ফজরের পর সুরাটি শুধু একবার পড়ুন। সুখ শান্তি বরকত লাভের আমল
ফজরের পর সুরাটি শুধু একবার পড়ুন। সুখ শান্তি বরকত লাভের আমল
হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন আমি রাসুলুল্লাহ
(দ) কে কোন সুন্নত নফল আদায়ের ব্যপারে এত তাড়াহুড়া করতে দেখিনাই, যত তাড়াহুড়া তিনি
ফজরের নামাজের আগের ২ রাকাতের জন্য করতেন, তাড়াহুড়া মানে হল তা পড়ার জন্য বেশী আগ্রহী
ছিলেন, বেশী গুরুত্বারোপ করতেন।
আয়শা (রা) আরো বলেন নবী করিম (দ)
ফজরের ২ রাকাত সুন্নত নামাজের মর্যাদার ব্যপারে বলেন ফজরের এই দুই রাকাত পড়া আমার কাছে
সারা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়।
হুজুর (দ) আরো এরশাদ করেন
যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজে আসতে পারে, তার জন্য আবশ্যক যে সে যেন আসে, যদি হামাগুড়ি
দিয়েও আসতে হয় তবুও যেন আসে।
কারন যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ মসজিদে গিয়ে জামায়াতে পড়ে সে আল্লাহর হেফাজতে
চলে আসে।
সুতরাং কেহ যদি আল্লাহর জিম্মায় থাকে তার উপর
যেন কেহ জুলুম না করে, যদি ফজরের নামাজ
পড়ুয়ার উপর জুলুম করেন তাহলে তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে। আর আল্লাহ যার
কাছে জবাব দিহি চাইবেন নিশ্চিত তাকে আল্লাহ গ্রেফতার করে উপুড় করে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করবেন।
সে জন্য ফজরের নামাজ যারা জামায়াতে পড়েন তাদেরকে
ইজ্জত সম্মান করা প্রত্যেকের উচিত, কারন একজন মুমিন বান্দাই ফজরের নামাজের হেফাজত
করতে পারে,
অনেক লোক আছেন যাদের কাছে ফজরের নামাজ খুব ভারী হয়, তারা
সুর্য উঠার অনেক পরে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়। বেশীরভাগ লোকই ফজরের নামাজ কাজা করে
ফেলেন। তারা দেরি করে ঘুমায় তাই সকালে জাগ্রত হতে পারেনা। এসব
লোকের হেফাজত আল্লাহর জিম্মায় নাই। সেজন্য ফজরের নামাজের ব্যপারে খুব বেশী যত্নবান
হওয়া দরকার যাতে ফজরের নামাজ কাজা না হয়।
এ ব্যপারে হাদীসে একটি ঘটনা আছে- আমেশ
বলেন সালেম বিন আবদুল্লাহ বিন ওমর তিনি হলে হযরত ওমরের নাতি, তিনি হাজ্জাজ এর পাশে
বসা ছিলেন, আপনারা হাজ্জাজের ব্যপারে জানেন সে ছিল একজন জালেম বাদশাহ। হাজ্জাজ
সালেম কে বলল উঠ আর অমুককে হত্যা কর।
সালেম-
বাদশা হাজ্জাজের হকুম পালনে তলোয়ার তুলে নিলেন; সে লোকটিকে ধরে মহলের দরজার
দিকে রওয়ানা হলেন। সালেম সে লোকটিকে
বাহিরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল তুমিকি ফজরের নামাজ পড়েছ? সে লোকিট জবাব দিল হ্যাঁ। তখন
সালেম তাকে বললেন তুমি যে রাস্তা দিয়ে যেতে চাও চলে যাও। সে চলে গেল; আর সালেম
হাজ্জাজের কাছে ফিরে আসল।
হাজ্জাজ প্রশ্ন করল তুমিকি সে লোকটিকে হত্যা করেছ? সালেম বলল না,
কারন আমি আমার পিতা ইবনে ওমরকে বলতে শুনেছি রাসুলুল্লাহ (দ) এরশাদ করেছেন
" مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ
‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে। (মুসলিম,
হাদিস : ৬৫৭)
সে দরবারে ইবনে ওমরও উপস্থিত ছিল - সালেম
যখন হাজ্জাজ কে এই কথা বলল তখন ইবনে উমর তাকে বাহবা দিয়ে বললেন আমি তোমার নাম এই
জন্যই সালেম রেখেছি যাতে তুমি সালামতিতে থাকতে পার। এবং আল্লাহর জিম্মার ভিতর কোন
ধরনের খেয়ানত না কর।
সুতরাং এই থেকে এটাও প্রমাণিত হয় মানুষ থেকে বড়
বড় বিপদ বড় বড় দুর্ঘটনা দুর হয়ে যায় যদি সে ফজরের নামাজের হেফাজত করে।
এক ইহুদী একজন মুসলমানকে প্রশ্ন করছে আপনাদের জুমার ও ফজরের
জামাতে মুসল্লী কেমন হয়? মুসলমান জবাব দিল জুমাতে অনেক বেশী হয় তবে ফজরের জামায়াতে
খুব কম হয়, তখন ইহুদী বলল তাহলে আমরা এখনও নিরাপদ, মুসলিম এর কারন জিজ্ঞেস করলে ইহুদী
জবাব দিল আমাদের কিতাবে লিখা আছে যেদিন দেখবে মুসলমানদের ফজরের নামাজে জুমার মত বেশী
মুসল্লী হচ্ছে সেদিন থেকে ইহুদীদের পতন শুরু আর মুসলমানদের উত্থান শুরু।
নবীজি বলেন- ‘যে ব্যক্তি জামাতের
সাথে এশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের
নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। ’ (মুসলিম শরিফ)
এ যুগে ফজরে উঠতে না পারার ওজর গ্রহণ যোগ্য নয়, কারন
প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল আর প্রত্যেক মোবাইলেই এলার্ম থাকে। প্রয়োজনে ৫ মিনিট অন্তর
অন্তর ৩ বার এলাম লাগিয়ে নিন। কেননা যে লোক এই দুই নামাজ পড়বে বুখারীর হাদিস সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে।
অপর রেওয়ায়েতে আছে সে লোক কখনো দোযখে যাবেনা যে সুর্য
উদিত হওয়ার আগে এবং সুর্য অস্ত যাওয়ার আগের নামাজের হেফাজত করে, অর্থ্যাৎ ফজর ও আসরের
নামাজ।
এরপর বলেন তোমরা যদি চাও আল্লাহর দিদার করতে তাহলে
নামাজে অলসতা করবেনা। যেভাবে ১৪ তারিখের চাঁদ দেখা যায় সেভাবে আল্লাহর দিদার নসিব হবে।
অনেক সময় মানুষ রাতে জাগ্রত থেকে নফল পড়ে, তাহাজ্জুদ
পড়ে, আর শেষ মুহুর্তে ঘুমিয়ে যায় আর ফজর কাজা করে ফেলে। এটাও মারাত্মক ভুল।
ওমর (রা) বলেন সারা রাতের নফল থেকে ফজরের নামাজ জামায়াতের
সাথে পড়া আমার কাছে বেশী পছন্দনীয়।
তবে মুনাফিকের জন্য ফজরের নামাজ কষ্টদায়ক হয়। তাই মুনাফিকি থেকে
মুক্তির জন্য এই নামাজের পাবন্দী করা জরুরী।
উবাই ইবনে কাব বলেন একদিন রাসুলুল্লাহ (দ) আমাদেরকে
ফজরের নামাজ পড়ালেন, এরপর ফরমালেন অমুককি উপস্থিত আছে? লোকেরা বলল না, তিনি জিজ্ঞেস
করলেন অমুক কি এসেছে? লোকেরা বলল না, তখন হুজুর (দ) ফরমালেন এই দুই নামাজ অর্থ্যাৎ
ফজর
ও এশা মুনাফিকদের জন্য খুবই ভারী খুবই কষ্টকর।সব নামাজ থেকে বেশী ভারী।
রাসুলুল্লাহ (দ) বলেন- ‘তোমাদের কাছে পালাক্রমে
দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা
ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফিরিশতাদেরকে প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদেরকে
কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদেরকে নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম, তখনো
তারা নামাজরত ছিল। ’ (বুখারি)
সুতরাং ফজরের সময় মসজিদে থাকলে আপনার ব্যপারে ফেরেশতারা
আল্লাহর সামনে সাক্ষি দিবে।
ফজরের নামাজের পর বসে বসে দোয়া জিকির ও তেলাওয়াত করবেন
আর নামাজের পর বসে বসে দোয়া জিকির ও তেলাওয়াত করাকে কাফফারাত বলা হয়, কাফফারাত
হল ফেরেশতারা যে বান্দা ফরয নামাজের পর মসজিদে বসে থাকে তাদের ব্যপারে একে অপরের সাথে
আলোচনা করে,সে জন্য প্রত্যেক নামাজের পর মাসনুন দোয়া সমুহ পড়বেন
আর বিশেষ করে ফজরের নামাজের পর মাসনুন দোয়ার পাশাপাশি
১টি সুরা পড়বেন সে সুরাটি পড়লে অভাব অনটন দুর হবে, সংসারে শান্তি আসবে, সকল আশা পুরণ
হবে, সকালে পড়লে সন্ধা পর্যন্ত সুখে স্বস্তিতে থাকে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
যদি কোনো ব্যক্তি অভাব-অনটনের সময় সুরা ইয়াসিন পাঠ করে তাহলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে
শান্তি আসে এবং রিজিকে বরকত হয় ‘ (মাজহারি)
হজরত আতা বিন আবি রাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন আমি শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায়
সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত (প্রয়োজন) পূর্ণ করা হবে।’ (দারেমি)
-হজরত ইয়াহইয়া ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে
থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে।’ (মাজহারি)
আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও আপনাকে ফজরের নামাজ জামায়াতের
সাথে মসজিদে গিয়ে পড়ার তৌফিক দান করুন, আর ফজরের নামাজের পর প্রতিদিন মাসনুন দোয়া ও
জিকির সমুহের পাশা পাশি সুরা এয়াসিন তেলাওয়াত
করার তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই