আরাফার দিনের আমল। হজ্জের দিন শ্রেষ্ঠ ওজিফা
আরাফার
দিন হজ্জের দিন শ্রেষ্ঠ ওজিফা
আর
মাত্র ১টা দিন পরেই হজ্জ, আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয় পবিত্র
হজ। আর এ দিনটি হচ্ছে ৯ জিলহজ ইয়ামুল আরাফাহ’। প্রত্যেক আরবি
(হিজরি) বছরের শেষ মাসের ৯তম দিনই হচ্ছে এটি। ইংরেজি হিসেবে এবার তা হবে ৮ জুলাই শুক্রবার
সারাবিশ্ব
থেকে আগত আল্লাহর মেহমানরা আরাফাতের ময়দানের বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে একত্রিত হয়। এ দিনে
আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি মানুষকে নিষ্পাপ করে দেন। এ দিন ও হজ সম্পর্কে বিশ্বনবি বলেছেন,
আলহাজ্জু আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফাই হজ।
৯
জিলহজ দিনব্যাপী মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে কিছু করণীয় ও বিশেষ তাসবিহ ও দোয়া। হজ পালনকারীদের
প্রস্তুতিতে ৯ জিলহজের করণীয়, তাসবিহ ও দোয়া তুলে ধরা হলো- এবং এই দিনে যারা হজ্জ করছিনা
তারা কি আমল করব? কি আমল করলে আপনি আল্লাহর
কাছে যা চাইবেন তাই পাবেন, আপনার সকল প্রয়োজন পুরণ হবে, সকল আশা আরজু পুরণ হবে, আজ
তা আলোচনা করব, আশা করি শেষ পযন্ত সবগুলি কথা মনযোগ দিয়ে শুনবেন।
এই
দিনে হাজ্জিরা তালবিয়ার ধ্বনিতে মুখরিত করে রাখে আরাফাতের মাঠ
لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ - لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ
- اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ
- لاَ شَرِيْكَ لَكَ
উচ্চারণ
: লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা
ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়ালমুল্ক, লা শারিকা লাক।
অর্থ
: আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো
অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সব প্রশংসা ও সম্পদরাজি তথা নেয়ামত আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্যও
আপনার। আপনার কোনো অংশীদার নেই
> ৯ জিলহজ সূর্য ওঠার পর তাকবিরে তাশরিক, তালবিয়া, দোয়া এবং তাসবিহ-তাকবির পড়তে
পড়তে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হয় হাজ্জিরা।
>
অবশ্যই জোহরের আগে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়।
>
হাজ্জিরা সাধ্যমত আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের কাছাকাছি অবস্থান করে
>
জোহর ও আসরের নামাজ আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরায় এক সঙ্গে জামাআতে নিদিষ্ট
শর্তানুসারে আদায় করে।
>
মসজিদে নামিরায় অনুষ্ঠিত জামাআতে শরিক হতে না পারলে নিজ নিজ তাবুতে যথাসময়ে জোহর ও
আসর নামাজ পড়ে নেয়।
>
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালীন সময়ে তাওবা-ইসতেগফার, তাসবিহ-তাহলিল-তাকবির ও দোয়ার মাধ্যমে
সময় অতিবাহিত করে। কেননা আরাফাতের ময়দানের দোয়াই আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি কবুল করেন।
>হজের
খুতবা মনোযোগসহকারে শোনে।
>
সূর্য ডোবা পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে, তবে কেউ যদি সূর্য ডোবার আগে আরাফাতের
ময়দান থেকে বের হয়ে যায়, তবে তার কর্তব্য হলো তিনি পুনরায় আরাফাতের ময়দানে ফিরে আসবেন
এবং সূর্য ডোবার পর আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন। ফিরে না আসলে ওই ব্যক্তি জন্য দম বা
কুরবানি আবশ্যক হয়ে যাবে।
> আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার ও দোয়া করে।
>সূর্য
ডোবার পরপরই মাগরিব না পরেই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফাতের ময়দান
ত্যাগ করে।
>
আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করার সময় মুজদালিফায় না পৌছে রাস্তায় মাগরিবের নামাজ পড়া যাবে
না। মুজদালিফায় পৌছে এক আজান ও আলাদা আলাদা ইক্বামতে মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করে।
>
যদি কেউ আরাফাতের ময়দান কিংবা পথে মাগরিবের নামাজ আদায় করে তবে ওই ব্যক্তির জন্য মুজদালিফায়
গিয়ে পুনরায় মাগরিবের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।
এদিন
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়াগুলো
পড়া যেতে পারে। এই দোয়া গুলি যারা হাজি না তারাও আমল করবেন।
হযরত
সাঈদ ইবনে জুবাইর (রা) যখন হজ্জের মাস আসত তিনি এত বেশী চেষ্টা প্রচেষ্টা করতেন মনে
হত তিনি কোন কিছুকে কাবু করতে চাচ্ছেন কিন্তু কাবু করতে পারছেন না। সকাল সন্ধ্যায় বেশী
বেশী আল্লাহর জিকির করতেন।, সাহাবায়ে কেরাম হজ্জের মাসে বাজারে গেলেও বড় বড় করে তাকবির
পড়তেন, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
তাছাড়া
আপনি হজ্জে যেতে পারেননি, তবুও কয়েক মিনিটে ১০০ হজ্জের সাওয়াব আপনি লাভ করতে পারেন
মিশকাতের
২৩১২ নং হাদিস
রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ বার করে সুবহা-নাল্ল-হ পড়বে, সে তাঁর মতো হবে (সাওয়াবের দিক দিয়ে)
যে একশ বার হজ করবে। যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে একশ বার করে আলহামদুলিল্লা-হ পড়বে, সে আল্লাহর পথে একশ ঘোড়ায় একশ মুজাহিদ
রওনা করে দেয়া ব্যক্তির মতো হবে। যে সকালে ও বিকালে একশ বার করে লা- ইলা-হা
ইল্লাল্ল-হ পড়বে, সে নবী ইসমাঈল (আঃ)-এর
বংশের একশ লোক মুক্ত করে দেয়া ব্যক্তির সমতুল্য হবে। আর যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে
একশ বার করে আল্ল-হু আকবার পড়বে,
সেদিন তার চেয়ে বেশি সাওয়াবের কাজ আর কেউ করতে পারবে না।
তাছাড়া
এই দিনে আরো কিছু মাসনুন দোয়া পড়তে পারেন
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।(মুসলিম,
মিশকাত)
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওয়া দুনিয়ায়া ওয়া
আহলি ওয়া মালি। (আবু দাউদ, মিশকাত)
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি,
ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতিল রিজালি। (বুখারি ও মুসলিম,
মিশকাত)
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা
মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনিয়া ওয়া আজাবিল কাবরি। (বুখারি ও মিশকাত)
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নিমাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফাতিকা ওয়া
ফুজাআতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাত্বিকা।
উচ্চারণ : রাব্বি আয়িন্নি আলা তুয়িন আলাইয়্যা ওয়াংছুরনি ওয়া লা তাংছুর আলাইয়্যা ওয়াহদিনি
ওয়া ইয়াস্সিরিল হুদা লি।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালায়ি ওয়া দারাকিশ শাক্বায়ি ওয়া
সুয়িল ক্বাজায়ি ওয়া শামাতাতিল আ’ দায়ি।
উচ্চারণ : ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা; আল্লাহুম্মা মুছার্রিফাল
কুলুবি ছার্রিফ কুলুবানা আলা ত্বাআতিকা।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি, ওয়া আনা আবদুকা
ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাত্বাতু। আউজুবিকা মিন শার্রি মা ছানাতু। আবুউলাকা
বিনিমাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি। ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা
আংতা।
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহ (৩৩ বার), আলহামদুলিল্লাহ (৩৩বার), আল্লাহু আকবার (৩৩বার/৩৪বার),
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া
আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির (১বার)
উচ্চারণ : সুবহানিাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি; সুবহানাল্লাহিল আজিম।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা ওয়া হারামিকা ওয়া আয়িন্নি বিফাজলিকা আম্মান
সেওয়াকা।
উচ্চারণ : ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কায়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছ।
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহ হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া
আতুবু ইলাইহি।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনি মিনান্নার।
কুরআন ওহাদিসে উল্লেখিত অন্যান্য দোয়া ও জিকির, তাসবিহ-তাহলিলসহ
তাওবা-ইসতেগফার করা যেতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ৯ জিলহজ হজের দিনে কাজগুলো
যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। হজে মাবরূর দান করুন। হজে পালনকারী সবাইকে নিষ্পাপ
হিসেবে কবুল করুন। হাজিদের উসিলায় আমাদেরকেও কবুল করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই