আয়াতুল কুরসির ফজিল ও আমল


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আসসালামু আলাইকুম অল বাংলা চ্যানেলের প্রিয় বন্ধুরা। আজ আমি আপনাকে আয়াতুল কুরসি এমন এক পরীক্ষিত আমল সম্পর্কে বলব, এবং এটাও বলব যদি ৫ বার এই আয়াতুল কুরসি পড়ার অভ্যাস করেন তাহলে আপনার কি কি উপকার হবে।১০০০ বার পড়লে কি কি ফায়দা হবে।

প্রিয় বন্ধুরা!

হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিতআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন প্রতি ফরয নামাযের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না

হযরত উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিততাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনতুমি কোন্ জাতিরজিন না মানবসে বললজিন। তিনি বললেনতোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বললএটা জিনের গঠন। সে আরো বললজিনেরা জানেতাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেনকী উদ্দেশ্যে এসেছসে বললআমি জানতে পেরেছিআপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেনতোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কীসে বললসূরা বাকারার এই আয়াতটি

اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ  اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ...

যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনখবীস সত্য বলেছে। সহীহ ইবনে হিব্বানহাদীস ৭৮৪মুসতাদরাকে হাকেমহাদীস ২০৬৪

 

এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে এক আশ্চর্য ঘটনা বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেনআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানে যাকাত (সাদাকাতুল ফিতরের খেজুর) দেখা-শোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (রাতে) এক আগন্তুক এসে সেই (স্তুপিকৃত) খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললামতোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির করব। সে বললদেখুনআমি এক অভাবীপ্রয়োজনগ্রস্ত ও পরিবারের ভারগ্রস্ত লোক! আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনআবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দীর কী হাল?! আমি বললামইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার অভাব-অনটন ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলায় আমার দয়া জেগেছে। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনদেখসে তোমাকে মিথ্যা বলেছেসে আবারো আসবে।

ফলে আমার জানা হয়ে গেলরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলেছেন আসবেঅবশ্যই সে আসবে। আমি তার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে রইলাম। ইতিমধ্যে সে এসে সেই স্তুপিকৃত খাদ্যবস্তু থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললামতোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির করবই। সে তখন বলতে লাগলআমাকে ছেড়ে দিন। আমি তো অভাবী লোকপরিবারের ভারগ্রস্তআর আসব না। তার এ কথায় আমার দয়া হল। ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনতোমার বন্দীর কী খবরআমি বললামইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার প্রচণ্ড অভাবগ্রস্ততা ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলছিলতাই আমার দয়া হয়েছেতাকে ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি বললেনদেখসে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারো আসবে।

তাঁর এ কথায় তৃতীয় রাতেও আমি অপেক্ষায় রইলাম। একপর্যায়ে সে এসে মুঠি ভরে খাদ্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলিএবার তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির করেই ছাড়ব। এ নিয়ে তিনবার ঘটল যেতুমি বলআসবে নাকিন্তু আবারো আস। সে তখন বললআমাকে ছেড়ে দিন। আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দিবযার দ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন। বললামকী সেই কথাসে বললযখন বিছানায় যাবেন তখন আয়াতুল কুরসী পড়বেন اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُو اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত আপনার জন্য একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে ভিড়বে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনগত রাতে তোমার বন্দী কী করলবললামইয়া রাসূলাল্লাহ! সে বলল যেআমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেবেযার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।

জিজ্ঞাসা করলেনসে কথাগুলো কীবললামসে বলেছেযখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। সে বললআল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত তোমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর (সকাল পর্যন্ত) কোনো শয়তান তোমার কাছে ভিড়বে না। সাহাবীগণ তো কল্যাণের ব্যাপারে খুবই লালায়িত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑ

أَمَا إِنّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ.

শোনসে তোমাকে সত্যই বলেছেযদিও সে ডাহা মিথ্যুক। এরপর বললেনআবু হুরায়রা! তুমি কি জান পরপর তিন রাত কার সাথে কথা বলেছতিনি বললেননা।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

ذَاكَ شَيْطَانٌ.

সে ছিল এক শয়তান।

 

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।

অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি (রহ) ফরমান যে ফতোয়ায়ে জাহরিয়াতে লিখা আছে যে লোক আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘর থেকে বের হবে আল্লাহ তায়ালা ৭০ হাজার ফেরেশতাকে হকুম দেন সে ঘরে ফিরে আসা পযন্ত তার জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাক। আর যে লোক আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘরে প্রবেশ করবে তার ঘর থেকে আল্লাহ তায়ালা দারিদ্রতা দুর করে দিবেন।

মুঈনুদ্দিন চিশতি (রহ) আরো বলেন আমি জামেউল হেকায়াত এর লিখা দেখেছি যে বাগদাদে এক দরবেশ ছিল এক রাতে তার ঘরে চোর প্রবেশ করল, দরবেশ আয়াতুল কুরসি পাঠ করে কোথাও গিয়েছিলেন, দরবেশের ঘরে প্রবেশকারী চোর ঘরে ঢুকার পর অন্ধ হয়ে গেল। দরবেশ যখন নিজের ঘরে আসলেন সে চোরকে দেখে জিজ্ঞেস করল, তুমি কে এবং কেন এসেছ? সে বলল আমি চোর চুরি করার জন্য আপনার ঘরে প্রবেশ করেছি। কিন্তু আমি ঘরে ঢুকতেই অন্ধ হয়ে গেলাম, আপনি দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন আর আমার জন্য দোয়া করুন যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে। আমি এই কাজ আর জীবনে করবনা বলে তওবা করছি। তখন সে বুযুগ মুচকি হাসলেন আর বললেন তোমার চোখ খুল সে চোখ খুলল আর দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেল।

হযরত বাবা ফরিদ উদ্দীন গঞ্জশকর (রহ) আয়াতুল কুরসির ফজিলত বয়ান করতে গিয়ে এরশাদ করেন যে দিন আয়াতুল কুরসি নাজিল হয়েছে তখন ৭০ হাজার ফেরেশতা নাজিল হয়েছে। যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার প্রতিটি হরফের বদলায় অফুরন্ত নেকি তার আমলনামায় লিখা হবে।

আবদুল ওহাব শারানি (রহ) ফরমান যে ব্যক্তি দিন রাত ২৪ ঘন্টায় ১০০০ বার আয়াতুল কুরসি ৪০ দিন যাবৎ পড়বে, পরওয়ারদিগারের কসম এই আয়াতের রুহানি চিহ্ন সে নিজ চোখে দেখতে পাবে। ফেরেশতারা তার সাথে সাক্ষাতে আসবে এবং তার সকল মকসদ ও মনের আশা পুরণ হবে।

বন্ধুরা চেষ্টা করা বান্দার কাজ অনেক সময় আল্লাহ তায়ালা মামুলি চেষ্টার বদৌলতে সফলতা দান করেন, সব কিছুর মালিক আল্লাহ। তিনি যা চান তাই হয়, আমাদের কাজ হল জায়েজ মকসদ পুরণের জন্য শরীয়ত সম্মত জায়েজ দোয়া আমল ও ওজিফাসমুহ পালন করা। সকল হালতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াই হল বান্দার কাজ।

প্রিয় বন্ধুরা আয়াতুল কুরসি শুধু মাত্র কুরআনের ১টি আয়াত, যার এত ফজিলত, এখন কেহ যদি পুরা কুরআন পড়ে তার ফজিলত কতটুকু হবে একবার ভেবে দেখুন। আমাদের উচিত নিয়মিত কুরআন পাঠ করা। কমপক্ষে ৪০ দিনে এক খতম কুরআন পড়া। প্রিয় বন্ধুরা কুরআন পাঠ করুন বুঝুন তার উপর আমল করুন। এতেই আছে আসল কামিয়াবি। যদি আপনি পড়তে অপারগ হন তাহলে ওলামায়ে কেরামের স্মরণাপন্ন হয়ে যান। কেননা কবরের কঠিন মুহুতে দুনিয়ার কোন ডিগ্রী কাজে আসবেনা। যদি কোন কিছু কাজে আসে তা হল কুরআন শিখা শিখানো এবং তার উপর আমল করা।

আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি তিনি আমাদেরকে কুরআন শিখার বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 


কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.