সব আশা পুরণ সব দোয়া কবুল হওয়ার আমল।

 



প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি এমন একটি আমলের কথা বলব যে আমলটি আপনার জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিবে, আপনার সকল চাওয়া পাওয়া এই আমল দ্বারা পুরণ হবে, আপনার সকল দোয়া কবুল হবে, আপনার দুনিয়া ও আখেরাতে অফুরন্ত কল্যাণ নসিব হবে। আপনার মনের সকল আশা আরজু পুরণ হবে।

আমলটি বুঝার জন্য অবশ্যিই প্রতিটি কথা মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে। আশা করি এই আমলটি

 

আমাদের মাঝে কিছু কিছু ভুল কনসেপ্ট আছে যে মুসলমানরা কোন কিছুকে, কোন দিবসকে সেলিব্রেশন করতে পারবেনা। অথচ ইসলামের অধিকাংশ এবাদতেই আছে সেলিব্রেশন

যেমন ৫ ওয়াক্ত নামাজে রয়েছে ৫ জন আম্বিয়ার স্মৃতি

যেমন

১)ফজরের ২ রাকাত আদম (আ)

২) যুহরের ৪ রাকাত হযরত ইবরাহিম (আঃ)

৩) আসরের ৪ রাকাত হযরত দাউদ (আঃ)

৪) মাগরিবের ৩ রাকাত আইউব (আঃ)

৫) এশারের ৪ রাকাত আমাদের নবীর স্মৃতি

 

#কুরবানীতে হযরত ইবরাহিম ও ইসমাইলের স্মৃতিই মুখ্য

# হজ্জে এহরাম হযরত ইবরাহিম (আ) এর পোষাকের স্মৃতি

# তলবিয়াতেও ইবরাহিমের স্মৃতি

# তাওয়াফেও ইবরাহিমের স্মৃতি

# ৩ চক্করে রমল করা মুলত সাহাবীদের সুন্নত যা আজো পালন করতে হয়

মুসলমানদের হিজরতের পর মক্কার মুশরিকরা বলাবলি করতে লাগলো যে, ইয়াসরিবে (মদিনা) হিজরতকারী মুসলমানরা আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে দুর্বল ও রুগ্ন হয়ে গেছে। মুশরিকদের এ অহেতুক মিথ্যা অপবাদের প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে তাওয়াফের সময় প্রথম ৩ চক্করে রমল তথা বীরদর্পে বাহাদুরি সুলভভাবে চলার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে হজ ও ওমরার ফরজ তাওয়াফে আজও সে বিধান অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

#মকামে ইবরাহিমে হযরত ইবরাহিমের পদচিহ্ন কিন্তু নবীজি মক্কা বিজয়ের দিন সব মুতি ফেলে দেয়ছেন নবী ইবরাহিমের পদচিহ্নিত সে পাথরকে মক্কার সামনে সংরক্ষন করে রাখলেন আর আল্লাহ বলছেন (ওয়াত্তাখাজু মিম মাকামি ইবরাহিমা মুসাল্লা) তাওয়াফের পর এই ইবরাহিম (আ) এর পদ চিহ্ন সম্বলিত পাথরকে সামনে রেখে ২ রাকাত নামাজ না পড়লে আপনার তাওয়াফ কবুল হবেনা।

দেখুন আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিটি পদে পদে সেলিব্রেশন শিক্ষা দিচ্ছেন।

# ছাফা মারওয়া হাজেরার দৌড়া দৌড়ির স্মৃতি

# জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হয় তা ইসমাইল (আ) এর পায়ের আঘাতে সৃষ্ট পানি, দুনিয়ার সব পানি বসে পান করতে হয় ২ টি পানি সম্মানাথে দাঁড়িয়ে পান করতে হয় জমজম ও অজুর অবশিষ্ট পানি।

# আরাফাতে অবস্থায় হজ্বের প্রধান ফরয, সেখানে শুধু অবস্থান করতে হবে, সেটা হল আদাম ও হাওয়া (আ) এর একে অপরের সাথে পরিচয়ের স্থান দেখা হওয়ার স্থান

# তারপর ৩ দিন ব্যাপী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হবে সেখানে অথচ শয়তান নাই তবুও হযরত ইসমাইল (আ) এর স্মৃতিকে তাজা করাই উদ্দেশ্য।

এভাবেই আল্লাহ তায়ালা পুরা হজ্বের সব আমলগুলি মুলত নবীদের স্মরণকে তাজা করেছেন।

রবিউল আউয়াল মাস আসলে মুসলমানরা আনন্দিত হয়ে সে মাসে নবীজির বেলাদতকে সেলিব্রেশন করে, এই সেলিব্রেশন কতটা বরকতের তা কয়েকটি হাদিস শুনলে বুঝতে পারবেন, আর আপনি এই আমল দ্বারা কি কি বরকত লাভ করবেন তাও জানতে পারবেন।

হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জন্মের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস এমন সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উপস্থিত হয়ে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে (আমের আনসারীকে) বললেন,

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সমস্ত রহমতের  দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতারা আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাজাত (ফযীলত) লাভ করবে। (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর) (আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতির সাবিলুল হুদা))

প্রতিটি মিলাদ মাহফিলে শুরুতে মাঝে মাঝে এবং শেষে দরুদ শরীফ পড়া হয় আর এই দরুদ একটি মিলাদ মাহফিলে আর কিছু না হলেও এই দরুদ শরীফ এর আধিক্যই বান্দার জন্য রহমত বরকত এবং গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট।

নাসাই হাদীস নং ১২৮৬:

আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সানন্দে আমাদের কাছে আসলেন। আমরা বললাম, (আজ) আমরা আপনার চেহারায় প্রফুল্লতা দেখছি! তিনি বললেন, আমার কাছে (একজন) ফেরেশতা এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রভু বলছেন যে, আপনাকে কি একথা খুশি করবে না, যে ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরুদ পড়বে আমি তাঁর উপর দশটি রহমত নাযিল করব। আর যে ব্যক্তি আপনার উপর একবার সালাম পাঠাবে আমি তাঁর উপর দশটি শান্তি বর্ষণ করব (সালাম পাঠাব)।

দেখুন শুধু ১বার দরুদ ১বার সালাম পাঠ করার দ্বারা আল্লাহ আমাদের প্রতি ১০ বার ১০ বার দরুদ ও সালাম পাঠাবেন বলছেন, এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কি হতে পারে?

অনেক মানুষ আছেন যাদের দোয়া কবুল হয়না মনের আশা পুরণ হয়না তারা মিলাদ মাহফিল ও দরুদ ও জিকিরে নাতের মাধ্যমে বা তাতে সহযোগীতার মাধ্যমে খুব সহজে হাসিল করতে পারে, আপনি নবীর মিলাদ জিকির ও দরুদের মাহফিলে সহযোগীতা করলে কিংবা নিজে এই ধরনের মাহফিলে আসলে বসলে অংশ গ্রহণ করলে আল্লাহ আপনার সব দোয়া কবুল করে নিবেন। আপনার মনের সব আশা আরজু পুরণ করে দিবেন।

যেমন সুনানে নাসাঈর ১২৮৭ নং হাদীস

---

ফাজালা ইবনু উবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সালাতে দোয়া করতে শুনলেন সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসাও করল না এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরুদও পড়ল না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে মুসল্লী! তুমি দোয়া খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলেছ।

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসল্লীদের দোয়া শিক্ষা দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে সালাত আদায় করল এবং আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য বর্ণনা করল, তার প্রশংসা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) বললেন, তুমি দোয়া কর, তা কবুল করা হবে এবং আল্লাহর কাছে চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।

এ হাদীসে আমরা দেখতে পাচ্ছি হুজুর (দ) যে ব্যক্তি দরুদ শরীফ পাঠ ছাড়া দোয়া করল তার দোয়া কবুল না হওয়ার ঘোষনা দিলেন আর যে ব্যক্তি দরুদ শরীফ পড়ে দোয়া করেছেন তাকে বলছেন (উদউ তুজাব ওয়াছাল তুওতা) দোয়া কবুল হবে যা চাও তাই দেয়া হবে। এখন আমরা দেখতে পাই মিলাদ মাহফিল সমুহে অসংখ্য দরুদ সালাম এর পর দোয়া করা হয় আর সবশেষে দোয়া করা হয় তাহলে এ হাদীস থেকে নিশ্চিত আপনি যদি সে দোয়াতে উপস্থিত হয়ে নিজের মনের আশা আরজু আল্লাহর কাছে পেশ করতে পারেন তা আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।

সুনানে নাসাঈর ১২৯৮ নং হাদিস

আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন (আমাদের কাছে) আগমন করলেন। তখন তার চেহারায় প্রফুল্লতা দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল। তিনি বললেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমার কাছে এসে বলল, "ইয়া মুহাম্মাদ! আপনাকে কি এই সংবাদ খুশি করে না যে, আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যদি কোন ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার দশবার মাগফিরাত চাইব, আর কেউ যদি আপনাকে একবার সালাম পাঠায় আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাব।"

নিশ্চিতভাবে যারা নবীর মিলাদে অংশ গ্রহণ করেন তারা নবীর প্রেম ভালোবাসা এশক মুহাব্বত অন্তরে ধারন করেই মিলাদ মাহফিলে আসেন তাদের ব্যপারে

মরক্কোর ইসলামী পন্ডিত সোলাইমান জাজুলি (রহ) তার প্রসিদ্ধ কিতাব দালায়েলুল খায়রাতে ১টি হাদীস নকল করেন

নবী (সাঃ)কে প্রশ্ন করা হল- হে নবী! যারা অনুপস্থিত এবং যারা আপনার পরে পৃথিবীতে আসবে তাদের পঠিত দুরূদ আপনার কাছে কিভাবে পৌছবে? নবী (সাঃ) জবাবে বললেন- যারা আমার আশিক তাদের দুরূদ আমি নিজ কানে সরাসরি শুনি ও তাদেরকে চিনি। আর অন্যান্যদের দুরূদ আমার নিকট ফেরেস্তাদের মাধ্যমে পেশ করা হয়। (দালাইলুল খাইরাত)।

অতএব এই মিলাদ মাহফিলে নবীর প্রতি বেশী দরুদ পড়া হয় সে দরুদ ও সালামের আধিক্যের কারনে এ ধরনের মাহফিল কবুল হয়  েএসব মাহফিলে যে দোয়া করা হয় তা কবুল হয়, যা চাওয়া হয় আল্লাহ বান্দার সে চাওয়া কবুল করেন, তাই এমন মাহফিলে অংশ গ্রহণ করে বেশী বেশী দরুদ সালাম ও দোয়াতে শরিক হওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেককে তৌফিক দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.