৩টি রোগের যে কোন ১টি রোগ হলেই বুঝবেন আপনি জান্নাতি
৩টি রোগের যে কোন ১টি রোগ হলেই বুঝবেন আপনি জান্নাতি
জান্নাতি লোকদের কিছু আলামত,
কিছু কর্মকাণ্ড, তাদের কিছু চরিত্র - যা মহান আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলে দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর আজ আমরা আলোকপাত করবো, ইনশাআল্লাহ। এই আলোচনা থেকে আমরা কিছুটা হলেও ধারণা নিতে পারবো, আমরা যারা জান্নাতের পথে যাত্রী, আমাদের এই যাত্রা সঠিক পথে চলছে তো? নাকি অন্য কোথাও?
জান্নাতি লোকদের আলামতগুলো যদি আমাদের মধ্যে
থাকে, তাহলে
আমরা বুঝতে পারবো, আমাদের
যাত্রা সঠিক দিকেই,
সঠিকভাবেই এগোচ্ছে। আর যদি - আল্লাহ না করুন - জান্নাতি লোকদের সেই আলামতগুলো, সেই
কর্মগুলো, যা
কুরআন ও সুন্নাহয় আলোচিত হয়েছে, সেগুলো যদি আমাদের মধ্যে না থাকে, তাহলে
বুঝতে হবে, আমাদের
যাত্রা সঠিকভাবে হচ্ছে না।
ভাই! শুধু নিয়ত সঠিক থাকলেই কি জান্নাতে যাওয়া
যাবে? ধরুন, আপনি ঢাকা
থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে উঠে বসলেন। এই ট্রেন যাবে চট্টগ্রামে। আর আপনি নিয়ত
করছেন রংপুর যাবেন! কী বলেন, শুধু আপনার নিয়তের কারণে কি আপনি রংপুর যাবেন? না, চট্টগ্রামেই
যাবেন। আপনি যে গাড়িতে উঠেছেন, সেটা যদি চট্টগ্রামের গাড়ি হয়, আপনার
নিয়ত যতই খাঁলেস হোক রংপুর যাওয়ার, এই গাড়ি কি আপনাকে রংপুর নিয়ে
যাবে?
তাহলে বুঝুন, আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে, আমার
যাত্রা সঠিক হতে হবে। যদি যাত্রা বেঠিক হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আমার নিয়ত যতই
ভালো হোক না কেন, আমি
আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো না।
পাক্কা নিয়ত! একেবারে পাক্কা নিয়ত যে আপনি
জান্নাতে যাবেন! নিয়তে কোন ভেজাল নাই। আলহামদুলিল্লাহ! আমরা সবাই জান্নাতে যেতে
চাই। জাহান্নামও না,
আরাফও না - ডাইরেক্ট জান্নাতে! এবং ছোটখাটো জান্নাতও না, জান্নাতুল
ফেরদাউসে যেতে চাই - মাশাআল্লাহ্!
কিন্তু আমার এই যাত্রাটা সঠিক আছে কিনা, সেটা
অনুমান করার জন্য কুরআন এবং সুন্নাহয় জান্নাতিদের কিছু মার্কা, কিছু আলামত, কিছু
কর্মকাণ্ড আল্লাহ্ আলোচনা করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদিসে
উল্লেখ করেছেন। এই আলামতগুলো দেখে কেউ আবার যেন এটা নিশ্চিত না হন যে অমুকের ভিতরে
আলামত আছে, তাহলে
সে জান্নাতি! আর অমুকের ভিতরে নাই, তাহলে সে জাহান্নামী! এরকমভাবে আবার
নিরূপণ করার সুযোগ নাই। কারণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মূলনীতি হলো, আমরা
নির্দিষ্ট করে কোন মানুষকে জান্নাতি অথবা নির্দিষ্ট করে কোন মানুষকে জাহান্নামী
বলে বিশ্বাস করি না।
এক্ষেত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর একটি সাধারণ মূলনীতি আছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেছেন, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন, "আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে
যাবে, - শুধুমাত্র আমার উম্মতের মধ্যে যারা অস্বীকার
করেছে তারা জান্নাতে যাবে না।" সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, "ইয়া
রাসূলুল্লাহ! অস্বীকার করছে মানে কাদেরকে বুঝাচ্ছেন আপনি?" তিনি বললেন, "যে আমার
আনুগত্য করেছে, অনুকরণ
করেছে, অনুসরণ
করেছে, আমার
কথা শুনেছে - সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার কথা শুনে নাই, লঙ্ঘন
করেছে - সেই হলো অস্বীকারকারী। আর যে অস্বীকারকারী, সে জাহান্নামে যাবে।"
তাহলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
এই হাদিসের আলোকে সকল ঈমানদারদের প্রতি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা অনুযায়ী
আমরা সুধারণা রাখবো যে,
সব ঈমানদাররাই ঈমান নিয়ে যদি মারা যায়, তাহলে সে কোথায় যাবে? ইনশাআল্লাহ্, জান্নাতে
যাবে। হয়তো কিছু সাজা ভোগ করে তারপর তাকে জান্নাতে যেতে হতে পারে, যদি তার
দোষ ত্রুটি সেরকম থাকে। আর আল্লাহ্ চাইলে ক্ষমা করে সরাসরিও জান্নাতে দিতে পারেন।
আর যারা ঈমান নিয়ে যেতে পারে নাই, নিশ্চিত তারা কুফরের উপরে, বেঈমান
অবস্থায়, অমুসলিম
অবস্থায় মারা গেছে,
তাহলে এই লোকগুলো জান্নাতে যাবে না, জাহান্নামে যাবে - এটাও আহলে
সুন্নাতাল জামাতের আকিদা এবং বিশ্বাস।
আর যাদের ব্যাপারে কুরআন এবং সুন্নাহ নির্দিষ্ট
করে বলে দেওয়া আছে,
অমুক জান্নাতে অথবা অমুক জাহান্নামে - যেমন আবু লাহাব, ফেরাউন, এরকম
অনেকের কথা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে তারা জাহান্নামের আযাব ভোগ করছে বা জাহান্নামী, তাহলে
তাদের ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবো, অমুক
জাহান্নামী। আর এর বিপরীতে ১০ জন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী আছেন। আরো অনেকেই
আছেন যাদের ব্যাপারে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, অমুক
জান্নাতি, অমুক
জান্নাতি। তাদের ব্যাপারে আমাদের আকিদা এবং বিশ্বাস হলো, তারা সবাই জান্নাতে যাবেন।
আর এছাড়া সাধারণ মানুষের ভেতরে জান্নাতিদের কোন
আলামত দেখে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নাই, সুযোগ নাই যে লোকটা জান্নাতে যাবে।
অথবা জান্নাতীদের আলামত নাই, জাহান্নামীদের আলামত আছে, সেটা দেখেও নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ
নাই যে লোকটা জাহান্নামে যাবে।
কারণ একটা হাদিস আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
"অনেক লোক সারাজীবন জান্নাতিদের কাজ করে, সারাজীবন
সে জান্নাতি আমল করতে থাকে,
যাত্রা সঠিকভাবেই চলছে। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে, মৃত্যুর
ঠিক আগ মুহূর্তে, আল্লাহর
ফায়সালা তার ব্যাপারে যেটা ছিল, সেটার প্রাবল্য, সেটার প্রাধান্য চলে আসে এবং ওই
লোকটি জাহান্নামী কর্মকাণ্ড করতে শুরু করে আর ওই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং
জাহান্নামে চলে যায়।" আল্লাহ্ আমাদেরকে হেফাজত করেন।
আবার এর বিপরীতে কিছু লোক আছে, যারা
সারাজীবন জাহান্নামী কর্মকাণ্ড করে। কিন্তু মৃত্যুর আগ মুহূর্তে, জীবনের শেষ
মুহূর্তে এসে আল্লাহর ফায়সালা তার উপরে প্রাধান্য বিস্তার করে এবং সে জান্নাতি আমল
শুরু করে দেয়। তার ফলে সে মৃত্যুবরণ করলে এ অবস্থায় সে সোজা জান্নাতে চলে যায়।
তাহলে একজন মানুষ নেক আমলের ভিতরে থাকলেও তার
গর্ব করার কোন সুযোগ নাই। কেউ বদ আমলে থাকলেও তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার, হেয় করার, ছোট নজরে
দেখার কোন সুযোগ নাই। কারণ শেষ পরিণতি কার ভালো হবে, এটা একমাত্র আহকামুল হাকিমিন জানেন, আমরা কেউ
জানি না।
অতএব নিশ্চিতভাবে আমরা যেহেতু বলতে পারি না কে
জান্নাতে যাবে, কে
জাহান্নামে যাবে, সেজন্য
এ সমস্ত আলামত দেখে কারোর ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে না। তবে এগুলো দেখে ভালোটা
গ্রহণ করতে হবে, মন্দটা
ছাড়তে হবে। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করেন।
প্রিয় ভাইয়েরা, জান্নাতি লোকদের যে আলামত, তাদের যে
মার্কা, তাদের
যে আমল, তার
ভিতরে একটা হলো সহীহ বুখারী এবং মুসলিমের এক হাদিসে আসছে, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতিদের কথা
বলে দিব না? যে
লোকগুলো জান্নাতে যাবে?"
এরপর তিনি নিজেই বলা শুরু করলেন, "কিছু নিরীহ, দুর্বল
কিছু লোক আছে, নিরীহ টাইপের, দুর্বল ধরনের, সবাই তাদের উপরে চাপায়, সবাই তাদের
উপরে মাদবরি খাটায়। এরকম স্বভাবের কিছু লোক আছে নরম স্বভাবের, কোমল
স্বভাবের, সবাই
গিয়ে তার উপরে চড়াও হয়,
সে কারোর উপরে গোয়ারতুমি
করতে পারে না। সবসময় বিনয়ী হয়ে থাকে, নম্রতা তার ভিতরে আছে। নিজে হারে
অন্যকে হারানোর চেষ্টা করে কম। নিচে থাকে, উপরে উঠার চেষ্টা করে কম।
এর উল্টা স্বভাবের লোকও আছে - সবকিছুতে সে উপরে
উঠবে! সবকিছুতে! একটা বাচ্চার সাথে দুষ্টমি করলেও তাকে জিততে হবে! উপরে উঠতে হবে!
এই টাইপের মানুষ খারাপ মানুষ। ভালো মানুষের মার্কা, জান্নাতিদের আমল হলো, তারা নরম
থাকবে, কোমল
স্বভাবে থাকবে, নম্রতা
তাদের ভেতরে থাকবে। সবাই তাদেরকে চাপাবে, সে কাউকে চাপাতে যাবে না। সবাই তাকে
চিপায় ফেলবে, সে
কাউকে চিপায় ফেলতে যাবে না। সবাই তার উপরে মাদবরি খাটাবে, সে সাধারণত
মাদবরি খাটাইতে যায় না। সবর করে। এই টাইপের মানুষ - নিরীহ, দুর্বল।
এরকম মানুষ জান্নাতিদের একটা বড় মার্কা।
এরা যদি আল্লাহর কাছে কোন কিছুর জন্য কসম করে, কোন কোন
হাদিসের ব্যাখ্যাকারী ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, এর মানে হলো, কোন কিছু
যদি আল্লাহর কাছে চায়,
দোয়া করে, তো
আল্লাহ্ তার দোয়া পূরণ করেন, ফিরিয়ে দেন না। অথবা সে শপথ করলে কোন ভালো কাজের, আল্লাহ্
তার শপথ রক্ষা করেন,
এর ব্যতিক্রম আল্লাহ্ তা'আলা হইতে দেন না। অর্থাৎ, এ হাদিস থেকে আমরা জান্নাতিদের একটা
মার্কা পাইলাম, সেটা
হলো বিনয়! খুব কঠিন একটা কাজ! সবসময় আপনি বিনয়ী হয়ে থাকা, সবার কাছে, সব
জায়গাতে। উপরে ওঠার চেষ্টা, গোয়ারতুমি করার চেষ্টা, ঘাটচাড়ামি করার চেষ্টা, অহংকার
করার চেষ্টা, দাপট
দেখানোর চেষ্টা - এই প্রবণতা জাহান্নামী প্রবণতা।
স্পষ্ট হাদিসে আসছে, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জাহান্নামীদের মার্কা বলেছেন - "প্রত্যেক
উদ্ধত, অহংকারী
ও আত্মম্ভরী ব্যক্তি।" সব জায়গায়
তার মাতবরি খাটাবে,
সব জায়গায় সে উপরে উঠবে, সবার উপরে সে থাকবে, সব জায়গাতে মাস্তানি, গায়ের জোর
খাটানোর চেষ্টা - আল্লাহ্ আমাদের সকলকে হেফাজত করে। এই স্বভাবটা আমাদের সবার
ভেতরেই কম হোক বেশি হোক আছে। কোথাও দুর্বল পাইলে কেউ বউর উপরে
মস্তানিটা খাটায়। কেউ রুমের দুর্বল লোক পাইলে তারপরে এ মস্তানিটা খাটায়। কেউ
অফিসে নিজের কোম্পানির কাজের মুহূর্তে দুর্বল লোক পাইলে তার উপরে এ মাদবরিটা
খাটায়, গোয়ারতুমিটা
খাটায়। মনে রাখবেন,
এ হাদিসটি যেন মাথায় থাকে। জান্নাতি লোকের মার্কা - দুর্বল, দুর্বল
হয়ে থাকে, সবাই
তারে চাপায়, সে
কাউকে চাপায় না। লোকটা জান্নাতি হওয়ার একটা লক্ষণ, একটা আলামত, জান্নাতিদের
একটা স্বভাব।
তাহলে কারোর উপরে যখন প্রভাব বিস্তার করতে যাবেন, তখন এই
কথাটা মাথায় আসা উচিত যে,
আমি নিচে থাকি,
আমি ছোট থাকি, আমি
বিনয়ী হই, আল্লাহ্
আমাকে জান্নাতে নিবেন ইনশাআল্লাহ্। বিনয় অবলম্বন করবেন তো ইনশাআল্লাহ্?
প্রিয় ভাইয়েরা, জান্নাতিদের একটি আলামত হলো বিনয়ী
হওয়া, নম্র
হওয়া, দুর্বল
হওয়া, নিরীহ
হওয়া। আল্লাহতালা আমাদেরকে সে তৌফিক দান করেন।
দ্বিতীয় মার্কা হলো আল্লাহর ভয়ে
খারাপ কাজ ছাড়তে পারা। বড়
কঠিন একটা স্বভাব! এর ভিতরে এক মজা আছে ভাই! আজিব এক মজা আছে!
আল্লাহর ভয়- কেউ দেখছেন না, আমার মালিক
দেখছেন - এই বিশ্বাস থেকে কোন হারাম কাজ ছাইড়া দেখেন। ওয়াল্লাহি ওয়াল্লাহি, আল্লাহর
কসম, যে
কোন অপকর্ম, যেকোন
গুনাহের কাজ করার একটা স্বাদ আছে। জেনা করলে স্বাদ লাগে, চুরি করলে
স্বাদ লাগে, গীবত
করতে ভালো লাগে। কিন্তু এই যে অন্যায় করে যে স্বাদটা আপনি পাবেন, আল্লাহর কসম, মালিক
দেখছেন সেই ভয়ে যদি সেই গুনাহটা না করেন, সরে আসেন, সঙ্গে
সঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা
অন্তরে এক ঈমানী স্বাদ দিবেন, ভালো লাগবে দেখবেন, মনটা ফ্রেশ হয়ে গেছে, খুশি লাগবে
যে আমি আমার মালিকের কথা রক্ষা করতে পেরেছি।
আল্লাহর সামনে আমাকে দাঁড়াতে হবে, এই মুখ আল্লাহর
সামনে দেখাতে হবে, হিসাব
দিতে হবে - এই ভয়ে অন্যায় কাজ থেকে, মনে যে কুকর্ম করার কথা নির্দেশ করে, সেখান থেকে
সে ফিরে আসে, অগ্রসর
হয় না আল্লাহর ভয়ে। আল্লাহ্ বলেন,
وَأَمَّا مَنْ
خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى ٱلنَّفْسَ عَنِ ٱلْهَوَىٰ ١٤٠ فَإِنَّ ٱلْجَنَّةَ
هِىَ ٱلْمَأْوَىٰ ١٤١
"আর যে ব্যক্তি তার রবের
সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, তার ঠিকানা
হবে জান্নাত।" (সূরা আন-নাযিআত, ৭৪০-৪১)
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে এই গুণ দান করেন।
অবলীলায় সারাদিন আল্লাহকে নাখোশ করে চলেছি -
মুখ দিয়া, হাত
দিয়া, বুদ্ধি
দিয়া, বিবেক
দিয়া, গোটা
শরীর দিয়া, মাথা
থেকে পাও পর্যন্ত গোটা দেহ দিয়া আল্লাহর নাফরমানি সারাদিন করে যাচ্ছি। একটি বারের
জন্য, একটি
বারের জন্য এই ভয়টুকু আসে না - আল্লাহ্ সুবহানাতালা যদি পাকড়াও করেন, আল্লাহ্
যদি এখন ধরেন, এই
অবস্থায় আমার অবস্থা কি হবে?
প্রিয় ভাইয়েরা, আল্লাহর ভয়ে হারাম কাজ ছাড়তে পারা, বাদ দিতে
পারা, পরিহার
করতে পারা - এটা জান্নাতি লোকের লক্ষণ। আর হারামে ডুবে থাকা জাহান্নামিদের লক্ষণ
যেমন আল্লাহ্ বলেন,
وَلَقَدْ
ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌۭ
لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا ۚ وَلَهُمْ أَعْيُنٌۭ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا ۚ وَلَهُمْ
ءَاذَانٌۭ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَـٰمِ بَلْ هُمْ
أَضَلُّ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْغَـٰفِلُونَ
"অবশ্যই
আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি; তাদের
অন্তর আছে, কিন্তু
তারা তা দ্বারা বোঝে না;
তাদের চোখ আছে,
কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না; তাদের কান আছে, কিন্তু
তারা তা দ্বারা শোনে না। তারা পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল
গাফেল।"
ও ভাই! বড় কঠিন কথা, বড় কঠিন!
আল্লাহ্ বলেন, আমি
জাহান্নামের জন্য কিছু মানুষ এবং জীনকে সৃষ্টি করেছি, সৃষ্টি
করেছি জাহান্নামের জন্য। দেখেন তো নিজের ভিতর আছে কিনা - আল্লাহ্ মাফ করুক!
মার্কা হলো অন্তর আছে,
কিন্তু অন্তর দিয়ে ভালো জিনিস
ক্যাচ করে না। কোন কথায় তার অন্তর গলে না, তার জীবনের পরিবর্তন হয় না, তার
গন্তব্যের মূল চেঞ্জ হয় না, যাত্রা পদ্ধতি ঠিক হয় না। তওবা করে না, পথ চেঞ্জ
করে না, ফিরে
আসে না, ফিরে
আসার মত সৎসাহস নাই, ঈমানী
শক্তি নাই - এটা জাহান্নামী হওয়ার লক্ষণ। আল্লাহ্ আমাদের হেফাজত করেন।
তাহলে ভাই, জান্নাতিদের এক নম্বর আলামত গেল
বিনয়ী হওয়া। সবসময় জিতার চেষ্টা করবেন না, আমরা বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করব, হারার
চেষ্টা করব, ছোট
থাকার চেষ্টা করব। আল্লাহ্ আমাদেরকে তৌফিক দান করেন।
দ্বিতীয় মার্কা হলো ভাই জান্নাতিদের, আল্লাহর
ভয়ে তারা গুনাহর কাজ ছাড়বে। এটা একটা সাধনার ব্যাপার।
জান্নাতি লোকের তিন নম্বর মার্কা:
এই মার্কা তো আমাদের মধ্যে একেবারেই নাই বললেই চলে! এটা হলো রাত জাগা!
রাত জেগে আল্লাহর এবাদত করা, নফল নামাজ পড়া, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করা, ক্ষমা
চাওয়া, রাত্রে
জেগে জেগে। সারা পৃথিবীর মানুষ যখন ঘুমে অচেতন তখন সে রাতে ঘুমাতে পারেনা, সে
ব্যকুল হয়ে যায় তার রবের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়তে, এই রোগটি হল জান্নাতি রোগ।
চার নম্বর আলামত হলো আল্লাহর
রাস্তায় দান করা, সদকা
করা, হিসাব
করে যাকাত পাইপাই করে গরীবের হক গরীবের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বছর শেষে এগুলো হল জান্নাতিদের
তিন এবং চার নম্বর আলামত। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাতালা সূরা জারিয়াতের ভিতরে
বলছে দেখেন। আল্লাহ্ বলেন,
"নিশ্চয়ই
মুত্তাকীরা জান্নাতে ও ঝর্ণাধারার পাশে থাকবে।" মুত্তাকীরা কেয়ামতের দিন
আল্লাহ্ তাদেরকে যা দিবেন,
যে পুরস্কার দিবেন,
আল্লাহ্ যে পরিচ্ছন্ন জান্নাতের নেয়ামত দিবেন, সেটা তারা গ্রহণ করবে, রিসিভ করবে
আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার। আর এই লোকগুলোর আলামত হলো, এই লোকগুলো দুনিয়াতে মুহসিন ছিল, ভালো কাজ
করত, সৎকর্মশীল ছিল, নেক মানুষ
ছিল। তাদের মার্কা কি?
"তারা রাতের খুব অল্প সময় ঘুমাত, রাত জেগে এবাদত করত।
এরপর চলে আসি সহজে, শর্টকাটে, জান্নাতিদের
আরো চারটি মার্কা একসঙ্গে এক জায়গাতে আল্লাহতালা বলেছেন। সেটা হলো নামাজে মনোযোগ দেওয়া!
এবং অনর্থক কাজ ছাড়া! জান্নাতের যাত্রীরা! অনর্থক কাজ ফালতু কাজ করেন
না? বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কায়
খেলার কি খবর? মায়ের
খবর সপ্তাহে একবার নিতে পারেন না? ফুফুকে ফোন দেওয়ার সময় পান না দুই মাসে একবার? কিন্তু এই
মালিঙ্গা কয় রান করছে,
সেটা ঠিকই খবর নেন! কে কয় উইকেট পাইছে সারাদিন খবর নেন! অনর্থক কাজ, যে কাজের
দুনিয়ারও কোন লাভ নাই,
আখেরাতেরও কোন কাজ লাভ নাই।
আল্লাহ্ কি বলে দেখেন জান্নাতিদের সম্পর্কে –
قَدْ أَفْلَحَ ٱلْمُؤْمِنُونَ
ٱلَّذِينَ هُمْ فِى صَلَاتِهِمْ خَـٰشِعُونَ وَٱلَّذِينَ هُمْ عَنِ ٱللَّغْوِ
مُعْرِضُونَ
"নিশ্চয়ই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের
সালাতে খুশু অবলম্বনকারী,
যারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিমুখ থাকে," (সুরা মুমিনুন ১-৩)
ফালতু কাজ করে না, কথা বলে না, ফাও কাজে
নাই, অনর্থক
কাজে নাই। "যারা যাকাত দিয়ে দেয়," হিসাব করে করে এক পয়সা নিজের কাছে
রাখে না, পাই
পাই করে হিসাব করে দিয়ে দেয়। "যারা তাদের চরিত্রকে, লজ্জাস্থানকে হেফাজত
করে," লজ্জাস্থানকে
তারা অপাত্রে, কুপাত্রে
ব্যবহার করে না। আপনি অন্য মেয়ের ছবি দেখে, নাটকে, গানে, নাচে, মোবাইলে
মজা নিতেছেন। আপনার যৌনতাকে এখানে ব্যবহার করছেন। আপনি জান্নাতে যেতে পারবেন না।
জান্নাতে যেতে চান এগুলো ছাড়তে হবে। নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি, বস্তু, কোন কিছুতে, কোন
জায়গাতে নিজের যৌন চাহিদা মিটানো যাবে না। যৌনতার মজা নেওয়া যাবে না। কারো ছবি
দেখে, কারোর
গান শুনে, কারো
কথা শুনে, কারো
সাথে অবৈধ সম্পর্ক রেখে আপনি মজা নিবেন। আর বলবেন আমি জান্নাতের যাত্রী? আপনি
মিথ্যুক! হয় আপনার দাবিতে মিথ্যুক অথবা আপনি পথ ছাড়া। দাবি করছেন জান্নাতের
যাত্রী, যাচ্ছেন
উল্টা! আল্লাহ্ হেফাজত করেন।
এরপর আসেন, "যারা তাদের আমানত রক্ষা করে ও
ওয়াদা রক্ষা করে।" জান্নাতিদের মার্কা, ওয়াদা রক্ষা করে, কথা ঠিক
রাখে, আমানত
রক্ষা করে। "এবং যারা তাদের সালাতসমূহের হিফাযত করে।" সব নামাজগুলাকে
হেফাজত করে, নষ্ট
হতে দেয় না। জান যাবে ফজর ছাড়বে না! রাতের টকশো বন্ধ করে দিতে রাজি আছি, তাও ফজর
আমাকে পড়তে হবে মসজিদে গিয়ে! জান যায় নামাজ জামাতের সাথে ছাড়ে না - আল্লাহ্
বলেন, "এরাই
হবে ওয়ারিশ।" এই গুণগুলা যাদের ভিতরে থাকবে "তারাই হবে ওয়ারিশ।"
ওয়ারিশ কাকে বলে? একজন আপনার বাবা মারা গেছে, তহলে ভাইরা
বোনেরা আপনারা যারা আছেন তারা তার সম্পদের ওয়ারিশ উত্তরাধিকারী, দুনিয়াতে
ওয়ারিশ হলে কি পায়?
জমি জমা,
আপনি আপনার বাপের ওয়ারিশ হইছেন, বাপ মারা গেছেন তার ওয়ারিশ হইছেন,
আল্লাহ্ বলেন,
"তারাই হবে ওয়ারিশ।" যাদের মধ্যে এ গুণগুলো থাকবে এরা
হলো ওয়ারিশ! এরা হলো মালিক! কিসের মালিক? "জান্নাতুল ফিরদাউসের ওয়ারিশ
হবে।" দুনিয়ায় ওয়ারিশ হলে কিছু
জমির মালিক হন, আবার
মারা গেলে আপনার ছেলে নিয়ে যায়, দুনিয়ার ওয়ারিশ স্থায়ী ওয়ারিশ হতে পারে না।
"যারা
জান্নাতুল ফিরদাউসের ওয়ারিশ হবে।" এই জান্নাতুল ফেরদাউসের ওয়ারিশত্ব
আল্লাহর আর কেড়ে নিবেন না। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে জান্নাতে যাওয়ার তৌফিক দান
করুক। সকলকে ভালো হওয়ার তৌফিক দান করুক। জান্নাতিদের অভ্যাসগুলো আমাদের ভিতরে
আনার চেষ্টা যেন করি আল্লাহ্ সে তৌফিক দান করুক।
আমি আবারও বলে দিচ্ছি জান্নাতিদের মার্কাগুলো
শুধু সংক্ষেপে। এক,
বিনয়ী হওয়া। সবসময় জিতার চেষ্টা না করা। গোয়ারতুমি না করা। ঘাটতাড়ামি না
করা। নম্র হওয়া, নরম
হওয়া। দুই, আল্লাহর
ভয়ে, আল্লাহর
ভয়ে গুনাহ ছাড়তে পারা,
খারাপ কাজ ছাড়া - এটা বড় কঠিন বিষয় ভাই। এ সবগুলোর ভিতরে সবচেয়ে কঠিনটা
এটা। আল্লাহ্ সবাইকে তৌফিক দান করুক, নাম্বার তিন, রাত জেগে আল্লাহর এবাদত করতে হবে।
নাম্বার চার, যারা
চায়, ভিক্ষুক, অভাবী
তাদেরকে দান করবেন,
যাকাত দিবেন। নাম্বার পাঁচ, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করবেন, ক্ষমা
চাইবেন। একাকী একটু হাত তুলে কাঁদবেন আল্লাহর কাছে যখন সুযোগ পান। নাম্বার ছয়, ধৈর্য ধারণ
করবেন, অস্থির
হবেন না বিপদ আপদে অন্য কোন অসুবিধাতে। নাম্বার সাত, সত্য কথা বলবেন, ঈমান
তৌহীদের উপরে থাকবেন। নাম্বার আট, আল্লাহর অনুগত থাকবো, অবাধ্য হবো না। নম্বর নয়, সুদিনে দুর্দিনে সর্বাবস্থায় দান
করবো। নম্বর ১০, রাগ
নিয়ন্ত্রণ করবো। খেল খেল করবো না যখন তখন, মানুষকে ক্ষমা করবো। এটা জান্নাতি লোকের লক্ষণ। নাম্বার ১১ নম্বর
হলো নামাজে খুশুর সাথে মনোযোগের সাথে নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো ধীরে সুস্তে।
নাম্বার ১২, অনর্থক
ফালতু ফাহেশা কাজ করবো না। যে কাজে কোন দুনিয়া আখেরাতের লাভ নাই। বা ১৩, লজ্জাস্থানের
হেফাজত করবো নম্বর ১৪ শেষ হলো আমানতদারী
রক্ষা করবো, অঙ্গীকার
পুরা করবো। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে আপনি তৌফিক দান করেন। জাযাকুমুল্লাহ্!
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
কোন মন্তব্য নেই