সুরা ফাতেহার গোপন ও রহস্যময় ৭০টি ফজিলত



সুরা ফাতেহার ৭০টি গোপন রহস্যময় ফজিলত

সুরা ফাতেহার এত বেশী ফজিলত যা বলে শেষ করা যাবে না, এত বিষ্ময়কর ফজিলত হাদীস শরীফে বয়ান করা হয়েছে আপনারা শুনে হয়রান হয়ে যাবেন, কিন্তু আমরা এমন খাঁটি বিষয়গুলি সম্পর্কে জানিই না।

বুখারী শরীফের ২য় খন্ডের ৭৪৯ নং পৃষ্ঠার হাদীস-

নামাজে সাহাবী নবীর ডাকে সাড়া না দেয়া

হযরত আবু সাঈদ বিন মুয়াল্লা (রাঃ) বয়ান করেন আমি নামাজ পড়ছিলাম এমন সময় নবী (দঃ) আমাকে ডাকলেন; আমি নামাজ শেষে যখন গেলাম তখন রাসুল (দঃ) ফরমালেন আল্লাহ তায়ালা কি এরশাদ করেননি (ইসতাজিবু লিল্লাহি ওয়ালির রাসুলি ইজা দায়াকুম) আল্লাহ এবং তার রাসুল এর ডাকে সাথে সাথে সাড়া দাও, (সুরা আনফাল ২৪) তারপর নবী (দঃ) ফরমালেন শুন আমি তোমাকে মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে কুরআনের সবচেয়ে আজিমুশশান সুরা শিক্ষা দিব, তারপর হুযুর আমার হাত ধরলেন, যখন আমরা বাহিরে বের হয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আরজ করলাম এয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি বলেছেন কুরআনের সবচেয়ে আজিম সুরা শিখাবেন, তখন নবী (দঃ) সুরা ফাতেহা পড়লেন আর বললেন এটা হল সাবয়ে মাসানি এবং কুরানে আজিম যা আমাকে দেয়া হয়েছে।

এ হাদীস থেকে বুঝা যায় নামাজে থাকা অবস্থায়ও নবীজি (দঃ) ডাকলে সাথে সাথে হাজির হয়ে যেতেহবে এতে নামাজ ভঙ্গ হবে না, আর সুর ফাতেহা হল কুরআনের সবচেয়ে আজিমুশশান সুরা। ‍সুবহানাল্লাহ।

২য় ফজিলতের হাদীস- বুখারী ২য় খন্ড- ৭৪৯ পৃ-

ঝাড়ফুক ও সুরা ফাতেহা

হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (রাঃ) বয়ান করেন- আমরা সফরে ছিলাম, সফরে এক জায়গায় অবস্থান করলাম, এমন সময় একটি মেয়ে এসে বলল কবিলার সরদারকে সাপে দংশন করেছে, আমাদের কোন লোক সেখানে নাই, আপনাদের মধ্যে কেহ কি ঝাড়ফুক করেন? তখন আমাদের থেকে একজন সে মেয়েটির সাথে গেল, যে এর আগে কখনো এসব ঝাড়ফুক করেছে বলে আমরা তোহমত দিইনা। তিনি সে সরদারকে ঝাড়ফুক করলেন ফলে সে সরদার সুস্থ হয়ে গেল। সে সরদার তাকে ৩০টি ছাগল হাদিয়া দিল, এবং আমাদেরকে দুধ পান করাল, আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি আগে ঝাড়ফুক করেছ? সে বলল না আমি শুধু উম্মুল কিতাব (সুরা ফাতেহা) পড়েছি। আর ফুক দিয়েছি। তখন আমরা বললাম আমরা এসব হাদিয়ার ব্যপারে নবী (দঃ) থেকে মাসায়ালা জিজ্ঞেস করব। যখন আমরা নবী (দঃ) কে এ ব্যপারে জানালাম তখন নবী (দঃ) বললেন সে কি জানে? এটা যে ঝাড়ফুক? তোমরা ছাগলগুলি বন্টন করে নাও আর আমার অংশটা বের করে দিও।

এ হাদীস থেকে শিক্ষনীয় হল

ক) সুরা ফাতেহা পড়ে ঝাড়ফুক করা জায়েজ

খ) এই সুরাকে এই জন্য সুরাতু রুকিয়াহ বলে

গ) সুরাতু শিফাও বলে

ঘ) এবং এই হাদীসে সুরার নাম উম্মুল কুরআন ও পাওয়া যায়

ঙ) কুরআন পড়ে ফুক দিয়ে তার বিনিময় নেয়া জায়েজ প্রমাণিত হয়

চ) আর শিক্ষক ছাত্রকে কিছু শিখালে সে ছাত্র যদি তা দ্বারা কিছু উপার্জন করে তাতে শিক্ষকেরও কিছু অংশ আছে।

প্রশ্ন- এখন সুরা ফাতেহা পড়ে রোগীকে ফুক দিলে শেফা হয়না এর কারন কি?

উত্তর- সুরা ফাতেহা যে শেফা তাতে সন্দেহ নাই, তবে যিনি ফুক দিলেন তার ভিতর রুহানিয়্যাত িএর কমতির কারনে শেফা হয়না।

তিরমিযি শরীফের হাদীস- পৃ ৪০৮-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হুযুর (দঃ) হযরত উবাই বিন কাবকেবলেন সে জাতের কসম যার কবজায় আমার জান, সুরা ফাতেহার মত সুরা ইনজিল, তাওরাত, যবুরে না ফুরকানে নাযিল হয়েছে, এটি হল (সাবউম মিনাল মাসানি) মাসানির অনেক ব্যাখ্যা আছে একটি ব্যাখ্যা হল এই সুরা উম্মতের মুহাম্মদীর আগে অন্য উম্মতের উপর নাযিল হয়নি। এই উম্মত এই সুরার ব্যপারে মুসতাছনা।

মুসলিম শরিফ ১ম খন্ড- ১৭০পৃ-

ফাতেহা পাঠকারীকে আল্লাহর জবাব

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বয়ান করেন, রাসুল (দঃ) ফরমান আল্লাহ তায়ালা ফরমান আমার এবং আমার বান্দার মাঝে সুরা ফাতেহা অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে দেয়া হয়েছে। আমার বান্দার জন্য সেটা রয়েছে যেটার সে প্রার্থনা করে

বান্দা যখন বলে (আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন) তখন

আল্লাহ বলেন ( আমার বান্দা আমার প্রসংশা করল)

বান্দা যখন বলে (আররাহমানির রাহিম) তখন

আল্লাহ বলেন ( আমার বান্দা আমার ছায়া বয়ান করল)

বান্দা যখন বলে ( মালিকি এয়াউমিদ দিন) তখন

আল্লাহ বলেন ( আমার বান্দা আমার তাজিম করল)

বান্দা যখন বলে (ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন)

তখন আল্লাহ বলেন (এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যেকার বিষয়)

যখন বান্দা (ইহিদিনাস----- ওয়ালাদ্দোয়াল্লিন ) বলে তখন

আল্লাহ বলেন ( এটা আমার ও আমার বান্দার জন্য আমার বান্দার জন্য সে জিনিষ রয়েছে যেটার সে প্রার্থনা করেছে)

সুরা ফাতহোর অসংখ্য নাম

১। সুরা ফাতেহার অসংখ্য নাম কোন বিষয়ের নাম বেশী হওয়ার সেটির বেশী গুরুত্ব ও ফজিলতের প্রতি ইঙ্গিত করে।

২। একটি নাম হল উম্মুল কুরআন- কোন কিছুর আছলকে আরবীতে উম্মুন বলে, পবিত্র কুরআনের মুল হল ৪টি জিনিষ যেমন (১) আল্লাহর জাত ও সিফাত বয়ান করা, (২) পরকালিন জীবন, (৩)নবুয়ত (৪) আল্লাহর কুদরত

এই চারটি বিষয়ের সারাংশ বয়ান হয়েছে সুরা ফাতেহায়।

৩। মুসলিম শরীফের হাদীস মহানবী (দঃ) এরশাদ করেন (লা সালাতা লিমান লাম এয়াকরাউ বিউম্মিল কুরআন) যে উম্মুল কুরআন বা সুরা ফাতেহা পড়লনা তার নামাজ হলনা।

৪। সুরা ফাতেহার এক নাম ফাতেহাতুল কিতাব, যেহেতু এই সুরার দ্বারা এই কিতাবের শুরু তাই এই সুরার একটি নাম হল ফাতেহাতুল কিতাব

৫। সুরা ফাতেহার এক নাম হল সুরাতুল হামদ- কেননা এতে আল্লাহর প্রসংশা বিদ্যমান।

৬। আরেক নাম হল সাবউল মাসানি- যেমন সুরা হাজর এ আল্লাহ বলেন (ওয়ালাকাদ আতাইনাকা সাবয়াম মিনাল মাসানি) এই সুরা বার বার পড়া হয়। এবং এতে ৭টি আয়াত আছে তাই একে সাবউল মাসানি বলা হয়।

৭। আরেক নাম হল উম্মুল কিতাব- বুখারী শরীফের এক হাদীস- হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (রা}) এক লোককে সাপে ছোবল মারলে তাকে শুধু উম্মুল কিতাব পড়ে ফুক দিলেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন।

৮। আরেকটি নাম হল আল ওয়াফিয়া- হযরত সুফিয়ান ইবনে ওয়াইনা এই সুরার নাম ওয়াফিয়া রেখেছেন কারন এটিই একমাত্র সুরা যাকে নামাজে সম্পূণ পড়তে হয়।১ আয়াতও কম পড়া যায় না।

৯। আরেক নাম হল কাফিয়াহ- কাফিয়া এই জন্য বলা হয় এই সুরার পরিবর্তে অন্য সুরা পড়া যায় না।

১০।আরেক নাম হল শেফা- সুনানে দারেমির হাদীস হযরত আবদুল মালেক বিন উমায়ের (রাঃ) বয়ানকরেন রাসুল (দঃ) এরশাদ করেন- এই সুরা সকল রোগের শেফা। শারিরিক ও রুহানি উভয় ধরনের চিকিৎসা রয়েছে এই সুরাটিতে।

১১। এর আরোক নাম সুরাতুস সালাত- কেননা এই সুরা সব নামাজেই পড়তে হয়।

১২। অপর নাম হল সুরাতুদ দোয়া- এতে আল্লাহর কাছে বান্দার সিরাতাল মুস্তাকিমের দোয়া আছে।

এই সুরাতে মুলত দোয়া করার তরিকা স্পষ্ট - প্রথমে আল্লাহর প্রসংশা তারপর দোয়া। যেমন কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় নবীদের দোয়াতে দেখা যায় তারা আগে আল্লাহর প্রসংশা করেছে তারপর দোয়া করেছেন। যেমন- সুরা ইউসুফের ১০১ নং আয়াতে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর দোয়া।

১৩। আল্লামা বাকাঈ (রহঃ) এই নাম ছাড়া আরো অনেক নাম উল্লেখ করেছেন যেমন কানযুন, ওয়াকিয়া, রুকাইয়া, শোকর,

১৪। আল্লামা আলুসি (রহঃ) সুরা ফাতেহার ২২টি নাম উল্লেখ করেছেন-তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সুরাতুল মুনাযাত, সুরাতুন নুর, সুরাতুস সাওয়াল, তালিমুল কুরআন, তালিমুল মাসয়ালা ইত্যাদি।

হাদীস সুনানে নাসাঈ ৫ম খন্ড ১২-১৩ পৃ-

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বয়ান করেন- যে সময় হযরত জিবরাইল নবী (দঃ) এর পাশে বসে ছিলেন এমন সময় উপরের দিকে একটা আওয়াজ হল, হযরত জিবরাইল বললেন এটা আসমানের একটি দরজা খোলার আওয়াজ যা আজিই প্রথম খোলা হয়েছে আজকের পূর্বে এই দরজা কখনো খোলা হয়নি, এমন সময় একজন ফেরেশতা নাজিল হল, হযরত জিবরাইল বললেন- এই ফেরেশতা যে জমিনে আজ নেমেছে, এ আগে কখনো জমিনে নামেনি, সে ফেরেশতা এসে সালাম আরজ করল, এবং বলল আপনাকে ২টি নুরের সুসংবাদ, যা আপনার পূর্বে কাউকে দেয়া হয়নি, (১) সুরা ফাতেহাতুল কিতাব (২) সুরা বাকারার শেষ আয়াত এর থেকে যে হরফই আপনি পড়ুন তা আপনাকে দেয়া হবে।

মাজমাউয জাওয়ায়েদ ৬ষ্ঠ খন্ড ৩১০ পৃ

হযরত আবু জায়েদ (রাঃ) বয়ান করেন, আমি নবী করিম (দঃ) এর সাথে মদীনার রাস্তায় যাচ্ছিলাম, তিনি এক ব্যক্তির আওয়াজ শুনেন যে তাহাজ্জুদ পড়ছিল আর তাতে উম্মুল কুরআন পড়ছিল, হুযুর (দঃ) দাঁড়িয়ে সে তেলাওযাত শুনতে লাগলেন এমনকি সে পড়তে পড়তে যখন সুরা পড়া শেষ করল নবী (দঃ) বললেন কুরআনে এই মত আর কোন সুরা নাই।

এই সুরা দুই বার নাযিল হয়েছে

সুরা ফাতেহা নাযিল হওয়ার ব্যপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায় তবে মুহাক্কিকিনের মতে এই সুরা মক্কায় একবার নাযিল হয়েছে মদীনায় আবার নাযিল হয়েছে।

যে সুরা নাযিল হতেই ইবলিস প্রচন্ড কান্না করেছে

এই সুরাটি এমন এক পাওয়ারফুল সুরা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত এই সুরা নাজিলের সময় ইবলিস খুব কান্না করেছে।যখন মদীনায় নাযিল হয়।

প্রথম পূর্নাঙ্গ সুরা নাযিল হয় সুরা ফাতেহা

প্রথমে সুরা আলাক এর এবং সুরা মুদ্দাসিরের কিছু আয়াত নাযিল হওয়ার পর পূনাঙ্গ সুরা হিসেবে সুরা পাতেহা নাযিল হয়।

সুরা ফাতেহার আয়াত সংখ্যা

এই সুরাকে সাবউল মাসানি বলা হয় সে হিসেবে ক্লিয়ার হল যে এতে ৭টি আয়াত, তবে এর মধ্যে শাফেয়ী ও হাম্বলীর মতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও সুরা ফাতেহার অংশ, আর সিরাতাল্লাজিনা থেকে ওয়ালাদ্দোয়াল্লিন পযন্ত ১ আয়াত,

হানাফি ও মালেকির মতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সুরা ফাতেহার অংশ নয়, সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, ১ আয়াত, এবং গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দোয়াল্লিন আরেকটি আয়াত।

সুরা ফাতেহাতে সম্পূন কুরআনের সারমম বয়ান আছে

পবিত্র কুরআনের মুল বিষয়বস্তুসমুহ হল তওহিদ- নবুয়্যত- এবাদত- আযাবের ভয়- আগের উম্মতগনের পরিণতি- মৃত্যুর পরের জিন্দেগী- দোয়া।

এই সবকিছুই কিন্তু সুরা ফাতেহায় অতি সংক্ষেপেই উঠে

আমরা চিন্তা করি কুরআন পড়ার পর সে মোতাবেক আমল করতে পারব কি পারবনা? অনেক চিন্তা করি। আল্লাহ সন্তনা দিয়ে বলেন (আর রহমান আর রাহিম) আল্লাহ রহমান আর রহিম তাহলে ভয়ের কি আছে? কেন কুরআন মোতাবেক জীবন যাপন করেন না? কেন কুরআন মোতাবেক দোকান চালান না? চাকরী, ব্যবসা, সফর, বিয়ে শাদী কেন কুরআন মোতাবেক করেন না?

আল্লাহ শুরুতে রহমান রহিম বলে আমাদের অভয় দিলেন- তারপর ২য় গ্যারোন্টি আলহাদুলিল্লাহ এখানে আল্লাহ শব্দটির মধ্যে আছে ২য় গ্যারান্টি এবং অভয়বাণী। তারপর ৩য় গ্যারান্টি হল (রাব্বুল আলামীন) তোমাদেরকে লালন পালন কারী। আবার সান্তনার বানী (আররাহমান আর রাহিম) কেন ভয় পাও আমি রহমানও রহিমও।

অনেক লোক আছে মহব্বতের সাথে যতই বুঝান একটু এদিক সেদিক করে তাদের মত লোকদের ধমকানোর জন্য (মালিকি এয়াউমিদ্দিন) সুতরাং এটাও আপনাকে মনে রাখতে হবে আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও শাস্তির ও ব্যবস্থা আছে।

এরপরের আয়াতটি এমন যেন আল্লাহ একদম সামনে এসে গেছে- এর আগে শুধু বলা হয়েছে আল্লাহ দয়ালু, আল্লাহ প্রতিপালক, আল্লাহ বিচার দিনের মালিক, এসব বলার ফলে এমন হয়ে গেল” যেন আল্লাহ আমার সামনে চলে এসেছে আর আল্লাহকে যেন দেখে দেখে বলছি (ইয়্যাকানাবুদু ওয়াইয়্যাকা নাসতাঈন) হে আল্লাহ আমি তোমারই বন্দেগী করি, তোমারই কাছে সাহায্য কামনা করি।

ওলামায়ে কেরাম ফরমান- সকল আসমানি কিতাবের সারাংশ হল কুরআন। আর সকল কুরআনের সারাংশ হল সুরা ফাতেহা। আর সুরা ফাতেহার সারাংশ হল (ইয়্যাকানাবুদু ওয়াইয়্যাকা নাসতাঈন)

এরপরের আয়াতটি আরো ইন্টারেস্টিং- আমরা সব কিছুই আল্লাহর কাছে চাইব, টাকা পয়সা, ধন দৌলত, পুত্র, কন্যা, স্ত্রী, ঘর বাড়ী, গাড়ী, সব কিছুই চাইব। কিন্তু এখানে আল্লাহ একটা জিনিষ চাইতে আমাদের জন্য ফরয করে দিলেন তা হল হেদায়াত যা না হলে আমরা বরবাদ হয়ে যাব তাই আল্লাহ বলেন (ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম)
(সিরাতল মুস্তাকিম) সোজা রাস্তাকে বলে, যাতে বেশী বাঁক না থাকে।

আল্লাহ তা‘আলা হুদায়বিয়ার সন্ধি নামক বিজয়ের পর তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অনুগ্রহের উল্লেখ করে বলেন:

﴿وَيَهۡدِيَكَ صِرَٰطٗا مُّسۡتَقِيمٗا﴾ [الفتح: ٢]

“(যাতে তোমার) রব তোমাকে সিরাতে মুস্তকীমের পথে পরিচালিত করেন।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২]

সিরাতে মুস্তাকীম দ্বারা সেই দীন বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের ওপর নাযিল করেছেন এবং এটিই তাদের পথ যাদের ওপর আল্লাহ নি‘আমত দান করেছেন। আর তারা হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর প্রিয় সাহাবীগণ

আর সুরা নিসার ৪৯ নং আয়াতে বলা আছে (আনয়ামাল্লাহু আলাইহিম মিনান নাবিয়্যিনা ওয়া সিদ্দিকিনা ওয়াশ শুহাদাঈ ওয়াস সোয়ালিহিন)

(আল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম) নায়াম> ঐ বোটাকে বলে যা শীত ও গরমেও শুস্ক হয়না। সদা সর্বদা তরতাজা সবুজ হয়। অথ্যাৎ সেটা দান করুন যা সদা আবাদ হয়, সদা সতেজ থাকে,

﴿غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ﴾ [الفاتحة: ٧] “তাদের পথে নয় যাদের ওপর তোমার গযব পড়েছে এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৭]

ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ যাদের উপর গযব পড়েছে তারা হল ঐসব আলেম যারা তাদের ইলম মোতাবেক আমল করে নি এবং الضالون ‘পথভ্রষ্ট’ ওরাই যারা ইলম ব্যতিরেকে আমল করে। প্রথমটি হলো ইয়াহূদীদের বৈশিষ্ট্য আর দ্বিতীয়টি হলো খৃষ্টানদের বৈশিষ্ট্য।

বান্দা যখন একথা চিন্তা করবে এবং জানতে পারবে যে, সূরা আল-ফাতিহা দু’ভাগে বিভক্ত, প্রথম ভাগ إياك نعبد পর্যন্ত আল্লাহর জন্য, আর দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ তার পর থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত, যা বলে বান্দা দো‘আ করে, তার নিজের জন্য এবং একথাও যখন সে চিন্তা করবে যে, যিনি এ দো‘আ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন তিনি হলেন কল্যাণময় মহান আল্লাহ। তিনি তাকে এ দো‘আ পড়ার এবং প্রতি রাকাতে তা বারবার ব্যক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা দয়া ও করুণাবশতঃ এ দো‘আ কবুলের নিশ্চয়তাও দিয়েছেন, যদি বান্দা নিষ্ঠা ও উপস্থিত চিত্তে তা করে থাকে, তখন তার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, অধিকাংশ লোক অবহেলা ও উদাসীনতার ফলে সালাতে নিহিত কি মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে থাকে!

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.