শবে বরাতের ইবাদত দোয়া ও আমলসমুহ, ৭০ রাকাত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

 শবে বরাতের ইবাদত দোয়া ও আমলসমুহ, ৭০ রাকাত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত



===========================
ইবনে মাজার হাদিস- হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (দ) বলেছেন
إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا يَوْمَهَا
যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ো এবং এর দিনে সওম রাখো।

যেহেতু আল্লাহর প্রিয় হাবিব (দ) নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেহেতু আমরা এই রাতে কিভাবে নামাজের মাধ্যমে কাটাব তার ব্যপারে আলোচনা করব-

মনে রাখবেন এই রাতে যে নামাজ পড়বেন সেগুলি নফল নামাজ, নফল নামাজ এটা কোন ফরয ওয়াজিব নয় তাছাড়া এই রাতে কোন নিদৃষ্ট নামাজের কথাও সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নাই সে জন্য আমরা যে সব নফল নামাজ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং যে সব নামাজ বুযুর্গানে দ্বিন পড়েছেন সে নামাজ সে ইবাদতগুলি সে সব দোয়াগুলি আজ ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরব যাতে আপনাদের জন্য গোটা রাত এসব এবাদত করতে সহজ হয়।
আজকে যা যা আলোচনা করব

৬ রাকাত আওয়াবিন নামাজের ফজিলত ও নিয়ম
২ রাকাত তাওবার নামাজের ফজিলত ও নিয়ম
২ রাকাত শোকরের নামাজের ফজিলত ও নিয়ম
২ রাকাত হাজতের নামাজের ফজিলত ও নিয়ম
৪ রাকাত সালাতুত তাসবিহর ফজিলত ও নিয়ম
বুযুর্গানে দ্বিনের ৪৬ রাকাত নামাজের ফজিলত ও নিয়ম
৮/১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ
মোট ৭০ রাকাত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত এক সাথে বয়ান করব।

আজকের আলোচনাটি প্রত্যেকের জন্য খুবই উপকারী হবে ইনশা আল্লাহ, এই নামাজগুলি পড়লে, গুনাহ মাফ হবে, হায়াত রিজিকে বরকত হবে, সকল হাজত পুরন হবে, সকল অভাব দুর হবে, সকল দুঃখ বিপদ দুর হবে ইনশা আল্লাহ এবং এই রাতে এমন একটি দোয়ার কথা বলব যেটি করে যা চাইবেন তাই পাবেন যা দোয়া করবেন যা নামাজ পড়বেন সব কবুল হবে। আশা করি শেষ পযন্ত মনযোগি দিয়ে পড়বেনব আর আপনজনকে শেয়ার করবেন তাহলে তাদের আমলের সাওয়াবও আপনি পাবেন

মাগরিবের নামাজের পর কি করবেন?
যেহেতু এই রাতে সুয ডুবার পর থেকেই নিকটতম আকাশে নিজের শান মোতাবেক আসেন আর ডাক দেন সেহেতু মাগরিবের পর থেকেই মুলত আমাদের এবাদত শুরু করতে হবে যেমন ইবনে মাজার হাদিসে আছে
فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ أَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ أَلاَ مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلاَ مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلاَ كَذَا أَلاَ كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ ‏"‏ ‏.‏
এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেনঃ কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছো এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)।

মাগরিবের পর নামাজ
৬ রাকাত আওয়াবিন নামাজ আদায় করবেন – প্রতি রাকাতে ১ বার সুরা ফাতেহার সাথে ৩ বার সুরা ইখলাস দিয়ে এই নামাজ আদায় করবেন।

ফজিলত-১) আওয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কে মাজমাউজ জাওয়ায়েদ এর ৩৩৮০ নং হাদিসের বণনা আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।

ফজিলত-২) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ফেরেশতারা ঐসকল লোকদের ঢেকে নেয়, যারা মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ পড়ে। আর এ নামাজের নাম সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিনের নামাজ)।’ (শরহুস সুন্নাহ, বাগাবি : ৮৯২)

ফজিলত-৩) সালেম (রহ.) স্বীয় পিতা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (নাইলুল আওতার : ৩/৫৫)

ফজিলত-৪) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।’ (ইতহাফুস সাদাহ : ৩/৩৭১)।

ফজিলত-৫) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল আদায় করে, মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কথা না বলে, তাহলে সেটা ১২ বছরের ইবাদতের সমান গণ্য হবে।’ (তিরমিজি : ১/৫৫৯)

তাওবার নামাজ ২ রাকাত পড়বেন:
আমাদের গুনাহ হয়ে যায়, সকল গুনাহ থেকে পুত পবিত্র হয়ে শবে বরাতে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে তাই তওবার নামাজ পড়তে হবে, এই নামাজের নিয়ত হল হে আল্লাহ আমি ২ রাকাত তাওবার নামাজ এর নিয়ত করছি তারপর প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে যে কোন সুরা দিয়ে ২ রাকাত নামাজ পড়বেন তারপর নিজের সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন যেমন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে এরপর উঠে ২ রাকাত অথবা ৪ রাকাত ফরজ নয় (এমন সুন্নত বা নফল) নামাজ উত্তমরূপে রুকু ও সেজদা করে পড়ে, এরপর সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (তাবারানি, মুজাম)

ক্ষমা চাইলে কি উপকার :
সুরা ইমরানের ১৩৫-১৩৬ নং আয়াতের বণনা
وَ الَّذِیۡنَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَۃً اَوۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ ذَکَرُوا اللّٰهَ فَاسۡتَغۡفَرُوۡا لِذُنُوۡبِهِمۡ ۪ وَ مَنۡ یَّغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ اِلَّا اللّٰهُ ۪۟ وَ لَمۡ یُصِرُّوۡا عَلٰی مَا فَعَلُوۡا وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ - اُولٰٓئِکَ جَزَآؤُهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ وَ نِعۡمَ اَجۡرُ الۡعٰمِلِیۡنَ
যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা (অপরাধ) করে ফেলে, তাতে জেনে-শুনে অটল থাকে না। সেসব লোকের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা এবং জান্নাত; যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং (সৎ) কর্মশীলদের পুরস্কার কতই না উত্তম (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৫-৩৬)।

২ রাকাত শোকরের নামাজ
আমরা রাত দিন ২৪ ঘন্টা আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করছি আর এই নেয়ামতের শোকর আদায় করলে আল্লাহ নেয়ামত আরো বাড়িয়ে দিবেন যেমন সুরা্ ইবরাহিমের ৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলে
وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন’
সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে নেয়ামত দিয়েছেন তার শোকর আদায়াথে ২ রাকাত শোকরের নামাজ আদায় করবেন
নিয়ত হবে আমি ২ রাকাত শোকরের নিয়তে নামাজ আদায় করছি সুরা ফাতেহার সাথে যে কোন সুরা দিয়ে এই নামাজ আদায় করবেন।তাহলে আল্লাহ আপনার জন্য নেয়ামতকে আরো বাড়িয়ে দিবেন

সালাতুল হাজত ২ রাকাত পড়বেন
সুরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। [সুরা বাকারা - ২:১৫৩]
সুতরাং যাদের হাজত আছে, সন্তানের হাজত, চাকরির হাজত, বিদেশ যাওয়ার হাজত, বিয়ের হাজত, রিজিকে বরকতের হাজত, রুজি রোজগার বৃদ্ধির হাজত, প্রমোশনের হাজত, পরীক্ষার হাজত, নেক আমলের হাজত, হজ্বের হাজত, ওমরার হাজত, ঘর বাঁধার হাজত, সুস্থতার হাজত যে কোন হাজতের জন্য অন্তত ২ রাকাত হাজতের নামাজ পড়বেন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব ওঠে এসেছে-
- হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ)

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে এবং ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে।’ (তিরমিজি)

সুতরাং মাগরিব অথবা এশারের পর সুরা ফাতেহার সাথে যে কোন সুরা দিয়ে ২ রাকাত হাজতের নামাজ পড়বেন তারপর আল্লাহর প্রসংশা করবেন – আল্লাহর প্রসংশার নিয়তে সুরা ফাতেহা সুরা এখলাস পড়তে পারেন তারপর নবীর উপর কয়েকবার দরুদ শরীফ পাঠ করবেন তারপর আপনার সকল জায়েজ হাজতের জন্য দোয়া করবেন।

অথবা হাদিসের এই দোয়াটি পড়বেন
ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আসআলুকা মুঝিবাতি রাহমাতিকা ও আযায়িমা মাগফিরাতিকা ওল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররি ওয়াস-সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদা’ লি জাম্বান ইল্লা গাফারাতহু ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাঝতাহু ওয়া লা হাঝাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা ক্বাদাইতাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

সালাতুত তাসবিহ ৪ রাকাত
অনেক ফজিলতপূর্ণ নামাজ হলো সালাতুত তাসবিহ। প্রত্যেক রাকাআতে ৭৫ বার তাসবিহ আদায়ের মাধ্যমে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হয়।

সালাতুতু তাসবিহ নামাজের ফজিলতের মধ্যে অন্যতম হলো- বিগত জীবনের গোনাহ মাফ এবং অনেক সাওয়াব লাভ হয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হজরত আব্বাসকে বললেন, ‘হে আব্বাস! হে চাচাজান! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে দান করব না? আমি কি আপনাকে সংবাদ দেব না? আমি কি আপনার সঙ্গে ১০টি সৎকাজ করব না? (অর্থাৎ ১০টি উত্তম তাসবিহ শিক্ষা দেব না) যখন আপনি তা (আমল) করবেন-

>> তখন আল্লাহ আপনার আগের, পরের, পুরাতন, নতুন, সবধরনের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> সগিরা ও কবিরা গোনাহ মাফ করে দেবেন।
>> গোপন ও প্রকাশ্য গোনাহ মাফ করে দেবেন।
(হে চাচা!) আপনি ৪ রাকাআত নামাজ পড়বেন এবং প্রত্যেক রাকাআতে সুরা ফাতেহা পাঠ করবেন এবং যে কোনো একটি সুরা মেলাবেন। (অর্থাৎ প্রত্যেক রাকাআতে এ তাসবিহটি ৭৫ বার করে আদায় করতে হবে।)

সালাতুত তাসবিহ পড়ার নিয়ম


সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলানোর পাশাপাশি প্রত্যেক রাকাআতে (سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) অর্থাৎ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার-এ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়তে হবে। তবে একই নিয়মে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে তা আদায় করতে হয়।

>> নামাজে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতেহা পড়ার আগে এ তাসবিহ
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১৫ বার।
>> সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা মিলানোর পর রুকুর আগে এ তাসবিহ
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
>> রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْم) পড়ার পর এ তাসবিহ
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
>> রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় এ সাতবিহ
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) ১০ বার।
>> সেজদায় গিয়ে সেজদার তাসবিহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى) পড়ার পর সেজদাবস্থায় এ তাসবিহ
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
>> দুই সেজদার মাঝে বসাবস্থায় এ তাসবিহ
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
>> দ্বিতীয় সেজদায় গিয়ে সেজদার তাসবিহ (سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى) পড়ার পর আবার সেজদাবস্থায়
এ তাসবিহ (سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।

এভাবে দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাআতে মতো এ নামাজ আদায় করা। দুই রাকাআতের পর বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে উপরের নিয়মে বাকি ২ রাকাআত আদায় করে নেয়া।

(অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে চাচা!) এভাবে যদি প্রতিদিন একবার এ নামাজ পড়তে সক্ষম হন; তবে তা পড়বেন। আর যদি সক্ষম না হন, তবে প্রত্যেক জুমআর দিনে একবার পড়বনে।

তাও যদি না পারেন, তবে প্রত্যেক মাসে একবার পড়বেন। তাও যদি না পারেন তবে প্রত্যেক বছর একবার পড়বেন, আর যদি তাও না পারেন তবে আপনার জীবনে অন্তত একবার পড়বেন। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

সুতরাং শবে বরাতের রাতে এই ৪ রাকাত নামাজ পড়ার সুযোগ গ্রহণ করবেন।

বুযুর্গানে দ্বিন বরাতের রাতে ও দিনে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ পড়ে যে সব উপকার পেয়েছেন তার কয়েকটি পদ্ধতি হল-

মাগরিবের পরের ১০ রাকাত নামাজ
১) মাগরিব নামাজের পর ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন, প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ১ বার সুরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত এবং ১ বার সুরা এখলাছ পড়বেন- এ নামাজ পড়ে নিজের সকল গুনাহ মাফ চাইবেন ইনশা আল্লাহ আল্লাহ তায়ালা সব গুনাহ মাফ করে দিবেন

২) এরপর এশারের নামাজের আগে ২ রাকাত করে মোট ৮ রাকাত নামাজ পড়বেন প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ৫ বার সুরা এখলাস পড়বেন- এই নামাজও গুনাহ মাফের জন্য বড় উপকারী

এশারের পর পড়বেন
৩) এশার নামাজ এর পর ২ রাকাত নফল নামাজ পড়বেন, প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ১ বার আয়াতুল কুরসি ২৫ বার সুরা এখলাস। নামাজ শেষে ১০০ বার দরুদ শরীফ পড়বেন, তারপর রিজিকে বরকতের জন্য দোয়া করবেন। এ নামাজ রিজিকে বরকতের জন্য উপকারী

৪) এশার নামাজের পর ২ রাকাত করে মোট ৮ রাকাত নামাজ পড়বেন, প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ১ বার সুরা কদর এবং ২৫ বার সুরা এখলাস পড়বেন।

৫) আরেকটি নিয়ম হল ৪ রাকাত করে ৮ রাকাত প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে ১০ বার সুরা এখলাস পড়বেন।৪ ও ৫ নং নামাজ গুনাহ মাফ ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির জন্য উপকারী

৬) বরাত রজনিতে এশার নামাজের পর দুই রাকাত করে মোট ১৪ রাকাত নামাজ পড়বেন, প্রতি রাকাতে সুরাফাতেহার সাথে ১ বার সুরা কাফেরুন, ১ বার সুরা এখলাস, ১ বার সুরা ফালাক ১বার সুরা নাস পড়বেন, নামাজ শেষে ১ বার আয়াতুল কুরসি, ১ বার সুরা তাওবার শেষ দুই আয়াত (লাকাদ জায়াকুম রাসুলুন মিন আনফুসিকুম আজিজুন আলাইহি মা আনিত্তম হারিছুন আলাইকুম বিল মুমিনিনা রাউফুর রাহিম, ফাইন তাওয়াল্লাউ ফাকুল হাসবি আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম) এ নামাজ পড়লে দ্বীন দুনিয়ার সকল নেক মকসদ পুরন হবে ইনশা আল্লাহ

৭) এ রাতে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত ২১ বার পড়লে আল্লাহর রহমতে নিরাপত্তা ও জান মালের হেফাজত হবে।

৮) শবে বরাতের দিন ১৫ তারিখ জোহরের নামাজের পর ৪ রাকাত নামাজ পড়বেন ১ম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর একবার সুরা যিলযাল ও ১০ বার সুরা এখলাস, ২য় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ১ বার সুরা তাকাসুর ও ১০ বার সুরা এখলাস, ৩য় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ৩ বার সুরা কাফেরুন ও ১০ বার সুরা এখলাস, ৪থ রাকাতে সুরা ফাতেহার পর ৩ বার আয়াতুল কুরসি ও ২৫ বার সুরা এখলাস । এ নামাজ আদায়কারীর প্রতি আল্লাহ হাশরের ময়দানে খাস নজরে করম দান করবেন এবং দ্বীন ও দুনিয়ায় অফুরন্ত কল্যাণ দান করবেন।

৯) শবে বরাত উপলক্ষে এ মাসে বেশী বেশী রোজা রাখবেন বিশেষ করে ১৩,১৪,১৫ শাবান ৩টি রোজা রাখবেন তাও যদি না পারেন অন্তত ১৫ শাবান ১টি রোজা রাখবেন।

১০) তাছাড়া কুরআন তেলাওযাত করবেন, দরুদ শরীফ পড়বেন, তওবা করবেন, গুনাহ মাফ চাইবেন, মৃত মা বাবা আত্মিয় স্বজনের কবরের জেয়ারত করবেন। শেষ রাতে ১২ রাকাত বা ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়বেন এবং অবশ্যই অবশ্যই এশা ও ফজরের নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করবেন।

শেষ রাতের দোয়া
মনে রাখবেন তাহাজ্জুদের জন্য কিছুক্ষণ হলেও ঘুমানো শত তাই প্রয়োজনের ঘরির এলাম সেট করে ১০ মিনিটের জন্য হলেও ঘুমাবেন তারপর উঠে প্রথমে একটি দোয়া করবেন বুখারীর হাদিস প্রথমে চোখ খোলার পর অজুর আগে ১টি দোয়া করে নিবেন তাহলে অজুর পর যে নামাজ পড়বেন যে দোয়া করবেন আল্লাহ সে নামাজ সে দোয়া কবুল করবেন।

দোয়াটি হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম এরপর অজু করে নামাজ পড়বেন, নিজ ভাষায় দোয়া করবেন আল্লাহ আপনার সকল নামাজও কবুল করবেন সকল দোয়াও কবুল করবেন।

দোয়াপ্রার্থী: এস. এম. নিজাম উদ্দীন
খতিব- হাজি অলি মিয়া সওদাগর জামে মসজিদ
পূর্ব ষোলশহর, চট্টগ্রাম

#শবেবরাত #sobeborat #lailatulborat

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.