আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল

 আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল



আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেন
«أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ،
, “আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম আমল, বুলন্দ মযাদা ওয়ালা আমলের সন্ধান দেব না?
وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ،
যে আমল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পবিত্র
وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ،
যে আমল তোমাদের মর্যাদা সবার চেয়ে বেশি বৃদ্ধিকারী,
وَخَيرٍ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ والفِضَّةِ،
যে আমল সোনা-চাঁদি দান করার চেয়ে উত্তম
وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ أَن تَلْقَوا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ
এবং যে আমল শত্রুর সম্মুখীন হয়ে গর্দান কাটা ও কাটানোর চেয়ে শ্রেয়।


সকলে বলল, ‘অবশ্যই বলে দিন।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ তা‘আলার যিকির।”
তিরমিযী ৩৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৩৭৯০, আহমাদ ২১১৯৫, ২৬৯৭৭, ইবনু মাজাহ ৪৯০

জিকির সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে করতে হবে, আর জিকির শুধু আল্লাহ আল্লাহ করার নাম নয়, বরং হালাল রিযিক তালাশ করাও জিকির, নামাজ, রোজা হজ যাকাত এসবও জিকির, সৃষ্টিজীবনের কল্যান করাও জিকির, কুরআন তেলাওয়াত দরুদ পাঠ এসবও জিকির। মোটকথা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরআন সুন্নাহর আলোকে জীবন যাপন করাই হল জিকির যেমন আপনি রাতে ঘুমাচ্ছেন যদি তা সুন্নত মোতাবেক হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে হয় ভোর রাতে উঠে ফযর পড়ার নিয়তে হয় তাহলে আপনার এই সারা রাতের ঘুমও জিকির হিসেবে গন্য হবে।

‘আল্লামা সিনদী হানাফী (রহঃ) বলেন, আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্নভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সর্বোত্তম ‘আমল সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন। সুতরাং এর সুষ্ঠু সমাধানকল্পে ‘উলামায়ে কিরাম কয়েকটি কথা বলেছেন।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত প্রশ্নকারীর প্রতি খেয়াল করে উত্তর দিয়েছেন তাই যার ভিতরে যে ‘আমলের অভাব দেখেছেন তাকে সে ‘আমলের কথাই বলেছেন যে, এটাই সর্বোত্তম ‘আমল।
যাকে তিনি যা দেখেছেন যে, সে শক্তিমান সুঠাম দেহের ও বিরত্বের অধিকারী তাকে তিনি বলেছেন যে, জিহাদই হলো সর্বোত্তম ‘আমল। আবার যাকে দেখেছেন সম্পদশালী তাকে বলেছেন, দান সদাকাহ্ বা যাকাতের কথা। যাকে দেখেছেন পিতা-মাতার অবাধ্য তাকে বলেছেন পিতা-মাতার সাথে সদাচরণই হলো সর্বোত্তম ‘আমল। আর যাকে দেখেছেন সে না শক্তিশালী না বিত্তবান তাই তাকে বলেছেন তোমার জন্য জিকিরই হলো সর্বোত্তম ‘ইবাদাত।


ফজরের নামাজের পর আমল।সকালের দোয়া।morning duas after fajr


প্রিয় নবী আমাদেরকে দোয়াটি প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর পড়ার জন্য হকুম এরশাদ করেছন- যাতে ৩টি জিনিষ চাওয়া হয়েছে
যে ৩টি জিনিষ হলে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতে আর কোন নিয়ামত লাগে না।
"‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً ‏"‏ ‏.‏
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকা এলমান নাফেয়া, ওয়া রিজকান তায়্যিবা, ওয়া আমালান মুতাকাব্বালা) আল্লাহ জ্ঞান বা মারেফত সেটা দান কর যেটা আমার জন্য উপকারী, আল্লাহ রিযিক সেটা দান কর যেটা পবিত্র রিযিক, আল্লাহ আমল সেটা করাও যেটা তোমার বারেগাহে কবুল হয়ে যাবে। চিন্তা করে বলুন এই ৩টি দোয়া করার পর আর কি কিছু বাকি আছে চাওয়ার? এই ৩টির মধ্যে সকল নেয়ামত দুনিয়া আখেরাতের সব নেয়ামতই এসে গেছে।
আহমাদ ২৫৯৮২, ইবনু মাজাহ ৯২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৬৫, শু‘আবূল ঈমান ১৬৪৫
জ্ঞানকে উপকারের সাথে, রিযককে হালাল হওয়ার সাথে এবং ‘আমলকে মাকবূল হওয়ার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে এজন্য যে, যে জ্ঞান উপকারে আসে না সে অনুপকারী জ্ঞান দুর্ভাগ্যের কারণ হয়। এজন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুপকারী জ্ঞান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চেয়েছেন। আর প্রত্যেক হালাল নয় এমন রিযক শাস্তির মুখোমুখি করবে এবং আল্লাহর নিকট মাকবূল নয় এমন ‘আমল করে শুধু আত্মাকেই কষ্ট দেয়া হয়, শেষ পর্যন্ত তা উপকারে আসে না।


جاء رجلٌ بدويٌّ إلى رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ

রাসুল (দ) এর কাছে এক গ্রাম্য লোক আসল, (আর গ্রাম্য লোকেরা সহজ সরল হয় তাই তাঁরা সোজাসুজি প্রশ্ন করে) এই সহজ সরল গ্রাম্য লোকটি হুজুর (দ) কে বললেন


فقال يا رسولَ اللهِ علِّمْني خيرًا
হে আল্লাহর রাসুল (দ) আমাকে উত্তম কিছু শিক্ষা দিন।
قال : قل : ( سبحان اللهِ ، والحمدُ للهِ ، ولا إله إلا اللهُ ، والله أكبرُ ) .
নবী (দ) বললেন তুমি বল সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার)
সে লোকটি হাতের আঙ্গুলে ৪টি কলমা সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার পড়তে পড়তে বের হয়ে গেল, কিছুদুর গিয়ে আবার ফিরে আসল, তখন দেখল হুজুর (দ) মুচকি হাসি দিলেন।
. فقال : يا رسولَ اللهِ ! ( سبحان الله ، والحمدُ لله ، ولا إله إلا اللهُ ، واللهُ أكبرُ ) ، هذا كلُّه لله ، فما لي ؟
সে বলল এয়া রাসুলাল্লাহ সুবহানাল্লাহ এটাও আল্লাহর জন্য, আলহামদুলিল্লাহও আল্লাহর জন্য, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহও আল্লাহর জন্য, আল্লাহু আকবার ও আল্লাহর জন্য তাহলে আমার জন্য কি?
فقال رسولُ اللهِ :
إذا قلتَ : ( سبحان اللهِ ) ؛ قال اللهُ : صدقتَ
তখন নবী করিম (দ) বললেন যখন তুমি বলবে সুবহানাল্লাহ তখন আল্লাহ জবাব দিবেন তুমি সত্য বলেছ
. وإذا قلتَ : ( الحمدُ لله ) ؛ قال اللهُ : صدقتَ
যখন তুমি বলবে আলহামদুলিল্লাহ তখন আল্লাহ জবাব দিবেন তুমি সত্য বলেছ
. وإذا قلتَ : ( لا إله إلا اللهُ ) ؛ قال اللهُ : صدقتَ
যখন তুমি বলবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তখন আল্লাহ জবাব দিবেন তুমি সত্য বলেছ
. وإذا قلتَ : ( اللهُ أكبرُ ) ؛ قال اللهُ : صدقتَ .
যখন তুমি বলবে আল্লাহু আকবর তখন আল্লাহ জবাব দিবেন তুমি সত্য বলেছ
فتقول : ( اللهمَّ اغفِرْ لي ) ، فيقول اللهُ : قد فعلتُ
এরপর তুমি তোমার বিষয় গুলি বলবে- হে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও, আল্লাহ বলবেন দিলাম।
. فتقول : ( اللهمَّ ارْحمْني ) ؛ فيقول اللهُ : قد فعلتُ .
এরপর তুমি দোয়া করবে হে আল্লাহ আমার উপর রহম করা আল্লাহ বলবেন দিলাম।
وتقول : ( اللهمَّ ارْزُقْني ) ؛ فيقول اللهُ : قد فعلتُ .
এরপর দোয়া করবে হে আল্লাহ আমাকে রিযীক দাও, আল্লাহ বলবেন দিলাম।

অতএব আমরাও যদি সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার বলি এরপর বলি (আল্লাহুম্মাগফিরিলি, আল্লাহুম্মারহামনি, আল্লাহুম্মারজুকনি) তাহলে আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথে আমাদের দোয়া কবুল করবেন এবং গুনাহ মাফ করে দিবেন, আমাদের উপর রহম করবেন, আমাদেরকে রিযিক দান করবেন।
قال : فعقد الأعرابيُّ سبعًا في يدَيه . الراوي: أنس بن مالك - المصدر: صحيح الترغي - الصفحة أو الرقم: 1564

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.