আয়াতুল কুরসি পড়ার ৩টি গোপন নিয়ম । আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত ও আমল।

 

আয়াতুল কুরসি পড়ার ৩টি গোপন নিয়ম

জ্বিন শয়তান হাত জোড় করে আপনার খেদমত করবে

১বার, ৩ বার বা ২৫ বার পড়লে কি হয়?



আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত এটি এমন এক আয়াত যে আয়াতটি পড়ার অসংখ্য ফজিলত রয়েছে, তবে এ আয়াতটি কিভাবে পড়তে হবে তা অনেকে জানেন না, আজ  আমি এই আয়াতের ফজিলতের পাশাপাশি এটি পড়ার সবচেয়ে সুন্দর ও অজানা গোপন নিয়ম আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আশা করি আজকের আলোচনাটি আপনার জন্য একদম নতুন কিছু শিক্ষনীয় হবে। প্রথমে নগদ জেনে নিন মাত্র ১টি আয়াতে ১৫ জায়গায় আল্লাহর নাম প্রকাশ্যে ও সর্বমানের সাথে উচ্চারিত হয়েছে, যা পবিত্র কোরআনের আর কোন আয়াতে আসেনি। এক আয়াতেই ১৫ বার এসেছে।১৫টি আল্লাহর নাম লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করেছি। 

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

(১) আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, (২) তিনি জীবিত, (৩) সবকিছুর ধারক। (৪) তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই (৫) তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে (৬)তাঁর কাছে (৭)তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই (৮)তিনি জানেন। (৯) তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু (১০)তিনি ইচ্ছা করেন। (১১)তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা (১২)তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। (১৩) তিনিই (১৪)সর্বোচ্চ এবং (১৫)সর্বাপেক্ষা মহান। [সুরা বাকারা - ২:২৫৫]

 

পবিত্র কুরআনে সুরা ফাতেহা ছাড়া আরো ৩টি সুরা ও আয়াত প্রত্যেক মুসলমানের হিফজ থাকা জরুরী। তাহল আয়াতুল কুরসি, সুরা এখলাস এবং সুরা এয়াসিন।

হজরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসুল (সা.) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসি।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়েন, তাঁর জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না।

তবে আয়াতুল কুরসি এমন একটি আয়াত যে আয়াত নিয়মিত পাঠ করলে মানুষ এবং জ্বিনকে কন্ট্রোল করা আপনার জন্য সহজ হবে।

সে জন্য আকাবির আউলিয়া ও ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন নিয়মে এটিকে পড়েছেন, আমাদের প্রিয় নবী (দ) ও ৫ওয়াক্ত নামাজের পর এই আয়াতটি পড়ার জন্য হকুম দিয়েছেন। এতে দুনিয়ার জীবন ইজ্জতের সাথে কাটবে, আর মৃত্যুর হবে আরামের সাথে কোন ধরনের কষ্ট ছাড়া মৃত্যু হবে, কবরের আযাব থেকে এ আয়াতের আমল রক্ষাকবচ। তবে শত হল প্রত্যেক নামাজের পর ১ বার পড়তে হবে। আবু বকর মাসউদ ইবনে আহমাদ আল কাসানী তার আল বাদাঈ ওয়াস সানাঈ নামক কিতাবে লিখেন এবং ইবনে নুজাইম (রহ) তার বাহরুর রাইক এ লিখেন- যে সব ফরয নামাজের পর সুন্নত নামাজ আছে যেমন জোহর, মাগরিব ও এশা সে সব জায়গায় ফরয নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে না বরং ফরযের পর সুন্নতের জন্য জায়গা বদলাতে বদলাতে পড়বেন নতুবা সুন্নত পড়ার পর পড়বেন। আর যে ফরয নামাজের পর সুন্নত নাই যেমন ফজর ও আসর, সে সব নামাজের পর আপনি ফরজের পর ১বার  পড়বেন। জুহর মাগরিব এশার ফরয নামাজের সালাম ফিরিয়ে ৩ বার এসতেগফার পড়ে দোয়া করবেন (আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা এয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম) পড়ে সুন্নত পড়বেন তারপর আয়াতুল কুরসি পড়বেন।    

তবে যদি অতিরিক্ত উপকারিত লাভের নিয়ত থাকে তাহলে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর ৩ বার আয়াতুল কুরসি পড়বেন। আর সকালে ও সন্ধ্যায় ২৫ বার করে পড়তে হবে। তাহলে সারা জীবন জিন ও শয়তান আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।বরং হাত জোড় করে আপনার সামনে আপনার খেদমতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একদিন দেখতে পেলেন, এক ব্যক্তি সদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)এর কাছে নিয়ে যাব। তখন আগন্তুক বলে যে সে খুব অভাবী। আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে রাসুল (সা.)এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, গতকাল তোমার অপরাধীকে কী করেছ?’ আবু হুরায়রা তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসুল (সা.) বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে। পরদিন আবু হুরায়রা চোরকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)এর কাছে নিয়ে যাব।

এবারও সেই চোর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর শপথ করে যে আর আসবে না। পরদিন আবারও রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি বলেন, আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে। পরদিন আবারও আবু হুরায়রা (রা.) চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে এল, তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন, এবার অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)এর কাছে নিয়ে যাব। চোর যখন দেখল এবার তাকে সত্যিই রাসুল (সা.)এর কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে, আমাকে মাফ করো। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন।আবু হুরায়রা (রা.) সেটা জানতে চাইলে চোর বলে,যখন ঘুমাতে যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসুল (সা.) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)কে বললেন, তুমি কি জানো সে কে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)কে বললেন, সে হচ্ছে শয়তান। [সহিহ বুখারি নম্বর ২৩১১]

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিয়মিত আয়াতুল কুরসির আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.