জীবনের সব কিছুতে বরকত। ঘরে বরকত। রিজিকে বরকত। হায়াতে বরকত। ধন সম্পদে বরক...
জীবনের সকল ক্ষেত্রে বরকতের ১২টি আমল
সম্পূর্ণ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে
মূলত পৃথিবীতে বরকতের বিকাশ ঘটে কয়েকভাবে। কখনো মূল বস্তুটি প্রকৃতভাবেই বেড়ে যায়। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মোজেজার মধ্যে আছে, একটা সাধারণ পাত্রের পানি দিয়ে গোটা কাফেলা পরিতৃপ্ত হওয়া কিংবা সামান্য খাদ্যদ্রব্যে বিরাট সমাবেশের পূর্ণ উদর খাওয়া ইত্যাদি। আবার কখনো মূল বস্তুতে বাহ্যত কোনো প্রবৃদ্ধি ঘটে না, পরিমাণ যা ছিল তা-ই থেকে যায়, কিন্তু তার মাধ্যমে এত বেশি কাজ হয়, যা এমন দ্বিগুণ-চতুর্গুণ বস্তুর দ্বারাও সাধারণত সম্ভব হয় না। যেমন দেখা যায়, ঘরের কোনো কোনো আসবাবে এমন বরকত হয় যে তাতে মানুষ আজীবন উপকৃত হতে পারে। আবার অনেক জিনিস অল্প সময়েই বিনষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে এই বরকত মানুষের ধনসম্পদ, মন-মস্তিষ্ক ও কাজকর্মেও হতে পারে। কোনো কোনো সময় মাত্র এক গ্রাস খাদ্যও পূর্ণ শক্তি-সামর্থ্যের কারণ হয়। আবার কোনো কোনো সময় অতি উত্তম পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্য বা ওষুধও কোনো কাজে আসে না। তেমনিভাবে সময়ে বরকত হলে মাত্র এক ঘণ্টায়ও এত বেশি কাজ করা যায়, যা অন্য সময় চার ঘণ্টায় করা যায় না।
১। বুখারী শরীফের ১৩৮৭ নং হাদীস হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। তারপর বললেনঃ হে হাকীম, এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যাক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ছাড়া) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যাক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয়না। যেন সে এমন ব্যাক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুদা মেটেনা। উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত (সাওয়াল করে) আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্থ করব না।
এরপর আবূ বকর (রাঃ) হাকীম (রাঃ) কে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি তাঁর কাছ থেকে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর ‘উমর (রাঃ) (তাঁর যুগে) তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন। তিনি তাঁর কাছ থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, মুমিনগণ! হাকীম (রাঃ) এর ব্যাপারে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি। আমি তাঁর কাছে এই গনীমত থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। (সত্য সত্যই) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর হাকীম (রাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত কারো নিকট কিছু চেয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করেন নি।
সুতরাং এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যারা সব সময় পরনির্ভরশীল হয়ে থাকে, মানুষ কখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে সে দিকে তাকিয়ে থাকে, কখন কে কিছু দান করবেন সে দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের জীবন ও রিযিক থেকে বরকত উঠে যায়।
২। এবার আসুন আরো ১টি হাদীস শুনি
হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষন বিচ্ছিন্ন না হবে ততক্ষন ক্রেতা-বিক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে। যদি তাঁরা সত্য বলে ও যথাযথ অবস্থা বর্ননা করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি পন্যের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে ও মিথ্যা বলে, তবে ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত চলে যাবে।
এখন যারা ব্যবসা করেন কিন্তু কাস্টমার পটানোর জন্য নানা ধরনের মিথ্যা কথা বলে তাদের ব্যবসায় বরকত চলে যাবে, সে রুজিতে ঘরের চাহিদা ও অভাব দুর হয় না। পক্ষান্তরে ব্যবসা ছোট হলেও যদি তাতে সুদ ও মিথ্যা না থাকে তাহলে এতে অফুরন্ত বরকত হয়।
৩-৪। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সংবাদ দিচ্ছেন যে যেসব এলাকায় নবী-রাসুল পাঠানো হয়েছিল, সেসব জনপদের খুব কমসংখ্যক লোকই ইমান এনেছিল। কিন্তু তারা যদি ইমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে তাদের জন্য আসমান-জমিনের সমূহ কল্যাণের দরজা খুলে দেওয়া হতো।
যেমন সুরা আরাফ এর ৯৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ وَلَـكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। [ সুরা আরাফ ৭:৯৬ ]
৫। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকতের জন্য ৫ ওয়াক্ত নামাজ ওয়াক্তমত পড়া, এবং পরিবারের সকলকে নামাজের নির্দেশ দিতে হবে।
৬। প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা।
৭। কুরআনের সাথে সম্পর্ককে মজবুত করা। নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা এবং কুরআন বুঝে কুরআন মোতাবেক আমল করা। যেমন আল্লাহ বলেন (ওয়াহাজা কিতাবুন আনজালনাহু মুবারাক) সহিহ মুসলিমের হাদীসে মহানবী (দঃ) বলেন (ইন্নাল্লাহা এয়ারফাউ বিহাজাল কিতাবি আকওয়ামা ওয়া এয়াদাউ বিহি আখারিন) আল্লাহ তায়ালা এই কিতাব দিয়ে বহু মানুষকে উপরে উঠাবেন আবার বহুম মানুষকে নিচে নামাবেন। অথ্যাৎ যারা এই কুরআনকে ফলো করবে আল্লাহ তাদের হায়াত রিযিক ও সম্মান বৃদ্ধি করে দিবেন।
৮। গরীব মিসকিন ও অসহায়কে সহায়তা করা এবং বেশী বেশী দান করা। মানুষের জীবনে বরকত চলে যাওয়ার কারন হল বিপদ আপদ। আর এই বিপদ আপন দুর করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল সদকা করা। সে জন্য সামথ অনুযায়ী প্রতিদিন অল্প অল্প হলেও সদকা করলে প্রতিটি কাজে বরকত হয়।
৯। বরকতের আরেকটি শক্তিশালী চাবি হল আত্মিয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা। এটি বহুল পরিক্ষীত একটি আমল। বরকতের জন্য এর বিকল্প নাই।
১০। যে কোন কাজ সকাল সকাল শুরু করে, কেননা আমাদের প্রিয় নবী দোয়া করেন (আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি উম্মাতি ফি বুকুরিহা) হে আল্লাহ আমার উম্মতকেসকালবেলা আপনি বরকত দান করুন।
১১। যে কোন কাজে বরকতের আরো একটি আমল হল আল্লাহর উপর পরিপূণ ভরসা করা তাওয়াক্কুল করা। বান্দা যত বেশী আল্লাহ উপর ভরসা করবেন আল্লাহ তত বেশী তাকে সাহায্য করেন, আর বান্দা যখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে দুনিয়ার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যায় তখন তার উপর থেকে বরকত উঠে যায়। নবী করিম (দঃ) বলেছেন তোমরা যদি আল্লাহর উপর ভরসা কর তাহলে পাখিকে যেভাবে আল্লাহ রিযিক দেন (লা রাজাকাকুম কামা এয়ারজুকুত তাইর) সেভাবে তোমাদেরকে রিযিক দিবেন।
১২। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকতের জন্য শক্তিশালী আমল হল বেশী বেশী এসতেগফার করা, গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা এবং পাপ হয়ে গেলে তওবা করে নেয়া এবং সব সময় আসতাগফিরুল্লাহ হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন বলা। তবে শত হল নিয়মিত পড়তে হবে।
কোন মন্তব্য নেই