হযরত সুলাইমান (আ) এর ইসমে আজম
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
হযরত সুলাইমান (আ) এর ইসমে আজম
প্রিয় বন্ধুরা আসসালামু
আলাইকুম। কিছু কিছু লোকের ধারনা ইসমে আজম আল্লাহ তায়ালার ১টি খাস নাম, কিন্তু এমন
ধারনা ভুল। হাদীস শরীফ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, ইসমে আজম আল্লাহ তায়ালার শুধু
১টি গোপন নাম ন”য়। বরং অনেকগুলি আল্লাহর নামকে আলাদা আলাদা ইসমে
আজম বলে ঘোষনা করা হয়েছে। নবী করিম (দ) এর কথার উপর আর কারো কথা হতে পারেনা।
সুতরাং যে সব লোক এই কথা প্রচার করছে যে ইসমে আজম আল্লাহ তায়ালা একটি নিদৃষ্ট নাম,
সে ভুলের মধ্যে আছে।
কুরআনে পাকের ২ জায়গায়
ইসমে আজম এর ব্যপারে সুস্পষ্ট জিকির এসেছে।
প্রথমত সুরা আরাফের ১৭৫
নং আয়াতে
বালাম বিন বাউরার কাছে ইসমে আজম থাকার ইশারা পাওয়া যায়।
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِيَ آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ
আর আপনি
তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম,
অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে
পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। [সুরা আরাফ - ৭:১৭৫]
দ্বিতীয়ত
সুরা নামল এর ৪০ নং আয়াতে হযরত সুলাইমান (আ) এর উজির হযরত আসেফ বিন বারখিয়ার কাছে
ইসমে আজম থাকার ইশারা পাওয়া যায়।
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَذَا مِن فَضْلِ رَبِّي
কিতাবের
জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে
এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার
পালনকর্তার অনুগ্রহ, [সুরা নাম’ল - ২৭:৪০]
এই ২টি আয়াতে
বলে দেয়া হয়েছে এই দুইজন ব্যক্তির কাছে কিতাবের জ্ঞান তথা ইসমে আজম ছিল। যার বরকতে
তারা নিজের দোয়াসমুহ কবুল করাতেন। এবং বিভিন্ন ধরনের কারামত দেখাতেন।
কিন্তু
সেটা কোন ইসমে আজম ছিল তার ব্যপারে আজ আপনাদেরকে বিস্তারিত বয়ান করব। যাতে আপনিও
এই ইসমে আজম থেকে ফায়দা হাসিল করতে পারেন। এই ইসমে আজম দিয়ে দোয়া করতে পারেন ভাগ্য
পরিবর্তণ করতে পারেন।
ইসমে
আজমটি জানলে আপনি সে ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করে মনের দিলের সকল নেক মকসদ সকল আশা
আরজুর কথা আল্লাহর কাছে বলতে পারেন ফলে আপনার সকল আশা আরজু আল্লাহ তায়ালা পুরণ করে
দিবেন।
আপনার
কাছে অনুরোধ ইসমে আজমটি জানার জন্য শেষ পযন্ত ভিডিওটি দেখবেন।
আজকাল
মানুষ অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখিন, পেরেশানিতে লিপ্ত, কেউ জানেনা সে তার সমস্যা
কিভাবে সমাধান করবে, নিজের অভাব দুর করবে, এর সাথে সাথে বেকার সমস্যা, রিজিকের
সমস্যা অনেক বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিয়ে শাদিতেও অনেক ধরনের বাধা বিপত্তি সৃষ্টি
হয়। মানুষ সন্তানকে সন্তুতিকে খুব বেশী উপযুক্ত করে গড়ে তুলে কিন্তু তার সে
যোগ্যতা মোতাবেক ভালো বর কনে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়, বর কনে পেলেও তাতে কোন না কোন
বাঁধা সৃষ্টি হয়। মানুষ আল্লাহ থেকে দুরত্ব বজায় রেখেছে। কেউ জানে না যে সকল
সমস্যার সমাধান, সকল মসিবতের সমাধান, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে পাকে রেখে দিয়েছেন। যদি
কেহ এতে চিন্তা ভাবনা করে এর জন্য সময় ব্যয় করে, তাহলে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ
করতে পারে।
আজ এই
ব্যপারে হযরত সুলাইমান (আ) এর ঘটনা এবং তার ইসমে আজম আপনাদের সাথে শেয়ার করতে
যাচ্ছি। হযরত সুলাইমান (আ) কোন ইসমে আজম জানতেন এবং সে ইসমে আজম দিয়ে তিনি কিভাবে
জীবন যাপন করেন, সে ব্যপারে নবী করিম (দ) এর এরশাদ আল্লাহর সে ইসমে আজম যখন তা দ্বারা দোয়া করা হয়
সে দোয়া কবুল হয়। তা কুরআনে পাকের ৩টি সুরার মধ্যে বিদ্যমান। সুরা বাকারা সুরা আল
ইমরান আর সুরা ত্বহা। এই ৩টি সুরা পড়ে জানা যায় যে, সে ইসমে আজম কোনটি। নবী করিম
যখন ইশারা দিলেন এই ৩ সুরাতে ইসমে আজম আছে তখন সাহাবী গবেষনা করে পেলেন ৩টি সুরাতে
আল্লাহর ২টি নাম আছে আর তা হল (হাইয়্যুন কাইয়্যুম) অতএব এয়া হাইয়্যু এয়া
কাইয়্যুম হল একটি ইসমে আজম যা বলে দোয়া
করবেন।
ইসমে
আজমের একটি স্বভাব ধম হল যদি এই ইসমে আজম কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তি জানে তাহলে তা
দ্বারা সে অন্য কাউকে কোন ক্ষতি বা উপকার করতে পারেনা। ইসমে আজমের যে উপকার ও
অপকারের শক্তি ও তাছির থাকে তা আল্লাহ তায়ালার এক বড় নেয়ামত। যা আল্লাহ তায়ালা তার
প্রিয় ও খাস বান্দাদেরকে দান করেন। যে বান্দা যত বেশী আল্লাহ ফরমাবরদারি করে, সে
হিসেবে তার ইসমে আজমের শক্তি ও প্রভাব দান করা হয়। ইবনে মাজাতে একটি হাদিস আছে
রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেন সুলেমান বিন দাউদ (আ) একবার নসিহত করেন প্রিয় সন্তান
রাতভর ঘুমের মধ্যে কাটাবেনা, কেননা রাতের পুরা অংশ নিদ্রায় কাটানোর ফলে মানুষকে
কিয়ামতের দিন ভালো আমলের মুখাপেক্ষি বানিয়ে দেয়।
আল্লাহ
তায়ালা হযরত সুলেমান (আ) কে অনেকগুলি মুজেজা দান করেছেন, এমন বড় বাদশাহি অন্য কারো
নসিব হয়নি, মানুষ ছাড়াও জিনদেরকেও তার অনুগত করে দেয়া হয়েছে। সব ধরনের জানোয়ারকে
শুধু তার অনুগত করা হয়নি বরং সকল জানোয়ারের ভাষা বুঝার এবং তাদের সাথে কথা বলার
ক্ষমতাও দান করেছেন। বাতাসকে তার অনুগত করে দেয়া হয়েছে তিনি এক মাসের সফরকে
বাতাসের দ্বারা মুহুতে করে ফেলতেন।
আমাদের
নবীর প্রতি হযরত সুলেমান (আ) এর খাস ভালোবাসা ছিল। হযরত সুলেমান (আ) কাবা ঘরে
তাওয়াফ করার পর ৫ হাজার উট, ২০ হাজার দুম্বা কুরবানি দেন, এবং তিনি তার উম্মতদেরকে
বললেন এটা সে স্থান যেখানে আখেরী নবীর আগমন হবে।
হযরত
জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা) হতে বণিত তিনি বলেন নবী করিম (দ) এরশাদ করেন হযরত
সুলেমান বিন দাউদ (আ) এর আংটিতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ নকশা
ছিল, নবী করিম (দ) এরশাদ করেন তার আংটির রং ছিল আকাশি কালার। তিনি এই আংটির বরকতে
তার রাজত্বি খুব সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতেন। যখন এই আংটি তার কাছে থাকতনা তখন তার
অন্তরে শান্তি অনুভব করতেন না। মুলত হযরত সুলেমান (আ) এর এই আংটি এবং তার মধ্যে
কলমা তৈয়বই ছিল তার ইসমে আজম।
আমরাও যদি
এই কলমাকে হৃদয়ে ধারন করি এবং এর যা যা শরীঈ তাকাদা তা পুরণ করি তাহলে আমাদের
দোয়াও আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন। আমাদের এই আমল করতে প্রতিদিন ৭ বার কলমাটি পড়তে
হবে এবং তার আগে ও পরে ৩ বার করে দরুদ শরীফ পড়তে হবে। এরপর আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া
করবেন। এবং যে দোয়া করবেন সে দোয়াই কবুল হবে। ইনশা আল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই