রবিউল আউয়াল মাসে দরুদ শরীফের সেরা আমল
রর্বিউল আউয়াল মাসে দরুদ শরীফের সেরা ওজিফা
রবিউল আউয়াল
মাসে একটি ওজিফা করুন আপনার সকল শারিরিক, মানসিক,
আর্থিক সমস্যা ইনশা আল্লাহ সমাধান হবে, যাদের বিয়ে
হচ্ছেনা তারাও এই ওজিফাটি করতে পারেন, যাদের ব্যবসায় উন্নতি হচ্ছেনা,
যাদের চাকরি হচ্ছেনা, যাদের সন্তান হচ্ছেনা,
যাদের ঘরের অশান্তি দুর হয়না, যাদের ঋণ থেকে মুক্তি
মিলছেনা তারাও এই ওজিফাটি করলে সাথে সাথে ব্যবসায় উন্নতি হবে, চাকরি প্রার্থীদের চাকরি হবে, নিঃসন্তানের সন্তান হবে,
ঘরের অশান্তি দুর হবে, ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা হবে,
মোটামোটি আপনার দুনিয়াবি যত ধরনের পেরেশানি আছে যত দুঃখ কষ্ট আছে,
যত হতাশা আছে, যত ধরনের দূর্বলতা আছে এই একটিমাত্র
ওজিফার বরকতে সব সমাধান হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ুতী যিনি ২ লক্ষ হাদিসের
হাফেজ ছিলেন, যিনি ৭০ বার আল্লাহর প্রিয় হাবিবকে
জাগ্রত অবস্থায় দেখেছেন, সে মহান মনিষির কিতাব আত তাজকেরাতে উল্লেখিত
একটি ঘটনা দিয়ে আজকের ওজিফাটির অবতারনা করতে চাই- আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ) একটি হাদিস লিখেছেন তা
হল হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। কেয়ামত দিবসে যখন
মানুষের আমলনামা পাল্লায় মাপা হবে ঠিক ওই সময় হযরত আদম আলাইহিস সালাতু ওয়াস
সালাম সবুজ কাপড় পরিহিত আল্লাহতালা আরশের নিচে অবস্থান করবে। এবং তিনি সেখান থেকে
লক্ষ করবেন তার সন্তানগণের মধ্যে কারা জান্নাতী হচ্ছেন আর কারা জাহান্নামী হচ্ছেন। এমতো অবস্থায় তিনি দেখবেন একজন উম্মতে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস
সাল্লামকে জাহান্নামের ফেরেশতারা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সময় তিনি
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডেকে উঠবেন হে আহমাদ! হে
আহমেদ !!হে আহমদ!!! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বলবেন লাব্বাইক
ইয়া আবুল বাশার। তিনি বলবেন আমি এইমাত্র দেখলাম তোমার একজন উম্মতকে জাহান্নামের
ফেরেশতাগণ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ফেরেশতাদের
নিকট গমন করবেন এবং আরশের দিকে লক্ষ করে তার পবিত্র বাম হস্ত মোবারক দাড়ি মোবারক
এর উপর রেখে আল্লাহ তায়ালাকে ডেকে বলবেন হে আল্লাহ আপনি তো আমার সঙ্গে ওয়াদা
করেছিলেন আমার উম্মতের বিষয়ে আমাকে লজ্জিত করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতালা
ফেরেশতাগণকে বলবে তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুগত হও,
মিজানের পাল্লা পুনরায় পরিমাপ করতে বলবেন। দ্বিতীয়বার
পরিমাপান্তেও যখন গুনাহের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে ঠিক তখনই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আপন জুব্বা মোবারক থেকে এক টুকরো সাদা কাগজ
বের করে মিজানের পাল্লায় দেওয়া হবে আর তাতেই সঙ্গে সঙ্গে নেকের পাল্লা ভারী হয়ে
যাবে। মুহূর্তের মধ্যেই জাহান্নামী ব্যক্তিটি জান্নাতি হয়ে যাবে। জান্নাতের
ফেরেশতাগণ যখন তাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে লাগবে সে তাদেরকে বলবে একটু দাড়াও আমি এই
মহান দরদী ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাই। তখন ওই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে বলবেন আপনি কে হে দরদী?
জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন আমি তোমার
নবী তুমি আমার উম্মত। আর সাদা কাগজের টুকরাটি হলো সেই দুরুদ শরীফ যা তুমি আমার উপর
একবার পড়েছিলে আমি তার সংরক্ষণ করেছিলাম যাতে প্রয়োজনের সময় তোমার কাজে আসে এবং
মুক্তির উপায় হয়। (জাওয়াহিরুল বিহার চতুর্থ খন্ড 167 পৃষ্ঠা)
একদিন নবী (আ) এর সাথে সিদ্দিকে
আকবর (রা) বসে ছিলেন, এমন সময় একজন যুবক আসল, নবী (আ) তাকে নিজের ও সিদ্দিকে আকবর
এর মাঝে বসালেন, তারপর নবীজি আবু বকরকে বললেন হে আবু বকর এই যুবককে তোমার ও আমার
মাঝে বসানোর কারনে তুমি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছ? তখন আবু বকর বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ
সত্যিই আমি অবাক হয়েছি, তখন নবীজি ফরমারেন এই যুবকটি আমার উপর এমন একটি দরুদ শরীফ
পাঠ করে যে দরুদ শরীফ আমার উম্মতের মধ্যে আর কেহ পড়েনা।সে জন্য আমি তাকে আমার
নিকটে বসিয়েছি। আর সে দরুদটি হল (আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা
মুহাম্মাদিন আদাদা মান সাল্লা আলাই, ওয়া সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন, আদাদা মান লাম
ইউসাল্লি আলাই, ওয়া সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন কামা আমারতা বিসসালাতি আলাই, ওয়া
সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন কামা তুহিব্বু আন ইউসাল্লা আলাই,ওয়া সাল্লি আলা
মুহাম্মাদিন কামা এয়ানবাগি আন ইউসাল্লা আলাই।) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বেশী
বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করার তৌফিক দান করুন আমিন। তিরমিজি শরীফের ২৪৫৭ নং হাদিস উবাই
(রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি তো খুব অধিক হারে
আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরূদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ
করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা
কর। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি
বললেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা কর, তবে এর
চেয়ে অধিক পরিমাণে পাঠ করতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরূদ পাঠ করবো? তিনি বললেন,
তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো
সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ
সময় দরূদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি
যতক্ষণ ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভাল।
আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার উপর দরূদ পাঠে
কাটিয়ে দিব?
قَالَ " إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ "
তিনি বললেনঃ তাহলে তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে। যেহেতু দরুদ পাঠ করলে সকল দুশ্চিন্তা সকল কষ্ট দুর হয় তাই ঋণের সমস্যা, মেয়ের বিয়ের সমস্যা, দোকানের ব্যবসার সমস্যা, চাকরির সমস্যা, ঘরের সমস্যা, অফিসের সমস্যা, অসুস্থতার সমস্যা, ঋণ এর সমস্যা তথা সব ধরনের সমস্যায় বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়বেন, হাটতে বসতে চলতে ফিরতে দরুদ পড়বেন। ইনশা আল্লাহ সকল দুশ্চিন্তা সকল সমস্যা আল্লাহ সমাধান করে দিবেন। প্রমাণ তিরমজি শরীফের ২৪৫৭ নং হাদিস। নবীজি উবাই বিন কাবকে এক কথায় বলে দিয়েছেন যদি তুমি তোমার ওজিফার পুরাটা সময় আমার উপর দরুদ শরীফ পাঠ কর তাহলে তোমার কোন চিন্তা তোমার কোন কষ্ট থাকবেনা এবং তোমার সকল পাপসমুহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন। দরুদ কখন কখন পড়বেন এবং কোন দরুদটি পড়বেন এবার তা বননা করব- কোন দরুদ বেশী উত্তম? যখন নবী করিম (দ) এর কাছে দরুদ শরীফের ব্যপারে প্রশ্ন করা হল তখন আফযল দরুদ দরুদে ইবরাহিমি বলে ঘোষনা দিলেন। সুতরাং দরুদে ইবরাহিমিই হল সবচেয়ে আফযল। সুতরাং যদিও এই দরুদটি বড় তাই কেহ যদি এটি পাঠ করে যদিও তা সংখ্যায় কম হয় কিন্তু মূল্যের দিক থেকে এর মূল্য বেশী হবে। যেমন একপাশে এক কিলো স্বর্ণ আর অপর পাশে ৪০ কিলো পিয়াজ রাখা হয়েছে আপনি কোনটি নিবেন? বুদ্ধিমান হলে অবশ্যই ১ কিলো স্বর্ণই গ্রহণ করবেন, কারন যদিও স্বর্ণের ওজন কম কিন্তু এর মূল্য বেশী তেমনি দরুদের মধ্যেও দরুদে ইবরাহিমিও অন্যান্য দরুদ থেকে মূল্যের দিক থেকে স্বর্ণের মত। দরুদে ইবরাহিমি হল- আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলাআলি মুহাম্মাঁদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। এ দরুদ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাক জবান হতে তৈরি। অতএব, এ দরুদ সব দরুদের সেরা দরুদ, যা দরুদে ”ইব্রাহীম” নামে খ্যাত। যে পবিত্র নামের উছিলায় বা বরকতে আল্লাহ্ পাক হযরত আদম এবং হাওয়া আলাইহিওছাল্লাম-এর গুনাহ মাফ করে দোয়া কবুল করেছিলেন; সেই নামের উপর দোয়া ও সালাম ভেজার ফজিলত বা মর্তবা বা সৌভাগ্য যে কত বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে অন্যান্য যে সব দরুদ শরীফ আছে তা যদি কেহ পড়ে তাতেও ফজিলত অর্জিত হবে। যদি কেহ দরুদে ইবরাহিম ছাড়া অন্য দরুদ পড়া যাবেনা মনে করে তাও ভুল ধারনা। অনেকে বিভিন্ন পীরের দেয়া নিদৃষ্ট দরুদ পাঠ করেন সেটাও জায়েজ। আবার অনেকে মনে করে দরুদ শরীফ অজু ছাড়া পড়া যায়না এটা একটা ভুল ধারনা, মনে রাখবেন দরুদ শরীফ পড়ার জন্য অজু করা ফরয বা ওয়াজিব নয়, তবে মুস্তাহাব। তাই যদি কেহ অজু ছাড়াও দরুদ শরীফ পড়তে চান অবশ্যই পড়তে পারবেন। এবং পড়া উচিত যেমন আপনি গাড়িতে বসে আছেন তখন অজু নাই তাই বলে কি দরুদ শরীফের মত এমন বরকতময় আমল বাদ দিবেন? না বরং গাড়িতে বসে বসে দরুদ শরীফ পড়তে থাকুন।
ওলামায়ে কেরাম
দরুদ শরীফ পড়ার ১৫টি স্থান বর্ণনা করেছেন
১) দুখুলুল মসজিদ ওয়া খুরুজিন মিনহু মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার
সময়
২) ওয়াত তাশাহহুদ- নামাজের আত্তাহিয়্যাত পড়ার
সময়
৩) ওয়া রুয়াতুল মাসাজিদ- কোন মসজিদে দৃষ্টি
পরলে
৪) দুখুলুল আসওয়াক- বাজারে প্রবেশের সময়
৫) দুখুলুল বাইতি ওয়া খুরুজুন মিনহু- ঘরে প্রবেশ
ও বাহিরের সময়
৬) নিসয়ানুল হাজাত- যারা কোন কিছু ভুলে যায়
তখন দরুদ শরীফ পড়া উচিত
৭) ওয়াকতাল ফকর- দারিদ্রতার সময়
৮) বিদায়াতুল ইলম- পড়ালেখার শুরুতে
৯) বিদায়াতুল খুতুব- বয়ানের শুরুতে
১০) ইনতিহাইল মাজালিসিল ইলম- মজলিশের শেষে
১১) লিকাইল ইখওয়ান- মুসলমান ভায়ের সাথে সাক্ষাৎ
হলে
১২) ফি দরসে হাদিস- হাদিসের দরস দেয়ার সময়
১৩) ইনদা তাজকিরাতিহি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
নবীর আলোচনা হলে তখন দরুদ শরীফ পড়া
১৪) ইনদা দুখুলিল মদিনা (মদিনায় প্রবেশের সময়
১৫) ইনদা মরুলি আলা কবরিহি (দ) নবীজির রওজা সামনে যখন উপস্থিত হন তখনও দরুদ শরীফ পড়তে হবে।
কোন দরুদটি
পড়বেন?
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বেশী বেশী এই
দরুদ শরীফের আমল দরুদ শরীফের ওজিফা সমুহ করার তৌফিক দান করুন।
কোন মন্তব্য নেই