দোয়া কবুল হওয়ার আমল, সব দোয়া ১০০% কবুল হবে

 

দোয়া কবুল হওয়ার আমল, সব দোয়া ১০০% কবুল হবে

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম



যারা দোয়া করে করে ক্লান্ত, দোয়া কবুল হয়না বলে পেরেশান, তাদের জন্য সুখবর, আজ এমন কিছু পদ্ধতি বলব যে পদ্ধতি স্বয়ং নবীজি শিখিয়েছেন সাথে সাথে দোয়া কবুল হয়েছে, যে পদ্ধতি সাহাবারা অনুসরন করেছেন মুহুতের মধ্যে দোয়া কবুল হয়েছে, কিছুদিন আগে আমাদের বাংলাদেশেও এক জায়গায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করার সাথে সাথে দোয়া শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টি নেমে এসেছে। এটা অনেক বড় একটা আল্লাহর রহমত। সে রহমত কিভাবে লাভ করা হয়, সাহাবাগণ কোন পদ্ধতি অবলম্বন করত, কিভাবে দোয়া করে সাথে সাথে ফল পেত, সে ব্যপারে আজ হাদীস শরীফের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করব। দোয়াকবুলের ঘটনাগুলি অত্যন্ত চমৎকার ও সুক্ষ তাই বিষয়গুলি শেষ পযন্ত অবশ্যই মনযোগ সহকারে শুনবেন।

আপনারা যারা দোয়া করেন, আমল করেন তারা সব সময় একটা জিনিষ মনে রাখবেন, আমরা কেহ আল্লাহকে কোন বিষয়ে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখিনা। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করতে বাধ্য নন। আল্লাহ আমাদের রাসুলকে ভালোবাসেন, নবী করিম (দ) ফরমান- আমি দোয়া করলাম হে আল্লাহ আমার উম্মতের উপর যেন দুভিক্ষ না আসে। আল্লাহ ফরমালেন হাবিব আসবেনা।

হে আল্লাহ আমার উম্মতের চেহেরা যেন বিকৃত না হয়, গুনাহের কারনে যেন চেহেরা পরিবতন করে দেয়া না হয, আল্লাহ ফরমালেন হাবিব বদলাবেনা।

হুজুর ফরমালেন আমি দোয়া করলাম হে আল্লাহ আমার উম্মত যেন একে অপরের সাথে লড়াই ঝগড়া না করে, এই দোয়া করার পর আল্লাহ তায়ালা বলতে পারতেন হে হাবিব আপনার এই দোয়া কবুল করবনা, আল্লাহ হলেন অমুখাপেক্ষি, তিনি চাইলে কবুল করবেন চাইলে কবুল করবেন না।

কিন্তু আল্লাহ হাবিবকে বললেন হে মাহবুব আপনি আমার কাছে এই দোয়াটা করবেন না। হে হাবিব আপনি আমার কাছে দোয়া করবেন আর তা আমি কবুল করবনা তা হতে পারেনা।

নবী পাক (দ) মুনাফিকদের জন্য দোয়া করলেন হে আল্লাহ দয়া করুন, মুনাফিকদেরকেও ক্ষমা করে দিন। কিন্তু রব করিম নিষেধ করলেন হে মাহবুব এই দোয়াটিও করবেন না।

আল্লাহকে কেহ বাধ্য করতে পারেনা, তবে যদি আল্লাহ কাউকে ভালবাসেন, যেমন অনেকে বলে অমুককে সাথে নিয়ে এসেছে তাই আমি তার কথা ফেলতে পারিনি, এর মধ্যে ২টি দিক আছে ১টি হল ভালবাসা অপরটি হল ইজ্জত। অর্থ্যাৎ তার ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে আপনি তার কথা ফেলতে পারিনি, বা তার প্রতি ভালবাসার কারনে আমি তার কথা ফেলতে পারিনি। আল্লাহও নবীকে ভালবাসেন এবং নবীকে খুবই সম্মান দান করেন।

সে জন্য সাহাবায়ে কেরাম সকল বিষয়ে রাসুলের কাছে চলে যেতেন, পিপাসায় নবীর কাছে, ক্ষধায় নবীর কাছে, আবু হুরায়রার হেফজ শক্তির জন্য নবীর দরবারে, কারো সন্তানের প্রয়োজন নবীর কাছে, কারো সুস্থতার প্রয়োজন সেও নবী পাকের কাছে চলে যেত। অথচ সাহাবাগন জানত দিবেন আল্লাহ, তবে নবীর উসিলা হলে সে দোয়া ফেরত দিয়ে আল্লাহ লজ্জাবোদ করেন।

আর বুখারী মুসলিমের হাদিস (ইন্নামা আনা কাসেমুন) নিশ্চয়ই আমি হলাম বন্টনকারী।(ওয়াল্লাহু ইউতি) আর দান কারী হলেন আল্লাহ। সে জন্য সাহাবাগন হর হামেশা নবী পাকের ওয়াস্তে দোয়া করতেন। কারন তারা জানত যদি নবীর ওয়াস্তে দোয়া করা হয় তা আল্লাহ তায়ালা ফেরত দিবেন না।

সহীহ, ইবনু মাজাহ ১৩৮৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৫৭৮ সহ অসংখ্য হাদিসের কিতাবে আছে উছমান ইবন হুনায়ফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, জনৈক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ আল্লাহর কাছে দুআ করুন আমাকে যেন তিনি সুস্থ করে দেন। তিনি বললেনঃ তুমি যদি চাও তবে আমি দুআ করতে পারি। যদি চাও এর উপর সবর করতে পার। আর তা হবে তোমার জন্য কল্যাণকর। লোকটি বললঃ দুআ করে দিন। তখন তিনি খুব উত্তমরূপে উযূ করে এই দুআটি পড়তে তাকে নির্দেশ দিলেনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِي اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ

’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহূ ইলায়কা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির্ রহমতি ইন্নী তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা- রব্বী লিইয়াকযিয়া লী ফী হা-জাতী হা-যিহী আল্ল-হুম্মা ফাশাফ্‌ফি’হু ফিয়্যা’’

হে আল্লাহ! আমি তো তোমার কাছেই প্রার্থনা করছি, তোমার দিকেই মনোনিবেশ করছি রহমতের নবী তোমার নবী মুহাম্মাদের ওয়াসীলায়। আমি তো মনোনিবেশ করছি তোমার ওয়াসীলায় আমার এই প্রয়োজনে আমার রব্বের কাছেই যেন পূরণ হয় আমার এই প্রয়োজন। হে আল্লাহ! আমার বিষয়ে তাঁর সুপারিশ কবূল কর।

এই দোয়া করার পর অন্ধ সাহাবী সেখান থেকে চলে গেল কিছুক্ষন পর সে আবার ফিরে আসল তবে তখন তার দু চোখ সুস্থ, তার দৃষ্টি শক্তি সম্পূণ ফিরে এসেছে।

দেখুন হুজুর (দ) নিজেই নিজের অসিলা দিয়ে দোয়া করা শিখাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ। আর সাহাবায়ে কেরামও হুজুরের উসিলায় দোয়া করতেন।

হযরত ওমর ফারুক (রা) সাহাবীদের মধ্যে এলম ও আমলের দিক দিয়ে একজন প্রভাবশালী সাহাবী। হযরত ওমরের জামানায় একবার বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল, অবস্থা খুবই বেগতিক। সকলে ওমর ফারুকের কাছে এসে আরজ করে হুজুর এখন কি হবে?

প্রথমে যে হাদিস বয়ান করেছি তা তিরমিজি ও ইবনে মাজার হাদিস, আর এখন হযরত ওমরের যে ঘটনা বয়ান করছি তা সহি বুখারী শরীফে আছে। ওমরের জামানায় যখন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল, জনসাধারণ পেরেশান, ওমর (রা) নিজেও পেরেশান, অবশেষে হুজুর (দ) এর চাচা হযরত আব্বাস (রা) কে ডাকলেন, হযরত আব্বাস যখন আসলেন হযরত ওমর হযরত আব্বাসের হাত ধরে তাকে নিয়ে খোলা আসমানের নিচে চলে আসলেন। হযরত ওমর (রা) দোয়া করতে লাগলেন, যা গোটা উম্মতের জন্য অনেক বড় শিক্ষা। হযরত ওমর (রা) শিখাচ্ছেন যদি দোয়া কবুল করাতে হয় তাহলে এই পদ্ধতি অবলম্বন কর।

 اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا صلى الله عليه وسلم فَتَسْقِينَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا‏.

অর্থ্যাৎ হে আল্লাহ! আমরা অনাবৃষ্টি দেখা দিলে আমাদের নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াসিলা নিয়ে দুআ করতাম তুমি (আমাদের দুআ কবূল করে) বৃষ্টি বর্ষণ করতে, এখন আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা আব্বাস (রাঃ) এর ওয়াসিলায় বৃষ্টি বর্ষণের দুআ করছি। তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর।

এভাবে যখন হযরত ওমর দোয়া করেন সাথে সাথে বৃষ্টি নেমে আসত।

এটি বুখারী শরীফের ৩৭১০ নং হাদিস, এই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে সাহাবায়ে কেরাম নবীর উসিলায়ও দোয়া করতেন আর নবীর চাচা হযরত আব্বাস (রা) এর অসিলায়ও দোয়া করতেন। এবং দোয়া কবুল হত।

এখানে একটা কথা প্রনিধানযোগ্য যে দোয়া হযরত ওমর এর অসিলায়ও হতে পারত, কিন্তু হযরত ওমর (রা) যিনি হুজুরের আপনজন তার অসিলায় দোয়া করে এটাই শিক্ষা দিয়েছেন হে উম্মতেরা তোমরা হুজুরের প্রিয়ভাজন যারা তাদের অসিলায় দোয়া কর আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা দান করবেন।

এই ধরনের ক্লিয়ার হাদিস ক্লিয়ার শিক্ষা থাকা সত্বেও উম্মতের মধ্যে শুধু এখতেলাফ আর এখতেলাফ। এমন সহিহ গ্রহণযোগ্য হাদিস থাকা সত্বেও একদল বলে অসিলার দরকার নাই, ডাইরেক্ট দোয়া কর।

মনে রাখবেন আল্লাহ কোন অসিলার মুখাপেক্ষি নন, তবে আল্লাহ তায়ালা অসিলাকে পছন্দ করেন। যেমন আল্লাহ চাইলে সন্তান পিতা মাতার মাধ্যম ছাড়া দেয়ার ক্ষমতা রাখেন কিন্তু দেননা কারন আল্লাহ পিতা মাতার মাধ্যমে দেয়াকেই পছন্দ করেন।

তেমনি আল্লাহ রিজিকের মালিক, কিন্তু তিনি ডাইরেক্ট দেননা বরং কোন না কোন মাধ্যমে আল্লাহ রিজিক দান করেন। এই ধরনের সাধারণ বিষয়ও অনেকে আকলে ধরেনা। তাই তারা বলে ডাইরেক্ট । তাদের জানা দরকার অবশ্যই দিবেন আল্লাহ তবে তার জন্য যে অসিলা আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারন করে রেখেছেন, আমরা সে অসিলাকে অস্বীকার করতে পারিনা। তেমনি শেফা দানের মালিক আল্লাহ, কিন্তু তারপরও মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়, ঔষধ খায়, এসবকে সুস্থতার জন্য অসিলা হিসেবে গ্রহণ করে। ঔষধ নেয়ার পর ডাক্তারের পরামশ নেয়ার পর সুস্থতা দান করবেন আল্লাহ। আর এটাই হল আল্লাহর তরিকা।

এত সহজ বিষয়কেও কিছু মানুষ বিকৃত করে প্রচার করে। অথচ আল্লাহ কুরআনেও বলে দিয়েছেন (ওযাবতাগু ইলাইহিল ওয়াসিলা)

তেমনি ভাবে ইহুদীরা আমার নবীর আগমনের আগে আমার নবীর অসিলায় দোয়া করতেন, যুদ্ধে বিজয় কামনা করতেন, যে  কথা আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ৮৯ নং আয়াতে বয়ান করে দিয়েছেন।

ইমাম হাকেম তার হাদীস গ্রন্তে লিখেন

হযরত আদম (আ) এর দোয়া ৩০০ বছর পর কবুল হয়েছে নবী পাক (দ) এর অসিলায়। ইমাম হাকেম লিখেন আল্লাহ তায়ালা বলেন (ফাতালাক্কা আদামু মির রাব্বিহি কালিমাত) আল্লাহ তায়ালা জনাব আদম কে কিছু কলমা শিখিয়ে দিলেন, যার বরকতে তওবা কবুল হয়েছে। সে কালিমা গুলি কি ছিল?

ইমাম হাকেম বলেন- আদম (আ) ৩০০ বছর কান্নাকাটির পর একদিন হঠাৎ বলেন হে আল্লাহ যখন আমি জান্নাতে আমার চোখ খুললাম জান্নাতের দরজায় লিখা দেখলাম (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ)  জান্নাতের সকল গাছ সকল পাতায় পাতায় আমি এই কলমা লিখা দেখেছি,  হে আল্লাহ যে রাসুলের নাম তুমি জান্নাতের গাছের পাতায় পাতায় লিখে দিয়েছ তার অসিলায় আমার তওবা কবুল করে নাও। তখন সাথে সাথে আল্লাহ বললেন (ফাতাবা আলাইহি ইন্নাহু হুয়াত তাওয়্যাবুর রাহিম) যাও আমি তোমার তওবা কবুল করেছি, আমি বড়ই তওবা কবুলকারী।

শেখ সাদী লিখেন যদি তোমার পিতা আদম এর তওবা মোস্তফার অসিলায় কবুল হতে পারে তাহলে তুমি কেন সে অসিলা গ্রহণ করতে অস্বীকার কর?

অথচ সাহাবাগনই সবচেয়ে বেশী অসিলা দিতেন, একদিন অনাবৃষ্টির কারনে সাহাবাগন আম্মাজান আয়শার কাছে গিয়ে অভিযোগ করলেন, আম্মাজান আয়শা তাদেরকে বলেননি মসজিদে গিয়ে ডাইরেক্ট দোয়া কর, বরং আম্মাজান আয়শা (রা) সাহাবাদেরকে বলেন হুজুর (দ) এর কবরে আনোয়ারের উপর যে ছাদ আছে সে হুজুরের চেহেরা মোবারক সোজা খুলে দাও, সাহাবীগণ বলেন আমরা সামান্য করে ছাদ খুলতে দেরি বৃষ্টি শুরু হতে দেরী হয়না। সুবহানাল্লাহ।

সুতরাং আমরা যারা দোয়া কবুল হয়না বলে শ্লোগান দিয়ে থাকি, তাদের জন্য এই হাদীস, এই সব কোরআন, এই সব ঘটনাসমুহের মধ্যে অনেক বড় দিক নিদেশনা আছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

 

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.