দরুদ শরীফের পাওয়ারফুল সহজ ওজিফা

 

দরুদ শরীফের পাওয়ারফুল সহজ ওজিফা



সম্মানিত বন্ধুরা আজ আমি দরুদ শরীফের নতুন সহজ এবং অত্যন্ত পাওয়ারফুল ওজিফা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, যাদের অনেক সমস্যা, যাদের সমস্যা শেষ হচ্ছেনা, তারা এই ওজিফাটি প্রেকটিস করে দেখুন আমি গেরান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনার যতবড় সমস্যাই হউক, অত্যন্ত খালেছ নিয়তে কোন ধরনের সন্দেহ ছাড়া যদি আপনি রাতে এই ওজিফাটি করেন সকালের মধ্যেই আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে কিংবা সমাধানের রাস্তা বের হয়ে যাবে,

আমি সব সময় বলি যে কোন ওজিফা করার জন্য প্রথম শত হল পূণ একিন, ২য় শত হল হালাল রিজিক, ৩য় শত হল সত্যবাদীতা। যাদের এই ৩টি বিষয়ে ঘাটতি আছে তারাই ওজিফায় কাজ না হওয়ার অভিযোগ করেন।

আজকের ওজিফাটি অত্যন্ত পাওয়ারফুল এবং পরীক্ষিত, তাই যারা সমস্যায় জজরিত হয়ে আছেন কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না তারা আজকের ওজিফাটি বুঝার জন্য আলোচনাটি অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে একেবারে শেষ পযন্ত শুনবেন।

যে মাত্র একবার দরুদ পড়ে তাকে ১০টি বড় বড় নেয়ামত দেয়া হয়। এক হাদিসে ৩ নেয়ামতের জিকির আছে।

আবু তালহা (রা) হতে বর্ণিত, একদিন সকালে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে অত্যন্ত আনন্দিত চিত্তে দেখা গেল। তাঁর চেহারা মুবারকে আনন্দের ছাপ ছিল। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আজ আপনি খুবই আনন্দচিত্ত। আপনার চেহারা মুবারাকে আনন্দের ছাপ রয়েছে। তিনি বললেনঃ

أجل أتاني آت من ربي عز وجل فقال من صلى عليك من أمتك صلاة كتب الله له بها عشر حسنات ومحا عنه عشر سيئات ورفع له عشر درجات ورد عليه مثلها

আল্লাহর এক ফেরেশতা অর্থ্যাৎ জিবরাইল এসে আমাকে বললেন- আপনার কোন উম্মত যদি আপনার উপর দরুদ পড়ে তাহলে তার জন্য প্রথম নেয়ামত হল তার জন্য ১০টি সাওয়াব লিখা হবে, দ্বিতীয়ত নিয়ামত হল তার ১০টি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, তৃতীয় নেয়ামত হল তার জন্য ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন,  যে যেমন দরুদ ও সালাম পাঠ করবে তেমনই তার জন্য হুবহু তা ফিরিয়ে দেয়া হবে।

 মুসনাদ আহমাদ ৪/২৯, মাকদিসী, আল-আহাদীস আল-মুখতারাহ ১/১৮৭, মুনযিরী, আত-তারগীব ২/৪৯৪।

৪থ নেয়ামত-

আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বাইরে যান, আমিও তাঁকে অনুসরণ করি। তিনি একটি খেজুরের বাগানে প্রবেশ করেন এবং সাজদায় যান। তিনি সাজদা রত অবস্থায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন, ফলে আমি ভয় পেয়ে যাই এই ভেবে যে, সাজদা রত অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেল কিনা? এজন্য আমি কাছে এসে নজর করি। তিনি মাথা তুলে বলেন, আব্দুর রহমান, তোমার কী হয়েছে? তখন আমি আমার (মনের ভয়ের) কথা তাঁকে জানালাম। তিনি বললেনঃ জিবরীল আমাকে বললেনঃ আপনি কি এজন্য খুশি নন যে, আল্লাহ বলেছেনঃ

مَنْ صَلَّى عَلَيْكَ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ، وَمَنْ سَلَّمَ عَلَيْكَ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ

আপনার উপর যে সালাত (দরুদ) পাঠাবে আমিও তার উপর সালাত (রহমত, বরকত) পাঠাব, আর যে আপ নার উপর সালাম পাঠাবে আমি তার উপর সালাম পাঠাব। (নবীজী বলেন)  আর এ জন্য আমি শুকরানা সাজদা করি।

মুসনাদ আহমাদ ১/১৯১, মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৪৪-৩৪৫, ৭৩৫, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮৭। হাদিসটি সহীহ।

৫ম নেয়ামত-  আনাস ইবনে মালেক (রা) বণনা করেন যদি পৃথিবীর জমিনে কেহ একবার দরুদ শরীফ পাঠ করেন- আল্লাহ বলেন আমি এবং আমার সকল নুরানি ফেরেশতার তার জন্য ২টি কাজ করব (১) আমি স্বয়ং আল্লাহ দরুদ পাঠ কারীর উপর ১০ বার রহমত বষন করব

(২) আর সমস্ত নুরানি ফেরেশতারা দরুদ পাঠ কারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করবেন।

৬ষ্ঠ নেয়ামত- আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেছেন,

কোনো ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ স্বয়ং তার উপর ৭০ বার রহমত নাজিল করেন এবং (কোটি কোটি) ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য সত্তর বার দু’আ করবেন, অতএব কোনো বান্দা চাইলে তা বেশি করে করুক অথবা কম করে করুক।

মুসনাদ আহমাদ ২/১৭২, ১৮৭, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৬০, আত-তারগীব ২/৪৯৩।

৭ম নেয়ামত - আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত- যারা রাসুলুল্লাহ (দ) এর উপর দরুদ পাঠ করে তার আলোচনা রাসুলুল্লাহ (দ) এর কাছে করা হয়,

এখনও যদি আপনি রাসুলুল্লাহ (দ) এর উপর দরুদ পাঠ করেন তাহলে ফেরেশতারা হুজুর (দ) এর কাছে গিয়ে আপনার ব্যপারে আলোচনা করবেন, আপনার প্রসংশা করবেন, আপনার পরিচয় দিবেন।

একবার চিন্তা করুন আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই হউন না কেন সেখানে বসে দরুদ পাঠ করার পর আপনার সে দরুদ নিয়ে ফেরেশতারা হুজুর (দ) এর সামনে পেশ করবে আপনার পরিচয় হুজুরকে দেয়া হবে, আপনার নাম ঠিকানা সব হুজুর (দ) জানতে পারেন, তাই কোন আশেক যদি নিয়মিত দরুদ পাঠ করে আর একদিন যদি সে দরুদ পাঠ না করে তখন হুজুর (দ) আপনার ব্যপারে খোঁজ খবর নেন, কেন দরুদ পাঠ পড়েন নি, কোন সমস্যা কিনা তা জানতে চান। একবার চিন্তা করুন আমাদের মত গুনাহগারের জন্য এটা কতবড় নেয়ামত যে আমাদের আঁকা আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন,

আপনি একজন সাধারণ মানুষ এখন আপনার দেশের প্রধানম্নত্রী যদি আপনার খোঁজ খবর নেন আপনার কেমন খুঁশি লাগবে? আর যে নবী না হলে কুল কায়েনাত সৃষ্টি হত না সে দয়াল নবী যদি খবর নেন তখন কেমন হবে একবার চিন্তা করুন।

সুত্র:আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ২/৩৮৮ ও মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৬২, 

 

আল্লাহর কত দয়া! বিশ্ব নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে, ক’জনের জন্যই বা সম্ভব হবে রওযা মুবারাকে গিয়ে সালাত ও সালাম পাঠের। তাই তাদের জন্য দিলেন অফুরন্ত নিয়ামত। নিজ ঘরে বসে উম্মত সালাম জানাবে, সালাত পাঠ করবে, আর আল্লাহর ফিরিশতাগণ তা রাসূলে আকরাম (সা.)-এর রওযা মুবারাকায় পৌঁছে দেবেন।

৮ম নেয়ামত হল- রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন যে আমার উপর যত বেশী দরুদ পাঠ করবে কিয়ামতের দিন সে আমার তত নিকটে থাকবে।

সুনানুত তিরমিযী ২/৩৫৪, নং ৪৮৪, বাইহাকী আস-সুনানুল কুবরা ৩/২৪৯, মুসনাদ আবী ইয়ালা ৮/৪২৮, আত-তারগীব ২/৪৯৭, সাখাবী, আল-কাউলুল বাদী, পৃ. ১৩০-১৩১।

কেয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার ১টি মাসনুন দরুদ আছে তা হল

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ مِنْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা, স্বাল্লি আলা- মুহাম্মাদিন, ওয়া আনযিলহুল মাক্বআদাল মুক্বাররাবা ইনদাকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ।

অর্থঃ হে আল্লাহ মুহাম্মাদের উপর সালাত (দরুদ) প্রেরণ করুন এবং তাঁকে কিয়ামতের দিন আপনার নৈকট্যপ্রাপ্ত অবস্থানে অবতীর্ণ করুন।

 

৯ম নেয়ামত- রাসুলুল্লাহ (দ) এর সাহাবি হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি আপনার ওপর বহু দরুদ পাঠ করতে চাই। তাই তার কত পরিমাণ আপনার জন্য নির্দিষ্ট করব? তিনি বললেন, যে পরিমাণ তুমি চাও। আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ। তিনি বললেন, তুমি যা চাও। তবে যদি আরও বেশি কর তা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম, তাহলে কি অর্ধেক? হুজুর (সা.) বললেন, তুমি যা পছন্দ কর, তবে যদি আরও বেশি কর তা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম তাহলে কি তিন ভাগের দুই ভাগে? হুজুর (সা.) বললেন, যা তুমি পছন্দ কর, তবে যদি এটা অপেক্ষাও অধিক কর তা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। আমি বললাম, তাহলে সম্পূর্ণ আপনার জন্য নির্দিষ্ট করব। হুজুর (সা.) বললেন, তবে এখন তোমার জন্য ২টি সুখবর (১) তোমার সব দুঃখ বিপদ দুশ্চিন্তা পেরেশানি  দুর হবে সমস্যা সমাধান হবে এবং (২) তোমার সব গুনাহ মাফ করা হবে। (তিরমিযি ২ : ৭২, মেশকাত পৃ. ৮৬)

যাদের অনেক সমস্যা সমাধান হয়না তাদের জন্য এই হাদীসটিই যথেস্ট, আপনি সব ওজিফা বাদ দিয়ে শুধু হাটতে বসতে চলতে ফিরতে দরুদ পাঠ করুন

সবচেয়ে ছোট দরুদটি পাঠ করতে পারেন

আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ -লা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

 

১০ম নেয়ামত- বিভিন্ন হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, সালাত পাঠকারীর জন্য আখেরাতের মুক্তি, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শাফায়াত ও জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ

“যে ব্যক্তি সকালে আমার উপর ১০ বার সালাত (দরুদ) পাঠ করবে এবং সন্ধ্যায় ১০ বার আমার উপর সালাত পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভের সৌভাগ্য তাঁর হবে।

মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১২০।

সে জন্য আযানের দোয়াতে বলতে হবে (ওয়ারজুকনা শাফাআতাহু এয়াউমাল কিয়ামা)

 

অনেক সময় মানুষ দুঃখ অভাব অনটন পেরেশানি বিপদে পতিত হয়ে দিশেহারা হয়ে যায় কি দোয়া পড়বে কি বলবে ভুলে যায়, অনেক বিপদ এমন আছে যাতে পতিত হয়ে মানুষ নিজের হুশ হারিয়ে ফেলে,  সে মুহুর্তে দরুদ শরীফের হাদিয়া সব ধরনের দুঃখ পেরেশানি বিপদ থেকে মুক্তির জন্য একমাত্র মাধ্যম হতে পারে।

হুযুর (দ) এর উপর দরুদ প্রেরণ করতে পারা আমাদের জন্য অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়, মনে রাখবেন আল্লাহর হাবিব আমাদের দরুদ এর মুখাপেক্ষি নন, পূব হউক পশ্চিম হউক উত্তর বা দক্ষিন হউক দুনিয়ার কোনায় কোনায় হুজুরের জিকিরের আওয়াজ বুলন্দ হচ্ছে, দিন রাত আযাব একামত ও নামাজের মাধ্যমে। তাই দরুদ পড়ুন নিজেকে নিজে ধন্য করুন ।

 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.