সুরা কাউসারের শক্তি। তফসির। অসাধারণ ফজিলত ও আমল। All Bangla Dua Amol waz...
সুরা কাউসার পড়ার শক্তি
কোটি লোকের জিন্দেগী বদলে দিল
সুরা আল কাউসার,
মক্কী সুরা, ১ রুকু আর ৩ আয়াত। এ সুরার অপর নাম সুরা আন নাহার। এর শানে নুযুল এর ব্যপারে
এক রেওয়ায়েতে আছে দালায়েলুন নবুয়াতে বণিত আছে- যে সব লোকের পুত্র সন্তান মরে যায়, আরব
লোকেরা তাকে আবতার বলে থাকে।আবতার বলা হয় গোড়া থেকে কাটাকে। তার বংশধর খতম হয়ে গেছে।
যখন হুযুরের (দ) সাহেবজাদা কাসেম ও ইবরাহিম এর ছোট বয়সেই েইন্তেকাল হয়ে গেল, মক্কার
কাফেররা তাঁকে আবতার বলে ডাকা শুরু করে দিল। আবতার বলা ব্যক্তিদের মধ্যে আস বিন ওয়ায়েল
এর নাম প্রসিদ্ধ। তার সামনে কেহ হুযুর (দ) এর কোন কথা বললে সে ঘৃণা বলে বলত তার কথা
বাদ দাও তাকে নিয়ে চিন্তা করার সময় নাই, কেননা সেতো আবতার। তার মৃত্যুর পর তার নাম
নেয়ারও কেহ বাকী থাকবেনা। কেননা আরবদের মধ্যে পুত্র সন্তান এমন ছিল যার উপর তারা ভরসা
রাখত। এবং পুত্রকেই তারা নিজের শান ও ইজ্জতের মাধ্যম মনে করত। তখন আল্লাহ তায়ালা এই
সুরাটি নাজিল করেছেন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (ইন্না আতাইনা কাল কাউসার, ফাসাল্লি
লিরাব্বিকা ওয়ানহার ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার)
নিশ্ছয়ই আমি আপনাকে
কাউসার দান করেছি- আর
কাউসার দ্বারা বেশী বুঝানো হয়। এর আরো অনেক অথ বলা হয়েছে। এর এক অর্থ হল খায়রে কাসির, অনেক বেশী বেশী খায়র ও
কল্যান পাওয়া। এর শাব্দিক অথই হল অধিক কল্যান। তাছাড়া এর দ্বারা মুরাদ ঐ ঝনা বা নহর
নেয়া হয়েছে যা জান্নাতে হুজুরকে (দ) দান করা হবে। তেমনি ভাবে এর দ্বারা মুরাদ সে হাউজ
যা থেকে হুযুর (দ) আপন উম্মতকে পানি পান করাবেন। ইবনে কাসির (রহ) কাউসার এর মুরাদ অধিক
কল্যাণই গ্রহণ করেছেন। কেননা এই অধিক কল্যাণে সব কিছুই এসে যায়। জান্নাতের নহরও এসে
যায়, হাউজে কাউসারও এসে যায়, এবং হুজুরের যত বিজয় নসিব হয়েছে, ইসলামের জয়জয়কার হয়েছে,
হুজুরের মিশন হুজুরের জিন্দেগীতে পরিপূণ হয়েছে, এ সব জিনিষ এই একটি শব্দের মধ্যেই শামিল
হয়ে গেছে। মুলত যত নেয়ামত হুজুরের (দ) নসিব হয়েছে সে সকল নেয়ামতের জন্য এটি একটি সবকিছুকে
সন্নিবেশনকারী শব্দ।
আপনার
দুষমন আপনার ব্যপারে যাই বলুন না কেন কিন্তু আমি আপনাকে অধিক কল্যাণ দান করে দিয়েছি।
আর সে অপরীসিম কল্যান দুনিয়া থেকে শুরু হয়ে আখেরাত পযন্ত বিস্তৃত।
হযরত
আনাস (রা) বলেন একদিন হুযুর (দ) মসজিদে আমাদের মাঝে ছিল, হঠাৎ হুযুর (দ) নিদ্রাচ্ছন্ন
হয়ে গেল, এবং হাসতে হাসতে তিনি মাথা উঠালেন, আমরা প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসুল (দ)
আপনার হাসার কারন কি? তিনি ফরমালেন আমার উপর এই মুহুতে এক সুরা নাজিল হয়েছে, অর্থ্যাৎ
এই সুরা নাজিল হওয়াতে তিনি খুশিতে হেসেছেন। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহর সাথে এই সুরা কাউসার
পাট করে শুনালেন। অতঃপর তিনি বললেন তোমরা কি জান কাউসার কি? আমরা বললাম (আল্লাহু ওয়া
রাসুলুহু আলাম) তখন তিনি ফরমালেন এটা এক নহর যার ব্যপারে আমার রব আমার সাথে ওয়াদা ফরমায়েছেন।
যাতে অধিক কল্যাণ রয়েছে। আর সেটা হউজ যাতে আমার উম্মতেরা কেয়ামতের দিন পানি পান করতে
আসবে। আর সে পানি পান করার পাত্র হবে আসমানের তারকা সমুহের সংখ্যা পরিমাণ। সে সময় কিছু
লোককে ফেরেশতারা হউজ এর নিকট থেকে দুর করে দিবে। আমি বলব হে আমার পরওয়ারদিগার এরাতো
আমার উম্মত, আল্লাহ তায়ালা ফরমাবেন আপনি জানেন না এসব লোক আপনার পর কেমন দ্বীন এখতেয়ার
করেছে।
এই
নহরের ব্যপারে মেরাজের ঘটনাতেও কিছু তফসীল পাওয়া যায়, বুখারীর রেওয়ায়েত হুযুর (দ) মেরাজের
ঘটনা বয়ান করতে করতে ফরমান- আমি এক নহরের কিনারায় পৌঁছলাম যার দুই কিনারায় অতি মূল্যবান
মুতির জোয়ার বইছিল, আমি জিবরিল কে প্রশ্ন করলাম এই নহর কি? সে জবাব দিল এটা হল কাউসার।
অর্থ্যাৎ হুজুর (দ) কে মেরাজের সফরে সে নহর দেখানো হয়েছে যাতে পানি প্রবাহিত ছিল আর
তার দুই কিনারায় মহামূল্যবান মুতিসমুহ ঢেউ খেলছিল।
হযরত
আবু উবায়দা (রা) হযরত আয়শা (রা) কে প্রশ্ন করলেন - কাউসার দ্বারা কি উদ্দেশ্য?তিনি
বললৈন কাউসার দ্বারা প্রত্যেক সে কল্যাণ যা আল্লাহ হুজুর (দ) কে দান করেছেন।
আবু
বশির বলেন- আমি সাঈদ বিন জুবাইরকে বললাম মানুষ বলেন কাউসার হল জান্নাতের একটি নহর,
তখন হযরত সাঈদ জবাব দিলেন জান্নাতের নহরও সে কল্যাণে শামিল যা আল্লাহ হুজুর (দ) কে
দান করেছেন।
মোটামোটি
হুজুর (দ) কে যত প্রকারের কল্যাণ দান করেছেন সব কল্যানই এই কাউসারের দ্বারা প্রকাশি
হয়েছে, আখেরাতের কল্যাণ নয় শুধু দুনিয়ার সব কল্যানের কথাও এর দ্বারা বুঝা যায়, যেমন
আপনি দেখবেন সুরা দোহায় বলা হয়েছে (ওয়ালা সাওফা ইউতিকা রাব্বুকা ফাতারদা) অর্থ্যাৎ-
আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন।
ঠিক
তেমনিভাবে - সুরা আলাম নাশরাহ লাকা তে বলা হয়েছে (ওয়ারাফানা লাকা জিকরাক) অর্থ্যাৎ
আমি আপনার জিকিরকে বুলন্দ করব।
এসব
কিছুই কাউসার বা অধিক কল্যানের মধ্যে শামিল যা হুযুর (দ) কে দান করা হয়েছে।
হুজুরকে
কুরআনের মত নেয়ামত দেয়া হয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম এর মত মুখলিস সাথী দান করেছেন, যারা
নিজেদের জান মাল কুরবান করে সে দ্বীনের পতাকাকে ইসলামের পতাকাকে উড্ডিন করেছেন।
এখন
কথা হল যখনই কারো কোন নেয়ামত হাসিল হয় তার কি করা উচিত? তার সে নেয়ামতের হক আদায় করা
উচিত।আর কোন নেয়ামতের হক কখন আদায় হয়? যখন মানুষ আল্লাহর মরজি ও এতায়াতের কাজ করে।
সে জন্য ফরমায়েছেন (ফাসাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ানহার) বস নামাজ পড়ুন আপনার রবের জন্য আর
কুরবানি করুন।
এর
দ্বারা অনেক বড় একটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। আল্লাহর শোকর কিভাবে আদায় করবেন? আপনি
আমি আমরা সবাই অসংখ্য কল্যাণ লাভ করছি, কুরআন পেয়েছি, শ্রেষ্ঠ দ্বীন ধম পেয়েছি, শ্রেষ্ঠ
নবীর উম্মত হতে পেরেছি, আর এ্সব নেয়ামতের শোকর আদায় করার জন্য আমাদেরকেও খাস নফল আদায়
করতে হবে এবং তার সাথে কুরবানি অর্থ্যাৎ সদকাও করতে হবে। কেননা এভাবেই শোকরানা আদায়
করা হয়। একদিকে বান্দা আল্রাহর হকও ভুলবেনা অপর দিকে বান্দার হকও ভুলবেনা।
মুসলমানরা
যখনই কোন খুশি প্রকাশ করে তখন তারা তা একাকি পালন করেনা, যেমন দুই ঈদে নামাজ আদায় করা
হয় একটিতে সদকায়ে ফিতর আদায় করে গরীবদের জন্য কুরবানী করা হয় আর ২য় ঈদে পশু কুরবানী
করে গরীব মিসকিনদের ১ হিস্সা দানকরেন।
আর
জিন্দেগী ভর এই উসুলই রাখবেন যখনই কোন নেয়ামত হাসিল হয়, (ফাসাল্লি লিরাব্বিক) আপনার
রবের জন্য নামাজ পড়ুন ঝুকে যান, (ওয়ানহার) এবং কুরবানি করুন।
নহর
সাধারণত উট জবেহ করাকে বলে, আপনার উট জবেহ করার তৌফিক না থাকলে আপনার তৌফিক অনুযায়ী
কুরবানী ও সদকা করবেন, হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর সুরা বাকারার পড়া শেষ করে ৭টি উট জবেহ
করে শোকরানা আদায় করেছেন। আর আরবদের সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল উট। তাই কেহ কারো মেহমানদারীর
জন্য উট জবেহ করে সম্মান দিত। সুতরাং সদকার সময় যতটুকু পার বড় ধরনের সদকা আল্লাহর রাস্তায়
খরচ করা।
আর
সে নামাজ হবে কুরবানী হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য কাউকে দেখানোর জন্য নয়। তাই বলা হল
( লিরাব্বিকা) আপনার রবের জন্য। নামাজও আপনার রবের জন্য কুরবানিও আপনার রবের জন্য।
আর এই দুই আমল দ্বারা কি উপকার হবে তা পরের আয়াতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
(ইন্না
শানিয়াকা হুয়াল আবতার) যারা দুষমন তাদেরকে আল্লাহ নিজেই সামলে নিবেন। শত্রুতামি যারা
করে তারা নিজেরাই মসিবতে গ্রেফতার হয়ে যাবে।
সাধারণ
দেখবেন কোন মানুষ কোন নেয়ামত পেলেই তার কিছু হিংসাকারী পয়দা হয়ে যায়, চাই সে দ্বীনের
নেয়ামত প্রাপ্ত হউক কিংবা দুনিয়ার নেযামত প্রাপ্ত হউক।
দেখুন
হুজুর (দ) সাদেক ও আমিন ছিল মানুষের চোখের মনি ছিল, যখনই তিনি নবুয়ত পেলেন আবু জেহেল
আবু লাহাব নারাজ হয়ে গেল। আপন খান্দানের লোকেরা বিরোধী ও দুষমন হয়ে গেল।আহলে কিতাবরা
সারা জীবন শেষ নবীর জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু তারাও দুষমন হয়ে গেল। এর কারন কি? তাদের
হিংসা এটাই ছিল শেষ নবী আমাদের কবিলা থেকে কেন আসল না?
এমন
মওকায় মানুষকে কোন পরওয়া করা উচিত নয়, বরং তখন একমাত্র কাজ হল নামাজ ও কুরবানী করা
সদকা করা। আর এটাই দুষমন ও হাসদকারীর হাসদ থেকে শত্রুদের শত্রুতামি থেকে বাঁচার একমাত্র
শ্রেষ্ঠ তরিকা।
যেখনে
আপনি দেখবেন লোক আপনার সাথে খুব বেশী বিরোধীতা করছে , আর এই বিরোধীতার কারন যদি দেখেন
শুধুই হিংসা, আর কোন কারন নাই। শুধুই জেলাস। এমন অবস্থায় কি করবেন? ২ রাকাত নফল পরে
আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন। কোন পেরেশানির দরকার নাই, আল্লাহর সামনে ঝুকে যান এবং
দোয়া করুন, এবং বেশী বেশী সদকা খয়রাত করুন। এই ২টি তরিকা মানুষকে দুনিয়াতে প্রটেক্ট
করে।
এই
২টি তরিকা আপন করলে কি হবে? (ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার) সকল দুষমন সমুলে ধ্বংস হয়ে
যাবে। তাদের নাম নিশানাও বাকী থাকবে না।
যেমন
আবু জেহেল আবু লাহাব আস বিন ওয়াইল এর নিশানাও বাকী নাই যারা আমার নবীকে হিংসার কারনে
লেজ কাটা বলেছিল যারা আমার নবীর নিশানা বাকী থাকবেনা বলেছিল, তারাই নাম নিশানা হিন
হয়ে গেছে, আর আমার নবী নামাজ পড়েছেন আর কুরবানী করেছেন ফলে তার জিকির আজো সারা দুনিয়ায়
কোটি কোটি মানুষ নামাজে আজানে স্মরণ করে যাচ্ছে। কেয়ামত পযন্ত এটা জারি থাকবে হাশরের
মাঠেও তাকে দেয়া হবে মকামে মাহমুদ।
কোন মন্তব্য নেই