
তার এবং তার বাচ্চাদের হাড্ডি সমুহ যেখানে দাফন করা হয়েছে সে কবর থেকেই এই সুগদ্ধি
ছড়াচ্ছে, যেদিন দাফন করা হয়েছিল সেদিন থেকেই এই খুশবু ছড়াচ্ছে। আর এই খুশবু কেয়ামত
পযন্ত থাকবে।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাস্তায় কুরবান
হওয়াদের এভাবে দামী করেন।

৭টি আমলের প্রতিদানে আল্লাহ হাশরের মাঠে আরশের
ছায়া দান করবেন
বুখারী ৬৬০ নং হাদীস। হযরত আবু
হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি শায়েহশাহে মদিনা থেকে শুনেছি তিনি এরশাদ
করেন- ৭ প্রকা লোককে আল্লাহ তায়ালা ঐ দিন আরশের ছায়া দিবেন যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া
আর কোন ছায়া হবেনা।
(১) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), 
(২)সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ
তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়,
(৩) সেই ব্যক্তি যার অন্তর
মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।)
(৪)সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর
সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর
মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়।
(৫) সেই ব্যক্তি যাকে কোন
কুলকামিনী সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে
ভয় করি।’
(৬) সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন
করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না।
(৭)আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে
আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’ 

আল্লাহ যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন
#রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি করে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, যে চোখ আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ জিনিস দেখে ক্ষুব্ধ হয়’ (আল মুজামুল কাবির লিত-তিবরানি, হাদিস : ১০০৩)
#রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের আগে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত নামাজ সংরক্ষণ করবে
আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৪২৮)
# আবু দারদা
(রা.) থেকে বর্ণিত, নবী বলেন, ‘যে তার ভাইয়ের সম্মান তার অনুপস্থিতিতে রক্ষা করে,
আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল আগুন থেকে রক্ষা করবেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস
: ১৯৩১)

রাতে তাহাজ্জুদ এর
ফজিলত
শয়তানের ৩টি গিড়া
বুখারী ১১৪২ নং হাদিস। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ০
হতে বর্ণিত নবী করিম (দ) এরশাদ করেন যখন তোমরা ঘুমিয়ে যাও শয়তান তার মাথার পিছনে
৩টি গিট লাগায় , প্রতি গিট লাগানোর সময় শয়তান বলে টানটান হয়ে শুয়ে যাও, এখনো অনেক
রাত বাকি আছে, যখন সে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর জিকির করে, ১টি গিড়া খুলে যায়, অজু করলে
২য় গিড়া খুলে যায় নামাজ পড়লে ৩য় গিড়া খুলে যায়, এতে সে সতেজ সবল হয়ে সকাল করে এবং
বরকত লাভ করে, অন্যথা সে ক্লান্ত হয়ে সকাল করে এবং বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।
সুতরাং ২ রাকাত দিয়ে হলেও শয়তানের গিড়াসমুহ খুলে
নাও ।
জান্নাতের কাঁচের মহল কারা পাবে?
সহিহ ইবনে হিব্বান ৫০৯ নং হাদিস। হযরত আবু মালেক
আশয়ারী (রা) বণনা করেন নবী করিম (দ) এরশাদ করেন জান্নাতে কিছু এমন মহল হবে যার
ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যাবে (গ্লাসের টাওয়ার) সে মহলগুলি তাদের জন্য তৈরী করা হবে
যারা যারা অভাবীকে খাবার দেয়, যাকে দেখে সালাম দেয়, লোকেরা যখন ঘুমায় তখন উঠে সে
তাহাজ্জুদ পড়ে।
বিনা হিসাবে জান্নাতে কারা যাবে?
 আত তারগিব ওয়াত তারহিব হাদিস নাম্বর ৯। আসমা বিনতে এজিদ (রা)
হতে বর্ণিত তামাম নবীদের সরদার (দ) এরশাদ করেন কেয়ামতের দিন সকলে যখন এক জায়গায়
জমা হবে তখন একজন আহবান কারী ডাক দিয়ে বলবেন তারা কারা যারা রাতে নিজের পিটকে
বিছানা থেকে আলাদা রেখেছে, তখন কিছু লোক দাঁড়াবে যারা সংখ্যায় খুব অল্প হবে, তারা
বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর বাকী সব লোকদের কাছে হিসাব নেয়া হবে।

সদকার ফজিলত
#দ্রুত সদকা কর, কেননা
বিপদ আপদ থেকে সদকার গতি বেশী, সদকা করার ফলে বিপদ আপদ দুর হয়ে যায়।
#সদকার দ্বারা
জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা যায়, চাই তা ১টি খেজুরও হউকনা কেন।
#মাজমাউয জাওয়ায়েদ এর
হাদীস নম্বর ৪৬০৯। হযরত ওমর বিন আউফ (রা) হতে বণিত নবীজি (দ) ফরমান নিশ্চয়ই  সদকার দ্বারা হায়াত বৃদ্ধি পায়, খারাপ মৃত্যু
দুর করে দেয়, সদকার দ্বারা মন থেকে অহংকার দুর হয়ে যায়।


ঝগড়া না করলে জান্নাতে ৩টি ঘরের জামানত

ঝগড়া
না করার ছাওয়াবঃ তাবরানী হাদীস নম্বর ৭৬৫৯- হযরত আবুদ দারদা, আবু উমামা ও ওয়াছেলা
(রা) হতে বণিত নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেন- যারা হকের উপর থাকা সত্বেও ঝগড়া ছেড়ে দেয়
তাদের জন্য জান্নাতের
নিকট মধ্যম ও উচ্চ ধরনের ৩টি ঘরের জামানত দিচ্ছি। নিশ্চয়ই আমার রব আমাকে
মুর্তি পুঁজা করতে নিষেধ করার পর সর্বপ্রথম ঝগড়া করতে নিষেধ করেছেন।


কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.