আমরা যখন নামাজের
আত্তাহিয়্যাতের দরুদে বলি (আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আমি মুহাম্মদ)
এই যে নবী মুহাম্মদ (দ) এবং তার আহালদের প্রতি বরকতের দোয়া করছি, এর ভিতর কিন্তু গভীর
রহস্য আছে-
সকলেই চায় ঘরে
বরকত হউক, রিযিকে মালে দৌলতে সন্তানে বরকত আসুক। বরকত মানে শুধু বেশী হওয়া নয়, বরকত
হল কোন জিনিষ বেশী হওয়ার সাথে সাথে সেটা ভালো ও কল্যাণময় কাজে ব্যবহার হওয়াই মুলত বরকত।
এখানে
স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যদি আল্লাহর ফরমাবরদারি করা হয় তাহলে আল্লাহ আসমানী ও
দুনিয়াবি নেয়ামত সমুহ তার জন্য উম্মুক্ত করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।
তেমনি
ভাবে প্রত্যেক নামাজে আমরা হযরত ইবরাহিম (আ) এর উপর বরকতের দোয়া পড়ি, যেমন আমরা
পড়ি (আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আমি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা
ইবরাহিমা ওয়ালা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ, আল্লাহুম্মা
বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়ালা আলি
ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ)
অর্থ্যাৎ
হে আল্লাহ মুহাম্মদ (দ) ও তাঁর আহালের উপর বরকত নাজিল কর যেমন ইবরাহিম (আ) ও তার
আহালদের উপর বরকত নাজিল করেছেন।
এটা
এমন এক দোয়া যা আমরা প্রত্যেক নামাজে আত্তাহিয়্যাতের মধ্যে পড়ি,কিন্তু যে লোক নামাজই পড়েনা তার জীবনে বরকত
কোথা থেকে আসবে? কারন সে নামাজের মাধ্যমে এই বরকতের দোয়ায় অংশ গ্রহণ করেনা।
যে সব ঘরে আল্লাহর
ভয় থাকেনা, নামাজের পাবন্দী থাকেনা, সে সব ঘরে যতই মাল দৌলত রিযিক থাকুকনা কেন সেখানে
বরকত থাকেনা। সে ঘরে সব কিছু থাকার পরও ঘরের লোকের মনে শান্তি থাকে না। ঘরের লোকদের
মনে হাসি খুশি থাকে না, একটা ভয়, দুঃখ বেদনা বা ডিপ্রেশনের মধ্যে ঘরের লোকগুলি দিন
কাটায়। আর যেখানে বরকত হয় সেখানের লোক যে কোন অবস্থায় খুশী থাকে, তারা আল্লাহর সব ফয়সালায়
রাজি থাকে।
হযরত ইবরাহিমের
বরকতের ব্যপারে-- আল্লাহ
সুরা সাফফাতের ১১৩ নং আয়াতে ইবরাহিম (আ) এর ছেলে ইসহাকের ব্যপারে বলেন
ইবরাহিম
(আ) এর ২ জন ছেলে ইসমাইল ও ইসহাক, ইসমাইল (আ) এর বংশে আমাদের আখেরী নবীর জন্ম, আর
ইসহাক (আ) এর বংশে এয়াকুব (আ) আর এয়াকুব আ) এর বংশে তার ১২ জন সন্তান এবং তাদের
থেকে বনি ইসরাইল এর জন্ম।
এভাবেই
আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম (আ) এবং তার সন্তানদের মধ্যে বরকত দান করেছেন।
তেমনি
ভাবে নবী (দ) যাকে বরকতের দোয়া দিতেন সে ভরপুর ফায়দা লাভ করত। যেমন হাদীসে পাকে
এসেছে- আল্লাহর রাসুল (দ) হযরত আনাস (রা) কে বরকতের দোয়া দিয়েছেন। আর হযরত আনাস
(রা) বলেন আমার জীন্দেগীতে আমি ১০০ জনের বেশী সন্তান নাতি পতিকে দেখেছি। এবং আনাস
(রা) এর হায়াতও অনেক দীঘ ছিল। তার রিযিকেও বরকত ছিল। কেননা তিনি নবী (দ) এর পক্ষ
থেকে বরকতের দোয়া পেয়েছেন। (আল্লাহুম্মা বারিক ফি উমুরিহি
ওয়া মালিহি)
ঠিক
তেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম একে অপরকে বরকতের দোয়া দিতেন। তেমনিভাবে আমাদেরও একে
অপরকে বরকতের দোয়া দিতে হবে, আপনি যদি অন্যের জন্য বরকতের দোয়া করেন তাহলে আল্লাহ
তায়ালা আপনাকেও বরকত দান করবেন, আর আপনি যদি অন্যের মাল দৌলত দেখে হিংসা করে তার
মাল দৌলত কমে যাওয়ার দোয়া করেন তাহলে আল্লাহ আপনাকেও বরকত থেকে বঞ্চিত করবেন।
পরশ্রিকাতরতা এই দোষটি বেশী মহিলাদের মধ্যে পাওয়া যায়, যা ঘরের শান্তি ও বরকত
নষ্টের মুল কারন।
মুহাজির
সাহাবী হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ যিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় যখন আসলেন তখন
নবী করিম (দ) সাদ বিন রবির সাথে আবদুর রহমান বিন আউফের মধ্যে ভাই ভাই সম্পক করে
দিলেন, সাদ বিন রবি তখন নিজের সম্পদ থেকে অধেক হযরত আবদুর রহমান বিন আউফকে দিয়ে
দিলেন কিন্তু আবদুর রহমান বিন আউফ বললেন আমি মাল দৌলতের লোভে হিজরত করে আসিনি, তবে
আপনি যে আমাকে দিয়েছেন সে জন্য আমি দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আপনার মাল ও দৌলতে আরো
বরকত দান করুন। আর আপনি আমাকে মদীনার বাজার দেখিয়ে দিন যাতে আমি সেখানে গিয়ে নিজের
চেষ্টায় নিজে কিছু কামাই করতে পারি, আবদুর রহমান বিন আউফ সাদ বিন রবির মালে বরকতের
দোয়া করেপর নির্ভরশীল না হয়ে
স্বনির্ভরশীল হওয়ার আশায় আল্লাহর উপর ভরসা করে মদীনার বাজারে ব্যবসা শুরু করেছিলেন
ফলে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন বরকত দান করলেন কিছুদিন পর তিনি যখন বিয়ে করলেন নিজের
স্ত্রীকে স্বর্ণের অলংকার দিয়ে ভরিয়ে দিলেন।
সুতরাং
আমরাও যদি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, নামাজে নবী ও নবীর আহালদের জন্য বরকতের দোয়া করি,
এবং অপরের মাল দৌলতে হিংসা না করে তার মাল দৌলতে যেন আল্লাহ বরকত দান করে তার জন্য
দোয়া করি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনকেও বরকত ময় করে দিবেন। আমাদের সম্পদ
আউলাদ হায়াতে বরকত দিবেন।
যদি কেহ আপনাকে বেইজ্জতি করে তাহলে এই আমলটি করে নিন
হযরত হাসান বসরী (রহ) এর নিকট যখন এক লোক ভাগতে ভাগতে আসল, সে বলল (এয়া হাসান আতারিফু মা কানা বিল আমছ?) হাসান জান কাল কি হয়েছে? হাসান বসরী (রহ) বললেন কালকি কোন দরসে কুরান ছিল? সে বলল না অমুক লোক আপনার অনেক গীবত করেছে। তখন হাসান বসরী (রহ) তাকে জবাব দিলেন আমাকে বল রাস্তায় ইবলিস তোমাকে ছাড়া আর কাউকে দেখেনি? তুমি এক মুসলমান ভায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে চলে েএলে? তখন তিনি এক টুকরী খেজুর নিয়ে সে লোকের ঘরে চলে গেল আর বলল (হাজিহি হাদিয়া মিন্নি লাক) এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য হাদিয়া।
তখন গীবতকারী লোক চিন্তায় পড়ে গেল আর প্রশ্ন করল কি কারনে হাদিয়া? তখন হাসান বসরী (রহ) ফরমালেন হে আমার ভাই তুমি খুব চেষ্টা করেছ, অনেক মেহনত করে আমাকে নেকি দিয়েছ। আমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামতের হকদার বানাতে চেষ্টা করেছ, তাই আমি চিন্তা করলাম যে আমার জন্য এত কষ্ট করছে তাকে মিষ্টি মুখ করাই। তখন সে গীবতকারী নিজের ভুল বুঝতে পারল।
দেখুন কত সুন্দর তরবিয়ত, এসব মুখলিস বান্দাদের নিশানি, কেহ প্রসংশা করলে তার পরওয়া করেনা, আর কেহ গীবত করলে তাতেও পেরেশান হয়না, দুনিয়াতে হুজুর (দ) এর মত মুত্তাকি কেহ নাই, কেহ জন্ম গ্রহণ করেনি, কিন্তু লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধেও কথা বলতে দ্বিধা করেনি। কিন্তু তিনি তবুও তিনি তাঁর মিশন ছাড়েননি। আল্লাহ আমাদেরকে নিজেদের নিয়তকে খালেস করার তৌফিক দান করুন।
আর্জেট টাকার মুজাররব ওজিফা
যারা টাকা পয়সার অভাবের কথা বলে, দারিদ্রতার অভিযোগ করেন তাদের জন্য আজি আমি পবিত্র কুরআনের চমৎকার এক ওজিফা নিয়ে এসেছি, আশা করি সম্পূণটা শুনে আপনাদের মনটা ভরে যাবে, আমল করলে সব অভাব দারিদ্রতা দুর হয়ে যাবে। শেষ পযন্ত না শুনলে ওজিফাটা বুঝবেন না
কুরআনের কয়কটি আয়াত আমাদের জন্য সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিচ্ছে যেমন
আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়কুটা করে দিতে পারি, অতঃপর হয়ে যাবে তোমরা বিস্ময়াবিষ্ট। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৬৫ ]
আল্লাহ যদি আমাদেরকে রিজিক না দেন তিনি যদি আমাদের কৃষকদের উৎপন্ন ফসলাদিকে ফসলহীন করে দেন তাহলে আমরা ঋণের চাপে পড়ে যাবে যেমন এরশাদ হচ্ছে
إِنَّا لَمُغْرَمُونَ
বলবেঃ আমরা তো ঋণের চাপে পড়ে গেলাম; [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৬৬ ]
সুতরাং এখানে সুস্পষ্ট আকিদা হল রিজিকের মালিক িএকমাত্র আল্লাহ তাই আল্লাহর উপরই আমাদের রিজিকের জন্য ভরসা করতে হবে, ডান পন্থী হতে হবে, তাহলেই আমাদের জন্য দুনিয়াতেও সু সংবাদ আখেরাতেও সুসংবাদ।
এসব শিক্ষা ও আকিদার বয়ানে ভরা সুরা ওয়াকেয়া আর এই সুরা ওয়াকেয়ার ব্যপারে হুজুর (দ) এরশাদ করেন (লাম তুসিবহুল ফাকা আবাদান) যে রাতে সুরা ওয়াকেয়া তেলাওয়াত করবে সে কখনো অভাবগ্রস্থ দরিদ্র হবেনা।
সুরা ওয়াকেয়া আমাদের যে শিক্ষা দিচ্ছে তার শিক্ষা ও দিক্ষায় দিক্ষিত হতে হবে (১) ডান পন্থী হতে হবে, (২) সদা আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, দেখুন এই সুরার শেষে পানি, মেঘ, বৃষ্টি, আগুন, বৃক্সের সৃস্টি যে আল্লাহ তায়ালা করেছেন তার বয়ান দিয়ে (৩) আল্লাহ তার নামে পবিত্রতা ঘোষনা করার কথা বয়ান করেছেন। এবং (৪) কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা বলেছেন। এরশাদ করেন
أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاء الَّذِي تَشْرَبُونَ
তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৬৮ ]
আমি সেই বৃক্ষকে করেছি স্মরণিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৭৩ ]
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ
অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৭৪ ]
এরপর সুরা ওয়াকেয়াতে পবিত্র কুরআন এর সম্মানের কথা বলা হয়েছে অজু ও পবিত্রতা ছাড়া স্পশ করতে নিষেধ করা হয়েছে, এবং কুরআনের প্রতিটি বাণীকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এসবই একজন ডানপন্তীর কাজ।
এবং সবশেষে আবারো আল্লাহ ডানপন্থীদের প্রসংশা করে বেলন
وَأَمَّا إِن كَانَ مِنَ أَصْحَابِ الْيَمِينِ
আর যদি সে ডান পার্শ্বস্থদের একজন হয়, [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৯০ ]
فَسَلَامٌ لَّكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ
তবে তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্যে ডানপার্শ্বসস্থদের পক্ষ থেকে সালাম। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৯১ ]
সুবহানাল্লাহ সুতরাং গোটা সুরাতে আমরা বার বার ডানপন্থীদের ব্যপারে সু সংবাদ পেলাম, আল্লাহ নেয়ামতের শোকর আদায়ের নির্দেশনা পেলাম, সদা আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা পেলাম, পবিত্র কুরআনকে সম্মান করা এবং এর প্রতিটি হকুম আহকামকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণের নির্দেশনা পেলাম, আর এসবকিছুর সমষ্টি যদি কারো মাঝে েএসে যায় তাহলে তার আর কোন অভাব থাকবে না- আল্লাহ বলেন
فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّةُ نَعِيمٍ
তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবং নেয়ামতে ভরা উদ্যান। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৮৯ ]
আ্ল্লাহ আমাদেরকে সুরা ওয়াকেয়া প্রতিদিন পাঠ করার এবং এর মধ্যে যে সব শিক্সা রয়েছৈ তা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে সব ধরনের অভাব থেকে মুক্ত থাকার তৌফিকক দান করুন। আমিন
কোন মন্তব্য নেই