মানুষের প্রিয় পাত্র হওয়ার আমল। রোজা সাকিব মুস্তাফাঈ
আল্লামা মাওলানা রেজা সাকিব মুস্তাফাঈ, একজন ইসলামিক স্কলার, সারা দুনিয়ায়
তিনি দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন, যার বয়ানে আছে যেন যাদু, মুসলমান অমুসলমান
সকলেই তার বয়ান খুব পছন্দ করেন। তিনি তার এক বয়ানে বলেন আমার এক ওস্তাদ আছে তিনি একদিন
আমাকে এসে বলেন লোকজন বলাবলি করে রেজা সাকিব এর কাছে তজকিরে কুলুবের ওজিফা আছে।
সে সকালে যখন সুয উদিত হয় তখন সে এই ওজিফা পড়ে, তার মাহফিলে যে লক্ষ
লক্ষ লোকের ঢল সারা বিশ্বের মুসলমানরা যে তাকে ভালোবাসে তা একমাত্র তার এই ওজিফার
বরকত। তখন আমি বললাম ওস্তাদজি আপনি যদি এজাজত দেন তাহলে আজকে আমি মানুষের কাছে আমার
সে গোপন ওজিফাটি বলে দিব।
প্রিয় বন্দুরা আপনারা এতক্ষণে বুঝে গেছেন আজকে যে ওজিফার কথা বলতে যাচ্ছি
তা অতিব চমৎকার একটি ওজিফা। যে ওজিফার বরকতে আপনি যেখানেই যাবেন সেখানেই আপনার কদর
হবে, লোক আপনাকে মহব্বত করতে থাকবে, আপনাকে এক নজর দেখার জন্য মানুষের ঢল নামবে। আল্লাহ
এমন ইজ্জত সম্মান দান করবেন আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।
মাওলানা রেজা সাকিব কেন এত পপুলার মানুষের কাছে প্রিয়ভাজন সেটার রহস্য
স্বয়ং তিনিই বলেছেন তা পরে বলব
আগে সব মানুষের কাছে প্রিয়পাত্র হওয়ার কয়েকটি কুরানি আমল বলছি তা আয়ত্ব
করে নিন
প্রথম আমল হল - যে সুরা মুহাম্মাদ লিখে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে পান
করবেন তার ব্যাপক সম্মান হবে। এটি অনেক পরিক্ষিত আমল।
যে ব্যক্তি সুরা হিজর এর ১৬-১৭ নং আয়াত আংটির পাথরের উপর খোদাই করে
ধারন করলে সে মানুষের প্রিয় ভাজন হবে
আয়াত ২টি হল
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاء بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ
নিশ্চয় আমি আকাশে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে দর্শকদের
জন্যে সুশোভিত করে দিয়েছি। [সুরা হিজর - ১৫:১৬]
وَحَفِظْنَاهَا مِن كُلِّ شَيْطَانٍ رَّجِيمٍ
আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ করে
দিয়েছি। [সুরা হিজর - ১৫:১৭]
৩য় আমলটি হল- আল্লাহ তায়ালার নাম ঘুমানোর সময় বেশী বেশী
পড়বেন আল্লাহর যে ৯৯ নাম আছে সেগুলি পড়বেন
১. ইলাহ বা উপাস্য নাই, তিনি ২.
আর-রাহমানু (পরম দয়ালু), তিনি ৩. আর-রাহিমু (সীমাহীন করুণাময়), ৪. আল-মালিকু (সত্ত্বাধিকারী),
৫. আল-কুদ্দুসু (মহাপবিত্র), ৬. আস-সালামু (শান্তিদাতা), ৭. আল-মুমিনু (নিরাপত্তাদাতা),
৮. আল-মুহাইমিনু (রক্ষণা-বেক্ষণকারী), ৯. আল-আজিজু (মহাপরাক্রমশালী), ১০. আল-জাব্বারু
(মহাপ্রতাপশালী)
১১. আল-মুতাকাব্বিরু (মহাগৌরবের
অধিকারী)। ১২. আল-খালিকু (সৃষ্টিকর্তা), ১৩. আল-কারিমু (উদ্ভাবনকারী), ১৪. আল-মুসাব্বিরু
(আকৃতিদানকারী), ১৫. আল-গাফফারু (অসীম ক্ষমাশীল), ১৬. আল-কাহ্হারু (মহাপরাক্রমশালী),
১৭. আল-ওয়াহ্হাবু (মহান দাতা), ১৮. আর-রাজ্জাকু (রিজিকদাতা), ১৯. আল-ফাত্তাহু (মহা
বিজয়দানকারী), ২০. আল-আলিমু (মহাজ্ঞানী)
২১. আল-ক্বাবিদু (হরণকারী), ২২.
আল-বাসিতু (সম্প্রসারণকারী)। ২৩. আল-খাফিদু (অবনতকারী), ২৪. আর-রাফিয়ু (উন্নতকারী),
২৫. আল-মুয়িজু (মার্যাদাদানকারী), ২৬. আল-মুজিল্লু (অপমানকারী), ২৭. আস-সামিয়্যু (সর্বশ্রোতা),
২৮. আল-বাসিরু (সর্বদ্রষ্টা) ২৯. আল-হাসিবু (মহাবিচারক), ৩০. আল-আদিলু (ন্যায়পরায়ণ)
৩১. আল-লাতিফু (সুক্ষ্মদর্শী),
৩২. আল-খাবিরু (মহা সংবাদ রক্ষক), ৩৩. আল-হালিমু (মহা সহিঞ্চু), ৩৪. আল-আজিমু (মহান),
৩৫. আল-গাফুরু (ক্ষমাশীল), ৩৬. আশ-শাকুরু (গুণগ্রাহী), ৩৭. আল-আলিয়্যু (মহাউন্নত),
৩৮. আল-কাবিরু (সর্বাপেক্ষা বড়), ৩৯. আল-হাফিজু (মহারক্ষক), ৪০. আল-মুকিতু (মহান শক্তিদাতা)।
৪১. আল-হাসিবু (হিসাব গ্রহণকারী),
৪২. আল-জালিলু (মহা মহিমাময়), ৪৩. আল-কারিমু (মহা অনুগ্রহশীল), ৪৪. আর-রাকিবু (মহাপর্যবেক্ষণকারী),
৪৫. আল-মুজিবু (মহান কবুলকারী), ৪৬. আল-ওয়াসিয়ু (মহাবিস্তারকারী), ৪৭. আল-হাকিমু (মহাপ্রজ্ঞাময়),
৪৮. আল-ওয়াদুদু (প্রেমময় বন্ধু), ৪৯. আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত), ৫০. আল-বায়িসু (পুনরুত্থানকারী)
৫১. আশ-শাহিদু (সর্বদর্শী), ৫২.
আল-হাক্কু (মহাসত্য), ৫৩. আল-ওয়াকিলু (মহান দায়িত্বশীল), ৫৪. আল-ক্বাজিয়্যু (মহাশক্তি
ধর), ৫৫. আল-মাতিনু (চূড়ান্ত সুরক্ষিত ক্ষমতার অধিকারী), ৫৬. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অভিভাবক),
৫৭. আল-হামিদু (মহাপ্রশংসিত)। ৫৮. আল-মুহসিয়্যু (পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব গ্রহণকারী), ৫৯.
আল-মুবদিয়ু (সূচনাকারী), ৬০. আল-মুঈদু (পুন:সৃষ্টি কারী)
৬১. আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব), ৬২.
আল-কাইয়ূমু (চিরস্থায়ী), ৬৩. আল-মুহইয়্যু (জীবনদানকারী), ৬৪. আল-মুমিতু (মৃত্যুদানকারী),
৬৫. আল-ওয়াজিদু (ইচ্ছাপূরণকারী), ৬৬. আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত), ৬৭. আল-ওয়াহিদু (একক
সত্ত্বা), ৬৮. আস-সামাদু (অমুখাপেক্ষী), ৬৯. আল-ক্বাদিরু (সর্বশক্তিমান), ৭০. আল-মুক্তাদিরু
(মহান কুদরতের অধিকারী)
৭১. আল-মুকাদ্দিমু (অগ্রসরকারী),
৭২. আল-মুয়াখখিরু (বিলম্বকারী), ৭৩. আল-আউয়ালু (অনাদি), ৭৪. আল-আখিরু (অনন্ত), ৭৫.
আজ-জাহিরু (প্রকাশ্য), ৭৬. আল-বাতিনু (লুক্কায়িত)। ৭৭. আল-ওয়ালিয়্যু (মহান অধিপতি),
৭৮. আল-মুতাআলিয়ু (চিরউন্নত), ৭৯. আল-বার্রু (কল্যাণদাতা), ৮০. আত-তাউওয়াবু (মহান তওবা
কবুলকারী)
৮১. আল-মুন্তাকিমু (প্রতিশোধ গ্রহণকারী),
৮২. আল-আফুউ (ক্ষমাকারী), ৮৩. আর-রাউফু (অতিশয় দয়ালু), ৮৪. মালিকুল মুলকি (সর্বভৌম
ক্ষমতার অধিকারী), ৮৫. জুল-জালালি ওয়াল ইকরামি (গৌরব ও মহত্ত্বের অধিকারী), ৮৬. আল-মুকসিতু
(ন্যায়পরায়ণ), ৮৭. আল-জামিয়ু (একত্রকারী), ৮৮. আল-গানিয়্যু (ঐশ্বর্যের অধিকারী)। ৮৯.
আল-মুগনিয়ু (ঐশ্বর্যদানকারী), ৯০. আল-মানিয়ু (প্রতিরোধকারী)
৯১. আদ-দারু (অনিষ্টকারী), ৯২.
আন-নাফিয়ু (উপকারকারী), ৯৩. আন-নূরু (জ্যোতি), ৯৪. আল-হাদিয়ু (পথ প্রদর্শনকারী), ৯৫.
আল-বাদিয়ু (সূচনাকারী), ৯৬. আল-বাকিয়ু (চিরবিরাজমান), ৯৭. আল-ওয়ারিসু (স্বত্বাধিকারী),
৯৮. আর-রাশিদু (সৎপথে পরিচালনাকারী), ৯৯. আস-সাবূরু (মহাধৈর্যশীল)।
৪থ আমল হল অনেক আউলিয়াকেরাম লিখেছেন যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম ৬২২৫ বার লিখে নিজের কাছে রাখবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান
করবেন এটি পরীক্ষিত আমল।
৫ম আমল
যে ব্যক্তি সুরা আল ইমরানের ১৫৪ নং আয়াত ৭ বার পড়ে কোন
জায়গায় যাবে কোন মজলিসে যাবে সকলে তার সম্মান করবে
ثُمَّ أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّن بَعْدِ الْغَمِّ أَمَنَةً نُّعَاسًا يَغْشَى طَآئِفَةً مِّنكُمْ وَطَآئِفَةٌ قَدْ أَهَمَّتْهُمْ أَنفُسُهُمْ يَظُنُّونَ بِاللّهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ يَقُولُونَ هَل لَّنَا مِنَ الأَمْرِ مِن شَيْءٍ قُلْ إِنَّ الأَمْرَ كُلَّهُ لِلَّهِ يُخْفُونَ فِي أَنفُسِهِم مَّا لاَ يُبْدُونَ لَكَ يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هَاهُنَا قُل لَّوْ كُنتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلَى مَضَاجِعِهِمْ وَلِيَبْتَلِيَ اللّهُ مَا فِي صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحَّصَ مَا فِي قُلُوبِكُمْ وَاللّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
অতঃপর
তোমাদের উপর শোকের পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মত। সে তন্দ্রায়
তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঝিমোচ্ছিল আর কেউ কেউ প্রাণের ভয়ে ভাবছিল। আল্লাহ সম্পর্কে
তাদের মিথ্যা ধারণা হচ্ছিল মুর্খদের মত। তারা বলছিল আমাদের হাতে কি কিছুই করার
নেই? তুমি বল, সবকিছুই আল্লাহর হাতে। তারা যা কিছু মনে লুকিয়ে রাখে-তোমার নিকট
প্রকাশ করে না সে সবও। তারা বলে আমাদের হাতে যদি কিছু করার থাকতো, তাহলে আমরা
এখানে নিহত হতাম না। তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই
বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে। তোমাদের বুকে
যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা, আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে
তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন। [সুরা ইমরান
- ৩:১৫৪]
এবার আসুন
আল্লামা রোজ সাকিব মুস্তাফাঈ নিজের জনপ্রিয়তার কারন হিসেবে কি ওজিফার কথা বলেছেন
তা জেনে নিই
তিনি বলেন
লোকে বলে আমি সকালে সুয উঠার সময় ওজিফা করি আসলে আমার ওজিফা শুরু হয় সকাল থেকে আর
শেষ হয় রাত ১০ টা ১১ টায়, আমার এই ওজিফা এক জায়গায় দাড়িয়ে বা বসে করা যায়না, সারা
দিনের বেশীর ভাগ সময় আমি অলি গলি বাজার হল মাঠে ময়দানে মসজিদে দ্বীনের খেদমত করে
যাচ্ছি, আপনিও রাত দিন দ্বীনের খেদমত করুন, এভাবে ৬ মাস লাগাতার নিঃস্বার্থ খেদমত
করেন , পিছনে ফিরে তাকাবেন না কে আপনার সুনাম করছে কে কি বলছে, দেখবেন জামানা
আপনার কদমে চুমু খাবে। মেহনত করুন এটাই হল তজখিরে কুলুবের ওজিফা। হকের উপর চললে
মানুষ গালি দিবে, গালি নয় এখনতো হকের উপর চললে গুলিও চালায়, একসময় মানুষ যুক্তি ও
দলিল দিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করত, আর এখন নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য গালাগালি
গুলাগুলিও শুরু হয়ে গেছে।
আল্লাহ
তায়ালা সকলকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।
কোন মন্তব্য নেই