আল্লাহকে খুশি করার ৭টি আমল সম্পূর্ণ হাদীস শরীফের আলোকে

 আল্লাহকে খুশি করা অত্যন্ত সহজ কুরআন ও হাদীসের আলোকে সহজ পদ্ধতিগুলিই আজ বলব শেষ পযন্ত শুনলেই বুঝতে পারবেন আজকের এপিসিউডটি আপনার জন্য কতটা উপকারী। কতটা জরুরী।



সহিহ মুসলিমের ৫২৫৪ নং হাদীস

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমি চরম অনাহারে ভুগছি। তিনি তার কোন এক সহধর্মিণীর নিকট লোক প্রেরণ করলে তিনি বললেন, যে স্রষ্টা আপনাকে সঠিক দীনসহ পাঠিয়েছেন তার কসম! আমার নিকট পানি ব্যতীত আর কিছু নেই। তিনি অপর এক স্ত্রীর নিকট লোক প্রেরণ করলে তিনিও অনুরূপ কথা বললেন। এভাবে তারা সবাই একই কথা বললেন যে, সে সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, আমার কাছে পানি ব্যতীত আর কিছু নেই। তখন তিনি বললেন, আজ রাত্রে লোকটির কে অতিথিপরায়ণ হবে? আল্লাহ তার উপর দয়া করুন! তখন এক আনুসারী লোক উঠে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি।

অতঃপর লোকটিকে নিয়ে আনুসারী নিজ বাড়িতে গেলেন এবং তার সহধর্মিণীকে বললেন, তোমার নিকট কিছু আছে কি? সে বলল, না। তবে সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাবার আছে। তিনি বললেন, তুমি তাদের কিছু একটা দিয়ে ব্যস্ত রাখো। আর যখন অতিথি ঘরে ঢুকবে, তখন তুমি আলোটা নিভিয়ে দেবে। আর তাকে বুঝাবো যে, আমরাও খাবার খাচ্ছি। সে (মেহমান) যখন খাওয়া আরম্ভ করবে তখন তুমি আলোর পাশে যেয়ে সেটা নিভিয়ে দেবে। রাবী বলেন, অতঃপর তারা বসে থাকলেন এবং অতিথি খেতে শুরু করলো। 

‏.‏ فَلَمَّا أَصْبَحَ غَدَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏"‏ قَدْ عَجِبَ اللَّهُ مِنْ صَنِيعِكُمَا بِضَيْفِكُمَا اللَّيْلَةَ ‏"‏ ‏.

সকালে তিনি (আনসারী) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলে, তিনি বললেনঃ আজ রাত্রে অতিথির সঙ্গে তোমাদের উভয়ের ব্যবহারে আল্লাহ খুশী হয়েছেন। 

তিরমিযী ১৩৯৩, ইবনু মাজাহ ২৬৯৩,  নং হাদীস

আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোনো ব্যক্তি শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, আর আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দেয়,

তখন এ ক্ষমার কারনে আল্লাহ খুশি হয়ে যান এবং

رَفَعَهُ اللَّهُ بِهِ دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْهُ خَطِيئَة»

এ ক্ষমার কারণে আল্লাহ খুশী হয়ে তাকে মাফ করে দেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দেন।


আপনার যে কোন কাজ যদি খুলুছ নিয়তে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য হয়, তা যত সামান্যই হউকনা কেন আল্লাহ তাতেও খুশি হয়ে যান যেমন হুদায়বিয়ার সন্ধীর সময় সাহাবাগন যখন নবীজির হাতে শপথ গ্রহণ করেন তখনকার কথা আল্লাহ তায়ালা সুরা ফাতাহর ১৮ নং আয়াতে এভাবে বয়ান করেন 

لَقَدْ رَضِيَ اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِىْ قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

‘‘মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা (হুদায়বিয়ায়) গাছের তলে তোমার কাছে বায়‘আত নিল। আল্লাহ জানতেন তাদের অন্তরে কী আছে, এজন্য তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন আর পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে দিলেন আসন্ন বিজয়।’’ (সূরা আল ফাতহ ৪৮ : ১৮)

অনেকে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে খুশি করতে চায় কিন্তু আল্লাহর প্রিয় হাবিব বলেন

যা তিরমিযির ২৪১৪ নং হাদীসে আছে এবং ইবনে হিব্বানেও এভাবে আছে 

‘‘যে ব্যক্তি লোকেদেরকে অসন্তুষ্ট করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এবং লোকদেরকেও তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে লোকদেরকে সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এবং লোকদেরকেও তার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দেন।’’ 

সুতরাং আমাদের যে কোন কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টিই কামনা করতে হবে। কে কি মনে করল সেদিকে চিন্তা করার প্রয়োজন নাই। 

তিরমিযির ২০০৮ এবং ইবনে মাজার ১৪৪৩ নং হাদীস

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেয় অথবা আল্লাহর ওয়াস্তে  তার কোনো  ভাই এর সাথে সাক্ষাৎ করে, সে ব্যক্তিকে এক (গায়বী) আহ্বানকারী আহ্বান করে বলে,

بِأنْ طِبْتَ، وَطَابَ مَمْشَاكَ، وَتَبَوَّأتَ مِنَ الجَنَّةِ مَنْزِلاً»

‘সুখী হও তুমি, সুখকর হোক তোমার ঐ যাত্রা (সাক্ষাতের জন্য যাওয়া)। আর তোমার স্থান হোক জান্নাতের প্রাসাদে।’’

সহিহ বুখারীর ১০৭৯ নং হাদীস

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ

مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ ‏"‏‏.‏

কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছ এমন যে, আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছ এমনে, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।

এখন শেষ রাতে যদি আপনি আল্লাহকে ডাকেন আল্লাহ আপনার ডাকে সাড়া দিবেন, যা চাইবেন আল্লাহ আপনাকে তাই দিবেন।

যরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় সাতবার করে বলে-

حَسْبِيَ اَللّهُ لَآ اِلهَ أِلأَّ هُؤَ عَلَيْهِ تَؤَكَّلْتُ ؤَهُؤَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ

(আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমি তার উপরই নির্ভর করছি আর তিনি মহান আরশের অধিপতি), আল্লাহ তায়ালা তার সকল কাজ সমাধা করে দেন এবং তার সকল ইচ্ছা পূর্ণ করেন। -(মুসনাদে আহমাদ)

ঝ) আল্লাহর সন্তোষ লাভ : হযরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার বলে-

رَضِيتُ بِاللّهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَّبِيًّا

(আমি আল্লাহকে রব হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি), তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাওয়া আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়। -(তিরমিযী-৩৩২৫ : হাসান)

শারিরিক ও যৌন শক্তি বৃদ্ধির দোয়া



وَعَنْ شَكَلِ بنِ حُمَيدٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، علِّمْنِي دُعَاءً، قَالَ: «قُلْ: اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي».
Allahumma Inne Auzobika min sarre samye wa min sarri basari wamin sarre lisani wamin sarri qalbi wamin sarri maneyye
শাকাল ইবনে হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে একটি দো‘আ শিখিয়ে দিন।’ তিনি বললেন, “বল,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন শার্রি সাম্য়ী, অমিন শার্রি বাস্বারী, অমিন শার্রি লিসানী, অমিন শার্রি ক্বালবী, অমিন শার্রি মানিইয়্যী।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট আমার কর্ণ, চক্ষু, রসনা, অন্তর এবং বীর্য (যৌনাঙ্গে)র অনিষ্ট থেকে শরণ চাচ্ছি। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)[1]
তিরমিযী ৩৪৯২, নাসায়ী ৫৪৫৫, ৫৪৫৬, আবূ দাউদ ১৫৫১
শারিরিক দুবলতা থেকে মুক্তির ২য় দোয়াটি হল যা আবু দাউদ এর ১৫৪০ নং হাদীসে বণিত আছে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ ‏"‏
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল আযজি ওয়াল কাছালি ওয়াল বুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল মামাত

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি শারীরিক দুর্বলতা হতে, অলসতা হতে, কাপুরুষতা হতে, কৃপণতা হতে এবং বায়োবৃদ্ধিজনিত ক্লান্তি বা কষ্ট হতে এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি কবরের আযাব হতে, এবং আমি আরো আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি জীবন-মৃত্যুর ফিত্না হতে। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)।


কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.