রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপদেশ: এক সাহাবীর হাত ধরে শেখানো পাঁচটি শিক্ষা
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপদেশ: এক সাহাবীর হাত ধরে শেখানো পাঁচটি শিক্ষা
একদিন প্রিয় নবী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশে এক ঘোষণা
দিলেন:
“কে আছেন,
আমার এই কথাগুলো
গ্রহণ করবেন, নিজে আমল করবেন এবং অন্যদের শিখিয়ে দিবেন?”
এই ঘোষণার সাথে
সাথেই সামনে থেকে একজন সাহাবী উঠে দাঁড়ালেন। তিনি ছিলেন হাদিস জগতের অন্যতম
উজ্জ্বল নক্ষত্র, আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)। তিনি বললেন,
“হুজুর,
আমি আছি। আমি
আপনার কথা শুনব, আমল করব এবং অন্যদেরও শিখাব।”
সুবহানাল্লাহ!
কতটা ভক্তি, কতটা আন্তরিকতা ছিল সাহাবীদের মধ্যে! আবু হুরায়রা (রা.)
তখনো নবীজির সঙ্গে মাত্র তিন বছরের মতো সময় কাটিয়েছেন। তবুও,
তিনিই হাদিস বর্ণনায় সবচেয়ে অগ্রগামীদের
একজন।
অনেকেই তাঁকে
প্রশ্ন করতেন,
“আবু হুরায়রা!
তুমি তো নবীজির সঙ্গে বেশিদিন থাকতে পারোনি, তাহলে এত হাদিস কীভাবে বলো?”
উত্তরে তিনি বলতেন,
“সাহাবীদের কেউ
মাঠে যেতেন, কেউ ব্যস্ত থাকতেন সংসার-জীবনে। কিন্তু আমি তো সারাক্ষণ
নবীর দরবারেই থাকতাম। নবীজী খেতেন তো আমি খেতাম,
নবী না খেলে
আমিও না খেতাম।”
এমন ভালোবাসা,
এমন নিবেদন কজনের মধ্যে থাকে?
আবু হুরায়রা
(রা.) যখন বললেন,
“হুজুর,
আমি আছি”
তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আবু হুরায়রার হাতটি নিজের হাতে ধরে নিলেন। প্রিয় ভাইয়েরা,
কল্পনা করুন সেই দৃশ্যটি—নবীজী তাঁর এক সাহাবীর হাত ধরে শিক্ষা দিচ্ছেন। একেবারে
সন্তানের মতো করে।
সেই সময় নবীজী
তাঁকে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিলেন, যেগুলো আমাদের সবার জন্য দিকনির্দেশনা:
১. হারাম থেকে বেঁচে থাকো
নবীজি বললেন:
“হারাম কাজ,
কথা,
পোশাক,
খাবার,
উপার্জন—সব কিছু থেকে নিজেকে বাঁচাও। এমনকি
হারামের مجلس
থেকেও দূরে থাকো। যদি তা করতে পারো, তবে তুমি হবে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়
বান্দা, শ্রেষ্ঠ ওলি।”
মানুষ হয়ত
আপনাকে না চিনতে পারে, ভাইরাল হতে নাও পারে, তবু আল্লাহর খাতায় আপনি থাকবেন সর্বোচ্চ
সম্মানিত বান্দাদের একজন।
২. আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকো
নবীজি বললেন,
“যা কিছু আল্লাহ
তোমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকো। তাহলেই তুমি হবে
সবচেয়ে স্বনির্ভর এবং মনের দিক থেকে ধনী বান্দা।”
কারণ,
কোনো মানুষ তার বরাদ্দকৃত রিজিক পাওয়ার
আগ পর্যন্ত মারা যেতে পারে না। তাই হারামের পথে না গিয়ে হালালভাবে চেষ্টা করো।
তাড়াহুড়া করে সুদে কিংবা অন্য অন্যায় পথে ধনী হতে চেয়ো না। বরং ধৈর্য ধরো,
হালাল উপায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাও।
৩. প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো আচরণ করো
নবীজি বলেন,
“প্রতিবেশীর সাথে
উত্তম আচরণ করো, তাহলে তুমি খাঁটি ঈমানদার হয়ে যাবে।”
আজকাল তো ভাইয়ে
ভাইয়ে সম্পর্ক পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন! ছোট মান-অভিমান থেকে শুরু করে ২০ বছরেও কথা হয়
না। কিন্তু এই অভিমান যেন আমাদের সন্তানদের মধ্যে না যায়। একজন চাচাকে সালাম না
দেওয়ার কারণ যদি হয় ‘আমার বাবা তার সাথে কথা বলেন না’—তবে সেটা কোনো ঈমানদারের কাজ হতে পারে না।
৪. নিজের জন্য যা পছন্দ, অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করো
এই হলো
মুসলমানের পরিচয়।
“তুমি খাঁটি
মুসলিম তখনই হবে, যখন নিজের জন্য যেটা ভালো মনে করো,
অন্য ভাইদের
জন্যও সেটা মন থেকে চাও।”
৫. বেশি হাসো না—অন্তর
মরে যায়
নবীজি বলেন:
“বেশি হাসলে
অন্তর মরে যায়।”
অর্থাৎ, অতি হাসাহাসি ইবাদতের প্রতি মনোযোগ নষ্ট
করে, অন্তরকে
গাফেল বানিয়ে দেয়।
হাসা একেবারে নিষিদ্ধ নয়—নবীজী স্বাভাবিকভাবে হাসতেন। তবে অট্টহাসি,
অতিরিক্ত হাসাহাসি অন্তরে নেতিবাচক
প্রভাব ফেলে।
উপসংহার
প্রিয় ভাইয়েরা,
এই একটি হাদিস থেকে আমরা পাঁচটি
মহামূল্যবান শিক্ষা পেলাম:
- হারাম থেকে বাঁচো—তুমি হবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা।
- আল্লাহর দেওয়া বরাদ্দে সন্তুষ্ট
থাকো—তুমি হবে আত্মিক দিক থেকে ধনী।
- প্রতিবেশীর সাথে উত্তম আচরণ করো—তুমি হবে খাঁটি মুমিন।
- নিজের জন্য যা পছন্দ, অন্যদের জন্যও তা চাও—তুমি হবে খাঁটি মুসলমান।
- বেশি হাসা থেকে বিরত থাকো—তোমার অন্তর থাকবে জীবন্ত, আল্লাহর স্মরণে সজাগ।
আল্লাহ আমাদের
সবাইকে এই পাঁচটি শিক্ষা বাস্তব জীবনে ধারণ করার তাওফিক দিন।
আমরা গুনাহ থেকে
ফিরে আসবো, হারাম থেকে বেঁচে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
বলুন—ইনশাআল্লাহ!
কোন মন্তব্য নেই