আমলনামা ভরপুর কারী ১০টি ওজিফা
আমলনামা ভরপুর কারী ১০টি ওজিফা
সম্মানিত ভাই ও বন্ধুরা!
কোন সে আমল যা অনেক ছোট কিন্তু আমলনামাকে ভরপুর করে দিবে, এবং মুক্তি মিলে যাবে।
মনে রাখবেন এমন এক
সময় আসবে যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পাল্লা লাগোনো হবে। আর সে পাল্লা এত বড় হবে যদি
৭ আসমান ও ৭ জমিন এক পাল্লায় কিয়ামতের দিন রাখা হয তাহলে ১টি পাল্লাও ভর্তি হবেনা।
এতবড় সে পাল্লা। কিন্তু এমন কিছু আমল আছে যে আমল গুলির দ্বারা এত বড় বড় পাল্লাও ভর্তি
হয়ে যাবে।
প্রথম আমল- কলমা
তওহিদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। যে তওহিদের জন্য আল্লাহ তায়ালা আম্বিযা কেরামকে প্রেরন
করেছেন। যে তওহিদ ছাড়া মানুষ দুনিয়াতেও নাজাত পাবেনা আখেরাতেও নাজাত পাবেনা। যে তওহিদের
উপর কাজ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা লক্ষ লক্ষ নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সবার সামনে নাজাত দিবেন, তার সামনে নিরানব্বইটি
দফতর খোলা হবে, প্রত্যেক দফতর চোখের দৃষ্টি পরিমাণ লম্বা। অতঃপর তিনি বলবেন: তুমি এর
কিছু অস্বীকার কর? আমার সংরক্ষণকারী লেখকরা তোমার ওপর যুলম করেছে? সে বলবে: না, হে
আমার রব। তিনি বলবেন: তোমার কোন অজুহাত আছে? সে বলবে: না, হে আমার রব। তিনি বলবেন:
নিশ্চয় আমার নিকট তোমার একটি নেকি রয়েছে, আজ তোমার ওপর কোন যুলম নেই, অতঃপর একটি বেতাকা/কার্ড
বের করা হবে, যাতে রয়েছে:
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
তিনি বলবেন: তোমার
(কাজের) ওজন প্রত্যক্ষ কর। সে বলবে: হে আমার রব এতগুলো দফতরের সাথে একটি কার্ড কি
(কাজে আসবে)? তিনি বলবেন: নিশ্চয় তোমার ওপর যুলম করা হবে না।
নিশ্চয় তোমার ওপর
যুলম করা হবে না। তিনি বলেন:
: فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ، وَالْبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ فَطَاشَتْ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتْ الْبِطَاقَةُ، فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ »
অতঃপর সবগুলো দফতর
এক পাল্লায় ও কার্ডটি অপর পাল্লায় রাখা হবে, ফলে দফতরগুলো ওপরে উঠে যাবে ও কার্ডটি
ভারী হবে। আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন জিনিস ভারী হবে না”।
ইবনু মাজাহ ৪৩০০, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৬৩৯
সে জন্য জীবনে তওহিদের ব্যপারে কোন কম্প্রমাইজ
করা যাবেনা, হাদীসে আছে
لاَ تُشْرِكْ
بِاللَّهِ شَيْئًا ؛ وَإِنْ قُطِّعْتَ
أَوْ حُرِّقْتَ،
যদি তোমাকে টুকরা
টুকরা করে দেয়া হয়, যদি তোমাকে জ্বালিয়ে দেয়া হয় তবুও শিরিক করবেনা (আল আদাবুল মুফরাত-১৮)
সুরা আনআমের ৮২ নং
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন
الَّذِينَ آمَنُواْ وَلَمْ
يَلْبِسُواْ إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُوْلَـئِكَ لَهُمُ الأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ
অর্থ্যাৎ- যারা ঈমান
আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই
সুপথগামী।
আজ থেকে আমলনামা ভতি করার জন্য বেশী বেশী লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ জিকির করুন। হাদীস বলছে- (আফদালুয জিকরি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সবচেয়ে আফযল
জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আর রাসুলুল্লাহ (দ) ফরমায়েছেন (ইন্না কাওলা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
তাদফাউ আন কাইলিহা তিসআতান আও তিসঈনা মিনাল বালা আদনাহা আল হাম,) যে বেশী বেশী লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ বলে তার ৯৯টি বলা মসিবত আল্লাহ তায়ালা দুর করে দেন।আর তার মধ্যে সবচেয়ে
ছোট বলা মসিবত হল উদ্বেক উৎকন্ঠা দুশ্চিন্তা। এর থেকে বুঝা যায় বাকী ৯৮টি মসিবত দুশ্চিন্তা
থেকেও বড় ।
দ্বিতীয় আমল - খুবই
ছোট কিন্তু আপনার নেকির পাল্লাকে ভারি করে দিবে। আপনি একবার বলুন আলহামদুলিল্লাহ এই
শব্দটি বলতে কতক্ষন লাগল? মাত্র ১ সেকেন্ড। সহিহ মুসলিমের হাদিস- যে লোক আল্লাহ তায়ালা
তাকে যে অবস্থায় রেখেছে তাতে সন্তুষ্ট থাকে আর বলে আলহামদুলিল্লাহ, হাদিসের ভাষা (আলহামদুলিল্লাহ
তামলাউল মিযান) যে আলহামদুলিল্লাহ বলে কিয়ামতের দিন ২টি পাল্লাই নেকিতে ভরে যাবে। অথচ
সে পাল্লা হল এমন যদি তাতে সাত আসমান ও সাত জমিন রাখা হয় তা ভরেনা।
(আফদালু দোয়াঈ আলহামদুলিল্লাহ)
রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন সবচেয়ে আফযল দোয়া হল আলহামদুলিল্লাহ।
তৃতীয় আমল - খুবই
ছোট কিন্তু তাতে আমলনামা নেকিতে ভরে যাবে।(কালিমাতানি হাবিবাতানি ইলার রাহমান খাফিফাতানে
আলাল লিসান ছাকিলাতানি ফিল মিযান ছুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি ছুবহানাল্লাহিল আজিম)
২টি কলমা আল্লাহর খুবই প্রিয়, জবানে উচ্চারণ করা খুবই সহজ, আর কিয়ামতের দিন আমলনামায়
খুবই ওজনী হবে। কলমাটি হল ছুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি ছুবহানাল্লাহিল আজিম।
অপর হাদিসে আছে-
যে ব্যক্তি শুধু ১০০ বার ছুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহ বলবে আল্লাহ সমুদ্রের ফেনা বরাবর
গুনাহ হলেও তা মাফ করে দেন।
৪থ আমল - রাসুলুল্লাহ
(দ) এরশাদ করেন (আছকালু শায়্যিন ফিল মিযান আল খুলুকুল হাসান ) উত্তম চরিত্র কেয়ামতের
দিন সবচেয়ে ভারী আমল হবে। যা মানুষের আমলনামায় সবচেয়ে ওজনদার হবে। আর উত্তম চরিত্র
দ্বারা উদ্দেশ্য (তালাবুল হালাল, ইজতিনাবুল মাহারিম, ওয়া তাওসিয়াতু আলাল ইয়াল) হালাল
তালাশ করা, হারাম থেকে বেঁচে থাকা, আর ঘরের লোকদের জন্য উদারভাবে খরচ করা।
নবী করিম (দ) এরশাদ
করেন কেয়ামতের দিন আমার সবেচেয়ে নিকটবর্তী হবে সে যার চরিত্র সুন্দর।
৫ম আমল - রাসুলুল্লাহ
(দ) এরশাদ করেন
بَخٍ بَخٍ لِخَمْسٍ مَا أَثْقَلَهُنَّ فِي الْمِيزَانِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ للهِ، وَالْوَلَدُ الصَّالِحُ يُتَوَفَّى لِلْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فَيَحْتَسِبُهُ
বাঃ! বাঃ! পাঁচটি জিনিস মীযানে কতই না ভারী! ’লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ’,
’আল্লাহু
আকবার’,
’সুবহানাল্লাহ’
ও ’আলহামদু
লিল্লাহ’। আর নেক সন্তান, যে
মারা গেলে মুসলিম (মা-বাপ) তাতে সওয়াব কামনা করে।
(নাসাঈর কুবরা ৯৯৯৫, ত্বাবারানী ১৮৩১০, ইবনে হিব্বান ৮৩৩,
হাকেম ১৮৮৫, সঃ তারগীব ১৫৫৭, ২০০৯)
৬ষ্ঠ আমল - যে দোয়াটি
খুবই ছোট ও হালকা কিন্তু আমলনামা ভতি করে দিবে
আল্লাহর রাসুল (দ) এরশাদ করেন যে ব্যক্তি
শুধু এই দোয়া করবে হে আল্লাহ সকল মুমিন পুরুষ এবং সকল মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করে দাও,
(আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত) বলবে আদম (আ) থেকে নিয়ে কেয়ামত পযন্ত
যতগুলি মুমিন নর নারী হবে তত সংখ্যক নেকি তার আমল নামায় লিখে দেয়া হবে।
৭ম আমল - যা খুবই
ছোট, কিন্তু আজকাল আমরা সে আমলটাকে রছম বানিয়েছি, এ জন্য আমলটি করি যদি না করি লোকে
কি বলবে, আর সেটা হল জানাযা, আপনি কয়টি জানাযা পড়েছেন শুধু নেকির নিয়তে? অধিকাংশ লোক
জানাযায় শরিক হয় এই কারনে যদি না যাই তাহলে লোকে কি বলবে? এই চিন্তা থেকে। হাদিসের
বাণী যে জানাযায় অংশগ্রহণ করল উহুদ পাহাড় বরাবর নেকি তার আমল নামায় লেখা হবে।আর যে
দাফন কাজে অংশ গ্রহণ করে আল্লাহ তাকে ২টি উহুদ পাহাড়ের বরাবর নেকি দান করেন। সে জন্য
জানাযার নামাজে নেকির নিয়ত করে যাবেন।
৮ম আমল - যা খুবই
ছোট আমল কিন্তু আপনার আমলনামায় তা অত্যন্ত ভারি হবে।যে লোক খেজুরের বরাবর সদকা করে-
বতমানে ১টি খেজুরের দাম সর্বোচচ ১০ টাকা এর বেশী হবেনা, আপনি মসজিদে দিলেন, কারো হাতে
দিলেন, কারো বিয়ে শাদিতে দিলেন, কোন গরীবের ঔষধ খরচ দিলেন এই সব সদকা কোথায় যায়? আল্লাহর
ডান হাতে চলে যায়।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لاَ
يَتَصَدَّقُ أَحَدٌ بِتَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ إِلاَّ أَخَذَهَا اللهُ
بِيَمِينِهِ
فَيُرَبِّيهَا كَمَا يُرَبِّى أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ أَوْ قَلُوصَهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ أَوْ أَعْظَمَ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি (তার) বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর
পরিমাণও কিছু দান করে আর আল্লাহ তো বৈধ অর্থ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণই করেন না সে ব্যক্তির
ঐ দানকে আল্লাহ ডান হাতে গ্রহণ করেন। (অতঃপর তা ঐ ব্যক্তির জন্য লালন-পালন করেন;) পরিশেষে
তা রহমানের করতলে বৃদ্ধিলাভ করে পাহাড় থেকেও বড় হয়ে যায়। যেমন তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে
লালন-পালন করে থাকে।
(বুখারী১৪১০, মুসলিম
২৩৮৯-২৩৯০, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি
আর সহি বুখারীর ৩টি
কথা মনে রাখবেন -
وَقَالَ عَمَّارٌ: ثَلاَثٌ مَنْ جَمَعَهُنَّ فَقَدْ جَمَعَ الإِيمَانَ الإِنْصَافُ مِنْ نَفْسِكَ، وَبَذْلُ السَّلاَمِ لِلْعَالَمِ، وَالإِنْفَاقُ مِنَ الإِقْتَارِ.
আম্মার (রাযি.) বলেন, তিনটি গুণ যে আয়ত্ত করে,
সে (পূর্ণ) ঈমান লাভ করেঃ (১) নিজ থেকে ইনসাফ করা, (২) বিশ্বে সালামের প্রচলন, এবং
(৩) অভাবী অবস্থাতেও দান খয়রাত করা।
৯ম আমল - রাসুলুল্লাহ
(দ) বয়ান করেন যদি আপনি কারো প্রতি ব্যক্তিগত কারনে রাগ করেন, অথচ রাগ করতে হবে একমাত্র
আল্লাহর জন্য, আর আল্লাহর জন্য রাগ হল - এক লোক গুনাহের কাজ করছে আর আপনি তাকে বুঝালেন
দলিল দিলেন, তবুও সে গুনাহ ছাড়ছে না তখন আপনি রাগ দেখান, আপনার সন্তান ফজরের নামাজ
না পড়ে ঘুমিয়ে আছে সেখানে রাগ দেখান সেটা হবে আল্লারহ জন্য রাগ।কিন্তু আমরা বেশীরভাগ
রাগ করি নিজের জন্য কেউ আপনাকে গালি দিলে আপনি রাগ করেন, কিন্তু কেউ আল্লাহ ও আল্লাহর
রাসুলকে গালি দিয়ে আপনার রাগ আসেনা। সন্তান গ্লাস ভেঙ্গে ফেললে তাকে শাস্তি দেন, কোচিং
মিস করলে বকাঝকা করেন কিন্তু নামাজ মিস করলে কিছুই করেন না।
মুআয ইবনু আনাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি ক্রোধ সংবরণ
করবে অথচ সে তা বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন সমস্ত
সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দিবেন যে, সে যে কোন হুর নিজের জন্য পছন্দ করে নিক।
তিরমিযী ২০২১, ২৪৯৩,
আবূ দাউদ ৪৭৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১৮৬, আহমাদ ১৫১৯২, ১৫২১০
১০ আমল - যে আমলটি
আপনাকে ও আমাকে করতে হবে তা হল রাসুলুল্লাহ (দ) এর এই দ্বীনের দাওয়াতকে পরিবার সমাজ
ও রাষ্ট্রের কোনায় কোনায় পৌঁছে দেয়া। এই কথা গুলি আপনার স্ত্রী পুত্র কন্যার কাছে পৌঁছিয়ে
দিন, আপনার বন্ধুদের কাছে পৌঁছিয়ে দিন, হতে পারে আমার জবানে সে তাছির নাই যে তাছির
আপনার মুখে আছে।
এতে কি পাবেন? (মান
দাল্লা আলা খাইরিন ফালাহু আজরু ) আপনি কাউকে একটি পয়গাম দিলে যতদিন জীবন থাকবে যদি
লক্ষ কোটি মানুষ তা শুনে আমল করে সকলেই সাওয়াব নিজ নিজ আমলের পাবে আর তাদের সকলের বরাবর
সওয়াব আপনার আমলনামায়ও দেয়া হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাকে
ও আপনাদেরকেতৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই