কুরবানির মাসে লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা বিল্লাহ এর বিষ্ময়কর ফজিলত ও আমল

 

কুরবানির মাসে লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা বিল্লাহ এর বিষ্ময়কর ফজিলত ও আমল



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সম্মানিত দশক শ্রোতা মন্ডলী আসসালামু আলাইকুম, আজ আমি এই মাসে লা হাওলা ওয়ালা কয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ কিভাবে পড়বেন, কখন পড়বেন, কতবার পড়লে আল্লাহ তায়ালা গায়েবী সাহায্য দিবেন, সকল দারিদ্রতা দুর করে দিবেন, সকল বিপদ থেকে মুক্তি দিবেন, সকল দুঃখ মসিবত হটিয়ে দিবেন, সব ধরনের অসুস্থতা থেকে শেফা দিবেন তা আলোচনা করব এবং এই মাসে কেন এই জিকিরের এত গুরুত্ব তাও আলোচনা করব। আশা করি এই ছোট ও সহজ জিকিরটির নিয়ম জেনে নিবেন আর আমল করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন।

জিলহজ্জ মাস বড়ই বকরতময় একটি মাস, এ মাসে পৃথিবীর বুকে এমন এক ঘটনা ঘটেছে যা ২য় আরেকটি ঘটেনি, আল্লাহকে খুশি করার জন্য খলিলুলুল্লাহ নিজ সন্তানের গলায় ছুরি চালাতেও দ্বিধাবোধ করেনি, মুলত হযরত ইবরাহিম (আ) নিজের জান মাল সব আল্লাহর কাছে সপে দিয়েছেন, আর এই সপে দেয়ার শিক্ষা আছে একটি জিকিরে তা হল (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ) বান্দা যখন বলে লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ তখন আল্লাহ তায়ালা সাথে সাথে জবাব দেন (আছলামা আবদি ওয়াস তাসলামা) বন্ধু তুমি আমার কাছে সপে দিয়েছ আমিও সপে নিয়েছি। খলিলুল্লাহর সে স্মৃতিকে তাজা রাখার জন্য কেয়ামত পযন্ত উম্মতে মুহাম্মাদির জন্যও কুরবানিকে ওয়াজিব করা হয়েছে, এ মাস হজ্জের মাস, কুরবানির মাস, আরাফাতে অবস্থানের মাস, তাকবিরে তাশরীকের মাস, বেশী বেশী নফল এবাদত নফল রোজার মাস। জিকির আজকারের মাস। এ মাসে কিভাবে লা হাওলার জিকির করবেন আজ তা বিস্তারিত আলোচনা করব।

যাদের কুরআন মুখস্থ নাই কুরআন পড়তে পারেনা তাদের জন্য সুখবর

আবু দাউদ শরীফের ৮৩২ নং হাদিস

আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলেন, আমি কুরআন মুখস্থ করে রাখতে পারি না। অতএব আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন যা ক্কুরআন এর পরিবর্তে যথেষ্ট হবে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি বলবেঃ সুবহানাল্লাহ্, আলহামদু লিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। তখন ঐ ব্যক্তি বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই সব জিকির তো আল্লাহর জন্য- আমার জন্য কি? জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (তুমি এসব জিকির করার পর বলবে)  আল্লাহুম্মা ইরহামনী, (হে আল্লাহ আমাকে রহম কর,) ওয়ারযুকনী, (হে আল্লাহ আমাকে রিজিক দাও) ওয়া আফিনী (হে আল্লাহ আমাকে নিরাপত্তা দাও) ওয়াহদিনী (হে আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দাও)। অতঃপর রাবী বলেনঃ ঐ ব্যক্তি ঐগুলি হাতের অংগুলিতে গণনা করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এই ব্যক্তি উত্তম বস্তু দ্বারা তার হাত পরিপূর্ণ করেছে।

তাহলে আপনি প্রথমে বলবেন সুবহানাল্লাহ্, আলহামদু লিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

এরপর আপনার জন্য ৪টি বস্তু চাইবেন আল্লাহর দয়া, রিজিক, নিরাপত্তা, হেদায়েত, যা হলে আপনার দুনিয়া আখেরাতে আর কোন অভাব থাকবেনা।  এই আমলটি আপনি প্রতিদিন ১০০ বার করতে পারেন।  যদি তাও সম্ভব না হয় প্রতি নামাজের পর অন্তত ১ বার করবেন।

বুখারী শরীফের ৬৩৮৪ নং হাদিস আল্লাহর নবী (দ) বলেন লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ হল

كَنْزٌ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ

বেহেশ্তের রত্ন ভাণ্ডার সমূহের অন্যতম

আবার মুসলিম শরীফের ৭৩৬ নং হাদিস রাসুলুল্লাহ (দ) বলেন মুয়াজ্জীন যখন আযান দেয় তখন হুবহু শব্দগুলি দিয়ে জবাব দাও আর যখন হাইয়্যা আলাস সালাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলে তখন বল লা হাওলা ওয়ালা ‍কয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ

যে এই ভাবে মন থেকে জবাব দিবে (দাখালাল জান্নাহ) তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

তাহলে জান্নাত প্রত্যাশিদের জন্য ৫ ওয়াক্তে ৫ বার আযানের জবাব দেয়া খুবই সহজ একটি আমল,  

দারিদ্রতা দুর করার জন্য কতবার পড়বেন?

আল্লাহর নবী (দ) বলেন যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ ) পড়বে (লা এয়ামাছ্ছুহুল ফাকরু আবাদা) সারা জীবন তাকে দারিদ্রতা স্পশ করবেনা। তাহলে যারা অভাব দারিদ্রতা দুর করতে চান তারা এই তসবিহটি প্রতিদিন ১০০ বার পড়বেন

(লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ ) (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ ) (লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ )

লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা নেই; কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই। (বুখারি)

সুনানে আবু দাউদের ১৫০০ নং হাদিস- একদিন নবী করিম (দ) এক মহিলাকে পাথর দিয়ে গননা করে করে তসবিহ পাঠ করতে দেখলেন তখন তাকে বললেন আসমানে যা কিছু আছে, জমিনে যা কিছু আছে, আর আসমান জমিন ও তার মাঝে যা কিছু আছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু সৃষ্টি হবে তার সমান সংখ্যক ফজিলতময় হল (সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ)

আবার নামাজের সালাম ফিরিয়েও এই দোয়াটি পড়বেন যেমন সুনানে নাসাঈর ১৩৪২ নং হাদিস

আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে এই মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন তখন বলতেনঃ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ أَهْلَ النِّعْمَةِ وَالْفَضْلِ وَالثَّنَاءِ الْحَسَنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ

তাছাড়া সুনানে নাসাঈর ১৬২২ নং হাদিস- হুজুর পাক (দ) তাহাজ্জুদের নামাজে যে দীঘ দোয়া পড়তেন তাতেও লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাহ বিল্লাহ দিয়ে শেষ করতেন যেমন তিনি বলতেন

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيَّامُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ حَقٌّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ

وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

           

অতএব আপনি যদি তাহাজ্জুদ গুজার হন তাহলে নববী এই দোয়াটি তাহাজ্জুদ নামাজের পর পড়তে পারেন

 

সাগরের ফেনা পরিমাণ গুনাহ মাফ হয়
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলে,
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ তার অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির মতো (বেশি পরিমাণ) হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬০)

সাফওয়ান ইবনু সুলাইম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ফেরেশতাই লা- হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" পাঠ না করে উর্ধ্বাকাশের দিকে গমন করেন না।

"লা হাওলা ওয়ালা-কুয়্যাতা ইল্লা-বিল্লাহ"।

অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ক্ষমতা নেই।

এ দোয়াটি হলো ৯৯টি রোগের চিকিৎসা। যার মধ্যে সব চেয়ে ছোট রোগ হলো চিন্তা ও পেরেশানী।

(মিশকাত শরীফ খঃ ২, পৃঃ২৩, হাদিস নং ২৩২০)

 

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত মাকহুল রহ. বলেছেন, যে ব্যক্তি "লা হাওলা ওয়ালা-কুয়্যাতা ইল্লা-বিল্লাহ ওয়ালা মানজা মিনাল লাহি ইল্লা ইলাহি" পড়বে।

আল্লাহ তা'আলা তার থেকে ৭০ প্রকারের কষ্ট দূর করবেন। যার মধ্যে সব চেয়ে ছোট হলো দারিদ্র্যতা।

(তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ৩৬০১)

আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও আপনাদেরকে লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ এর জিকিরের মধ্যমে এসব অফুরন্ত নেয়ামত ও বরকত হাসিল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.