হাদিসে বর্ণিত ৫টি বরকতময় তাসবিহ
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি
খুব সহজ কিছু তাসবিহ জিকির এবং ৪ রাকাত
নামাজের নিয়ম বলব যে সব তাসবিহ আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে। আপনাকে অন্যদের
তুলনায় অগ্রগামি করে দিবে, আজ প্রতিটি তাসবিহ হাদীস শরীফের আলোকে বয়ান করব ইনশা আল্লাহ,
কোন তসবিহ কখন পড়বেন কতবার পড়বেন তাও জানাব। কোন তসবিহ পড়লে আপনার কি ফায়দা হবে
বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের সাথেই শেষ পযন্ত থাকবেন আশা রাখি।
তাসবিহ পাঠ করতে হয়
ঘুমানের সময়, ঘুম থেকে উঠে, নামাজের পর বিশেষ করে ফজরের পর ও আসরের পর এই সময়
তাসবিহ পাঠের ব্যপারে পবিত্র কুরআনেও নির্দেশ আছে যেমন
বুখারীর শরীফের ৫৫৪ নং
হাদিস
জরীর ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে
তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে
দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার আগের
সালাত (নামায/নামাজ) (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে।
তারপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন,
وَسَبِّحْ بِحَمْدِ
رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ)
“কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্
পাঠ কর সূর্য উদয়ের আগে ও অস্ত যওয়ার আগে।
এই হাদীস থেকে বুঝা যায়
ফজরের নামাজের পর সুয উঠার আগে এবং আসরের পর সুয ডুবার আগে তাসবিহ পড়লে সবচেয়ে বড়
পুরস্কার আল্লাহর দিদার নসিব হবে। সুবহানাল্লাহ
ঘুমানোর আগে কি তাসবিহ
পড়বেন
বুখারী শরীফের ৬৩১৮ নং
হাদিস
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
একবার গম পেষার চাক্কি ঘুরানোর কারনে ফাতিমা (রাঃ) এর হাতে ফোস্কা পড়ে গেল। তখন
তিনি একটি খাদেম চেয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
এলেন তিনি তাকে পেলেন না। তখন তিনি আসার উদ্দেশ্যটি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট ব্যক্ত
করে গেলেন। এরপর তিনি যখন ঘরে এলেন তখন আয়িশা (রাঃ) এ বিষয়টি তাকে জানালেন। তারপর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এমন সময় আসলেন যখন আমরা বিছানায়
বিশ্রাম গ্রহণ করেছি। তখন আমি উঠতে চাইলে তিনি বললেন নিজ জায়গায়ই থাকো। তারপর
আমাদের মাঝখানেই তিনি এমনিভাবে বসে গেলেন যে, আমি তার দু’পায়ের শীতল স্পর্শ আমার
বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেন আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল বাতলে দেবনা যা তোমাদের
জন্য একটি খাদেমের চাইতেও অনেক বেশী উত্তম। যখন তোমরা শয্যা গ্রহন করতে যাবে, তখন
তোমরা আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার পড়বে। এটা
তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চাইতেও অনেক বেশী মঙ্গলজনক। ইবনু সীরীন (রহঃ)
বলেনঃ তাসবীহ সুবহানাল্লাহ হল ৩৪ বার।
এরপর রাতে ঘুম থেকে উঠে
কি তাসবিহ পড়বেন?
সুনানে নাসাইর ১৬২০ নং
হাদিস আসিম ইবনু হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে
জিজ্ঞাসা করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত
হওয়ার পর কি করতেন? তিনি বললেন, তুমি আজ আমাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছ, যে
বিষয়ে তোমার পূর্বে অন্য কেউ আমাকে প্রশ্ন করেনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দশবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) দশবার তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ)
দশবার তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) দশবার তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং
দশবার ইস্তিগফার (আস্তাগফিরুল্লাহ) পড়তেন
নেকিতে সকলের থেকে অগ্রগামি হওয়ার জন্য ৪টি তাসবিহ
সুনানে নাসাইর ১৩৫৬ নং
হাদিস ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু দরিদ্র লোক (একদা)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ!
ধনীরাও সালাত আদায় করে থাকে যেমনিভাবে আমরা আদায় করে থাকি আর তারাও সিয়াম পালন করে
থাকে যেমনিভাবে আমরা পালন করে থাকি, কিন্তূ তাদের জন্য রয়েছে সম্পদ, যা থেকে তারা
দান-সাদাকা করে থাকে এবং গোলাম (কিনে) আযাদ করে থাকে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমরা সালাত আদায় করবে, তখন বলবে, সূবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আল
হামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহ আকবার ৩৩ বার এবং লা-ইলাহা ইলাল্লাহ ১০ বার। কেননা এর
দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমপর্যায়ে পৌছে যেতে পারবে এবং তোমাদের
পরবর্তী থেকে অগ্রগামী হয়ে যেতে পারবে।
সমস্ত গুনাহ মাফ করানোর
২টি তাসবিহ
সুনানে নাসাইর ১৩৫৭ নং
হাদিস আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের সালাতের পর একশত বার সূবহানাল্লাহ এবং একশত
বার লা-ইলাহা ইল্লালাহ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনাসম
হয়।
সালাতুত তাসবিহ পড়ার
নিয়ম
ইবনে মাজার ১৩৮৬ নং
হাদিসে এই তাসবিহর নামাজের ব্যপারে আছে
আবূ রাফি (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিন বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাস (রাঃ) কে
বললেনঃ হে চাচাজান! আমি কি আপনার অবাধ্য হতে বিরত থাকবো না, আমি কি আপনার উপকার
করবো না, আমি কি আপনার সাথে আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবো না? তিনি বলেন, হ্যাঁ,
হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি বলেনঃ তাহলে আপনি চার রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ুন।
আপনি প্রতি রাকআতে সূরাহ ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাও পড়ুন।
তিরমিজি শরীফের ৪৮১ নং
হাদিসে এই নামাজের নিয়ম
তাকবীর
বলার পর বলবেঃ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
পরে
পনরবার পাঠ করবে: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ পরে আউযূবিল্লাহ্- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, পরে
সুরা ফাতিহা ও অন্যা একটি সূরা পাঠ করে দশবার পাঠ করবেঃ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
পরে রুকূতে যেয়ে দশবার, রুকূ থেকে মাথা তুলে দশবার, সিজদায় গিয়ে দশবার, সিজদা থেকে
মাথা তুলে দশবার। দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে দশবার পাঠ করবে। এইভাবে চার রাকআত আদায়
করবে। এতে প্রতি রাকআতে মোট পঁচাত্তারবার তাসবীহ পাঠ করা হবে।
পনরবার তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে শুরু হবে প্রতি রাকআত। পরে কির’আত হবে, এরপর হবে দশবার তাসবীহ পাঠ। রাতে
এই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা হলে প্রতি দু’রাকআত পর সালাম ফিরান আমার নিকট অধিক প্রিয় বলে গণ্য।
আর দিনে আদায় করা হলে ইচ্ছা করলে দু’রাকআত পর সালাম ফিরাতেও পার, ইচ্ছা হলে না-ও ফিরাতে
পার।
রিয়াদুস
সোয়ালিহিন এর ১১৮ নং হাদিস
আবূ
যার্র রাদিয়াল্লাহু ’আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ’’তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে
প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ রয়েছে। সুতরাং
প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদু
লিল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক
তাকবীর (আল্লাহু আকবার বলা) সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে
নিষেধ করা সাদকাহ। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশতের দু’রাক্আত নামায যথেষ্ট হবে।
আল্লাহ
তায়ালা আমাদেরকে এতক্ষণ পযন্ত যে সব তাসবিহ তাহলিলের নামাজের হাদীস শুনলাম সেগুলি
আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই