আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ার আযব ফজিলত ও বরকতসমুহ, আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ কখন পড়তে হয়

 

আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ার আযব

ফজিলত ও বরকতসমুহ, আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ কখন পড়তে হয়

 


সম্মানি দশক মন্ডলী আসসালামু আলাইকুম! আপনি যখন কুরআন ও নামাজ পড়েন তখন আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ে থাকেন, কিন্তু আরো এমন কিছু জায়গা আছে যাতে আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়তে হয়, আর সে সব জায়গা কোনগুলি? তাতে আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়লে কি মুজেজা হয়, কখন কতবার বিসমিল্লাহ পড়লে রিজিকে, রুজি রোজগারে বরকত হয়, অভাব দুর হয়, মসিবত দুর হয়, আজকের ভিডিওতে আমি তা বিস্তারিত আলোচনা করব.

আমরা যদি এই আমলগুলি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে আমাদের প্রতিটি কাজ বরকতময় হবে, আর তাই যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য তার নিয়মাবলী শিখতে হবে। আমলগুলি অত্যন্ত সহজ কিন্তু এর বরকত অতুলনীয়। অথচ আমরা এই সহজ আমলগুলি থেকে গাফেল, তাই আমাদের কাজে বরকত নাই, কামাই রুজিতে বরকত নাই, রিজিকে বরকত নাই, স্বস্থ্যে বরকত নাই, ব্যবসায় বরকত নাই, আজ যদি এই ভিডিও থেকে এমন বরকতময় সহজ আমলগুলি শিখে রাখেন আর যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করেন তাহলে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকত আর বরকত হবে।

আশা করি শেষ পযন্ত প্রতিটি কথা খুব মনযোগ দিয়ে শুনবেন। আশি গেরান্টি দিয়ে বলতে পারি আজকের ভিডিওর প্রতিটি ইনফরমেশন আপনার জন্য হিরার চেয়ে দামী হবে। তাই কোন ভাবেই সময় একটু বেশী গেলেও ভিডিওটি স্কীপ করবেন না।

 

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়ার সাথে সাথে শয়তানের শক্তি ধ্বংস হয়ে যায়। ওলামায়ে কেরাম যে কোন ভয় ভীতির সময় আউজুবিল্লাহ পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

 

আর যে কোন ভালো কাজ শুরু করতে, বইপত্র পড়তে, ও পড়ানোর সময় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়া যথেষ্ট। তেমনি ভাবে কোন কিছু খাবারের আগেও বিসমিল্লাহ পড়বেন। অনেক ভাইকে দেখা যায় খাবার শুরুতে আউজুবিল্লাহ পড়ে, বিসমিল্লাহ বাদ দেয়। তেমনি অনেকে যে কোন কাজ শুরু করতেও আউজুবিল্লাহ পড়ে।

 

আউজুবিল্লাহ পড়তে হবে ভয় ভীতির সময়, শয়তান এর প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য, ওয়াসওয়াসা দুর করার জন্য, শয়তানকে ভাগানোর জন্য অনেক বড় আমল। আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়লে যেমন ফায়দা হবে তা লিখলেও ফায়দা হবে।

 

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম এর পর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর নম্বর। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত- নবী করিম (দ) এরশাদ করেন সুরা সমুহের মাঝে পার্থ্যক্য করার জন্য বিসমিল্লাহ নাজিল হয়েছে।

 

ইমাম আবু হানিফা ও ইরাকের ফুকাহায়ে কেরাম এর মতে- বিসমিল্লাহ পুরা কুরআনে একবার আছে সে জন্য হাফেজগন যখন নামাজে কুরআন পড়ান তখন যে কোন ১টি সুরার শুরুতে একবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম প্রকাশ্যে বড় আওয়াজে পড়ে নিবেন

 

নামাজে প্রত্যেক সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ উচ্চ আওয়াজে পড়তে ফোকাহায়ে কেরাম নিষেধ করেছেন। কেননা এটা প্রত্যেক সুরার অংশ নয়।

 

নামাজে আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ কখন পড়া উচিত? এবং এগুলি পড়া সুন্নত ওয়াজিব নাকি মুস্তাহাব? আজ এই মাসায়ালাও আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

 প্রথম মাসায়ালা হল- আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম কখন কখন পড়া উচিত?

দেখুন যখনই আপনি কোন নামাজ শুরু করেন, চাই তা সুন্নত হউক, ফরয হউক, নফল হউক, সব নামাজের প্রথম রাকাতে তাকবীর তাহরীমার পর ছানা পড়বেন, তারপর আউজুবিল্লাহিমিনাশ শাইতানির রাজিম এরপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে সুরা ফাতেহা পড়বেন।

শুধু প্রথম রাকাতেই আউজুবিল্লাহ পড়তে হবে, এছাড়া যদি আপনি ২ রাকাত বা ৩ রাকাত কিংবা ৪ রাকাত নামাজ পড়েন তাহলে বাকী রাকাতগুলিতে আউজুবিল্লাহ পড়তে হবেনা। শুধু প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর ছানার পর আউজুবিল্লাহ হি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়া সুন্নত।

এবার বিসমিল্লাহ কখন পড়বেন?

দেখুন যখনই আপনি সুরা ফাতেহা পাঠ করবেন তখনই সুরা ফাতেহা পড়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত।

আর সুরা ফাতেহার পর যখন অন্য কোন সুরা পাঠ করবেন সে সুরা যদি শুরু থেকে পড়েন তাহলে তার আগে বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব, কিন্তু যদি কোন বড় সুরার মাঝখান থেকে কয়েক আয়াত তেলাওয়াত করেন তখন বিসমিল্লাহ পড়া লাগবেনা।

মোট কথা যে সব রাকাতে সুরা ফাতেহার পর অন্য সুরা পড়বেন সে সুরা যদি প্রথম থেকে পড়েন তখন বিসমিল্লাহ পড়তে হবে, মাঝখান থেকে পড়লে বা শেষের দিক থেকে পড়লে তখন বিসমিল্লাহ পড়তে হবেনা, যেমন আপনি সুরা আর রাহমান এর শুরু থেকে  কিছু আয়াত পড়ছেন, কিংবা সুরা এখলাছ পড়ছেন তখন বিসমিল্লাহ পড়বেন, আর যদি শেষ দিক থেকে যেমন সুরা হাশরের শেষ আয়াত হুয়াল্লাহুল্লাজি বা বাকারার শেষ আয়াত আমানার রাসুলু থেকে পড়ছেন তখন বিসমিল্লাহ পড়া লাগবে না।

আর মনে রাখবেন আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত ও মস্তাহাব, এসব যদি ঠিকটাক আদায় করেন তাহলে ছাওয়াব পাবেন এখন কেহ যদি ভুলে যায় তাহলে তাকে তার জন্য সাহু সিজদা দিতে হবে না। কেননা সুন্নত ছুটে গেলে সাজদা সাহাব ওয়াজিব হয়না বরং ওয়াজিব ছুটে গেলে সাজদা সাহাব ওয়াজিব হয়।

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অথ হল আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি  যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

কেননা কোন কাজ যদি জায়েজ হয় তার শুরুতে বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম পড়বেন।

 

মুশরিক গন যখন চারিত্রিক ভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল তারা বলত বি ইসমিল লাত ওয়াল উজ্জা এসব শিরিকি কলমা বলা শুরু করেছিল। ওলামায়ে কেরাম তফসিরের কিতাবে লিখেছেন মুশরিকদের এই নিষিদ্ধ বাক্যকে রহিত করার জন্য বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম নাজিল হয়েছে।

 

বিসমিল্লাহর বরকতের মুজেজার ঘটনা

সেলিম নামক এক লোক ছিলেন তার কাজ ছিল তিনি বড় বড় ডেক থেকে রান্না হওয়া খাবার বের করত, একদিন এক হিন্দু যুগি তার কাছে এসে বলে এই ডেক এর মধ্যে কি? সে বলল খাবার, সে যুগি বলল তুমি তোমার আল্লাহকে বলতে পারনা এই ডেক ভতি স্বন রৌপ্য দেয়ার জন্য? সেলিম বলল আমার আল্লাহকে বললে তিনি অবশ্যই দিবেন, কিন্তু আমার তার প্রয়োজন নাই, তখন যুগি চ্যালেঞ্জ করল তা কখনো সম্ভব নয়, তখন সেলিম যুগির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বলল আমি যদি আমার আল্লাহকে বলি আর আল্লাহ যদি সত্যি সত্যি এই ডেক থেকে স্বণ রৌপ্য দান করেন তাহলে তোমরা কতজন মুসলমান হবে? সে যুগি তার এলাকার সকলে মুসলমান হবে বলে ওয়াদা করল, সেলিম আল্লাহর কাছে দোয়া করল হে আল্লাহ আমি সারা জীবন এই ডেক থেকে বিসমিল্লাহ বলে খাবার বের করেছি, আজ তোমার ইজ্জতের কসম এই যুগির সামনে আমাকে বেইজ্জতি করিওনা বলে সে যখন ডেক এর মধ্যে ১ বার চামচ মারে স্বন বের হয়ে আসে আর ২য় বার মারলে রুপা বের হয়ে আসে এই দৃশ্য দেখে সে যুগি ওয়াদা মত তার এলাকার সকলে মুসলমান হয়ে গেল।

 

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম এর মধ্যে আল্লাহর নাম শুধু একবার আছে আর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যে আল্লাহর নাম ৩ বার আছে এক হল আল্লাহ, ২য় হল রহমান ৩য় হল রহিম। তফসিরে বায়যাবীতে আছে রহমান হল দুনিয়ার জন্য আর রহিম হল আখেরাতের জন্য। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সকলের জন্য রহমান তাই দুনিয়াতে হিন্দু বৌদ্ধ বিধর্মী সকলকেই রহমান হিসেবে রিজিক দান করেন, কিন্তু আখেরাতে আল্লাহ কোন কাফের মুশরিকের প্রতি দয়ালু হবেন না শুধু মুসলমানদের প্রতি রহিম হবেন।

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কতই বরকতময় কলমা- তাই ঘরে প্রবেশ করতেই বিসমিল্লাহি দাখালতু, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বিসমিল্লাহি খারাজতু, কোন কাজ শুরু করতে বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু ওয়া আলাইহি এতেমাদতু, তেমনি ভাবে জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

 

মনে রাখবেন বিসমিল্লাহ দিয়ে সব কাজ শুরু করা সুন্নতে মুবারাকা, কিন্তু এত ছোট আমলটিও আমরা ঠিক মত করি না আমরা কখনো কখনো পড়ি কখনো ছেড়ে দিই। ধারাবাকিতা বজায় থাকে না।অথচ বিসমিল্লাহর এত বরকত যা বলে শেষ করা যাবে না।

মুফাসসিরিনে কেরাম ইসিমকে ৭টি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহারের কথা বর্ননা করেন। যেমন ইসিম এর ১টি অর্থ হল নাম, ২য় অর্থ হল বরকত। অতএব যখন আমরা বিসমিল্লাহ বলি এর এক অর্থ হবে আল্লাহর নামে। ২য় অর্থ হবে আল্লাহর বরকতের সাথে। আমরা তখন বৃদ্ধ লোকদের বলতে শুনতাম তারা কথায় কথায় বলত আল্লাহর বরকতে এ কাজ করেছি। আসলে তারা বিসমিল্লাহর তরজুমা বলত। তাই আমরা যখন বিসমিল্লাহ দিয়ে কোন কাজ শুরু করব তাতে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করেন। আল্লাহর নামও বরকতওয়ালা আল্লাহর জাতও বরকতওয়ালা। যেমন কুরানে আছে (তাবারাকাসমু রাব্বিক) বরকত ওয়ালা নাম তোমার রবের। অপর জায়গায় এরশাদ হয়েছে (তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক) বরকতময় হলেন সে জাত যার হাতে আছে রাজত্বি। সুতরাং আল্লাহর জাতও বরকতময় আল্লাহর নামও বরকত ময়। সে জন্য উঠতে বসতে চলতে ফিরতে বিসমিল্লাহর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে এরশাদ করেন, ‘হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন অজু করবে, বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে ফেরেশতাগণ তোমার অজু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমার জন্য পুণ্য লিখতে থাকবে। তুমি যখন স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করবে, তখন বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে যতক্ষণ না তুমি গোসল শেষ করবে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তোমার জন্য পুণ্য লিখতে থাকবে। সেই সহবাসে যদি তোমার কোনো সন্তান লাভ হয়, তবে সেই সন্তানের নিঃশ্বাস এবং তার যদি বংশধারা চালু থাকে, তবে যতকাল তা চালু থাকবে, ততকাল পর্যন্ত তাদের সবার নিঃশ্বাসের সংখ্যা পরিমাণ পুণ্য তোমার আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন পশুর পিঠে চড়বে, তখন বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে তার প্রতি কদমে তোমার জন্য পুণ্য লেখা হবে। আর যখন নৌকায় চড়বে, তখনো বিসমিল্লাহ বলবে। তাহলে যতক্ষণ না তুমি তা থেকে নামবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার জন্য পুণ্য লেখা হতে থাকবে।

`

রোম সম্রাট একবার খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দরবারে তার মাথা ব্যথার কথা জানিয়ে প্রতিকারের জন্য আবেদন করেছিল। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে একটি টুপি প্রেরণ করেছিলেন। যতক্ষণ এ টুপি মাথায় থাকতো ততক্ষণ মাথা ব্যথা হতো না। কিন্তু যখনই মাথা থেকে টুপি সরানো হতো, সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা শুরু হতো। এ ঘটনায় সবাই বিস্মিত হয়। অবশেষে টুপি খুলে এর কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেল যে তাতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

 

হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিপক্ষে শত্রু যুদ্ধের ময়দানে অপেক্ষা করছিল। হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদের ধর্মে সত্যতা পরীক্ষার জন্য বিষে ভরা একটি শিশি তাঁকে দেয়া হলো। তিনি শিশির সম্পূর্ণ বিষ বিসমিল্লাহ পড়ে পান করেছেন। কিন্তু বিসমিল্লাহ`র বরকতে বিষের বিন্দু মাত্র প্রভাবও তার ওপর পড়েনি। (তাফসিরে কাবির)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে খাদ্যে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাদ্যে শয়তানের অংশ থাকে। (মুসলিম)

 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে খাবারের মজলিসে জনৈক সাহাবি বিসমিল্লাহ ব্যতিত খাওয়া শুরু করে। পরে যখন স্মরণ হয় তখন বলেন, বিসমিল্লাহি আওয়ালিহি ও আখিরিহি পাঠ করে` তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ অবস্থা দেখে হাসতে লাগলেন এবং বললেন, শয়তান যা কিছু খেয়েছিল তিনি (সাহাবি) বিসমিল্লাহ পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে সব বমি করে দিয়েছে। (আবু দাউদ)

 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘ বিসমিল্লাহ পড়ে যদি কেউ অজু করে, তাহলে আমলনামা লেখার কাজে নিয়োজিত ফেরেশতা তার আমলনামায় সওয়াব লিখতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই অজু নষ্ট না হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে ডেকে বললেন, “হে আবু হুরায়রা! তুমি যখন অজু করবে, তখন বলো, ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল-হামদুলিল্লাহ’। তাহলে তোমার অজু নষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত ফেরেশতারা তোমার জন্য সওয়াব লিখতেই থাকবে।’ (তাবরানি : ১২২)।

 

অন্যত্র বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি বিসমিল্লাহ পড়ে অজু করে, তাহলে তার গোটা শরীর পবিত্র হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ ছাড়া অজু করল, সে গোটা শরীরকে পবিত্র করতে পারল না। শুধু অজুর জায়গাগুলো পবিত্র করল।’ (দারা কুতনি : ২৩৯)।

 

এমনকি হাদীসে পাকে আছে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত- যার মফহুম হল যে কাপড় খোলার সময় বিসমিল্লাহ পড়ে, বিশেষ করে ঘরে অনেক সময় কাপড় খোলার প্রয়োজন হয়, কাপড় বদলানোর প্রয়োজন হয় তখন যদি বিসমিল্লাহ পড়া হয় তাতে সে বিসমিল্লাহ পাঠকারী জ্বীন ও শয়তানের দৃষ্টি থেকে আড়াল হয়ে যায়, তাঁকে শয়তান আর জ্বীন দেখতে পায়না। এ হাদীস থেকে ওলামায়ে কেরাম বলেন যারা বেশী বেশী বিসমিল্লাহ পড়বে কাল হাশরের মাঠে আল্লাহর ইচ্ছায় তারা জাহান্নামের ফেরেশতাদের দৃষ্টি থেকেও আড়াল হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ।

 

হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, কোনো ব্যক্তি যদি পায়খানায় প্রবেশকালে বিসমিল্লাহ পড়ে, তবে জিন ও শয়তানদের দৃষ্টি ঐ ব্যক্তির গুপ্তাঙ্গ পর্যন্ত পৌছতে পারে না। (তিরমিজি)

 

আরেকটি মজার বিষয় হল (বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম) এর মধ্যে ১৯টি হরফ আছে, আর জাহান্নামের দাড়োগাও ১৯ জন। তাই ওলামায়ে কেরাম বলেন বিসমিল্লাহর এক একটি হরফ এক একজন দারোগার মাঝে আড়াল হয়ে যাবে। তাই সদা বিসমিল্লাহ পাঠকারীগন জাহান্নামের সাজা দানকারী ফেরেশতাদের দৃষ্টি থেকে বেঁচে যাবে।

 

আবার বিসমি ল্লাহির রাহমানির রাহিম এর মধ্যে শব্দ আছে ৪টি আর গুনাহও ৪ প্রকার হয়ে থাকে, প্রকাশ্য গুনাহ, গোপন গুনাহ, দিনের গুনাহ, রাতের গুনাহ।সুতরাং যে এ ৪টি শব্দ সব সময় আমল করবে এর বরকতে সে ৪ প্রকারের গুনাহ থেকে মাহফুজ থাকবে।

 

মানুষ যখন চিঠি লিখে তখন তার শুরুর বাক্য দিয়েই বুঝা যায় তার মুড কেমন, যেমন পিতা সন্তানকে যখন মহব্বতের সাথে চিঠি লিখে তখন সম্বোধন করে হে আমার প্রিয় সন্তান আর যদি কোন রাগ থেকে লেখে তখন এমন শব্দ দিয়ে শুরু করে তাতে বুঝা যায় পিতার মুড ভাল না, বিসমিল্লাহ হল পবিত্র কুরআনের মুল বিষয় যা প্রতিটি সুরার শুরুতেই আছে যাতে আল্লাহর রহমতের ২টি শব্দই বিদ্যমান রহমান এবং রহিম তাতে বুঝা যায় আল্লাহ তার বান্দার সদা ভালই চান। নতুবা (বিসমিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহহার)ও বলতে পারতেন। মুলত আল্লাহর রহমত সব কিছু থেকেই অগ্রগন্য তাইতো এরশাদ করেন (ইন্না রাহমাতি ওয়াছিয়াত কুল্লা শাই)অথ্যাৎ আমার রহমত সবকিছু থেকেই বিস্তৃত।

 

কুরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে ১১৩টির শুরুতে বিসমিল্লাহ আছে কিন্তু সুরা তওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ নাই এর কারন হিসেবে কোন কোন মুফাসসির বলেন সুরা তওবায় আল্লাহর আযাব ও গযবের কথা বয়ান হয়েছে বলে এ সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ নাই। মুলত বিসমিল্লাহ আল্লাহর আযাব ও গযবের বিপরীত, এর মধ্যে শুধু রহমতই রহমত।

 

আল্লাহ যে বান্দার প্রতি বেশী রহমত ওয়ালা তার আরো ১টি প্রমান হল আল্লাহ জাহান্নাম বানিয়েছেন ৭টি আর জান্নাত বানিয়েছেন ৮টি এতেও বুঝা যায় আল্লাহ তার বান্দাদের বেশী পরিমান জান্নাতে দিতে চান।

 

তাই সব ধরনের কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন ইনশাল্লাহ আপনার সব কাজে বরকত নেমে আসবে। শুধু খাবার সময় বিসমিল্লাহ বললে হবেনা, ঘরে প্রবেশ, ঘর থকে বের হওয়া, গাড়ীতে চড়া, যে কোন হালাল কাজ শুরু করার আগেই পড়ে নিন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহ তায়াল আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন।

 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.