তাহাজ্জুদ নামাজের ৭০টি বিষ্ময়কর ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজের ৭০টি বিষ্ময়কর ফজিলত
আল্লাহর সাথে কথা বলুন, বন্দেগি করুন, সিজদা করুন, রুকু করুন, অশ্রু বিসজন দিন, কান্না করে দেখান,
বদবখত সে জন যার উপর সারা রাত অতিবাহিত হল, আর তার ফজরও গেল, এশারও গেল, তাহাজ্জুদের কান্নার ব্যপারে কি বলব? তাহাজ্জুদের কান্নাতো সেই করবে যে ৫ ওয়াক্ত নামাজি হয়, এখনতো আপনার ফরয নামাজও ছুটে যায়,
তাহাজ্জুদে কান্নাকারীর আমি কি তারিফ করব?
আমার আল্লাহ নিজেই তারিফ করেছেন রাতে উঠে তাহাজ্জুদ গুজারের।
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। [ সুরা সাজদা ৩২:১৬ ]
সুরা সাজদার ১৬ নং আয়াতে কত সুন্দর শব্দ আল্লাহ ব্যবহার করেছেন (তাতাজাফা) অর্থ্যাৎ তারা বিছানা থেকে নিজের পার্শ্ব আলাদা করে নেয়। আর আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে যায়। তাতাজাফা এটি জাফা থেকে উদ্ভুত আর জাফা অর্থ্যাৎ বেওয়াফা, আর আল্লাহ বলছেন আমার এসব বান্দা নিজের বিছানার সাথে বেওয়াফাই করে বিছানা থেকে আলাদা হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ।
সুরা ফুরকানের ৬৪ নং আয়াতে বলেন
وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا
এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে; [ সুরা ফুরকান ২৫:৬৪ ]
সুরা ইবরানের ১৭ নং আয়াতে বলেন-
الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالأَسْحَارِ
তারা ধৈর্য্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। [ সুরা ইমরান ৩:১৭ ]
এভাবে যারা রাতে উঠেন, তাহাজ্জুদ পড়েন, সিজদা করেন, কান্না করেন, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, আল্লাহর সাথে কথা বলেন, তাদের তারিফ করছেন। যারা তাহাজ্জুদে সিজদায় মাথা অবনত করে আল্লাহ তাদের দেখে দেখে খুশী হয়ে যান।
নিদ্রায় চোখ ভারি হয়ে যায়, ক্লান্তি লাগে, ইচ্ছে করে আবার শুয়ে যাই, তবুও তাহাজ্জুদ ছাড়ে না, তাদের জন্য ফরমান মুবারাকবাদ যারা তাহাজ্জুদে শত অলসতা সত্বেও উঠল, অজু করল, মুসাল্লা বিছালো, তারপর স্ত্রীকেও উঠায়ে দিল, সে না উঠলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দিল, আর নারীদের ব্যপারে ফরমান মুবারক বাদ সে মহিলার জন্য যে রাতে উঠল অজু করল মুসাল্লা বিছালো তারপর স্বামীকে উঠালো, স্বামী না উঠলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দিল। অতপর দুজন উঠে আল্লাহকে রাজি করার জন্য দাঁড়িয়ে গেল। আল্লাহ এই যুগলকে দেখে দেখে খুশী প্রকাশ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৩০৮)
আসমানের দরজা খুলে যায়, রহমতের দরজা খুলে যায়, যেমন মা বাচ্চাকে মহব্বতের সাথে দেখেন, তার দৃষ্টি কুরবান হতে থাকে, মায়ের চেহেরার জজবা দেখার মত হয়, এইভাবেই আমার রব তার সে বান্দা ও বান্দিকে সে রকম মহব্বতের দৃষ্টিতে দেখেন, যে মহব্বতে মা দেখতে পারেন না,
৭০ সংখ্যা আরবীতে ব্যবহার করা হয় বেশী বুঝানোর জন্য, আল্লাহর কাছে সে বান্দার প্রতি এমন মহব্বত হয় যার কোন সংখ্যা নির্ধারিত নাই। যার কোন সীমা নাই। যার কোন হিসাব নাই।
আল্লাহ তায়ালা ফরমান দাউদ হে দাউদ? যদি এসব নাফরমান নর নারীরা জানত যে আমি তাদের কত বেশী মহব্বত করি, যদি তাদের খবর হয়ে যায় যে তাদের আল্লাহ তাদের সকল নাফরমানি সত্বেও তাদেরকে কত বেশী মহব্বত করেন, তাহলে তাদের যুগলবন্ধী ঠিক থাকত না, সালামত থাকত না, তাদের বন্ধন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যেত, স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে রাত দিন এবাদতে ডুবে থাকত, স্বামী স্ত্রীকে ছেড়ে রাত দিন সিজদায় পড়ে থাকত,
আল্লাহ তায়ালা বলেন হে দাউদ ওদের বল- যখন আমি নাফরমানের সাথে এত মহব্বত রাখি, তাহলে ফরমাবরদার বান্দার প্রতি আমার কেমন মহব্বত হবে?
(এয়া দাউদ বাশশিরিল মুজনিবিন) দাউদ যাও যাও আমার নাফরমানদের সু সংবাদ শুনাও।
দেখুন নাফরমানকে কি কেহ সুসংবাদ দেয়? নাফরমানকেতো পুলিশ হাতকড়া লাগায়। অথচ আল্লাহ বলছেন হে দাউদ আমার নাফরমানকে সুসংবাদ শুনাও, দাউদ বলে হে আল্লাহ তাদের কি বেশারত দিব? আল্লাহ বলেন (লা এয়াতাআজামুহু জাম্বুন আয়্যাগফিরাহু)
বান্দা যতই গুনাহ করুন, যতই মু কালা করে নিক, শুধু একবার বলে দিক হে আল্লাহ আমার তওবা। আমি সব মাফ করে দিব।
‘আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। আফদালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব?’ (বুখারি ও মুসলিম)।
শরহে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার বর্ণনা করেন, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন। এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠে এবং নামাজ পড়ে। দুই. মুসল্লি যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে কাতারে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়।’ অনুরূপ আরেকটি হাদিস রয়েছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দেন। (মুসলিম)।
হজরত মুগিরা ইবনে শু'বা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এত দীর্ঘ সময় (তাহাজ্জুদের) নামাজ আদায় করতেন যে তাঁর পদযুগল ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তো আপনার পূর্বাপর সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। জবাবে তিনি বললেন, তাই বলে কি আমি (এই মহা অনুগ্রহের জন্য অধিক ইবাদত করে শোকর আদায়কারী বান্দা হব না? (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, তোমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উচিত। কেননা তা তোমাদের পূর্বেকার সজ্জন ব্যক্তিদের প্রতীক এবং তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। নামাজ গোনাহসমূহ বিমোচনকারী এবং গোনাহের প্রতিবন্ধক। (তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩৫৪৯, সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নম্বর ১০৭৫)
আসুন, আমরা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করি, মনকে পবিত্র করি, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হই। আল্লাহতায়ালা সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই