কুরবানির মাসে জিলহজ্জ মাসে প্রতি রাতে জায়নামাজে বসে ১টি কাজ অবশ্যই করুন সকল প্রয়োজণ পুরণ হবে, সব অভাব দুর হবে

 

কুরবানির মাসে জিলহজ্জ মাসে প্রতি রাতে জায়নামাজে বসে ১টি কাজ অবশ্যই করুন

সকল প্রয়োজণ পুরণ হবে, সব অভাব দুর হবে

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


 

এখন কুরবানির মাস তথা জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক চলছে, লক্ষ লক্ষ হাজিরা হজ্জ করছেন, এ বছর হজ্জে আকবর হবে, শুক্রবার হজ্জ হবে , এই দশকের দিনে রাতে যে সব আমল আছে আমরা ৯৯% লোক জানিনা, জানলেও করিনা, অথচ এই জিলহজ্জের ১০টি রাতের কসম খেয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা, এই ১০টি রাতে যদি আমরা দোয়া আমল ও ওজিফা গুলি ঠিকভাবে করি তাহলে আমাদের উপর আল্লাহর অফুরন্ত রহমত নাজিল হবে। কিভাবে জিলহজ্জের ১০ রাতে নিজের সকল হাজত পুরণের জন্য আমল করবেন, সকল অভাব দুর করার জন্য ওজিফা করবেন, কিভাবে নামাজ পড়বেন, কিভাবে রোজা রাখবেন, আজকে আমি  আপনাদের খেদমতে পেশ করব, আশা করি প্রত্যেকটি কথা আপনাদের কাজে আসবে। শেষ পযন্ত শুনার পর বুঝতে পারবেন আমরা কতবড় নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচিছ শুধু এই কুরবানির ১০টি রাতের ফজিলত না জানার কারনে, এমন সুন্দর এ বছরের জিলহজ্জের দশক যাতে সব ধরনের এবাদতের সমস্টি আছে,

 

হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন,যিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা  প্রতীয়মান হয়তা হলো, এতে সকল মৌলিক  ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত,  সিয়াম, সাদাকা, হজ ইত্যাদি। অন্যকোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না। [ফাতহুল বারী : ২/৪৬০]

 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ  করেছেনএই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য  দিনের আমল প্রিয় নয়।{বুখারী শরীফ,হাদীস নং-৯২৬}

 

 

এ দশকের মধ্যে কুরবানিও আছে যা সারা বছরেও পাওয়া যায় না

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ স. এর সাহাবীগন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কি? রাসুল সাঃ জওয়াবে বললেন, এটা তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. এর সুন্নাত (রীতিনীতি)। তাকে আবারও জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এতে আমাদের কি (পূণ্য রয়েছে)? রাসূল স. বললেন, (কুরবানীর জন্তুর) প্রতিটি লোমের পরিবর্তে নেকী রয়েছে। তারা আবারও বললেন, পশমওয়ালা পশুদের জন্য কি হবে? (এদের তো পশম অনেক বেশী)। রাসূল স. বলেছেন, পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেক পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকী রয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ) হজরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, আদম সন্তান (মানুষ) কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করা (কুরবানী করা) অপেক্ষা আল্লাহর নিকটে অধিক প্রিয় কাজ করে না। নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন (কুরবানী দাতার পাল্লায়) কুরবানীর পশু, এর শিং, এর লোম ও এর খুরসহ এসে হাজির হবে এবং কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালার নিকট সম্মানিত স্থানে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা কুরবানী করে সন্তুষ্ট চিত্তে থাকো। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

এতগুলি ফজিলত বর্ণনা করার পরও আমরা অনেকেই কুরবানীকে গুরুত্ব দিই না।

 

 

# ইন্নামাল আমালু বিননিয়্যাত- নিশ্চয়ই আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তায়ালা কুরবানীর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি চান নাকি অন্য কিছু যেমন যশ, খ্যাতি, সুনাম, বাহবা চান

لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ

এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:৩৭ ]

 

তাই কুরবানীর নিয়ত সহিহ করতে হবে তাই কুরবানী ব্যপারে এমন কথা বলা যাবেনা যা তাকওয়া ও এখলাছের খেলাফ যেমন

(ক) প্রতিবছর কুরবানি করে আসছি এ বছর না করলে কেমন দেখায়?

(খ) কুরবানী না করলে লোকে কি বলবে?

(গ)আমি কুরবানি না করলে সন্তানরা মন খারাপ করবে।

অনেকে কুরবানির পশু ছেলের শ্বশুড় বাড়ী থেকে নেয়, এর কারনে আমাদের সমাজে অনেক বিশৃংখলা, এসব প্রথা ইসলাম পরিপন্থি ও হারাম।

 

 

জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন/সম্ভব নফল রোযা  রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা যথা নফল নামায,কুরআন তিলাওয়াত,তাসবীহ-তাহলীল,তাওবা/ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।

 

শবে কদরের রাতে যেমন ভাগ্য পরিবতন হয়, যেহেতু এই কুরবানির মাসের প্রথম ১০ রাতকে আল্লাহর প্রিয় হাবিব (দ) শবে কদরের রাতের সাথে তুলনা করেছেন সেহেতু এই ১০টি রাতকেও আমাদের গনিমত মনে করে তাতে নিজের ভাগ্য বদলের জন্য অভাব অনটন দুর করার জন্য, সকল দুঃখ পেরেশানি থেকে মুক্তির জন্য দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া করতে হবে।

 

 হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদত তুলনায় বেশী প্রিয়,প্রত্যেক দিনের  রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক  রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের  ন্যায় ।

{তিরমিজী শরীফ,হাদীস নং-৭৫৮,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৭৫৭,কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২০৮৮}

 

১০ রাতের এবাদতের সহজ পন্থা হল এশারের নামাজ মহিলারা ঘরে সময়মত পড়বেন, আর পুরুষরা মসজিদে এশা ও ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়বেন, তারপর কমপক্ষে ২ রাকাত নামাজ পড়বেন, এই নামাজ যে কোন সুরা দিয়ে পড়তে পারেন, নিয়ত করবেন আমি ২ রাকাত হাজতের নামাজ পড়ছি আল্লাহু আকবার, নামাজ পড়ার পর

 

কারণ নামাজ ও দরূদ পাঠের বরকত ও ফজিলতে মহান আল্লাহ মানুষের যে কোনো বিপদ দূর করে দেবেন। সে কারণেই বিপদের সময় উত্তমভাবে অজু করে হাজত পূরণের নিয়তে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা। আর নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজ ভাষায় বৈধ প্রয়োজনের জন্য এ দোয়া করা

 

তাই নামাজ শেষে নিজের গুনাহ মাফ চেয়ে তওবা করবেন, ৭০ বার আসতাগফিরুল্লাহ পড়বেন, তারপর পড়বেন আল্লাহর প্রসংশা সম্বলিত জিকির বিশেষ করে এ মাসে পড়বেন (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ) তারপর যতক্ষণ খুশি দরুদ শরীফ পড়বেন, তারপর দোয়া করবেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব ওঠে এসেছে-

- হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে এবং ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে। (তিরমিজি)

 

এ ছাড়া ইসমে আজমের সাথে দোয়া করলে তা অব্যথ দোয়া- তাই নামাজের পর তওবা করবেন, আসতাগফিরুল্লাহ পড়বেন আল্লাহর প্রসংশায় তকবির পড়বেন তারপর দরুদ পড়ে ইসমে আজম এর দোয়াসমুহ পড়বেন

ইসমে আজমের দোয়া হল

১. ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদুন লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহিম।  -সূরা বাক্বারা : ১৬৩
২. আলীফ লাম মীম। আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।  -সূরা আল ইমরান : ১

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূলে কারিম (সা.)-এর নিকট বসেছিলাম। একজন লোক সেখানে নামাজ পড়ছিল। সে তার দোয়ার মধ্যে আরজ করল, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার প্রয়োজন প্রার্থনা করছি এই ওসিলায় যে, প্রশংসা ও গুনকীর্তণ আপনার জন্যই উপযুক্ত। আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি পরম দয়ালু ও অসীম অনুগ্রহদাতা এবং পৃথিবী ও আকাশ মন্ডলীর স্রষ্টা। আমি আপনার কাছেই আপনার অনুগ্রহ চাই। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যু! ইয়া জালজালালী ওয়াল ইকরাম! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ বান্দা আল্লাহর ইসমে আজমের ওসিলায় দোয়া করেছে। এ ওসিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে, আল্লাহ তা দান করেন। -তিরমিজি

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল প্রয়োজন পুরণ করুন, সকল অভাব দুঃখ বিপদ দুরিভুত করুন আমিন।    

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.