৫১১ বার আল্লাহু আকবার ওজিফার মুজেযা। আল্লাহু আকবার এর বরকত। Allahu Akbar Muskan India
৫১১ বার আল্লাহু
আকবার ওজিফার মুজেযা। আল্লাহু আকবার এর বরকত। Allahu Akbar ar wazifa
ভারতের মুসকান নামের এক বোন এর আল্লাহু আকবার ধ্বনীতে সারা বিশ্বের তাগুতি শক্তিগুলির বুকে কম্পন সৃষ্টি হয়ে গেছে, এই আল্লাহ আকবার ধ্বনীতে কেন এত শক্তি? এই আল্লাহু আকবার প্রতিদিন কতবার পড়ার জন্য আল্লাহর নবী আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, কখন কোথায় কিভাবে এই তকবীরটি আল্লাহর রাসুল পড়েছেন, সাহাবায়ে কেরাম পড়েছেন, হাদীস শরীফের আলোকে আজ তা বিস্তারিত আলোচনা করব, দিনে কতবার আল্লাহু আকবার পড়লে হায়াতে রিজিকে ইজ্জত সম্মানে বরকত হবে, আমাদের নবী মক্কা বিজয়ের দিন কেন ৪বার আল্লাহু আকবার তকবীর দিয়েছেন? হযরত আলী (রা) সিফফিনের যুদ্ধের দিন এই তাকবীর এর জিকির কতবার পড়েছেন? আমরা প্রতিদিন কতবার পড়লে আমাদের জীবনে অফুরন্ত বরকত হবে সে ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ, যে সব ভাই ও বোনেরা হায়াতে বরকত চান তাঁরা অবশ্যই শেষ পযন্ত আলোচনাটি শুনবেন অবশ্যই উপকৃত হবেন।
প্রথমত আমাদের প্রিয় নবী কোন কোন ক্ষেত্রে
তকবীর ধ্বনী দিয়েছেন তা জানব তারপর আমরা কখন কিভাবে এই আমলগুলি করে সৌভাগ্য ও সম্মানের
তাজ অজন করব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং ঘরে বরকত হাছিল করব তা জেনে নিব।
আল্লাহু
আকবার প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত আজানে ও এক্বামতে মোট ৬০ বার উচ্চারিত হয় আর আজানের জবাব দেয়া
ওয়াজিব, সে হিসাবে প্রত্যেক মুসলমান শুধুমাত্র আজান একামতে এই আল্লাহু আকবার ধ্বনী
উচ্চারণ করেন ৬০ বার
তাছাড়া
যারা নামাজ পড়েন প্রত্যেক নামাজেই তাকবীরে তাহরিমাতে এই আল্লাহু আকবার বলা ফরয, সে
হিসাবে শুধু ১৭ রাকাত ফরয নামাজ এর মধ্যেই ১৭ বার তাকবীর বলা লাগে, তারপর রুকু সিজদায়
যাওয়ার সময়ও প্রতি রাকাতে ৫ বার করে তাববীর ধ্বনী দিতে হয় সে হিসাবে প্রতিটি মুসলমান
শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজেই ২৪৭ বার আল্লাহু আকবার বলে। আজানে বলে ৬০ বার।নামাজে বলে ২৪৭
বার মোট ৩০৭ বার।
প্রথমে জেনে নিই মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রাসুল কেন ৪ বার তকবীর ধ্বনি
দিলেন?
সহিহ বুখারীর ৩৯৫৯ নং হাদিস
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কায় আগমন করার পর তৎক্ষণাৎ বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রইলেন, কারণ
সে সময় বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে অনেক প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি এগুলোকে বের করে ফেলার
জন্য আদেশ দিলেন। প্রতিমাগুলো বের করা হল। এরপর নবী করিম (দ) বায়তুল্লাহর ভিতর
প্রবেশ করলেন আর প্রত্যেক কোণায় কোণায়
গিয়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি
দিলেন এবং বেরিয়ে আসলেন।
দেখুন
কাবা ঘরকে মুতি পুঁজারিরা মুতি দ্বারা অপবিত্র করে রেখেছিল, সে মুর্তিগুলিকে অপসারণ
করে আমাদের নবী কাবা ঘরের ভিতর তকবীর ধ্বনী দিয়ে মুলত এটাই শিক্ষা দিয়েছেন এসব মুর্তির
কোন ক্ষমতা নাই, এসবই মিথ্যা, একমাত্র আমাদের আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহই মহান।
আর আমাদের
মুসকান নামের বোনটিও যখন একাই কয়েক ডজন মুর্তি পুজারীর জয় শ্রিরাম ধ্বনীর সামনে আল্লাহু
আকবার ধ্বনীকে উচ্চারণ করল তখন আল্লাহ তায়ালা এর মধ্যে এমন শক্তি দিয়ে দিলেন মুহুর্তে
এতগুলি যুবক থমকে গেলেন, মুসকানের তকবীর ধ্বনীকে আল্লাহ এতই বুলন্দ করেছেন আজো যেন
সারা ভারত সহ গোটা বিশ্বে আল্লাহু আকবার ধ্বনীটি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
এবার আসুন
আমাদের প্রিয় নবী কুরবানী করার সময়ও তকবীর বলার হাদীস শুনি-
বুখারীর
৫১৬০ নং হাদীস
আদম ইবনু
আবূ ইয়াস (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া দ্বারা কুরবানী করেছেন। তখন আমি তাকে দেখতে পাই তিনি ভেড়া
দু-টোর পার্শ্বদেশে পা রেখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়ে নিজের
হাতে সে দুটোকে যবাহ করেন।
দেখুন
পশু জবেহ করার সময়ও আল্লাহর রাসুল আল্লাহু আকবার ধ্বনী উচ্চারণ করেছেন।
সাহাবাগন
উঁচু স্থানে চড়ার সময় আল্লাহু আকবার ধ্বনী দিতেন
যেমন বুখারী
শরীফের ৫৯৪২ নং হাদিসের অংশ হল
আবূ মূসা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সঙ্গে ছিলাম। যখন আমরা উঁচু জায়গায় উঠতাম তখন উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবার বলতাম।
সাহাবাগন
খুশির সংবাদ শুনেও আল্লাহু আকবার ধ্বনী দিতেন
মুসলিম
শরীফের ৪২২ নং হাদিস আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরাই জান্নাতবাসীদের
এক চতুর্থাংশ হবে। (আবদুল্লাহ বলেন) এ শুনে আমরা (খুশিতে) অোল্লাহু আকবার- ধ্বনি
দিলাম। রাসুল বললেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরাই জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ
হবে? সাহাবী বলেন, আমরা আবার ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিলাম তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তবে আমি আশা করি তোমরাই জান্নাতবাসীদের অর্ধেক হবে।আর এ সম্পর্কে তোমাদের আরও
বলছি কাফিরদের ভিড়ে তোমাদের অবস্থান এমনই স্পষ্ট হবে, যেমন কালো ষাঁড়ের গায়ে একটি
সাদা পশম অথবা একটি শ্বেত ষাঁড়ের গায়ে কালো পশম।
একবার
আল্লাহু আকবার বললে কি পরিমাণ নেকি হয় ?
সুনানে
ইবনে মাজার ২৮০ নং হাদিস
আবূ মালিক
আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুষ্ঠুভাবে
উযূ করা ঈমানের অর্ধেক। আল-হামদুলিল্লাহ (নেকীর) পাল্লা পূর্ণ করে। সুবহানাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পৃথিবী
ও আকাশমন্ডলী ভরে দেয়।
তাহলে
এই হাদীসে জানতে পারলাম আল্লাহু আকবার বলার ফলে পৃথিবী ও আকাশমন্ডলী নেকিতে ভরে যাবে।
সহিহ মুসলিম
শরীফের ১২৩০ নং হাদিস
আবু হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি
প্রত্যেক সালাতের পর সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার ও আল্লাহু আকবার তেত্রিশবার
বলবে এই হল নিরানব্বই-আর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবেঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
তার পাপ সমুহ মাফ
হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়।
এই জিকির গুলিকে
আমাদের শরীরের যে সব জোড়া বা জয়েন্ট আছে তার সদকা বলা হয়েছে যেমন মুসলিম শরীফের
১৫৪৪ নং হাদিসে আছে
আবূ যার (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন
ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার উপর একটি সাদাকা রয়েছে। প্রতি সূবহানাল্লাহ
সাদাকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সাদাকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাদাকা,
প্রতি আল্লাহু আকবার সাদাকা, আমর বিল মা'রুফ (সৎকাজের আদেশ) সাদাকা,
নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সাদাকা। অবশ্য চাশতের সময় দু রাকআত সালাত আদায়
করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।
এই তসবীহ দ্বারা গরীবরা দান সদকা না করেও ধনীদের
মত সাওয়াব লাভ করতে পারেন, যেমন সুনানে ইবনে মাজার ৯২৭ নং হাদিস
আবূ যার
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হল (সুফিয়ানের
বর্ণনায় আছে, আমি বললাম), হে আল্লাহ্র রাসূল! বিত্তবান লোকেরা পুরস্কার লাভে আমাদের
থেকে এগিয়ে গেছে। আমরা যা বলি, তারাও তা বলে এবং তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু আমরা
তা পারি না। তিনি আমাকে বলেনঃ আমি কি তোমাদের এমন বিষয় বলে দিবো না, যা কররে তোমরা
তোমাদের অগ্রবর্তীদের ধরতে পারবে এবং তোমরা যাদের অগ্রবর্তী হতে পারবে, তারা তোমাদের
অতিক্রম করতে পারবে না? তোমরা প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পর আলহামদু ল্লিাহ, সুবহানাল্লাহ
এবং আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, ৩৩বার এবং ৩৪ বার পাঠ করবে।
বুখারী
শরীফের ৪৯৭১ নং হাদিস
আলী (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা (রাঃ) একটি খাদেম চাইতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে আসলেন। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে এর চাইতে অধিক কল্যাণকর বিষয়ে খবর দিব না?
তুমি শয়নকালে তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ এবং তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার পাঠ
করবে। পরে সুফিয়ান বলেনঃ এর মধ্যে যে কোন একটি তেত্রিশবার। আলী (রাঃ) বলেনঃ এরপর থেকে
কখনোও আমি এগুলো ছাড়িনি। জিজ্ঞাসা করা হলো সিফফীনের রাতেও না? তিনি বললেনঃ সিফফীনের
রাতেও না।
অতএব প্রতি
নামাজের পর যদি ৩৪ বার শুধু আল্লাহু আকবার পড়া হয় ৫ ওয়াকত্ হবে ১৭০ বার। আর রাতে ঘুমানোর
সময় হয় ৩৪ বার তাহলে হবে ২০৪ বার, আর ৫ ওয়াক্ত আযান একামতে হয় ৬০ বার, নামাজের মধ্যে
হয় ২৪৭ বার সবমোট ২৪ ঘন্টায় একজন মুসলমান এই তকবীর ধ্বনী দিতে হয় ৫১১ বার। যাতে তাসবীহ
এর ফজিলততো আছেই সাথে সাথে আযানের জবাব আছে, নামাজ পড়ার অফুরন্ত বরকত আছে, ঘুমানোর
পূর্বের আমল আছে, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার দোয়া আছে।
এই তাকবীর
তামহিদে সমুদ্রের ফেনা রাশির পরিমাণ গুনাহ মাফের রাস্তা আছে, গরীব হয়েও ধনীদের সমপরিমাণ
দান সদকা করার সাওয়াব আছে, শরীরের জয়েন্ট এর সদকা আছে, গোটা পৃথিবী ও আকাশসমুহ ভরে
দেওয়ার মত নেকি আছে, বিশেষ করে যে সব নারী ঘরে একা কাজ করে করে ক্লান্ত হয়ে যান তারা
রাতে এই তাসবীহ পড়েই সকল ক্লান্তি দুর করার যাদুকরী বরকত আছে।
তাই আল্লাহর
বড়ত্ব প্রকাশের এই তাকবীর মুলত প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়ের প্রতিধ্বনীই বলা যায়। আল্লাহ
আমাদেরকে সত্যিকার অর্থেই আল্লাহকে মহান মানার তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই