৪ বার বেহুশ হয়ে আবু হুরায়রা (রা) যে হাদিস শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিসের শিক্ষা ও আমল।
৪ বার বেহুশ হয়ে আবু হুরায়রা (রা) যে হাদিস শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিসের শিক্ষা ও আমল।
প্রিয় বন্ধুরা আজকে এমন একটি অসাধারণ আমল বা ওজিফা আপনাদের সাথে শেয়ার করব যে আমলটির হাদিসটি বয়ান করতে গিয়ে, এ আমলটিতে অবহেলাকারীদের যে ভয়াবহ পরিণতি হবে তা চিন্তা করে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা) ৪
বার বেহুশ হয়ে গেছেন- অত্যন্ত গুরুত্বপূণ হাদিসটি প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর জেনে রাখা খুবই জরুরী।
কারন এ হাদীসটির উপর আমল করতে
পারলেই আমাদের সব আমল কবুল হবে, না হয় আমাদের সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হাদিসটি হল
শুফাই আল-আসবাহী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, কোন একদিন তিনি মদীনায়
পৌছে দেখতে পেলেন যে, একজন লোককে ঘিরে জনতার ভিড়
লেগে আছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ইনি কে? উপস্থিত
লোকেরা তাকে বলল, ইনি আবূ হুরাইরা (রাঃ) (শুফাই
বলেন), আমি কাছে গিয়ে তার সামনে বসলাম। তখন লোকদের তিনি হাদীস শুনাচ্ছিলেন। তারপর তিনি যখন নীরব ও একাকী হলেন, আমি তাকে
বললাম, আপনি আমাকে এমন একটি হাদীস শুনাবেন, যা আপনি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শুনেছেন, ভালোভাবে বুঝেছেন এবং জেনেছেন।
আবূ হুরাইরা (রাঃ)
বললেন, আমি তাই করব, আমি এমন একটি হাদীস
তোমার কাছে বর্ণনা করব যা সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন এবং আমি তা বুঝেছি ও জেনেছি। আবূ হুরাইরা (রাঃ)
একথা বলার পর বেহুশের মত হয়ে গেলেন, কেমন যেন
তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়েন। অল্প সময় এভাবে থাকলেন। তারপর তন্ময়ভাব চলে গেল, হুশ ফিরে আসল, তিনি বললেন, আমি এমন একটি
হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ ঘরের মধ্যে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তখন আমি ও তিনি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না। আবূ হুরাইরা (রাঃ) পুনরায় বেহুশের মত হয়ে গেলেন,
আরো গভীরভাবে তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি
চেতনা ফিরে
পেয়ে মুখমণ্ডল মুছলেন, তারপর বললেন, আমি তোমার নিকট অবশ্যই এরূপ হাদীস
বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ .
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট
বর্ণনা করেছেন। তখন এ ঘরে তিনি ও আমি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না। আবূ হুরাইরা আবার বেহুশ হয়ে গেলেন; তিনি পুনরায় হুশে ফিরে এসে তার মুখমণ্ডল মুছলেন এবং বললেন, আমি তা করব। আমি অবশ্যই তোমার নিকট
এরূপ হাদীস বর্ণনা করব যাহা তিনি
আমাকে বর্ণনা করেছেন।
আমি তখন তার সাথে এক ঘরে ছিলাম। আমি আর তিনি ব্যতীত তখন আর কেউ ছিলনা। আবূ হুরাইরা (রাঃ) পুনরায় আরো গভীরভাবে
তন্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন এবং বেহুশ হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি অনেকক্ষণ তাকে ঠেস দিয়ে রাখলাম। তারপর হুশ ফিরে এলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার
জন্য কিয়ামত দিবসে তাদের সামনে হাযির হবেন। সকল উন্মাতই তখন নতজানু অবস্থায় থাকবে।
তারপর হিসাব-নিকাশের জন্য সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিদের ডাকা হবে তারা হলো কুরআনের হাফিয, আল্লাহ্ তা’আলার পথের শহীদ এবং প্রচুর ধনৈশ্বর্যের মালিক।
সেই কারী (কুরআন
পাঠক)-কে আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করবেন, আমি আমার রাসূলের নিকট যা প্রেরণ করেছি তা কি তোমাকে শিখাইনি? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, শিখিয়েছেন। তিনি বলবেন, তুমি যা শিখেছ সে অনুযায়ী কোন কোন আমল করেছ? সে বলবে, আমি রাত-দিন তা
তিলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। আল্লাহ তা’আলা তাকে আরো বলবেন, বরং তুমি
ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, তোমাকে বড় কারী (হাফিয) ডাকা হোক। আর তা তো ডাকা হয়েছে।
তারপর সম্পদওয়ালা ব্যক্তিকে হাযির করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে সম্পদশালী
বানাইনি? এমনকি তুমি কারো মুখাপেক্ষী ছিলেনা? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, তা
বানিয়েছেন। তিনি বলবেন, আমার দেয়া সম্পদ হতে তুমি কোন
কোন (সৎ) আমল করেছ? সে বলবে, আমি এর
দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রেখেছি এবং দান-খাইরাত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা
বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা’আলা আরো বলবেন, তুমি
ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, মানুষের নিকট তোমার দানশীল-দানবীর নামের
প্রসার হোক, আর এরূপ তো
হয়েছেই।
তারপর যে লোক আল্লাহ্ তা’আলার রাস্তায় শাহাদাৎ বরণ করেছে তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন
করবেন, তুমি কিভাবে নিহত হয়েছ? সে বলবে, আমি তো
আপনার পথে জিহাদ করতে আদিষ্ট ছিলাম। কাজেই আমি জিহাদ করতে করতে শাহাদাৎ
বরণ করেছি। আল্লাহ
তা’আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, আর ফেরেশতারাও তাকে বলবে তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা’আলা আরো বলবেন, তুমি ইচ্ছাপোষণ
করেছিলে লোকমুখে একথা প্রচার হোক যে, অমুক
ব্যক্তি খুব সাহসী বীর। আর তাতো বলাই হয়েছে।
তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাটুতে হাত মেরে বললেনঃ হে আবূ হুরাইরা
কিয়ামত দিবসে
আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টির মধ্য হতে এ তিনজন দ্বারাই প্রথমে
জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হবে।
জনৈক ব্যক্তি মু’আবিয়া
(রাঃ)-এর নিকট এসে উক্ত হাদীসটি আবূ
হুরাইরা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তখন মু’আবিয়া (রাঃ) বলেন, যদি
তাদের সাথে এমনটি করা হয় তাহলে
অন্যসব লোকের কি অবস্থা হবে? তারপর মুআবিয়া (রাঃ) খুব বেশি কান্না করলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি কাঁদতে কাঁদতে
মারা যাবেন। আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, এই লোকটিই আমাদের এখানে অনিষ্ট নিয়ে এসেছে (অর্থাৎ
সে এই হাদীসটি বর্ণনা না করলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না)। ইতিমধ্যে মু’আবিয়া
(রাঃ) হুশ ফিরে পেলেন এবং তার চেহারা মুছলেন, তারপর বললেন, আল্লাহ ও
তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন। (এই বলে তিনি
নিম্নোক্ত আয়াত
তিলাওয়াত করেনঃ)
مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ
الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ * أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ
النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا
وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“যে কেউ পার্থিব জীবন ও
এর সৌন্দর্য কামনা করে, আমি দুনিয়াতে তাদের কর্মের পূর্ণ ফল প্রদান
করে থাকি এবং সেখানে তাদেরকে
কম প্রদান করা হবে না। তাদের জন্য পরকালে
জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছু নেই এবং তারা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা বিফলে যাবে" (সূরাঃ হুদ- ১৫, ১৬)। (হাদিস
নং তিরমিজি ২৩৮২)
এই দীঘ হাদীসের মাধ্যমে আমাদের জন্য অনেক বড় আমল অনেক বড় ওজিফার শিক্ষা আছে আর তা হল আমরা যা কিছুই করিনা কেন আমরা যত আমলই করিনা কেন আমাদের সে সব আমলের উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। আমলে কোন ধরনের রিয়া বা লোক দেখানো যেন না
থাকে, মানুষের প্রসংশা বা বাহবা কুড়ানোর
ইচ্ছা যেন না থাকে। আর বিশেষ করে যারা কোরানের হাফেজ আলেম তাদের জন্য গুরুত্বপূণ হল এলম অনুযায়ী আমল করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে প্রতিটি আমল একমাত্র আল্লাহর
সন্তুষ্টির নিয়তে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই