গরীবের দোয়া কিভাবে কবুল হল? নবী যুগের সেরা কান্নার ঘটনা
গরীবের দোয়া কিভাবে কবুল হল? নবী যুগের সেরা কান্নার ঘটনা
ইমামুল আম্বিয়ার একজন যুবক সাহাবী ছিল,
খুবই গরীব ছিলেন সে সাহাবী, অত্যন্ত দারিদ্রতার মাঝে ছিলেন তিনি। হুজুর (দ) একদিন সে
সাহাবীকে জিজ্ঞেস করলেন হে আমার সাহাবী তোমার দিনকাল কেমন কাটছে?
গরীব সাহাবী আরজ করলেন হে আমার আঁকা, আমার
ভাই বন্ধুদের মধ্যে অনেকে আছেন খুবই ধনী, কিন্তু আমি খুবই গরীব। আর এই দারিদ্রতার কারনে
আমার দিকে কেহ ফিরেও তাকাইনা। কেহ আমাকে পাত্তাই দেয়না। এয়া রাসুলাল্লাহ আমার দারিদ্রতার
কারনে কেহ আমাকে গুরুত্ব দেয়না, আমার হাল হাকিকত কেহ জিজ্ঞেসও করেনা।
যুবকের সাথে ইমামুল আম্বিয়ার অত্যন্ত আন্তরিকতাপূণ
কথাবার্তা চলছিল। তখন হঠাৎ হযরত জিবরাইল আমিন চলে আসলেন আর হুজুরকে বললেন এয়া রাসূলাল্লাহ
আপনি যে যুবকের সাথে এত আন্তরিকতার সাথে আলাপ করছেন, সেতো আগামীকাল যুহর পযন্ত বেঁচে
থাকবে, আগামী কাল যুহরের ওয়াক্ত পযন্ত তার
হায়াত বাকি আছে। সে আগামীকাল যুহরের সময় মারা যাবে।
জিবরাইল তার মৃত্যুর ব্যপারে সহিফার মধ্যে
ফয়সালা দেখে এসেই এই কথা বলছে, হে আল্লাহর রাসুল আপনার এই সাথীর হায়াতে জিন্দেগি খুবই
অল্পই বাকী আছে। এ সংবাদ দিয়ে হযরত জিবরাইল আমিন চলে গেলেন।
এই সংবাদ শুনে ইমামুল আম্বিয়ার চোখে পানি
চলে আসল, হুজুর (দ) নিজের সাহাবীর বিদায়ের সংবাদ শুনে তার প্রতি খুবই দয়াদ্র হলেন,
আর সে যুবক সাহাবীকে হুজুর জিজ্ঞেস করলেন তার মনের কোন আশা আরজু আছে কিনা? সে যুবক
বলল হে আল্লাহর হাবিব গরীবের আবার কিসের আশা? কিসের আরজু? গরীবদের মনের ভিতর তো প্রতিনিয়ত
হাজারো আশা আকাংখার মৃত্যু ঘটে।
হে আল্লাহর রাসুল আমিতো জন্ম হতেই দারিদ্রতার
মাঝেই বড় হয়েছি, আমি এত বেশী দারিদ্রতার মাঝে বড় হয়েছি যে আমি জিন্দেগীতে কোনদিন হালুয়া
খেতে পারিনাই। হে আমার আকা আপনি যেহেতু আজ জিজ্ঞেস করেছেন তাই বলছি আমার মনের মাঝে
২টি আকাংখা খুবই প্রবল। যে ২টি আকাংখা আমাকে সদা পীড়া দেয়। কিন্তু দারিদ্রতার কারনে
আমি সে আশা সে আকাংখা পুরণ করতে অক্ষম।
হুজুর আমার ১ম আশা হল আমি জিন্দেগীতে হালুয়া
খাইনি, তাই হালুয়া খাওয়ার খুবই ইচ্ছা, আর ২য়
ইচ্ছা হল আমি যুবক হয়েছি আমার সম বয়সী সকলেই বিয়ে করে সংসার করেছে কিন্তু দারিদ্রতার
কারনে আমি বিয়ে শাদি করতে পারিনি, তাছাড়া কেহ আমাকে মেয়েও দিতে রাজি হয়না। আমার খুবই
আখাংকা যদি কোন ১জন নেককার স্ত্রী পেতাম। তাকে নিয়ে আমি তাহাজ্জুদের বিছানায় সিজদায়
লুটিয়ে পরতাম, হে আল্লাহর রাসুল আমার সে জীবন সাথীকে নিয়ে দুজনে একসাথে আপনার উপর দরুদ
ও সালাম প্রেরণ করতাম।
এয়া রাসুলাল্লাহ আমার দারিদ্রতা আমাকে
এমনভাবে দমিয়ে রেখেছে আমি না পেরেছি মিঠাই খেতে না পেরেছি বিয়ে করতে।
কুরবান যান হুজুরের দয়ার প্রতি, হুজুর
বেলালকে বললেন হে বেলাল ওসমানে গনিকে ডাক, সিদ্দিকে আকবারকে ডাক, হযরতে আলীয্যুল মুরতাজাকে
ডাক, নবীজি সাহাবীদের ডেকে একত্রিত করলেন, আর সে যুবকের চাচাকে ডাকালেন আর তার চাচার
১টি যুবতী মেয়ে ছিল, হুজুর সে যুবকের চাচাকে বললেন ঘরে গিয়ে তোমার মেয়েকে সাজাও, আমি
এই মুহুতে তোমার মেয়ের সাথে তোমার ভাতিজার বিয়ে দিব, ওসমান ও আলীকে দায়িত্ব দিলেন বর
কনের জন্য কিছু কাপড় চোপর ও প্রয়োজনীয় সামগ্রি কিনে আনার, সাহাবীদের কাউকে দায়িত্ব
দিলেন বেড বিছানার ব্যবস্থা করার, কাউকে দায়িত্ব দিলেন সাংসারারিক সামান কিনে আনার,
আর ওসমানে গনিকে বললেন এই নব দুলার জন্য এমন হালুয়া বানাও যা কখনো বানানো হয়নি,
কুরবান হয়ে যেতে ইচ্ছে করে সে দয়াল নবীর
দয়া দেখে, তিনি মুহুতের মধ্যেই এই নওযোয়ানের ২টি আশাই পুরণের ব্যবস্থা করে দিলেন। এত
দয়াতো একজন মাও সন্তানের প্রতি করতে পারেনা যতটা দয়া হুজুর (দ) নিজ উম্মতের প্রতি করেন।
হে আমার ভাই ও বন্ধুরা- মসজিদে নববীতে
সে যুবকের সাথে তার চাচাত বোনের বিয়ে পড়িয়ে দিলেন, এক সাহাবীকে বলল তোমার ঘরের ১টি
কামড়া খালি আছে সেখানে এই নব দম্পতিকে নিয়ে যাও, তাদের এই উপহার সামগ্রি সে ঘরে সাজিয়ে
দাও, আর এই হালুয়া সমুহও সেখানে পৌঁছিয়ে দাও যাতে আমার এই গরীব যুবক সাহাবী যাকে আমি
এইমাত্র বিয়ে পড়িয়েছি সে যেন মনের খায়েশ পুরিয়ে সে হালুয়া খেতে পারে।
সে রাত অতিহাবিত হয়ে গেল, সকালে এক সাহাবীকে
হুজুর (দ) দায়িত্ব দিয়ে বললেন তুমি যুহরের সময় এই যুবকের ঘরের পাশে চলে যাবে, যখন ঘর
থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবে তুমি দ্রুত এসে আমাকে খবর দিবে, সে সাহাবী যুহর থেকে
আসর পযন্ত সে নববিবাহিত যুবকের ঘরের আশে পাশেই অতিবাহিত করল কিন্তু কোন কান্নার আওয়াজ
সে শুনতে পেল না, বরং হাসি আনন্দের আওয়াজই ঘর থেকে ভেসে আসতে শুনতে পেল,
সে সাহাবী হুজুরের কাছে এসে খবর দিল, এয়া
রাসুলাল্লাহ আমি যুহর থেকে আসর পযন্ত সে যুবক সাহাবীর ঘরের পাশেই ছিলাম কিন্তু সেখান
থেকে কোন কান্নার আওয়াজ আমি শুনতে পাইনি বরং হাসি খুশির আওয়াজ শুনতে পেয়েছি,
তখন হুজুর (দ) চিন্তায় পড়ে গেলেন, তখন
জিবরাইল (আ) চলে আসলেন হুজুর (দ) জিবরাইলকে প্রশ্ন করলেন হে ভাই জিবরাইল তুমিতো গতকাল
বলেছ আজ যুহরের সময় আমার এই সাহাবী মৃত্যু বরণ করবে, কিন্তু এখন আসরের সময় হয়েছে তবুও
সে জীবীত আছে, এর রহস্য কি? তখন জিবরীল (আ) আরজ করলেন এয়া রাসুলাল্লাহ আমি যা বলেছি
তা ফেরেশতাদের সহিফাতে দেখে এসেই আপনাকে বলেছি, তার তকদীরে এটাই লিখা ছিল আজকে এই যুবকের
মৃত্যু হবে, কিন্তু হে আল্লাহর রাসুল আপনি যখন তাকে বিয়ে দিয়ে তার ঘরে বিভিন্ন জিনিষপত্র
সহ হালুয়া পাঠিয়েছেন, সে যখন রাতে খাবার খাওয়ার জন্য দস্তারখানা বিছালো এমন সময় তার
দরজায় একজন ২ দিনের ক্ষুধাথ ভিখারী এসে ডাক দিল, তখন সে যুবক নিজের স্ত্রীকে বলল আমার
জন্য এটাই যথেষ্ট যে তোমার মত একজন নেক নারীকে আমার স্ত্রী হিসেবে পেয়েছি, আর তোমার
সাথে আমার বিয়ে স্বয়ং হুজুর (দ) করিয়েছেন,
এখন যদি তুমি আমাকে অনুমতি দাও তাহলে এই খাবারগুলি দরজায় দাঁড়ানো ক্ষুধাথ ফকিরকে
দিয়ে দিতে চাই। যে মিঠাই সে জীবনে খাইনি, সে মিঠাই আজই প্রথম খেতে পেল, কিন্তু একজন
ক্ষুধার্থের ক্ষুধা নিবারনের জন্য সে তার সারা জীবনের ইচ্ছাকে কুরবানি দিয়ে সে মিঠাই
ক্ষুধাথকে দিয়ে দিল, ফকির হালুয়া গুলি পেয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করল হে আল্লাহ
এই নব দম্পতির খুশিকে তুমি সালামত রাখ, এই জোড়াকে তুমি সুখ শান্তি দাও, তাদেরকে নেক
সন্তান দান কর,
জিবরাইল বলল এয়া রাসুলাল্লাহ তার সহিফার
তকদীরে এটাই লিখা ছিল যে সে আজ মারা যাবে, কিন্তু যখন একজন ক্ষুধাথ ভিখারী আল্লাহর
কাছে দু হাত তুলে দোয়া করল আল্লাহ তায়ালা সে ভিখারীর দোয়া কবুল করে যুবকের তকদীর পরিবতন
করে তার হায়াত বাড়িয়ে দিলেন।
অর্থ্যাৎ সে যুবকের ব্যপারে মুলত লৌহে
মাহফুজে লেখা ছিল তার জন্য এক ভিখারী দোয়া করবে এবং সে সহি সালামতে দীঘ হায়াত পাবে,
আর ফেরেশতাদের সহিফায় লিখা ছিল সে মারা যাবে, আর দোয়ার দ্বারা মুলত ফেরেশতাদের সহিফায়
মৃত্যুর যে সংবাদ লেখা আছে তা আল্লাহ তায়ালা লৌহে মাহফুজের লেখা মোতাবেক বদল করে দিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই