ওজিফাটি যাদুর মত কাজ করে। সুরা ফালাক ও সুরা নাস এর আমল। Qurani waziaf |

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ওজিফাটি যাদুর মত কাজ করে, স্বয়ং বিশ্বনবী নিয়মিত ওজিফাটি করতেন



আজ আমি পবিত্র কুরআনের ২টি সুরার ওজিফা আলোচনা করব, যে সুরা গুলি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য কিয়ামত পযন্ত অনেক বড় আল্লাহর নেয়ামত। যে ওজিফা স্বয়ং নবী করিম (দ) শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি নিজেও ওজিফাটি নিজে পালন করতেন, কিভাবে ওজিফাটি করে নিজেকে; নিজের সন্তানকে নিজের পরিবারের লোকদেরকে রক্ষা করবেন, শয়তানের অনিষ্ট থেকে, শত্রুর অনিষ্ট থেকে, দুষ্ট লোকের অনিষ্ট থেকে, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের সকল অনিষ্ট থেকে।

প্রত্যেক নামাজের পর কিভাবে আমল করতে হয়, ঘুমানোর সময় কিভাবে করতে হয়, ছোট বাচ্চাদের উপর এই ওজিফাটি কিভাবে প্রয়োগ করতে হয, নিজে অসুস্থ হলে তখন কিভাবে প্রয়োগ করতে হয়, অন্য কেহ অসুস্থ হলে তার উপর কিভাবে প্রয়োগ করতে হয়, সব আজ আলোচনা করব।

আল্লাহর প্রিয় হাবিব এই ওজিফাটি কিভাবে করতেন, কতবার করতেন?

আপনি কখন পড়বেন? কতবার পড়বেন সব বিষয় আজ  তাও বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ। আশা করি এই সহজ কুরআনি ওজিফাটি আপনার নিত্যদিনের উপকারি সঙ্গি হবে।

আমাদের মা বোনেরা যাদুটোনা সংক্রান্ত ব্যপারে বিভিন্ন আমেলদের কাছে ছুটে যায়, অথচ পবিত্র কুরআনেই আছে এসব সমস্যার সমাধান, মহিলারা যে বেশী যায় সেটাও কিন্তু এই সুরার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা ইঙ্তি করেছেন, সুরা ফালাকের একটি শব্দ আছে (নাফফাসাতি) যার অথ হল ফুঁক মারা, এই শব্দটিকে স্ত্রী লিংগ ব্যবহার করার কারন হিসেবে মুফাসসিরগন উল্লেখ করেছেন, যেহেতু নারীরা এসব ঝাঁড় ফুকে বেশী মনোনিবেশ করে সেহেতু এই শব্দটিকে স্ত্রী লিংগ ব্যবহার করা হয়েছে।

সুনানে দারেমির ৩৪৭৯ নং হাদিস- উক্ববাহ ইবনু আমির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হাঁটছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: হে উক্ববাহ! বল। আমি বললাম, আমি কী বলব, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেন, এরপর তিনি আমার কথার জবাবে চুপ থাকলেন। এরপর তিনি আবার বললেন, হে উক্ববাহ! বল। আমি বললাম, আমি কী বলব, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরপর তিনি  বললেন, ক্বুল আউযু বিরব্বিল ফালাক্ব (সূরাহ ফালাক্ব: ১) এরপর আমি এর শেষ পর্যন্ত পাঠ করলাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এর অনুরূপ কোন প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা এবং কোন আশ্রয় প্রার্থনাকারীর আশ্রয় প্রার্থনা নেই।

এই হাদীসের সবচেয়ে বড় কথা যেটি সেটি হল আল্লাহর নবী (দ) এর মত আর কোন দোয়াকারীর দোয়াও নাই বলে ঘোষনা করেছেন।

আবার সুনানে দারেমির ৩৪৮০ নং হাদিস উকবা ইবনু আমির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উপরে এমন কতক আয়াত নাযিল করা হয়েছে যার মত আর কখনও দেখিনি কিংবা দেখা যায় নি । অর্থাৎ তা হল মু-আববিযাতাইন সুরা ফালাক ও সুরা নাস।

এই সুরা নাজিলের পিছনেও আছে মজার ঘটনা

মা আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, মদী নার ইয়াহূদী গোত্র বনু যুরাইকের মিত্র লাবীদ বিন আসাম নামক জনৈক মুনাফিক তার মেয়েকে দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাথার ছিন্নচুল ও চিরুনীর ছিন্ন দাঁত চুরি করে এনে তাতে জাদু করে এবং মন্ত্র পাঠ করে চুলে ১১টি গিরা দেয়। এর প্রভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। অন্য বর্ণনা মতে ৪০ দিন বা ৬ মাস এভাবে থাকেন। এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বপ্নে দেখেন যে, দুজন লোক এসে একজন তাঁর মাথার কাছে অন্যজন পায়ের কাছে বসে। অতঃপর তারা বলে যে, বনু যুরাইকের খেজুর বাগানে যারওয়ান কূয়ার তলদেশে পাথরের নীচে চাপা দেয়া খেজুরের কাঁদির শুকনো খোসার মধ্যে ঐ জাদু করা চুল ও চিরুনীর দাঁত রয়েছে। ওটা তুলে এনে গিরা খুলে ফেলতে হবে। রাসূল (সাঃ) সকালে আলী (রাঃ)-কে সেখানে পাঠান এবং যথারীতি তা তুলে আনা হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সূরাদ্বয় পড়ে ফুঁ দিয়ে গিরাগুলো খুলে ফেলেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে যান। (সহীহ বুখারী হা. ৫৭৬৫, ৫৭৬৬) আয়িশাহ (রাঃ) হতে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (সাঃ)-এর যাদুকৃত চুল ও চিরুনীর দাঁত উদ্ধার হওয়ার পর সূরা ফালাক ও নাস নাযিল হয়। যার ১১টি আয়াতের প্রতিটি আয়াত পাঠের সাথে সাথে জাদুকৃত ১১টি চুলের গিরা পরপর খুলে যায় এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হালকা বোধ করেন ও সুস্থ হয়ে যান। (ইবনু কাসীর) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে সে যাদুকারীনির থেকে প্রতিশোধ নিতে বলা হলে তিনি বলেন : আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দান করেছেন। আমি অপছন্দ করি যে, মানুষের মাঝে খারাপ কিছু ছড়িয়ে দেওয়া হোক। অর্থ্যাৎ এর কারনে ঝগড়া ফাসাদ সৃষ্টি হউক (সহীহ বুখারী হা. ৬৩৯১)

এই সুরার আমলের নিয়ম

প্রত্যেক নামাজের পর আমল-উকবা বিন আমের (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে প্রতি সালাতের শেষে সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিযী হা. ২৯০৩ আবূ দাঊদ হা. ১৫২, মিশকাত হা. ৯৬৯)

তবে নিয়ম হল ফজর ও মাগরিবের পর ৩ বার করে পড়বেন, জুহর আসর ও এশারের পর ১ বার করে পড়বেন।

রাতে ঘুমানের আগের আমল-

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) প্রত্যেক রাতে যখন বিছানায় যেতেন তখন দু হাত একত্রিত করে ফুঁ দিতেন, অতঃপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন। তারপর যথাসম্ভব দু হাত দিয়ে শরীর মাসাহ করতেন। তিনি প্রথমে মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০১৭)

সুতরাং আপনি বিছানায় বসে বসে এই সুরাগুলি ৩ বার করে পড়বেন তারপর দুহাতে ফুক দিয়ে সে হাত আপনার সারা শরীরে মাসেহ করে দিবেন, তারপর শুয়ে যাবেন।

যে কোন বদনজর থেকে বাঁচার আমল

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিন ও মানুষের চোখ লাগা হতে আশ্রয় চাইতেন কিন্তু যখন সূরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হলো তখন তিনি সব বাদ দিয়ে এ দুটিই পড়তে থাকেন।

যাদের জিন ও মানুষের বদ নজরের সমস্যা থাকে তারা সকাল সন্ধ্যায় এবং প্রত্যেক নামাজের পর এই সুরা গুলি পাঠ করে হাতের তালুতে ফুঁক দিয়ে সারা শরীরে হাত মাসেহ করে দিবেন, তাহলে সব ধরনের বদ নজর দুর হয়ে যাবে।

অসুখ ও ব্যাথার সময় আমল

আয়িশাহ (রাঃ) বলেন : যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অসুখে পড়তেন, তখন সূরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিয়ে নিজের দেহে হাত বুলাতেন। কিন্তু যখন ব্যাথা-যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে যেত তখন বরকতের আশায় আমি তাঁর দেহে হাত বুলিয়ে দিতাম।

অসুস্থ ব্যক্তির সাথে এই সুরার আমল

মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে : পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে সূরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০৯২, সহীহ মুসলিম হা. ২১৯২)

ছোট বাচ্চাদের প্রতি এই সুরার আমল

নবী করিম (দ) হযরত হাসান ও হযরত হোসাইন (রা) কে বভিন্ন দোয়া পড়ে ফুঁক দিতেন কিন্তু যখন এই ২টি সুরা নাজিল হল তখন তিনি এই ২টি সুরা পড়েই তাদেরকে ফুক দিতেন, আপনিও আপনার ঘরে কোন বাচ্চা থাকলে তাদেরকে এই ২টি সুরা পাঠ করে প্রতিদিন ফুঁক দিতে পারেন, তাহলে সব ধরনের বদ নজর, শয়তানের অনিষ্ট, দুষ্ট লোকের অনিষ্ট, জিনের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তাকে হেফাজত করবেন।

আসুন আমরা প্রতিদিন এই সুরা গুলির আমল করে সব ধরনের জিন ও মানুষের অনিষ্ট থেকে বদ নজর যাদু টোনা থেকে অসুস্থতা থেকে নিজেদের হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন আমিন।

সুরা ফালাক

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ

বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, [সুরা ফালাক - ১১৩:১]

مِن شَرِّ مَا خَلَقَ

তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে, [সুরা ফালাক - ১১৩:২]

وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ

অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, [সুরা ফালাক - ১১৩:৩]

وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ

গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে [সুরা ফালাক - ১১৩:৪]

وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। [সুরা ফালাক - ১১৩:৫]

সুরা নাস

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ

বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার, [সুরা নাস - ১১৪:১]

مَلِكِ النَّاسِ

মানুষের অধিপতির, [সুরা নাস - ১১৪:২]

إِلَهِ النَّاسِ

মানুষের মা'বুদের [সুরা নাস - ১১৪:৩]

مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ

তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে, [সুরা নাস - ১১৪:৪]

الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ

যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে [সুরা নাস - ১১৪:৫]

مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ

জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে। [সুরা নাস - ১১৪:৬]

 

 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.