আরাফার দিনের ১০টি অজানা বিষয়, ১৪টি আমল ও দোয়া

 আরাফার দিনের ১০টি অজানা বিষয়, ১৪টি আমল ও দোয়া



আসসালামু আলাইকুম, মুফতি সাহেব। আমি আরাফাতের দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও আমল সম্পর্কে ১০টি বিষয় জানতে চাই।

মুফতি সাহেব: ওয়া আলাইকুমুস সালাম,  আরাফাতের দিন হজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই দিনের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। আপনার যা জানার আছে, জিজ্ঞাসা করুন।

________________________________________

১.  মুফতি সাহেব, আরাফাতের দিন বলতে আসলে কোন দিনটিকে বোঝানো হয়?

মুফতি সাহেব: আরাফাতের দিন হলো যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ। এই দিনেই হাজিরা মক্কার বাইরে অবস্থিত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। এটি হজ্বের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এবং এর অনুপস্থিতিতে হজ্ব বাতিল হয়ে যায়।

________________________________________

২.  আরাফাতের দিনের গুরুত্ব কেন এত বেশি? একে হজ্বের মূল স্তম্ভ বলা হয় কেন?

মুফতি সাহেব: আরাফাতের দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "আরাফাতই হজ্ব।" অর্থাৎ, আরাফাতে অবস্থান ছাড়া হজ্ব হয় না। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং ফেরেশতাদের কাছে হাজিদের নিয়ে গর্ব করেন। এটি ক্ষমা ও দোআ কবুলের এক বিশেষ দিন।

________________________________________

৩.  হাজিরা আরাফাতের ময়দানে কখন প্রবেশ করেন এবং কতক্ষণ অবস্থান করেন?

মুফতি সাহেব: হাজিরা সাধারণত ৮ই যিলহজ্ব মিনায় রাত কাটানোর পর ৯ই যিলহজ্ব সকালে সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হন। তাদের আরাফাতের ময়দানে যোহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করা জায়েজ নয়।

________________________________________

৪.  আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে হাজিদের প্রধান কাজগুলো কী কী?

মুফতি সাহেব: আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের সময় হাজিদের প্রধান কাজগুলো হলো:

• বেশি বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করা।

• আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত কামনা করা।

• কুরআন তেলাওয়াত করা।

• নফল নামাজ আদায় করা (যদি সম্ভব হয়)।

• যিকির ও তাসবীহ পাঠ করা।

• নিজেদের এবং উম্মাহর জন্য দু'আ করা। বিশেষ করে, যোহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়ায় মশগুল থাকা।

________________________________________

৫.  আরাফাতের দিনে যে দু'আ কবুল হয়, তার বিশেষত্ব কী এবং কোন দু'আগুলো বেশি পাঠ করা উচিত?

মুফতি সাহেব: আরাফাতের দিনে দু'আ বিশেষভাবে কবুল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "শ্রেষ্ঠ দো'আ হলো আরাফাতের দিনের দো'আ, এবং আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের শ্রেষ্ঠ উক্তি হলো: 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর'।" (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান)। এছাড়াও ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও সকল মুসলিমের জন্য দু'আ করা উচিত।

________________________________________

৬.  আরাফাতের দিনে কি রোজা রাখা সুন্নাত? যদি কেউ হজ্ব না করে, তাহলে কি এই দিনে রোজা রাখা উচিত?

মুফতি সাহেব: হ্যাঁ, যারা হজ্বে নেই, তাদের জন্য আরাফাতের দিনে (৯ই যিলহজ্ব) রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ  বলেছেন, "আরাফাতের দিনের রোজা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহের কাফফারা।" তবে যারা হজ্বে আছেন, তাদের জন্য আরাফাতের দিনে রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়, কারণ এতে তাদের ইবাদতে দুর্বলতা আসতে পারে।

________________________________________

৭.  আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমত (রহমতের পাহাড়) এর গুরুত্ব কী?

মুফতি সাহেব: জাবালে রহমত হলো আরাফাতের ময়দানে একটি ছোট পাহাড়, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিদায় হজ্বের খুতবা দিয়েছিলেন। অনেক হাজি এই পাহাড়ে উঠে দোয়া করেন। তবে, এখানে ওঠা বা এখানে দোয়া করা বিশেষ কোনো সওয়াবের কাজ নয়। আরাফাতের পুরো ময়দানই বরকতময় এবং যে কোনো স্থানে অবস্থান করলেই ফরয আদায় হয়ে যায়।

________________________________________

৮.  আরাফাত থেকে মুযদালিফায় রওয়ানা হওয়ার নিয়ম কী?

মুফতি সাহেব: আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই হাজিরা মুযদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হন। মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন এবং সেখানেই রাতযাপন করেন। মুযদালিফা থেকে মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করে থাকেন।

________________________________________

৯.  আরাফাতের দিনে আমাদের করণীয় কী, যারা হজ্বে নেই?

মুফতি সাহেব: যারা হজ্বে নেই, তাদের জন্য আরাফাতের দিনে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা উচিত:

• আরাফাতের দিনের রোজা রাখা।

• বেশি বেশি ইস্তিগফার ও তওবা করা।

• কুরআন তেলাওয়াত করা।

• রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করা।

• সাধ্যমতো বেশি বেশি দু'আ করা, বিশেষ করে উল্লেখিত দু'আটি।

• দান-সদকা করা।

________________________________________

১০.  আরাফাতের দিনে কোনো ভুল হলে কি হজ্বের ক্ষতি হতে পারে?

মুফতি সাহেব: হ্যাঁ, আরাফাতের দিনে অবস্থান করা হজ্বের ফরয। যদি কেউ আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্তের আগে এক মুহূর্তের জন্যও অবস্থান না করে, তাহলে তার হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে এবং তাকে পরবর্তী বছর পুনরায় হজ্ব করতে হবে। অন্য কোনো ছোটখাটো ভুল হলে সাধারণত দম (পশু কোরবানি) ওয়াজিব হয়, তবে মূল স্তম্ভ আদায় না হলে হজ্ব হয় না। তাই এই দিনের প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করা আবশ্যক।

________________________________________

মুফতি সাহেব: আশা করি, আরাফাতের দিনের গুরুত্ব ও আমল সম্পর্কে আপনার ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বরকতময় দিনের ফজিলত লাভের তৌফিক দান করুন।

 জাযাকাল্লাহ খাইরান, মুফতি সাহেব। আপনার ব্যাখ্যা আমার জন্য খুবই উপকারী হয়েছে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

কোন মন্তব্য নেই

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.