৩০টি জিনিষ থেকে আমাদের প্রিয় নবী দোয়ার মাধ্যমে পাহান চাইতেন

৩০টি জিনিষ থেকে আমাদের প্রিয় নবী দোয়ার মাধ্যমে পাহান চাইতেন যেমন


গুনাহ, ঋণ, ভিরুতা, বার্ধক্য, দুনিয়ার ফিতনা, কবর আযাব, অক্ষমতা, জীবন মৃত্যুর ফিতনা, দাজ্জালের ফিতনা, জাহান্নামের আযাব, কঠিন মসিবত, দুর্ভ্যাগ্যে নিপতিত হওয়ার মসিবত, নিয়তির অশুভ পরিণাম, দুশমনের খুশি, প্রাচুর্য্যের ফিতনা, অভাবের ফিতনা, অলসতা, সফরের ক্লান্তি, কর্মের অনিষ্ট, ২০) রাতের অনিষ্ট, (২১) শয়তান (২২) বিষাক্ত প্রাণী (২৩) কুদৃষ্টি (২৪) কৃপণতা (25) কুফুরী (২৬) গুমরাহি, (২৭) পদস্খলন (২৮) জুলুম (২৯) মুর্খতা (৩০) বাতাসের অকল্যাণ
আসুন হাদীস শরীফের আলোকে সে ৩০টি জিনিষ থেকে পাহান চাওয়ার ১৪টি দোয়া শিখে নিই। প্রত্যেকের জন্য দোয়াগুলি খুব খুব খুব জরুরী। প্রথম দোয়াটি হল বুখারী
للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ ‏"‏‏.
হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে গুনাহ এবং ঋণ থেকে পানাহ্ চাচ্ছি। (বুখারী ২২৩৯) ২ নং দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ‏"‏‏.‏
‘হে আল্লাহ! আমি ভীরুতা, অতি বার্ধক্য, দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই। (বুখারী ২৬২৬) ৩ নং দোয়া হল
"‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْهَرَمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
‘হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, ভীরুতা ও বার্ধক্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।’ (বুখারী ২৬২৭) ৪ নং দোয়া হল
"‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ ‏"‏‏.‏
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি কবর আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন ও মরণের ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জাল এর ফিতনা থেকে। (বুখারী ১২৯৪) ৫ নং দোয়া হল
مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ
বালামুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে নিঃপতিত হওয়া, নিয়তির অশুভ পরিণাম এবং দুশমনের খুশী হওয়া থেকে পানাহ চাই (বুখারী ৫৯০৭) ৬ নং
"‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ وَعَذَابِ النَّارِ، وَفِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ، وَشَرِّ فِتْنَةِ الْغِنَى، وَشَرِّ فِتْنَةِ الْفَقْرِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْ قَلْبِي بِمَاءِ الثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّ قَلْبِي مِنَ الْخَطَايَا، كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَبَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَالْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ ‏"‏‏.‏
ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে দোযখের সংকট, দোযখের আযাব, কবরের সংকট, কবরে আযাব, প্রাচুর্যের ফিতনা, ও অভাবের ফিতনা থেকে পানাহ চাই। আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট মসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই। আয় আল্লাহ! আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধুয়ে দিন। আর আমার অন্তর গুনাহ থেকে এমনভাবে সাফ করে দিন, যেভাবে আপনি সাদা কাপড়ের ময়লা পরিস্কার করে থাকেন এবং আমাকে আমার গুনাহ থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রাখুন, পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তকে পশ্চিম প্রান্ত থেকে যত দুরে রেখেছেন। আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই অলসতা, গুনাহ এবং ঋণ থেকে। (বুখারী ৫৯৩৭) ৭নং
"‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ ‏"‏ ‏.‏
"হে আল্লাহ! আমি সফরের কষ্ট ক্লান্তি হতে তোমার কাছে পানাহ চাই।" (মুসলিম ৩১৪৭) ৮নং
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সে সব কর্মের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই যা আমি আমল করেছি এবং আমি যা করিনি তা থেকে”। (মুসলিম ৬৬৪৭) ৯নং দোয়া মুসলিম শরিফের ৬৬৫৯ নং হাদীসের
اللَّهُمَّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ وَسُوءِ الْكِبَرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ
"রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তারই, তিনি সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ রাতের কল্যাণ কামনা করি এবং এ রাতের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই এবং এর পরবর্তী (রাত) থেকেও। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা থেকে ও বার্ধক্যের মন্দ অবস্থা (অহংকারের অনিষ্ট) থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব থেকে এবং কবরের আযাব থেকে।" (মুসলিম ৬৬৫৯) ১০ নং দোয়া
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নিম্নোক্ত দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন,
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি। (বুখারী ৩৩৭১) ১১ নং দোয়া
"‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْهَرَمِ ‏"‏ ‏.‏
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কৃপনতা ও বার্ধ্যক্য থেকে পানাহ চাই। (আবু দাউদ ৩৯৩১) ১২ নং দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ
ইয়া আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে কুফরী ও মুহতাজী থেকে পানাহ চাই। (আবু দাউদ ৫০০২) ১৩ নং দোয়া
فَقَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَىَّ ‏"‏ ‏.‏
হে আল্লাহ্! আমি আপনার পানাহ চাই গুমরাহ হওয়া থেকে অথবা গুমরাহ করা থেকে; পদস্খলন হওয়া থেকে অথবা পদস্খলন করা থেকে; জুলুম করা থেকে বা মাজলুম হওয়া থেকে; মূর্খতা থেকে অথবা মূর্খেত আচরণ থেকে। (আবু দাউদ ৫০০৬) ১৪ নং দোয়া
বলবেঃ
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيحِ وَخَيْرِ مَا فِيهَا وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيحِ وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ
‘‘হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করি এই বাতাসের কল্যাণ, এবং তাতে নিহিত বিষয়ের কল্যাণ এবং সে যে বিষয়ে নির্দেশিত হয়েছে তার কল্যাণ এবং তোমার কাছে পানাহ চাই এই বাতাসের অকল্যাণ থেকে, তাতে নিহিত বিষয়ের অমঙ্গল থেকে এবং সে বিষয়ে নির্দেশিত তার অমঙ্গল থেকে।(তিরমিযি ২২৫৫)

আজকের হাদীসটি মসনদে আহমদের ৬৫৮৩ এবং হাকেম এর ১৫৪ নং হাদীস

হযরত নুহ (আ) ইন্তেকালের আগে নিজের সন্তানদেরকে ডাকলেন, তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন হে আমার সন্তানেরা আমি তোমাদেরকে কিছু অছিয়ত করতে চাই, ২টি বিষয়ের হকুম দিব সেগুলিকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, آمُرُكَ بِلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، فَإِنَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعَ ، وَالْأَرْضِينَ السَّبْعَ ، لَوْ وُضِعَتْ فِي كِفَّةٍ প্রথম হকুমটি হল লা ইলাহা ইল্লাহ যদি এটিকে আকড়ে ধর তাহলে যদি ৭ আসমান ও ৭ জমিন ১ পাল্লায় রাখা হয় আর ২য় পাল্লায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ রাখা হয় তাহলে এটি পুরা কায়েনাত থেকে ভারি হবে। আর ২য় হকুম যেটি সেটি হল এমন একটি কলমা যা কখনো ছাড়বে না- سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ : صَلَاةُ كُلِّ شَيْءٍ ، وَبِهَا يُرْزَقُ الْخَلْقُ কারন এই কলমাটি হল গোটা বিশ্বের /পুরা কায়েনাতের নামাজ এবং গোটা কায়েনাতের রিযিক আল্লাহ তায়ালা এই কলমার কারনে দান করেন। আখেরাতে মুক্তির জন্য যদি কেহ একিনের সাথে বলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে এটিই তার মিজানকে ভারী করে দিবে আর কেহ যদি ঈমান ও একিনের সাথে বলে (সুবহানাল্লাহে ওয়াবিহামদিহি) তাহলে তা তার রিযিকের দরজাকে খুলে দিবে। এত রিযিক দেখে মানুষও বলতে থাকবে আল্লাহ তাকে কতইনা নেয়ামত দান করেছেন।
মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তির কুরআনী দোয়া। পুরাতন রোগ থেকে মুক্তির দোয়া।

আম্বিয়া কেরামের যত ঘটনা আছে তার মধ্যে হযরত আইয়ুব (আ) এর ঘটনায় যে নসিহত বা শিক্ষা রযেছে তা অন্য কোন নবীর ঘটনায় নাই, আল্লাহ তায়ালা হযরত আইযুব (আ) কে এত বড় মর্যাদা দেয়ার পরও তাকে যে রোগ দিয়েছেন যা অত্যন্ত মারাত্মক রকমের রোগ ছিল, কিন্তু তাতে তিনি সবর করেছিলেন, এবং এর বিরুদ্ধে ১টি শব্দও অভিযোগের সুরে বলেননি। আর এতে মানুষের জন্য এটাই নসিহত যে, সকল দুঃখ বিপদ পেরেশানি কিংবা খুশি আনন্দে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা। মসিবতে সবর করা। আর নেয়ামতের শোকর করা।

হযরত আইযুব (আ) এর শরীরের শুধু তার জিহ্বা ছাড়া বাকী সমস্ত শরীরে পোকা পড়ে গিয়েছিল, তাঁকে তার এলাকার লোকেরা এলাকা ছাড়া করল, তিনি জঙ্গলে অবস্থান করলেন, শুধু তার স্ত্রীই তাঁর সাথে ছিল, স্ত্রী বলল হে আইয়ুব আপনি আল্লাহ কাছে দোয়া করুন, তখন হযরত আইযুব বলেন আমি ৭০ বছর সুস্থ ছিলাম এখন অসুস্থ হয়েছি তাই আমার উচিত অসুস্থতাকালীন ৭০ বছর সবর করা।

তিনি এই রোগে ১৮ বছর কষ্ট করেছেন তারপর দোয়া করেছেন যা সুরা আম্বিয়ার ৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ বয়ান করেন-
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেনঃ আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান। [সুরা আম্বিয়া - ২১:৮৩]
তিনি দোয়াতে এটা বলেননি হে আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দান করুন, বরং তিনি বলেছেন আপনি দয়াবান।
যখনই তিনি এই দোয়া করলেন সাথে সাথে আললাহ তায়ালা তার ১৮ বছরের পুরানো অসুখ দুর করে তাঁকে সুস্থ করে দিলেন।








কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.