দরুদ শরীফের বিষ্ময়কর ফজিলত ও বরকত

 দরুদ শরীফের বিষ্ময়কর বরকত



দরুদ ও সালাম পাঠের ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা যে নির্দেশ দিয়েছেন এমন ধরনের নির্দেশ অন্য কোন আমলের ব্যপারে পবিত্র কুরআনের আর কোথাও দেন নি।

উম্মতে মুহাম্মদীকে প্রিয়নবীর প্রতি আল্লাহ তায়ালা দরুদ সালাম পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অন্য কোন নবীর উম্মতকে তাদের নবীর উপর দরুদ সালাম প্রেরণের জন্য আল্লাহ তায়ালা হকুম দেন নি।

আল্লাহ প্রত্যেক নবীর মর্যাদা প্রকাশের জন্য আপন আপন সময় এমন শান প্রকাশ করেছেন যাতে সে নবীর শান প্রকাশ পায়, যেমন আদম (আ) এর শান প্রকাশের জন্য ফেরেশতাদের বলা হল আদম কে সিজদা করতে কিন্তু সে সিজদা করা আল্লাহর শানের বিপরীত ছিল তাই সে কাজ ফেরেশতারা শরিক হয়েছেন আল্লাহ শরিক হননি, কিন্তু আমাদের নবীর শান প্রকাশে আল্লাহ এমন এক আমলের হকুম দিলেন যা স্বয়ং আল্লাহ নিজে করেন, ফেরেশতারা করেন এবং মুমিনদেরকে নির্দেশ দেন যেন তারাও বেশী বেশী করে

‘‘ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান্নাবিয়্য। ইয়া আইয়ু হাল্লাজিনা আমানু সাল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা’’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তারা নবীর উপর দুরূদ পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর উপর দুরূদ পড় এবং যথাযথ সম্মানের সাথে তাঁকে সালাম জানাও (সূরা আহযাবঃ আয়াত- ৫৬)।

যখন আল্লাহপাক ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবীর প্রতি দুরূদ পাঠ করেন সেখানে সেই নবীর প্রতি আমাদের দুরূদ পাঠ করার প্রয়োজনীয়তা কি? এর জবাব হল- নবী (সাঃ) এর উপর আমাদের দুরূদ পাঠ করা তাঁর প্রয়োজনে নয়, যদি তাই হতো তাহলে নবীর প্রতি আল্লাহর দুরূদ প্রেরণের পর ফেরেস্তাদের আর দুরূদ পাঠের প্রয়োজন ছিলনা। প্রকৃত কথা হল- নবী (সাঃ) এর প্রতি আমাদের দুরূদ প্রেরণ তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের জন্য। যেমন- আল্লাহপাক তাঁর জিকির করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ আমাদের জিকিরের তাঁর কোন প্রয়োজন নেই (তাফসীরে কবীর)। নবী (সাঃ) এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ তাঁর প্রয়োজনে নয়; বরং আমাদেরই স্বার্থে। এতে ইহ-পরকালীন বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা দরুদ ও সালাম পেশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন (এয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু সাল্লু আলাইহি ওয়াসাল্লিমু তাসলিমা) হে ঈমানদারগন তোমরাও নবীর উপর দরুদ পাঠ কর এবং বেশী বেশী সালাম পেশ কর, আল্লাহর নির্দেশ পালন করার জন্য আমাদের জন্য উচিত ছিল এভাবে বলা- হে নবী আপনার উপর আমি দরুদ ও সালাম দিচ্ছি, কিন্তু নবীজি আমাদেরকে দরুদ পাঠ করার নিয়ম শিখাতে গিয়ে বলেছেন হে উম্মত তোমরা যখন আমার জন্য দরুদ পাঠ করবে তখন বলবে হে আল্লাহ আপনি নবীর উপর দরুদ প্রেরণ করুন নবীর আহাল এর উপর দরুদ প্রেরণ করুন।

অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেই দিয়েছেন (ইন্নাল্লাহা ওয়ামালা ইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান নাবি) নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং ফেরেশতারা নবীর উপর দরুদ প্রেরণ করেন। তারপর বলেছেন হে ঈমানদারগন তোমরাও নবীর উপর দরুদ সালাম পেশ কর, কিন্তু আমরা দরুদ সালামে বলছি হে আল্লাহ আপনি নবীর উপর দরুদ সালাম প্রেরণ করুন।

এর রহস্য কি? ওলামায়ে কেরাম বলেন আল্লাহ একদিকে হকুম দিয়েছেন নবীর উপর দরুদ ও সালাম দেয়ার জন্য, অন্য দিকে নবীজি শিক্ষা দিয়েছেন- উম্মতের কাজ হল নবীর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করার জন্য আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করা যে হে আল্লাহ আপনিই নবীর উপর দরুদ ও সালাম পাঠান, এই যে আমরা আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করছি নবীর উপর দরুদ প্রেরণের জন্য এটাই আমাদের আমলনামায় দরুদ হিসেবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে,

অতএব দেখা যায় আমরা ডাইরেক্ট নবীর উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করছিনা বরং আল্লাহ নিজেই নবীর উপর অহরহ দরুদ প্রেরণ করেন, আবার আমরাও আল্লাহকে দরখাস্ত করছি (আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়ালা আলি মুহাম্মদ) অর্থ্যাৎ হে আল্লাহ আপনিই নবীর উপর দরুদ ও নবীর আহলের উপর দরুদ প্রেরণ করুন,

এভাবে দরুদ পাঠ শিক্ষা দেয়ার অথ হল- ওলামায়ে কেরাম বলেন যেহেতু আমরা নবীর শান মোতাবেক নবীর প্রসংশা, নবীর দরুদ পাঠ করার যোগ্য নই তাই আমাদের কাজ হল যিনি মহান আল্লাহ, যে মহান আল্লাহ স্বয়ং দরুদ পাঠান সে মহান আল্লাহকে দরখাস্ত করা ওহে আল্লাহ আপনিই নবীর উপর দরুদ পাঠান। আমরা আমাদের জবানে যদি নবীর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করি তা অপূর্ণাঙ্গ হবে তাই আমাদের কাজ হল আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করা, আর নবীর উপর নবীর শান মোতাবেক দরুদ প্রেরণ করবেন মহান আল্লাহ। সুবহানাল্লাহ।

তাছাড়া এই দরুদ এমন এক এবাদত যা কবুল হওয়ার ব্যপারে কোন সন্দেহ নাই, নেককার করলেও কবুল, গুনাহগার করলেও কবুল, অন্য কোন এবাদত কবুল হওয়ার ব্যপারে কোন গ্যারান্টি নাই। দরুদ কবুল হওয়ার কারন হল এই কাজটি স্বয়ং আল্লাহ পাকই করেন, আমরা শুধু বলছি হে আল্লাহ আপনি নবীর উপর দরুদ প্রেরণ করুন। আর আল্লাহ যা করেন তা কিভাবে কবুল না হয়ে থাকতে পারে?

জিকির করলে যেমন আল্লাহর উপকার করিনা বরং আমরা উপকৃত হই তেমনি দরুদ পাঠ করেও আমরা নবীর উপকার করিনা বরং নিজেরাই উপকৃত হই যেমন

মুজামুল আওসাত, এর নং ২৭৩৫ নং হাদীস

রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন “যে (ব্যক্তি) আঁমার উপর এক বার দরূদ শরীফ পাঠ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন, আর যে আঁমার উপর দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহ্তা আলা তার প্রতি একশত রহমত নাযিল করেন। যে আঁমার উপর একশবার দরূদে পাক প্রেরণ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার উভয় চোখের মধ্যখানে লিপিবদ্ধ করে দেন, এ বান্দা নিফাক ও দোযখের আগুণ থেকে মুক্ত। আর কিয়ামতের দিন তাকে শহীদদের সাথে রাখবেন।”

তাছাড়া যারা বেশী বেশী দরুদ পাঠ করেন তাদের ব্যপারে হাদীস শরীফে যে সব বরকতের কথা আছে তার কয়েকটি হল

তারা দুনিয়াতে জান্নাতের ঠিকানা দেখে মৃত্যু বরণ করবেন

হাশরের মাঠে নবীর পাশে পাশে থাকবেন

নবীর শাফায়াতের হকদার হবেন

তাদের জন্য সদা ফেরেশতারা রহমত কামনা করেন

আল্লাহ স্বয়ং দরুদ পাঠ কারীকে নিরাপত্তা দানকরেন

যে জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে তার ১০০টি প্রয়োজন পুরণ করা হয়

যারা নবীর উপর দরুদ শরীফ লিখেন সে লেখা যতদিন থাকবে ততদিন ফেরেশতারা সে লেখকের জন্য গুনাহ মাফ চাইতে থাকবে

এভাবে অফুরন্ত বরকত রয়েছে দরুদ শরীফ পাঠের মধ্যে- আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিজেদের দুনিয়াবী ও আখেরাতের কল্যাণের স্বার্থে বেশী বেশী দরুদ ও সালাম পাঠ করা তৌফিক দান করুন আমিন



একক সাহাবী যার সাথে ফেরেশতা মুসাফাহা করত, তিনি কি আমল করতেন?

 


সকল সাহাবীদের মধ্যে এমন একজন সাহাবী ছিলেন যখন তিনি তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন অজু করতেন তখন ফেরেশতা এসে তাঁর সাথে মোসাফাহা করতেন

সে সাহাবীর সাথে ফেরেশতারা মুসাফাহা করার কারন কি? কারন হল তিনি সে সাহাবী ছিলেন (লা বাকা, ওয়ালা শাকা ওয়ালা তাদাম্মার) তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কঠিন রোগাক্রান্ত হওয়া সত্বেও কারো সামনে কান্না করেননি কখনো কারো কাছে অভিযোগ করেননি, রোগের কারনে কখনো মন খারাপ করেননি, সে সাহাবী হলেন হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রা)

আল্লাহর রাসুল (দ) বলেন যখন আল্লাহ তায়ালা কোন বান্দাকে কোন মর্যাদায় পৌঁছাতে চান বা বান্দার গুনাহ মাফ করাতে চান তখন তাকে এমন মামুলি মামুলি রোগ শোক দেন যাতে সে ধৈর্য্য ধারন করে (হাত্তা ইউবাল্লিগাহু ইয়্যাহা) এমনকি সে উক্ত মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে যায় অথচ তার আমল তাকে সে জায়গায় পৌঁছাতে পারতনা। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের রোগে শোকে ধৈর্য্য ধারণ করার তৌপিক দান করুন। আমিন



 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.