দরুদে তুনাজ্জিনার ফজিলত ও আমল। Durood e tunajjina
প্রিয় দ্বিনী ভাই বোনেরা আজকে শায়খ আবু আবদুল্লাহ হামেদ শামি (মজিআ) এর পক্ষ থেকে এমন এক আমল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব, যে আমলটির ব্যপারে শায়খ বলেন আমি এই আমলটি ২০১০ সালে করেছি, অর্থ্যাৎ এ আমলটির যে রিয়াজত করতে হয় চিল্লা করতে হয়, তা আমি ২০১০ সালে করেছি, এই আমলটি করার জন্য আমি আপনাদেরকে এজাজত দিচ্ছি। আমলটি খুবই সহজ, অতি ছোট আমল, এবং অত্যন্ত শক্তিশালি ও পরীক্ষিত আমল। আমলটি ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বৃদ্ধও করতে পারবে, নারী পুরুষ, বালেগ নাবালেগ সকলেই এই আমলটি করতে প ারবে।
যাদের চাকরীর সমস্যা, চাকারি হচ্ছেনা, যাদের ব্যবসার সমস্যা ব্যবসা যাদের চলছেনা, বে বরকতির সমস্যা, রোগ ব্যাধির সমস্যা, আর এমন রোগ যে আপনি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন ডাক্তারও কোন সমাধান দিতে পারছেন না। অথবা আপনি ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার টেস্ট করান সকল টেস্টই নরমাল এসেছে, অর্থ্যাৎ কি রোগ তা ধরতে পারছেনা। দিন দিন স্বাস্থ্য খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন রোগী এমন সমস্যাগ্রস্থ লোক যদি আপনার জানাশুনার মধ্যে কে থাকে তাহলে এই আমল তাকে পৌঁছে দিবেন। সে জন্য আমি বলি আপনি যে কোন আমল আমানতদার হিসেবে শুনবেন, যদি আমলটি ওজিফাটি আপনার প্রয়োজন না হয় তাহলে যার প্রয়োজন আছে তার কাছে শেয়ার করে দিবেন।
আর যদি আপনার সমস্যার সাথে মিলে যায় তাহলেতো নুরুন আলা নুর সুতরাং আপনি নিজেও আমল করুন এবং অন্যকেও এই আমলের ব্যপারে বলুন। আমার স্ত্রী আজ সকালে আমাকে বলছেন যে জিনিষের কমতি আছে সেটা মানুষের কাছে বন্টন করতে থাক তাহলে আল্লাহ সে কমি দুর করে দিবেন। অর্থ্যাৎ আপনার ঘরে যদি কোন দুঃখ আসে আর আপনি চাচ্ছেন আপনার সে দুঃখ দূর হয়ে যাক, তাহলে আপনি মানুষের দুঃখ দুর করুন আল্লাহ আপনার ঘরের দুঃখ দুর করে দিবেন। আমি নিজেই আপনাদেরকে এই বিষয়টি বলি কিন্তু আমার স্ত্রীও আজকে আমাকে সে বিষয়টিই নসিহত করল। তাই আজ আমি আরো বেশি জোর দিয়ে কথাটি বলছি। অতএব যদি আপনার টাকা পয়সার কমিত থাকে তাহলে আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর আপনার টাকা পয়সার কমতি আল্লাহ দুর করে দিবেন।
সন্তান হচ্ছেনা, যদি মানুষের সন্তানকে নিজের সন্তানের মত মায়া করতে থাকেন তাহলে আল্লাহ আপনাকেও সন্তানের নেয়ামত দিয়ে মালামাল করবেন। ছেলে মেয়ের বিয়ে হচ্ছেনা, আপনি মানুষের ছেলে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন আল্লাহ আপনার ছেলে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিবেন। ঘরে সকলের রোগ শোক দুর হচ্ছেনা আপনি অসুস্থ মানুষের সেবা শশ্রম্নষায় লেগে যান আল্লাহ আপনার ঘরের রোগ শোক দুর করে দিবেন। নিজের সমস্যা সমাধানের এটা একটা কায়দা। আপনার জীবনের যে কোন রোগ শোক বিপদ দুঃখ কষ্ট দুর করার জন্য এতই সহজ আমল যারাই এই আমল করেছেন আল্লাহ তায়ালা সকলের সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন। এখন আমি সে আমলটির কথা বলব খুব মনযোগ দিয়ে শুনবেন, সে আমলটির নাম হল দরুদে তুনাজ্জিনা।
এই দরুদের পিছনে একটি আযব ঘটনা আছে প্রথমে আযব ঘটনাটি
শুনুন যে সব বুযুর্গ থেকে এই দরুদে তুনাজ্জিনা প্রচলিত, সে যুগে তারা সমুদ্রের জাহাজে সফর করছিল, যখন সমুদ্রে তুফান শুরু হয় তখন জাহাজটি ঢুলতে লাগল, সে সময় সেসব বুযুর্গ মুরাকাবা করলেন আর হুজুর (দ) এর বারেগাহে এসতেগাসা পেশ করলেন, তখন হুজুর (দ) তাদেরকে মোরাকাবাতে ইশারা দিলেন দরুদে তুনাজি্জনা ১০০০ বার পড়ার জন্য। এখন সে বুযুর্গরা ১০০০ বার নয় বরং ৩১৩ বার পড়া শেষ করলেন,
اللهم صل على سيدنا محمد — صلاه تنجنا بها من جميع الاهوال والافات — وتقضى لنا بها جمي الحاجات — وتطهرنا بها من جميع السيئات — وترفعنا بها عندك اعلى الدرجات — وتبلغنا بها اقصى الغايات من جميع الخيرات — في الحياه وبعد الممات — انك على كل شيء قدير—
সাথে সাথে সমুদ্রের তুফানকে আল্লাহ তায়ালা ঠান্ডা করে দিলেন, এখন আপনি এই দরুদের আমল কিভাবে করবেন তা কিছুক্ষণ পর বলছি, যারা বিপদে গ্রেফতার হয়ে কোন ধরনের কুল কিনারা করতে পারছেন না সব আশা ভরসা খতম হয়ে গেছে, তারা এই আমলটি করে দেখুন, যারাই করেছেন আল্লাহ তাদেরকে মসিবতের তুফান থেকে উদ্ধার করেছেন। ডুবন্ত জাহাজ যেমন কিনারা খুজে পেয়েছে, তেমনি আপনার ব্যবসার একটি কুল কিনারা হয়ে যাবে, আপনার চাকরির একটা কুল কিনারা হয়ে যাবে, আপনার সন্তানের বিয়ে শাদির কুল কিনারা হয়ে যাবে, আপনার ঋণের কুল কিনারা হয়ে যাবে, আপনার রোগের কুল কিনারা হয়ে যাবে, মামলা মোকাদ্দামার কুল কিনারা হয়ে যাবে, অর্থ্যাৎ মানুষের জীবনের যত ধরনের সমস্যা আছে যারাই এই আমল করেছেন আল্লাহ তাদের সে সমস্যার কুল কিনারা করে দিয়েছেন।
এখন আপনি এই আমলটি কিভাবে করবেন? আপনি চেষ্টা করবেন এই আমলটি সোমবার রাতে করবেন। অথবা বিহস্পতিবার দিন গত রাত তথা জুমার রাতে করবেন। প্রথমে এশারের নামাজের পর আপনি গোসল করবেন, সাদা পোষাক থাকলে সাদা পোষাক পরিধান করবেন, খুশবু লাগাবেন, তারপর এশারের নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে পড়বেন, আর ফরয নামাজের পর বাকী নামাজগুলি ঘরে এসে পড়বেন, তারপর কেবলার দিকে মুখ করে বসে নিয়ত করবেন আমি নিয়ত করছি দরুদে তুনাজ্জিনার জাকাত এর। এবার আপনি অত্যন্ত মনযোগ সহকারে ১০০০ বার দরুদে তুনাজ্জিনা পড়বেন, অর্থের দিকে খেয়ার করে করে পড়বেন
দরুদে তুনাজ্জিনার অর্থ হল হে আল্লাহ তুমি আমাদের মহান সরদার হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর রহমত নাযিল কর এবং এ দুরুদের উসিলায় আমাদেরকে সকল বিপদ—আপদ হতে মুক্তি দান করো এবং আমাদের সকল ইচ্ছা সমূহ পূরণ করো এবং আমাদেরকে সকল পাপ কাজ হতে পবিত্র রাখো এবং আমাদেরকে তোমার কাছে সম্মানের উচ্চ আসনে স্থান দাও এবং আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সকল প্রকার মঙ্গলের শেষ সীমায় পৌঁছে দাও অবশ্যই তুমি সর্বশক্তিমান এবং সর্বোচ্চ দয়াবান।
যখন আপনার ১০০০ বার পড়া শেষ হবে তখন নিজের উপর দম করে নিবেন এবং এক বোতল পানির মধ্যেও দম করে নিবেন। এই আমলটি শুধু এক রাতই করতে হবে। সকাল বেলা উঠে আপনার সামর্থ্য মোতাবেক কিছু মিস্টি জাতিয় জিনিষ গরীব মিসকিন প্রতিবেশীদের কাছে বন্টন করে দিবেন। যাতে এই আমল করার সময় কোন ধরনের ভুল ভ্রান্তি হলে তা ক্ষমা হয়ে যায়। এখন আপনি আপনার যে কোন সমস্যার জন্য এই আমলটি প্রতিদিন করবেন চাই সেটি মামলা মোকদ্দমার সমস্যা, সন্তানের সমস্যা, যাদু টোনার সমস্যা, ব্যবসার সমস্যা, চাকরির সমস্যা, রোগের সমস্যা, যে সমস্যাই হউক সে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিদিন যে কোন সুবিধাজনক সময়ে ৩১৩ বার পড়বেন। যতদিন সমাধান হবেনা ততদিন প্রতিদিন ৩১৩ বার করে পড়তে থাকবেন।
যদি কারো ব্যস্থতা বেশী থাকে তাহলে তারা প্রতিিদিন ৭০ বার পড়বেন। তাহলে মোট কথা হল প্রথমে ১০০০ বার পড়বেন, এটা হবে এই দরুদের জাকাত, যা একদিন করলেই আপনার হাতে আমলটি চলে আসবে, পরের দিন সকালে গরীবদের কিছু মিস্টি বিতরন করবেন, তারপর থেকে যে কোন সমস্যার জন্য সুবিধামত সময়ে ৩১৩ বার পড়বেন আর ব্যস্থতা থাকলে ৭০ বার করে পড়তে থাকবেন। যতদিন সমস্যা সমাধান না হয় ততদিন এই ওজিফা করতে থাকবেন। সর্বোচ্চ ৭ সপ্তাহের মধ্যে ইনশা আল্লাহ আপনার যে কোন সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। দরুদ শরীফটি হল
আল্লাহুম্মা ছল্লি ‘আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ, ছলাতান তুনাজ্জীনা বিহা মিন জামী‘য়িল আহওয়ালি ওয়াল আফাত, ওয়া তাক্বদ্বীলানা বিহা জামী‘য়িল হাজাত, ওয়া তুত্বহহিরুনা বিহা মিন জামী‘য়ি চ্ছাইয়্যিয়াত, ওয়া তারফাউনা বিহা ‘ইনদাকা আ‘লাদ্দারজাত, ওয়া তুবাল্লিগুনা বিহা আক্বছল গাইয়াতি মিন জামী‘য়িল খইরত, ফিল হাইয়াতি ওয়া বায়‘দাল মামাত, ইন্নাকা ‘আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর।
যদি আপনার সমস্যা ৩ দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যায়, তারপর যদি আর কোন সমস্যা না থাকে তাহলে প্রতিদিন ১০ বার করে এই দরুদটি পড়বেন তাহলে সারা জীবন সে সমস্যা আর হবেনা ইনশা আল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই