রাতে বিছানায় ঘুমানোর আগে দোয়া ও আমল গুলি করলে সব চাওয়া পুরণ হবে

 

রাতে বিছানায় দোয়াটি করলে

সব চাওয়া পুরণ হবে।



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, প্রিয় বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম, আজকে রাতে বিছানায় ঘুমানোর আগের আমলসমুহ পবিত্র হাদীস শরীফের আলোকে আপনাদের সামনে তুলে ধরব, যে দোয়া ও আমলগুলি করলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। এবং রাতে বিছানায় এমন একটি দোয়া আছে যেটি পড়ার ফলে আপনার সকল চাহিদা আল্লাহ তায়ালা পুরণ করে দিবেন বলে বুখারী শরীফের হাদীসে উল্লেখ আছে।

যাদের দোয়া কবুল হয়না, কোন চাওয়া পুরন হয়না তাদের জন্য আজকের আলোচনাটি খুবই মূল্যবান, তাই খুব মনযোগ দিয়ে শুনার অনুরোধ রইল।

সন্ধ্যা ৭টার সময় সব ধরনের ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে দুরে থাকুন, মোবাইল সুইচ অফ করে আলমারিতে রেখে দিন, যারা বলে রাতে ঘুম হয়না তাদের ঘুম আসতে বাধ্য। এশার নামাজ পড়ে কোরআন পড়ুন, কিচুক্ষণ হাদিসের কিতাব পড়ুন, কোন সাহাবী আউলিয়া কেরামের জীবনী পড়ুন দেখবেন কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনার ঘুম চলে আসবে কারন তখন শয়তান এসে আপনার পা টিপবে।

ঘুমের আগে কয়েকটি সুন্নত আমল ও দোয়া আছে সেগুলি একটার পর একটা বলব যেগুলি শতকরা ৯৫% লোক জানেনা জানলেও করেনা।

অনেকে এসব দোয়া আমল না করেই ঘুমিয়ে যায় অথচ ঘুমটা হল মৃত্যুর মত, এই ঘুমের মাঝেই অনেকে মৃত্যু বরণ করে, যদি ঘুমের আগে কয়েক মিনিট খরচ করে এই দোয়া ও আমলগুলি করে নেন তাহলে আপনার মৃত্যু হলেও সেটা হবে ঈমানের উপর মৃত্যু।

প্রথম আমল হল অজু করা  বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিস নবী করিম (দ) এরশাদ করেন যখন রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিবে তখন নামাজের অজুর মত অজু করবেন,

অজু করে আপনি সারাদিনের গুনাহ থেকে পাক হয়ে যেতে পারবেন যেমন তিরমিজি শরীফের ২ নং হাদিস

 আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুমিন অথবা মুসলিম বান্দা ওযু করে এবং মুখমণ্ডল ধোয়, তার মুখমণ্ডল হতে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার দুহাত ধোয়, তার দুহাতে কৃত সকল গুনাহ তার হাত হতে পানির সাথে অথবা পানির অবশিষ্ট বিন্দুর সাথে দূরীভূত হয়ে যায়। অতঃপর সে সকল গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে যায়

এরপর ঘুমানোর আগে বিছানা লুঙ্গির নিচের অংশ দিয়ে বা কাপড়ের আচল দিয়ে বিছানা ঝাড়বেন, কেননা হুজুর (দ) বলেছেন আপনি জানেন না আপনার অবর্তমানে বিছানায় কি কি ছিল, সেখানে পোকা মাকড় অদৃশ্য কোন জিন বা ভাইরাস থাকতে পারে তা ঝেড়ে নিলে সব থেকে নিরাপদ হয়ে গেলেন।

এরপর বিছানায় গিয়ে ১ম দোয়া পড়বেন

اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ اللَّهُمَّ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ

উচচারণ: আল্লাহুম্মা আসলামতু ওয়াজহিয়া ইলাইকা ওয়া ফাওয়্যাদতু আমরি ইলাইকা ওয়ালজাতু জাহরি ইলাইকা রাগবাতান ওয়ারাহবাতুন ইলাইকা লা মালজাআ ওয়ালা মানজাআ মিনকা ইল্লা ইলাইকা আল্লাহুম্মা আমানতু বিকিতাবি কাল্লাজি আনজালতা

হে আল্লাহ্! আমার জীবন আপনার কাছে সমর্পণ করলাম। আমার সকল কাজ আপনার কাছে সোপর্দ করলাম এবং আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম, আপনার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। আপনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল ও নাজাতের স্থান নেই। হে আল্লাহ্! আমি ঈমান আনলাম আপনার নাযিলকৃত কিতাবের উপর এবং আপনার প্রেরিত নবীর উপর।

এই দোয়া পড়ে ঘুমালে যদি সে ঘুমে আপনার মৃত্যু হয় প্রিয় নবীজি এরশাদ করেন আপনার মৃত্যু হবে দ্বীন ধম ইসলামের উপর।

এরপর নিজের ডান হাত মাথার নিচে বা ডান গালের নিচে রেখে এই দোয়াটি ৩ বার পড়বেন

তিরমিজি শরীফের ৩৩৯৮ নং হাদিস যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন, সে সময় তিনি নিজের (ডান) হাত মাথার নীচে রেখে বলতেনঃ

اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَجْمَعُ عِبَادَكَ 

উচ্চারণ: (আল্লাহুম্মা কিনি আযাবাকা এয়াউমা তাজমাউ ইবাদাকা )

হে আল্লাহ! যেদিন তোমার বান্দাদের একত্রিত করবে সেদিন তোমার আযাব থেকে আমাকে রক্ষা করবে।

এরপর ৩য় ১টি দোয়া পড়বেন যেটি মুসলিম শরীফের ২৭১৪ নং হাদিসে উল্লেখ আছে

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبِّي بِكَ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَاغْفِرْ لَهَا وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণ সুবহা- নাকাল্লা-হুম্মা রব্বী বিকা ওয়াদাতু জামবী ওয়াবিকা আর ফাউহু ইন্‌ আমসাক্‌তা নাফসী ফাগফির লাহা- ওয়া ইন্‌ আরসালতাহা- ফাহফাযহা- বিমা- তাহফাযু বিহি ইবা-দাকাস সলিহীন"

হে আমার প্রতিপালক! আপনি পবিত্র। আপনার নামেই আমি আমার পার্শ্ব (পাঁজর) রাখলাম, আপনার নামেই তা উঠাব। আপনি যদি আমার প্রান বায়ু নিভিয়ে দেন তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি আপনি তাকে উঠবার অবকাশ দেন তাহলে তাকে হিফাযত করুন, যেমন আপনি আপনার নেক বান্দাদের হিফাযত করে থাকেন।

এরপর ৪থ দোয়া বুখারী শরীফের ৬৩২০ নং হাদীসে আরো ১টি দোয়ার উল্লেখ আছে তা হল

بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণ: বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাআতু জানবি, ওয়াবিকা আরফাউহু ইন আমছাকতা নাফসি ফারহামহা ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজা বিহিস সোয়ালিহিন 

হে আমার প্রতিপালক! আপনারই নামে আমার দেহখানা বিছানায় রাখলাম এবং অপনারই নামে আবার উঠাবো। যদি আপনি ইতিমধ্যে আমার জান কবয করে নেন; তা হলে, তার উপর দয়া করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাযত করবেন! সেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হিফাযত করে থাকেন।

এরপর ৫ম দোয়াটি আবু দাউদ শরীফের ৫০৪৯ নং হাদিস  হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেনঃ ’’আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আহইয়া ওয়া অমূতু’’ (অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মরি ও বাঁচি)।

তাছাড়া রাতে খোলা ছাদে ঘুমানো নিষেধ যেমন আবু দাউদের ৫০৪১ নং হাদিস

আব্দুর রাহমান ইবনু ইয়ালা ইবনু শাইবান (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি দেয়ালবিহীন ছাদে রাত কাটালে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে না

ঘুমানোর সময় উপুর হয়ে ঘুমানোর ব্যপারে আবু দাউদের ৫০৪০ নং হাদিস নবী করিম (দ) বলেন উপুড় হয়ে শোয়াকে আল্লাহ পছন্দ করেনা। সুতরাং আমাদের উচিত চিত হয়ে বা ডান কাত হয়ে ঘুমানো।

এভাবে ঘুমাবেন মাঝ রাতে যখন ঘুম ভেঙ্গে যাবে ১টি দোয়া পড়বেন তাহলে আপনার জীবনের সব চাওয়া আল্লাহ পুরণ করে দিবেন।

দোয়াটি হল বুখারীর ১১৫৪ নং হাদিসে দোয়াটি উল্লেখ আছে

(সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি  ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা   ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম)

আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন


কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.