সুরা এখলাস এর ফজিলত আমল ও ওজিফার কারিশমা

 

সুরা এখলাস এর ওজিফার কারিশমা



জান্নাতে যাওয়ার আমল হল সুরা এখলাস পাঠ করা, এর মধ্যে ৪টি আয়াত ১টি রুকু আছে। এই ছোট্ট সুরাটির মধ্যে আল্লাহ তায়ালা নিজের পরিচয় দিয়েছেন।

এই সুরার মধ্যে শব্দসমুহের মধ্যেও আজব কারিশমা আছে যেমন

 قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

اللَّهُ الصَّمَدُ

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

এই সুরাতে ৩য় আয়াতে লাম এয়ালিদ এর অথ হল জন্ম নেন না। আর এই জন্ম শব্দের আগে ৭টি শব্দ আছে তা হল (১) কুল, (২) হুয়া, (৩) আল্লাহ, (৪) আহাদ, (৫) আল্লাহ, (৬)সামাদ, (৭) লাম

এখন এয়ালিদ অথ হল জন্ম নেয়া এই জন্ম নেয়ার শব্দটির আগে ৭টি শব্দ আসার আজব রহস্য আছে - যেমন আল্লাহ তায়ালা অপর আয়াতে মাতৃ গর্ভে মানব সৃস্টির যে বননা দিয়েছেন তাতে ৭টি স্তরের কথা বলেছেন যেমন (১) ত্বীন মাটির অংশ (২) নুত্বফা বীয/মনি (৩) আলাকা- জমাট রক্ত (৪) মুদগা - মাংশ পিন্ড (৫) ইজামা অস্থি/ হাড্ডি (৬) ফা কাসাওনাল ইজামা লাহমা - হাড্ডির উপর গোস্ত দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় (৭) ছুম্মা আনশানাহু খালকান আখার- পুর্নাঙ্গ মানবাকৃতি

তাহলে বুঝা গেল মানুষ বানানোর ৭টি ধাপ আর সুরা এখলাসে এয়ালিদ বা জন্ম শব্দিটির আগে আল্লাহ তায়ালা ৭টি শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা আল্লাহ বুঝাতে চান মানুষ এই ৭টি স্তরের মুখাপেক্ষি আল্লাহ এই ৭ ধাপের মুখাপেক্ষি না।

আল্লাহ কারো থেকে জন্ম নেন না আল্লাহ কাউকে জন্ম দেননা।

উবাই বিন কাব একদিন নবী করিম (দ) এর কাছে এসে বলেন হে মুহাম্মদ তুমি তোমার রবের বংশ পরিচয় দাও। তখন আল্লাহ তায়ালা এই সুরা নাজিল করে বলেন

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,

اللَّهُ الصَّمَدُ

আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

আরেক বননায় আছে- এক গাম্য ব্যক্তি নবী (দ) কে এসে বলেন- উনসুব লানা রাব্বাক- আপনার রবের বংশ পরিচয় আমাদেরকে বলুন। তখন আল্লাহ এই সুরাটি নাজিল করলেন

হজরত আনাস রাদিয়ল্লাহু আনহু বলেন, খায়বারের কয়েকজন ইয়াহুদি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বলল- হে আবুল কাসেম! আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নূর থেকে, আদমকে মাটি থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন আপনার রব সম্পর্কে আমাদের জানান, তিনি কোন বস্তু থেকে সৃষ্ট?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন কোনো জবাব দেননি। অতপর (তাদের উত্তরে) হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম সুরা ইখলাস নিয়ে হাজির হন।

হযরত আয়শা (রা) বলেন- এক ব্যক্তিকে আমির বানিয়ে এক যুদ্ধের ময়দানে পাঠালেন, তিনি সে সফরে যখন নামাজ পড়াতেন প্রত্যেক নামাজেই তিনি শুধু কুল হুয়াল্লাহু পড়েন। ফিরে আসার পর সাহাবাগণ রাসুলে করিম (দ) কি বিষয়টি জানালেন, তখন নবী করিম (দ) বললেন তাঁকে জিজ্ঞেস কর সে কেন এ কাজ করেছে? সে জবাব দিল (লি আন্নাহা ছিফাতুর রাহমান) এই সুরাতে আমার আল্লাহর গুনাবলি আলোচনা করা হযেছে (উহিব্বু আন আকরাআ বিহা) আমি এ সুরাকে ভালোবাসি তাই এই সুরাটির মাধ্যমে সালাত আদায় করি। সাহাবারা গিয়ে বলেন এয়া রাসুলাল্লাহ এই লোকটি সুরা এখলাসকে বেশী মহব্বত করে তাই সে বেশী বেশী এই সুরাটি তেলাওয়াত করে। আল্লাহর নবি বলেন (আখবিরুহু আন্নালাল্লাহ ইউহিব্বুহু ) তোমরা তাকে জানিয়ে দাও যেমনি ভাবে সে লোকটি সুরা এখলাসকে ভালোবাসে আল্লাহও তাকে সেভাবে ভালোবাসে।

অপর বননায় আছে এক সাহাবী বলল এই সুরাকে আমি ভালবাসি তখন নবী করিম (দ) ফরমালেন এই সুরা এখলাসের ভালাবাসা তোমাকে আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবে।

হযরত আবু সাঈদ (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি এক সাহাবীকে সারা রাত কুলহুয়াল্লাহ পড়তে শুনলাম, আমি পরের দিন নবী করিম (দ) কে বললাম এয়া রাসুলাল্লাহ আমি একে সারা রাত সুরা এখলাস পড়তে শুনলাম,  তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ওই সত্তার শপথ! যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ। অবশ্যই এ সুরা কুরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুয়াত্তা মালেক)

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সাহাবিদের বললেন, তোমারা কি এক রাতে কুরআন মাজিদের ৩ ভাগের একভাগ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, সুরা ইখলাস কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি, নাসাঈ)

- হজরত ওকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তোমাদেরকে এমন তিনটি সুরার কথা বলছি, যা তাওরাত, ইঞ্জিল, জবুর এবং কুরআনে অবতীর্ণ হযেছে। রাতে তোমরা ততক্ষণ ঘুমাতে যেয়ো না, যতক্ষণ সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। ওকবা বলেন, সেদিন থেকে আমি কখনও এ আমল পরিত্যাগ করিনি। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে ঋণগ্রস্ত হলে তা ক্ষমা হবে না। (তিরমিজি)

হজরত সাহল ইবন সাদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দারিদ্র্যতার অভিযোগ করল তিনি বললেন, যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্যতা দূর হয়ে যায়। (তাফসিরে কুরতুবি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয়। (ইবনে কাসির)

অতএব সুরা এখলাসকে ভালবাসতে হবে, বেশী বেশী এটি অর্থের দিকে খেয়াল করে তেলাওয়াত করতে হবে, নামাজেও বেশী বেশী পড়া চাই, নামাজ ছাড়াও সকাল সন্ধ্যায় এবং রাতে শোবার সময় সুরা এখলাস সুরা ফালাক ও সুরা নাস ৩ বার করে পড়ে হাতে ফুক দিয়ে সারা শরীরে মাসেহ করতে হবে, ঘরে প্রবেশের সাথে সাথে ১ বার সুরা এখলাস তেলাওয়াত করতে হবে। তাহলে সব বালা মসিবত দুর হবে, দারিদ্রতা দুর হবে, গুনাহ মাফ হবে, জান্নাতে ঠিকানা হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ইখলাসের ভাব ও মর্মার্থ নিজেদের মধ্যে ধীর বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর একত্ত্ববাদ ও ক্ষমতায় পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত মর্যাদা ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.