কোরআন থেকে ধনী হওয়ার আমল ও গোপন ওজিফা

 

কোরআন থেকে ধনী হওয়ার

আমল ও গোপন ওজিফা



যারা দারিদ্রতা দুর করার জন্য, অভাব অনটন দুর করার জন্য, টাকা পয়সার সমস্যা দুর করার জন্য, অনেক আমল ওজিফা করেছেন তাদের জন্য আজকে পবিত্র কুরআন থেকে কিছু আমল ও ওজিফা দিব, যে সব আমল স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন, এই আমলগুলি আপনার অভাব দুর করার জন্য শেষ চিকিৎসা মনে করতে পারেন।

তাই অত্যন্ত মনযোগ সহকারে আজকের আলোচনাটি শুনবেন। প্রতিটি কথা খুবই মূল্যবান হবে। তাই কোন অংশ বাদ দেয়া যাবেনা।

যে সব ওজিফা ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি, অনেকে কমেন্ট করে অনেক ওজিফা করেছি কিন্তু অভাব দুর হয়না, তারাও এই আমল ও ওজিফাগুলি করতে পারেন, আর যারা নতুন তারাও কোরআনের এই আমল ও ওজিফাগুলি করতে পারবেন।

তাই কয়েক লাইন শুনে স্কিপ করা যাবেনা, আজ কের ওজিফা ও দোয়াগুলি খুবই দামী হবে।

ওজিফাগুলি জানার আগে অভাবের কারনে মনের যে অশান্তি তা দুর করার জন্য আল্লাহকে ৮টি প্রশ্ন করুন তার জবাব আল্লাহ কুরআনে দিয়েছেন

১) আমরা যদি আল্লাহকে প্রশ্ন করি হে আল্লাহ আমাদেরকে কেন বানাইলেন? সুরা জারিয়াতে আল্লাহ জবাব দিলেন

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। [সুরা যারিয়াত - ৫১:৫৬]

২) যদি প্রশ্ন করি  হে আল্লাহ আমারা কতদিন এবাদত করব? সুরা হিজর এর ৯৯ নং আয়াতের দ্বারা আল্লাহ জবাব দিলেন

وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ

এবং পালনকর্তার এবাদত করুন, যে পর্যন্ত আপনার কাছে নিশ্চিত কথা না আসে। অর্থ্যাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত [সুরা হিজর - ১৫:৯৯]

৩) এরপর যদি প্রশ্ন করি হে আল্লাহ আমাদের কি মৃত্যু হবে? এর জবাবে সুরা আনকাবুতের ৭৭ নং আয়াতে বলেন

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ثُمَّ إِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। [সুরা আনকাবুত - ২৯:৫৭]

৪) এরপর যদি প্রশ্ন করি হে আল্লাহ আমরা যদি পালিয়ে যাই তাহলে কি মরন থেকে বাঁচতে পারব? সুরা আহযাবের ১৬ নয় আয়াতে আল্লাহ জবাব দেন

قُل لَّن يَنفَعَكُمُ الْفِرَارُ إِن فَرَرْتُم مِّنَ الْمَوْتِ

বলুন! তোমরা যদি মৃত্যু থেকে পলায়ন কর, তবে এ পলায়ন তোমাদের কাজে আসবে না। [সুরা আহযাব - ৩৩:১৬]

৫) এরপর যদি প্রশ্ন করি হে মাবুদ আমি যদি এমন কোন ঘর বানাই যে ঘরে কোন পিপড়া ঢুকার রাস্তা নাই মালাকুল মওত সে ঘরে ঢুকতে পারবে কিনা? সুরা নিসার ৭৮ নং আয়াতে আল্লাহ জবাব দেন

أَيْنَمَا تَكُونُواْ يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ

তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। [সুরা নিসা - ৪:৭৮]

৬) এরপর যদি প্রশ্ন করি হে আল্লাহ আমাদের মৃত্যুর সময় কি পিছানোর সুযোগ আছে? কিংবা কিছু সময় আগে কি মৃত্যু বরণ করার সুযোগ আছে? আল্লাহ সুরা আরাফের ৩৪ নং আয়াতে জবাব দিয়ে বলেন

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ فَإِذَا جَاء أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ

প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে। [সুরা আরাফ - ৭:৩৪]

৭) এরপর যদি প্রশ্ন করি হে আল্লাহ মৃত্যুর পর কি দুনিয়ায় পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ আছে? আল্লাহ সুরা মুনাফিকুনের ১১ নং আয়াতে জবাব দেন

وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاء أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন। [সুরা মুনাফিক্বুন - ৬৩:১১]

৮) এরপর চুড়ান্ত কথা আল্লাহ সুরা জুমার ৮ নং আয়াতে বলেন

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। [সুরা জুময়া - ৬২:৮]

এই হল আমাদের জীবনের দৌড়, তবুও দুনিয়াতে আমরা ধন সম্পদের জন্য পেরেশান হয়ে যাই, অভাব অনটন থেকে মুক্তি চাই, তা থেকে মুক্তি সম্ভব কিনা? আল্লাহ তায়ালা জবাব দিয়েছেন সম্ভব।

আমাদের দিনে রাতে গুনাহ হয় তবে সে গুনাহ যেন শিরিকের গুনাহ না হয়। যদি শিরিক না হয় অন্য কোন গুনাহ হয় তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন। শিরিক সবচেয়ে বড় অপরাধ, সবচেয়ে বড় জুলুম। সব অপরাধ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন কিন্তু শিরিকের অপরাধ আল্লাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করেন না।

আমাদের নবীর কোন গুনাহ ছিলনা তবুও তিনি দিনে ১০০ বার গুনাহ মাফ চাইতেন।আর আবু হুরায়রা (রা) বলেন আমি প্রতিদিন হাজার হাজার হাদিস মুখস্থ করার পরও প্রতিদিন ১২ হাজার বার এসতেগফার পাঠ করি। এই সাহাবী থেকে ৫ হাজারের উপর হাদিস বর্ণিত আছে। নবী ১০০ বার আর সাহাবী ১২ হাজার বার দৈনিক ক্ষমা চাইতেন, আমাদের কি পরিমান ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন একবার চিন্তা করুন। গুনাহ হওয়া স্বাভাবিক, তবে গুনাহ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে, যদি আমরা গুনাহ ক্ষমা চাই আল্লাহ তায়ালা সুরা নুহে এরশাদ করেন

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا

অতঃপর বলেছিঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।

গুনাহ ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করেন পাশা পাশি আসমান থেকে রহমতের বৃষ্টিও নাজিল করেন যেমন সুরা নুহের ১১ নং আয়াতে বলেন

يُرْسِلِ السَّمَاء عَلَيْكُم مِّدْرَارًا

তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন,

এরপর আল্লাহ বলেন যাদের পরিবারে টাকার অভাব, সম্পদের অভাব,তারা পড়বেন এসতেগফার,

আপনি নিজেও পড়বেন, আপনার পুত্র,  পুত্রবধু, আপনার কন্যা, আপনার স্ত্রী, আপনার মা বাবা কেও বলবেন এসতেগফার পড়ার জন্য। যদি সকলেই বেশী বেশী এসতেগফার পড়েন তাহলে আল্লাহ ওয়াদা করছেন যে হালাল সম্পদ দিয়ে আপনার অভাব দুর করে দিবেন।

 যে সব দম্পতির সন্তান হয়না তারা স্বামী স্ত্রী উভয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার এসতেগফার পড়বেন, আল্লাহ বলছেন এসতেগফার পড় আমি সন্তান সন্তুতি বাড়িয়ে দিব। তেমনিভাবে যারা জান্নাত কামনা করেন তারাও এসতেগফার পড়বেন। যেমন সুরা নুহের ১২ নং আয়াতে বলেন

وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَارًا

তোমাদের ধন-সম্পদ (বাড়িয়ে দিবেন) ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।

সুতরাং দারিদ্রতা দুর করার জন্য সব সময় পড়বেন আসতাগফিরুল্লাহ

সন্তান লাভের আশা সব সময় পড়বেন আসতাগফিরুল্লাহ

গুনাহ হলেও পড়বেন গুনাহ না হলেও পড়বেন। এসতেগফার পড়ার কয়েকটি হাদীসের দোয়া নিন্মরুপ

১)  আস্তগফিরুল্লাহা ওয়াআতুবু ইলাইহি। -নাসায়ি: ১০২১৫

২) সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি, আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি। সহিহ মুসলিম: ৪৮৪

৩)আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আঊজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। সহিহ বোখারি: ৬৩০৬

৪) রাব্বিগফিরলি ওয়া আতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়্যাবুর রাহিম  সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৬

৫) আস্তাগফিরুল্লাহিল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা  হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৭

৬) আস্তাগফিরুল্লাহ- মুসনাদে আহমদ: ২২৪০৮

এইস্তিগফারের ১৭টি সংক্ষিপ্ত উপকারিতা হল

১. অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফারের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়। বাগান ও শস্যে ভালো ফসল হয়, নদী-নালা থাকে জীবন্ত।
২. ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহতায়ালা উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকা দ্বারা সম্মানিত করেন।
৩. দ্বীন পালন সহজ হয় এবং কর্মজীবন হয় সুখের।
৪. আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা কমে যায়।
৫. ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনিয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেওয়া হয়।


৬. মানব ও জীন শয়তানের কুপ্রভাব থেকে তাকে হেফাজত করা হয়।
৭. দ্বীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
৮. আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা অর্জিত হয়।
৯. বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
১০. দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হয়।


১১. বেকারত্ব দূর হয়।
১২. আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জিত হয়। তওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।
১৩. মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।
১৪. হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচণ্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।
১৫. কিয়ামাতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে।
১৬. মন্দ কাজসমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
১৭. আরশ বহনকারী ফেরেশতারাও তার জন্য দোয়া করেন। -নাজরাতুন নাঈম ফি মাকারিমি আখলাকির রাসূল: ২/৩০২

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.