সেহরী থেকে ইফতার রমজানের ২১টি গোপন আমল

 

সেহরী থেকে ইফতার রমজানের ২১টি গোপন আমল



আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

প্রিয় বন্ধুরা! আসসালামু আলাইকুম, আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে এ মহান মাসটির জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন এবং সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত কি কি আমল করবেন, কি কি দোয়া করবেন আজকে সে রকম ২১টি প্রস্তুতিমুলক আমল ও দোয়া এক সাথে আপনাদের খেদমতে পেশ করব ইনশা আল্লাহ

 

আমলগুলি করতে পারলে আপনার দুনিয়াও সুন্দর ও বরকতময় হবে আখেরাতও স্বস্তি ও টেনশনমুক্ত হবে তিরমীজি শরীফের ২৩০৬ নং হাদিস নবী করিম (দ) এরশাদ করেন

" بَادِرُوا  بِالأَعْمَالِ

 

তোমরা জীবনে ৭টি জিনিষ আসার আগে আমল বাড়িয়ে দাও, এবাদতে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে দাও যে ৭টি জিনিষ আসার আগে এবাদতে প্রতিযোগিতা করতে নবীজি নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলি হল

 

১) দারিদ্রতা (২) ধন সম্পদ (৩) রোগ (৪) বার্ধ্যক্য (৫) হঠাৎ মৃত্যু (৬) দাজ্জাল (৭) কিয়ামত যেহেতু এই ৭টির যে কোন একটি যে কোন সময় আসতে পারে তাই এ রমজানে আমাদের প্রথম প্রস্তুতি হল গতবারের তুলনায় এবার আমল বাড়িয়ে দিতে হবে, ইবাদতের পরিমান বাড়িয়ে দিতে হবে, কুরআন তেলাওয়াত, দান সদকা, বাড়িয়ে দেয়ার নিয়ত করা এই রমজানের আরেকটি প্রস্তুতিমুলক নিয়ত হল হারাম থেকে বেঁচে থাকা, আর হারাম থেকে বেঁচে থাকলেই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী হওয়া যায়

 

যেমন তিরমিজি শরীফের ২৩০৫ নং হাদিসের বর্ণনা নবীজি আবু হুরায়রা (রা) কে উপদেশ দেন

" اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ

তুমি হারাম সমুহ হতে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ বলে গণ্য হবে; সুতরাং সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, প্রতারণা, ভেজাল, জুয়া এসব হারাম থেকে এ রমজান মাসে বেঁচে থাকার পাক্কা নিয়ত করা, ৩য় প্রস্তুতিমুলক নিয়ত হল রমজানের অবসর সময়কে এবাদতে কাটানোর নিয়ত করা বেহুদা কাজে ব্যয় না করা অবসর ও সুস্থতা অনেক বড় নেয়ামত যেমন তিরমিজি শরীফের ২৩০৪ নং হাদিসের বর্ণনা

نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ "

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরূপ দুটি নিয়ামাত আছে যে ব্যাপারে বেশিরভাগ লোক ধোকায় নিপতিতঃ সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময়।

 

সুতরাং রমজানে যদি অবসর পান তাতে মোবাইল চালিয়ে, নাটক সিনেমা, নাচ, গান এসব দেখে সময় নষ্ট করা যাবে না রমজানে গুনাহের কাজে কড়া ব্রেক লাগাতে হবে কারন একজন ঘোষক রমজানের প্রতিরাতে এই ঘোষনা দেয় যেমন তিরমিজির ৬৮২ নং হাদিসের বর্ণনা

وَيُنَادِي مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ

(এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেনঃ হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও।

 

রমজান মাস নসিব হলে এ বছর প্রতিরাতে মৃত আত্মিয় স্বজনের জন্য দোয়া করবেন কারন আল্লাহর রাসুল বলেন তিরমিজির ৬৮২ নং হাদিসের বণনা

وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ "   

আর বহু লোককে আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে।

 

সুতরাং এভাবে দোয়া করবেন- হে আল্লাহ! আপনার নবী বলেছেন রমজানের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেয়া হবে, ওহে আল্লাহ আমার বাবা মাকে আপনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন, আমার মৃত আত্মিয় স্বজনকে আপনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন  আমিন (এভাবে দোয়া করবেন)

 

রমজানের প্রতি রাতে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ার নিয়ত করবেন, কারন আমাদের নবীজি বলেন ইবনে মাজার ৪২ নং হাদিস

مِنْ بَعْدِي اخْتِلاَفًا شَدِيدًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ

আমার পরে অচিরেই তোমরা মারাত্নক মতভেদ লক্ষ্য করবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করবে, 

 

এখন তারাবি নিয়ে মারাত্মক মতভেদ চলছে আর এই মুহুর্তে আমাদের উচিত নবীজির নির্দেশ মোতাবেক খোলাফায়ে রাশেদার তরিকা মত আমল করা আর ২য় খলিফা ওমর (রা) এর তারাবীর আমল ছিল প্রতি রমজানে জামায়াতের সাথে ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ পড়া

 

যেমন মুয়াত্তা মালেক এর হাদিস মালিক (রহঃ) ইয়াযিদ ইবনে রুমান (রহঃ) হইতে বর্ণনা করেন- তিনি বলিয়াছেনঃ

كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ      بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً

লোকজন উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে রমযানে তেইশ রাকআত তারাবীহ পড়িতেন- তিন রাকাআত বিতর এবং বিশ রাকাআত তারাবীহ।

 

রমজানে আরো ১টি বড় আমলের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না তা হল তাহাজ্জুদ যদি ৮ রাকাত করে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন তাহলে রাসুলুল্লাহ (দ) এর ১২ মাসের ১ টি সুন্নতের উপর আমল হয়ে যাবে সহি বুখারীর ১১৪৭ নং হাদিসের বর্ণনা

আয়শা (রা) বলেন

 
مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً

 

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে তাহাজ্জুদ) এগার রাকআতের অধিক আদায় করতেন না। অর্থ্যাৎ ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ ও ৩ রাকাত বিতির মোট ১১ রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

 

সুতরাং সেহরীর সময় কিছু সময় আগে উঠে মা বোন সহ প্রত্যেকে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ত করুন, না পারলে অন্তত ২ রাকাত হলেও পড়বেন রমজানে অনেকে সেহরী না খেয়ে রোজা রাখে আর তো বাহাদুরির সাথে প্রচার করে অথচ সেহরী না খাওয়া বাহাদুরী নয় কারন নবীজি বলেন সহি বুখারীর ১২০৩ নং হাদিসের বণনা


"
تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً "‏‏.
তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে।

 

আর সেহরীতে অন্যান্য খাবারের পাশা পাশি কয়েকটি খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করবেন কারন খেজুরকে নবীজি নেয়ামতপূর্ণ সেহরী বলেছেন নবীজি বলেন রমজানে ২ টি অপরাধ করে রোজাকে ছিদ্র করিও না, নবীজিকে সাহাবীরা প্রশ্ন করল এয়া রাসুলাল্লাহ কিভাবে রাজা ছিদ্র হয়?

 

নবীজি ফরমান ২টি মুখের গুনাহের কারনে রোজা যে জাহান্নামের আগুনের ঢাল সে ঢাল ছিদ্র হয়ে যায় আর তা হল (১) মিথ্যা (২) গিবত

 

অতএব এই আলোচনায় আমরা মোট ১৪টি আমল পেলাম তা হল

) রমজানে নেক আমল বাড়ানোর প্রতিযোগিতা করা (তিরমিজি ২৩০৬)

) কুরআন খতম করার নিয়ত করা

) দান সদকার পরিমান গতবারের তুলনায় এবার আরো বেশী করার নিয়ত করা

) গরীব মিসকিনকে ইফতার করানোর নিয়ত করা, অন্তত ১জন মিসকিনকে প্রতিদিন ইফতার করানোর নিয়ত করা

) সবচেয়ে বড় এবাদতকারী হিসেবে পরিগনিত হওয়ার জন্য হারাম মুক্ত রমজান কাটানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা (তিরমজি ২৩০৫)

) রমজানে অবসর সময়কে নেক আমল দ্বারা কাজে লাগানো (তিরমিজি ২৩০৪)

) রমজানে সুস্থতাকে গনিমত মনে করে আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া, আমলে অবহেলা না করা (তিরমিজি ২৩০৪)

) রমজানে গুনাহের কাজে কড়া ব্রেক লাগানোর নিয়ত করা (তিরমিজি ৬৮২)

) রমজানে প্রতি রাতে মৃতদের জন্য দোয়া করা (তিরমিজি ৬৮২)

১০) প্রতি রমজানে ২০ রাকাত তারাবী পড়ার নিয়ত করা (মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২৪৩)

১১) প্রতি রমজানে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করা (বুখারী ১১৪৭)

১২) প্রতি রমজানের জন্য সাহরী খাওয়ার নিয়ত করা (বুখারী ১২০৩)

১৩) প্রতি রমজানে সাহরীতে খেজুর খাওয়া

১৪) রমজানে মিথ্যা ও গিবত দ্বারা জাহান্নাম এর আগুনের ঢালকে ছিদ্র না করার নিয়ত করা 

এছাড়া আরো প্রস্তুতিমুলক ৭টি গুরুত্বপূর্ণ আমল করবেন তা হল

১) রমজানের ফজিলত ও মাসায়ালা মাসায়েল জানার জন্য বই পুস্তক কিনে পড়া আরম্ভ করা

২) রমজানে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা আদায় করার দৃঢ় প্রতীজ্ঞা গ্রহণ করা

৩) আগের কোন রোজা কাজা থাকলে তা পুরণ করে ফেলা

৪) স্মার্ট ফোন শোস্যাল মিডিয়াকে ১ মাসের জন্য নিয়ন্ত্রন করার শপথ গ্রহণ করা

৫) রমজানে কিভাবে কাটাবেন তার জন্য এখন থেকে একটি রুটিন তৈরী করে ফেলা

৬) ২৯ শাবান পশ্চিম আকাশে চাঁদ দেখা

৭) আল্লাহর কাছে দোয়া করা আল্লাহ যেন আমাদেরকে রমজান মাসটি যথাযথ ভাবে কাটানোর তৌফিক দান করেন

প্রতিটি আমল নিজে করার নিয়ত করুন নিজের পরিবারের সকলকে জানিয়ে দিন, আত্মিয়স্বজনকে শেয়ার করে দিন

 

আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও আপনাদেরকে সবগুলি আমল বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.