তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত। তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম।

 


তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম নিয়ত, রাকাত সংখ্যা, নামাজের ওয়াক্ত, কোন সুরা দিয়ে পড়বেন?

তাহাজ্জুদ সম্পর্কে মনে প্রশ্ন আসে তাহাজ্জুদ নামাজ মুস্তাহাব নামাজ তবুও এর এত ফজিলত কেন?  তাহাজ্জুদের নামাজের ওয়াক্ত কখন থেকে কখন পর্যন্ত, তাহাজ্জুদ নামাজে কুল হুয়াল্লাহু আহাদ প্রতি রাকাতে কতবার পড়তে হবে? ৩ বার ৬ বার নাকি ৯ বার? নাকি এর চেয়েও বেশী পড়তে পারব? তারপরের প্রশ্ন হল তাহাজ্জুদের নামাজ কত রাকাত পড়তে হবে? তাহাজ্জুদ পড়তে পড়তে যদি ফজরের আযান হয়ে যায় তখন করনীয় কি? তাহাজ্জুদ নামাজ না ঘুমিয়ে পড়া যাবে কিনা? এই প্রশ্নগুলি প্রায় সকলের মনেই ঘুরপাক খায় আজ ইনশা আল্লাহ সবগুলি প্রশ্নের উত্তর দিব তার আগে তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল কি বলেছেন জেনে নিন ইবনে মাজার ১৩৪৪ নং হাদিসের বর্ণনা

"‏ مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ وَهُوَ يَنْوِي أَنْ يَقُومَ فَيُصَلِّيَ مِنَ اللَّيْلِ فَغَلَبَتْهُ عَيْنُهُ حَتَّى يُصْبِحَ - كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ ‏"‏ ‏

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি (ঘুমাতে) তার বিছানায় এসে রাতে উঠে নামাজ পড়ার নিয়ত করলো, কিন্তু ঘুমের আধিক্যের কারণে তার ভোরে ঘুম ভাংলো, তাকে তার নিয়াত অনুযায়ী সওয়াব দেয়া হবে। তার এ ঘুম তার প্রভুর পক্ষ থেকে তার জন্য দান-খয়রাত হিসাবে গণ্য। অর্থ্যাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ না পড়েও নিয়তের কারনে আপনি তাহাজ্জুদের সাওয়াব পাবেন। আর এই ঘুমটা আল্লাহর দান হিসেবে গন্য। সুবহানাল্লাহ! তবে এখন যেহেতু মোবাইলে এলার্ম আছে সেহেতু তাহাজ্জুদের জন্য উঠা সহজ। তবে তারপরও ৯/১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে আপনি ২টার দিকে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন তারপর আবার একটু ঘুমিয়ে ফজরের আজান দিলে ২ রাকাত সুন্নত ঘরে পড়ে মসজিদে চলে যাবেন। সে ব্যক্তির ব্যপারে নবী করিম (দ) বলেন সে বান্দা আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়। যারা এশারের আগে খাবার খায় এশারের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যায় তাদের জন্য তাহাজ্জুদের জন্য উঠা যেমন সহজ তেমনি এর শারিরিক আরো ১টি ফায়দা হল তার পেট বড় হবেনা। যারা রাত ১১টা ১২ টায় খাবার খেয়েই রাতে ঘুমিয়ে পড়ে তাদের পেট দ্রুত বড় হয়ে যায়। এবার আসুন অনেকে প্রশ্ন করেন তাহাজ্জুদের জন্য কি ঘুমাতে হবে? এর উত্তর হল মনে রাখবেন এবাদত হুজুর পাক (দ) যেভাবে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে আমাদেরকে করতে হবে, প্রিয় নবীর শিখানো পদ্ধতিকে মানতে হবে। এখন তাহাজ্জুদের ব্যপারে নবীজির পক্ষ থেকে কি ধরনের তরিকা প্রচলিত আছে তা দেখতে হবে, নবী করিম (দ) এশারের পরপর ঘুমিয়ে যেতেন, আর ঘুম থেকে উঠে নবী করিম (দ) যে নামাজ পড়তেন তাকে তাহাজ্জুদের নাম দেয়া হয়েছে। সুতরাং এর থেকে ফোকাহয়ে কেরাম এই নতিজা বের করেছেন যে এশারের পর যদি কেহ ঘুমিয়ে যায় এবং এর পরে উঠে সে যদি কোন নফল নামাজ পড়ে সেটাকে তাহাজ্জুদ বলা হবে। 

আরো পড়ুন: ৩ রাতের ভিতর বড় বড় সমস্যা সমাধানের আমল

আর সে ঘুমের কোন সীমা নাই ১১টায় ,১২ টায়, ১টায়, ২ টায় ৩টা, ৪টায় উঠেও তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন। আর তাহাজ্জুদের শেষ সময় হল সুবেহ সাদেক এর আগ পর্যন্ত। আর যদি ঘুমানো ছাড়া কোন নফল পড়া হয় সেটাকে তাহাজ্জুদ বলা হবেনা বরং সেটার নাম হবে সালাতুল লাইল। এবার প্রশ্ন হল তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত পড়তে হবে?  তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বনিন্ম হল ২ রাকাত আর ৮ রাকাত নবী করিম (দ) এর পক্ষ থেকে আমল প্রমাণিত তবে কেহ যদি ৮ রাকাতের চেয়ে বেশী পড়ে তা নিষেধ নাই।  তারপর তাহাজ্জুদ নামাজ কি সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিনা এই প্রশ্নের জবাবে ফোকাহায়ে কেরাম বলেন তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নয় বরং মুস্তাহাব সে জন্য কেহ যদি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে সে তার সাওয়াব পাবে আর কেহ যদি না পড়ে তাহলে গুনাহগার হবেনা। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার অবস্থায় যদি ফজরের আযান দিয়ে দেয় তাহলে কি করব? তাহাজ্জুদ পড়ার সময় হল মুলত ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এখন কেহ যদি দীর্ঘ সুরা দিয়ে নামাজ পড়তে পড়তে ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যায় তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ যথানিয়মে শেষ করবে। এতে নামাজ হয়ে যাবে।   

অনেকে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কি তা প্রশ্ন করেন- মনে রাখবেন নিয়ত হল মনের ইচ্ছা যদি কেহ মুখে নিয়ত করতে চাই তাহলে বলবে আমি নিয়ত করছি ২ রাকাত নফল তাহাজ্জুদের। এভাবে নিয়ত করলে হয়ে যাবে। এবার আসুন জানা যাক তাহাজ্জুদ নামাজে প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস পড়ার বিধান, মনে রাখবেন তাহাজ্জুদ যেহেতু নফল নামাজ তাই তাহাজ্জুদ নামাজে যদি কেহ একাধিকবার সুরা ইখলাস পড়ে তাহলে তা জায়েজ হবে। তবে যদি অন্য সুরা মুখস্থ থাকা অবস্থায় ফরয নামাজে একই সুরা প্রতি রাকাতে বারবার পড়ে তা মকরুহ হবে। তবে যদি কেহ ফরয নামাজে ভুলে প্রথম রাকাতে সুরা নাস পড়ে ২য় রাকাতেও সুরা নাস পড়তে হবে কারন কোরআন উল্টা পাঠ করা মকরুহ। তাহাজ্জুদ একটি নফল নামাজ কিন্তু তবুও এর এত ফজিলত কেন? 

আরো পড়ুন: এ আমলগুলি আপনাকে বাদশা বানিয়ে দিবে

এ ব্যপারে বুখারী ও মুসলিমের একটি হাদিস শুনলে বুঝতে পারবেন আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে আল্লাহ জমিনের কাছাকাছি আসমানে নেমে এসে তাঁর বান্দাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কে আছ যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, যাতে আমি তার প্রার্থনার জবাব দিতে পারি? কে আছ যে আমার কাছে কিছু চাইবে, যাতে আমি তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দিতে পারি? কে আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, যাতে আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি?’ (বুখারি ও মুসলিম যেহেতু রাতের শেষাংশে আল্লাহর রহমত বরকত নেয়ামত লাভ করার বড় সুযোগ সে সময়টাতে যদি কেহ নফল পড়ে তাহাজ্জুদ পড়ে তখন আল্লাহর নেয়ামত লাভ করা আরো সহজ হয়ে যায়। তাই আসুন আজ থেকে আমরা তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত করি। এবং আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত লাভ করে নিই। আল্লাহ তায়ালা আমাকেও আপনাদেরকে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তেীফিক দান করুন আমিন।   

 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.