আয়াতুল কুরসির নতুন নিয়ম। আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল। বর্তমান যুগে আয়াতুল কুরসি কতবার পড়তে হবে

 

আমি আয়াতুল কুরসি নিয়ে এক আজব স্বপ্ন দেখেছি

বর্তমান যুগে আয়াতুল কুরসি কতবার পড়তে হবে কেহ জানেনা



আল্লামা মুফতি জরওয়ালি (রহ) বলেন-

 

এ যুগে আয়াতুল কুরসি কিভাবে পড়তে হবে, কতবার পড়তে হবে, মানুষ জানেনা, কতবার পড়লে এই আজিমুশশান আয়াতটির যথাযথ ফায়দা মানুষ লাভ করতে পারবে তাও মানুষ জানেনা, তাই অধিকাংশ মানুষ বলে আমি আয়াতুল কুরসি পড়ি কিন্তু কোন কাজ হয়না।

 

মুফতি সাহেব এর কয়েকটি কারন খুঁজে পেয়েছেন এবং স্বপ্নের মাধ্যমে তার সমাধানও জানতে পেরেছেন যা তিনি তার বয়ানে প্রকাশ করেছেন।

 

সুরা ফাতিহার পর সবচেয়ে বেশি পঠিত ও মুখস্ত থাকা অন্যতম আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি।

 

হজরত উবাই ইবনু কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই অধিক জানেন। তিনি আবার বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার কাছে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ? আমি বললাম, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম (আয়াতুল কুরসি)। তখন তিনি আমার বুকে (হালকা) আঘাত করে বলেন, হে আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান আনন্দদায়ক হোক।’ (আবু দাউদ)

 

আয়াতুল কুরসি জান্নাতের দরজা

হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা হবে না। (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)

 

হজরত আবু যর জুনদুব ইবনে জানাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত নাজিল হয়েছে কোনটি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আয়াতুল কুরসি। (নাসাঈ)

 

মুফতি সাহেব বলেন আয়াতুল কুরসি কাজ না করার প্রথম কারন হল এর উপর পরিপূর্ণ আস্থা না থাকা। একজন অমুসলিম যদি আয়াতুল কুরসি পড়ে সে তা থেকে কখনো উপকার পাবেনা, তেমনি কোন মুসলমান যদি আয়াতুল কুরসি পড়ে কিন্তু তার মনে যদি এর প্রতি বিন্দু মাত্র বিশ্বাস না থাকে তাহলে সে কিভাবে এর থেকে উপকার পাবে?

 

অথবা আয়াতুল কুরসি কাজ না করার ২য় কারন হল এই আমলটি করার যে নিয়ম আছে সে নিয়ম জানেনা।

 

এর নিয়ম বুঝার জন্য উদাহার হল- যদি একজন লোক এক চামচ চিনি এক কাপে রাখে, তাহলে চা মিষ্টি হবে, কিন্তু সে যদি ১ চামচ চিনি বড় পাতিলে দেয় তাহলে কি সে পাতিলের চা মিষ্টি হবে? হবেনা।

 

তেমনি যদি ১ কাপ দুধ ২ কাপে ঢালেন তাহলে দেখা যাবে, কিন্তু যদি ১ কাপ দুধ ১ মন পানিতে ঢালেন সে দুধ কি দেখা যাবে? যাবেনা। সে জন্য ওলামায়ে কেরাম মানুষের অবস্থাভেদে  বলেন আয়াতুল কুরসি ৩ বার পড়ুন, ৫ বার পড়ুন, ৭ বার পড়ুন, ১১ বার পড়ুন, সকাল সন্ধ্যায় পড়ুন। ওলামায়ে কেরাম মানুষের ধরন অনুযায়ী তার জন্য সংখ্যা কম বেশী করেন।

 

মুফতি সাহেব বলেন - আমি একটি স্বপ্ন দেখলাম, কয়েকটি জিন আমাকে স্বপ্নের মধ্যে এসে ধমক দিয়ে বলছে তুমি সব সময় আমাদের বিরুদ্ধে কেন কথা বল? আমরা তোমাকে এমন কষ্ট দিব যে তুমি একেবারে সোজা হয়ে যাবে। তখন আমি আয়াতুল কুরসি পড়া আরম্ভ করলাম, তারা বলল তোমার আয়াতুল কুরসিকে আমরা ভয় পায়না। তখন আমি পর পর ৩ বার পড়ে ফেললাম, ৩ বার পড়ার সাথে সাথে সেগুলি ঢুলতে লাগল,   আমি আরো ২ বার পড়ে ফেললাম তখন জিনগুলি জমিনে পড়ে গেল। আর তাদের থেকে বিশ্রি ধরনের দুগন্ধ ও ধুয়া বের হতে লাগল। আমি সেদিন বুঝতে পারলাম, শুধু একবার পড়লে এসব জিন শয়তানের কোন ক্ষতি হতনা কিন্তু যখন আমি সংখ্যা বাড়ালাম তারা ধ্বংস হয়ে গেল, তাই বুঝতে পারলাম এই যুগে আয়াতুল কুরসি পড়ার সংখ্যা বাড়াতে হবে।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আয়াতুল কুরসি কুরআনের অন্যসব আয়াতের সর্দার বা নেতা। আয়াতটি যে ঘরে পড়া হবে, সে ঘর থেকে শয়তান বের হয়ে যাবে।

 

বুযুর্গানে দ্বিনের আমলে কেন এত শক্তি? কারন তারা আমল করতে করতে পাকা হয়ে গেছে, যেমন আপনি প্রথম দিন ১টি ডিমও রান্না করতে পারবেন না, কিন্তু যে বাবুচি অভিজ্ঞ সে ১০০/২০০ লোকের রান্না চোখ বন্ধ করে করে ফেলে, আর সে রান্না খুব সুস্বাধু হয়, কারন সে করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে গেছে, তাই আপনিও আমল করতে করতে যখন পাকা পোক্ত হয়ে যাবেন, তাতে আপনার অভিজ্ঞতা আসবে, সে আমলে পূণ একিন আসবে তখন আপনার আমলেও শক্তি আসবে।

 

কুরআনুল কারিমের এ আয়াতটিতে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি, গুনাবলী ও বৈশিষ্ট্য আলোচনার ১০টি বাক্য রয়েছে। এ সব বাক্যের কারণেই আল্লাহর কাছে এ আয়াতটি মর্যাদা এত অধিক।

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

 

১) তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতিত ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো ইলাহ নেই

২) তিনি সদা জীবিত এবং বিদ্যমান

৩) আল্লাহ তাআলা তন্দ্রা ও নিন্দ্রা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

৪) আকাশ এবং জমিনের যা কিছু রয়েছে তার সবাই আল্লাহর মালিকানাধীন।

৫) সৃষ্টি কোনো বস্তুই আল্লাহর চেয়ে বড় নয় বিধায় এমন কে আছে যে তাঁর সামনে তাঁর অনুমতি ব্যতিত সুপারিশ করতে পারে?

৬) মানুষের জন্মের পূর্বে এবং জন্মের পরের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা জানেন।

৭) সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান মিলে একত্রিত হয়ে আল্লাহর জ্ঞানের কোনো একটি অংশ বিশেষকেও পরিবেষ্টিত করতে পারে না।

৮) তাঁর কুরসি এত বড় যে, সাত আসমান ও সাত জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে।

৯) আল্লাহর নিকট এত বৃহৎ দুইটি সৃষ্টি আসমান-জমিনের হেফাজত করা কোনো কঠিন কাজ নয়।

১০) তিনি অতি উচ্চ এবং অতি মহান।

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.