আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও বরকত Ayatul kursi fazilat barkat| All Bangla Dua
আয়াতুর কুরসির ফজিলত ও বরকত Ayatul Kursi Fazilat Barkat
আমরা আয়াতুল কুরসি পড়ি কিন্তু এর গুরুত্ব কি এর শিক্ষা কি না বুঝেই পড়ে থাকি। আমরা জানিনা এই আয়াতটি আমাদেরকে কি পয়গাম দিচ্ছে? এটি শুধু একটি আয়াত কিন্তু এর ফজিলতের ব্যপারে অসংখ্য হাদিস বর্নিত আছে।
তিরমিযির এক রেওয়ায়েত হযরত আবু হুরায়রা (রা)হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (আ) এরশাদ করেন- সবকিছুর কুহান ও উচ্চতা আছে, আর কুরানে হাকিমের উচ্চতা হল সুরা আল বাকারা, আর এর আয়াতুল কুরসি সকল আয়াতসমুহের সরদার।
অর্থ্যৎ সবকিছুর একটা উঁচ্চতা আছে - আর সম্পূণ কুরআনের উচ্চতা আছে সুরা বাকারাতে- আর সুরা বাকারার সরদার হল আয়াতুল কুরসি।
হযরত ওবাই ইবনে কাব হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী (দ) এরশাদ করেন হে আবুল মুনজির আল্লাহর কিতাবে তোমার মতে সবচেয়ে আফযল আয়াত কোনটি? তিনি জবাব দিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। তিনি ফরমালেন হে আবুল মুনজির? আল্লাহর কিতাবসমুহের মধ্যে কোন আয়াত তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড়? তিনি বলেন (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম) হুজুর (দ) তার সিনায় হাত মারলেন আর বললেন তোমাকে তোমার জ্ঞান মোবারক হউক। অর্থ্যাৎ তোমার কথা ঠিক এই আয়াতটিই সবচেয়ে বড় আয়াত।
নাসাঈ শরীফের হাদীস- নবী (দ) এরশাদ করেন প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জন্য জান্নাতে যেতে আর কোনো বাধা থাকেনা মৃত্যু ব্যতীত| (নাসাই)
আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা বিন ইমরানকে অহি নাজিল করলেন প্রত্যেক ফরয নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করে নাও, যে এই আমল করবে আমি তাকে শোকর গুজার ওয়ালা দিল, জিকিরকারী জবান দান করব, আর এই আয়াতের উপর আমল শুধু নবীগন, সিদ্দিকগন, বা ঐ সব বান্দাগন যাদের অন্তর আমি ঈমানের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিয়েছি, কিংবা যাদেরকে আমি আমার রাস্তায় শহিদ করতে চাই,
অর্থ্যাৎ প্রত্যেক ফরয নামাজের পর এই আয়াতের আমল শুধু আল্লাহর খাস বান্দারাই করতে পারেন।এবার আপনি আপনাকে চেক করে নিন আপনি আল্লাহর খাস বান্দাদের মদ্যে শামিল কিনা?
কেননা আমরা অন্যমনস্ক হয়ে নামাজ পড়তে থাকি আর সালাম ফিরিয়েই যে আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে তা ভুলে যাই, কিন্তু মানুষের দিল যখন আল্লাহর দিকে মায়েল হয়ে যায় তখন তারা ভুলতে পারেনা।
নবী (আ) এটাও এরশাদ করেছেন- যে ঘরে আয়াতুল কুরসি পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে।
আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াতের আরও ফায়দা রয়েছে- রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার বালা-মসিবত থেকে হেফাজত করেন। সহিহ বুখারী ও মুসলিমসহ হাদিসের অন্যান্য কিতাবে এ প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের বর্ণনাকারী হজরত আবু হুরায়রা রা. এবং হাদিসে বর্ণিত ঘটনাটিও তার সঙ্গেই সংঘটিত হয়।
ঘটনাটি হলো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার হজরত আবু হুরায়রা রা.-কে জাকাতের সম্পদ দেখাশোনা ও পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত করলেন। তিনি মুসলমানদের থেকে উসুল করা জাকাতের সম্পদ দেখাশোনা করতেন। এক রাতে লক্ষ করলেন, এক বৃদ্ধ সেখান থেকে খেজুর তুলে খাচ্ছে। হজরত আবু হুরায়রা রা. তাকে পাকড়াও করলেন। লোকটি ছোটার জন্য কাকতি-মিনতি শুরু করল।
আবু হুরায়রা রা. বললেন, তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাবো।
লোকটি বলল, আমি ক্ষুধার্ত ও অসহায়। আমার পরিবার-পরিজন আছে। দারিদ্র্যের মাঝে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
লোকটির কথায় হজরত আবু হুরায়রা রা.-এর মন গলে গেল। তিনি লোকটিকে ছেড়ে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘটনা জানিয়ে দিয়েছিলেন। সকালে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, আবু হুরায়রা, তোমার গতকালের বন্দীর কী খবর? হজরত আবু হুরায়রা রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, লোকটি নিজের ও পরিবারের অসহায়ত্ব ও দারিদ্র্যের অভিযোগ করেছে। এ জন্য আমার দয়া হয়। তাই তাকে ছেড়ে দিই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারো আসবে।
আবু হুরায়রা রা. রাসূলের কথা শুনে সে লোকটির অপেক্ষায় রইলেন। সে আবার এলো। আগের মতোই খেজুর খেতে লাগল। আবু হুরায়রা রা. পাকড়াও করলেন। সে আগের মতোই কাকতি-মিনতি করতে থাকে এবং নিজের ও পরিবারের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে। এবারো তিনি সদয় হয়ে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা, তোমার বন্দীর খবর কী?
তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, সে কাকতি-মিনতি করেছে বিধায় তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবারো বললেন, সে আবার আসবে।
তৃতীয় রাতে চোর আবার এলো। এবার আবু হুরায়রা রা. তাকে খুব ভালোভাবে পাকড়াও করলেন। বললেন, এবার তোমাকে অবশ্যই রাসূলের দরবারে হাজির করব। তোমার কথামতো তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি। তুমিও বারবার ফিরে আসছো। এবার আর ছাড়া পাবে না।
অবস্থা বেগতিক দেখে বলল, আমাকে এবার ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে একটি আমল শিক্ষা দেবো, আপনার অনেক ফায়দা হবে। আবু হুরায়রা রা. জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কী?
লোকটি বলল, রাতে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমাবেন। এ আয়াত তেলাওয়াত করে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালাই হবেন আপনার হেফাজতকারী। আপনার কাছে কোনো শয়তানও আসতে পারবে না।
পরদিন সকালে নবীজী আবু হুরায়রা রা.-কে রাতের বন্দী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, গত রাতে সে আমাকে একটি আমল শিখেয়েছে তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
কী আমল? সে আমাকে রাতে শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমাতে বলেছে। এতে আল্লাহ তায়ালা আমাকে সকাল পর্যন্ত হেফাজত করবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, সে তোমাকে সত্যই বলেছে, যদিও সে মহা মিথ্যাবাদী।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা, তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তোমার সঙ্গে কার সাক্ষাৎ হচ্ছে?
-না, তা তো জানি না!
-সে ছিল শয়তান।-সহিহ বুখারী : ২৩১১।
এ ঘটনা থেকে জানা গেল, রাতে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালা সকল বালা-মসিবত থেকে হেফাজত করবেন। চোর-ডাকাত থেকে রক্ষা করবেন। শয়তান ও দুষ্ট জিনের ক্ষতি থেকেও নিরাপদ রাখবেন।
-অনেক সময় দেখবেন এমন লকার থেকে মাল চুরি হয়ে যায় যে লকারের চাবী সে ছাড়া আর কারো কাছে নাই, এ ধরনের চুরি হয়ত শয়তান করে থাকে, আর এ ধরনের চুরি থেকে বাঁচার জন্য আয়াতুল কুরসি পড়ে চারদিকে ফুক মারবেন। তেমনি লকার লক করার সময় আয়াতুল কুরসি পড়ে তাতে ফুক মেরে দিন। আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতাকে আপনার সে সম্পদ হেফাজত করার দায়িত্ব দিবেন, ফলে কেহ চুরি করতে পারবেনা।
আসুন দেখে নিই
আয়তুল কুরসী কুরসি হচ্ছে এই-
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ
আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ،
যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক।
لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ،
কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না।
لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ،
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন।
مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ،
তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে?
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ
তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন।
وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ،
তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত।
وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ،
তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে।
وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।
কোন মন্তব্য নেই