প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ও সোমবার এর দোয়া আমল ওজিফার মুজেজা
প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ও সোমবার এর দোয়া আমল ওজিফার মুজেজা
প্রিয় বন্ধুরা আজকে সহিহ হাদীস শরীফের আলোকে এমন কিছু আমল ওজিফা আপনাদের
সাথে শেয়ার করব যা আপনার দুনিয়া ও আখেরাতকে সমুজ্জল করে দিবে, দুনিয়ার জীবনেও আপনি
কামিয়াব আখেরাতেও আপনি কামিয়াব হতে পারবেন। আমল গুলি বুঝার জন্য খুব মনযোগ দিয়ে প্রতিটি
হাদিস শুনতে হবে। মাঝে মাঝে শুনে আজকের আমলগুলি বুঝা সম্ভব নয়। তাই ধৈর্য্য ধারণ করে
অবশ্যই শেষ পযন্ত শুনার অনুরোধ রইল।
তিরমিজি শরীফের ৩৩৩৪ নং হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ
اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
আবু হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
" إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا أَخْطَأَ
خَطِيئَةً نُكِتَتْ فِي قَلْبِهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ
বান্দা
যখন কোন গুনাহ করে তখন তার হৃদয়ে একটি কাল দাগ পড়ে।
فَإِذَا هُوَ نَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ وَتَابَ
سُقِلَ قَلْبُهُ
পরে যখন
সে গুনাহ থেকে বিরত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তাওবা করে তখন তার হৃদয় উজ্জ্বল হয়ে
যায়।
وَإِنْ عَادَ زِيدَ فِيهَا حَتَّى
تَعْلُوَ قَلْبَهُ وَهُوَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ : (كلاَّ بَلْ رَانَ
عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ) "
কিন্তু সে যদি গুনাহ বারবার পুনরাবৃত্তি করে তবে কাল
দাগ বৃদ্ধি পায়। এমনকি তার হৃদয়ের উপর তা প্রবল হয়ে উঠে। (তার অন্তরের উপর গাঢ় কালো
আবরন পরে যায়) এই আবস্থাটিকেই আল্লাহ তাআলা
(মরচে পড়া) বলে উল্লেখ করেছেনঃ (كلاَّ بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا
يَكْسِبُونَ) - কখনও নয়, বরং এদের কৃতকর্মেও দরুন এদের হৃদয়ে জং ধরেছে। (সূরা মুতাফফিফীন
৮৩ঃ ১৪)।
আফসুস যারা একই গুনাহ বারবার করতে করতে নিজের অন্তরকে কালো আবরনে আবৃত করে
ফেলেছে তাদেরকে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার থেকে পর্দার অন্তরালে পাঠিয়ে দেয়া
হবে অথ্যাৎ তাদের দিকে আল্লাহ তাকাবেনও না, এবং তারা হবে জাহান্নামি
যেমন সুরা মুতাফফিফিনের ১৫-১৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন
كَلَّا
إِنَّهُمْ عَن رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ
কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে
থাকবে। [সুরা মুতাফফিফীন - ৮৩:১৫]
ثُمَّ
إِنَّهُمْ لَصَالُوا الْجَحِيمِ
অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [সুরা মুতাফফিফীন
- ৮৩:১৬]
সুতরাং ছোট ছোট গুনাহ মনে করে তা যদি বারবার করতে থাকেন তা এক সময় আপনার
অন্তরকে কালো করে দিবেন তাই ছোট গুনাহকে হালকা মনে করা যাবেনা যেমন এ ব্যপারে বুখারী
শরীফের ৬৩০৮ নং হাদিস প্রনিধানযোগ্য
’আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ)বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট
মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা
তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার
নাকে বসে চলে যায়।
আফসুসের সাথে বলতে হয় আজকাল মুসলমানের ছেলেরা মোবাইল দিয়ে এত এত গুনাহ করছে
অহরহ গুনাহ করছে আর তারা মনে করছে এটা কোন গুনাহই না, এই কবিরা গুনাহকে তারা নাকের
ডগায় মাছি বসার মত হালকা মরে করছে, নাউজুবিল্লাহ।
মসনদে আহমদের ২২৮০৮ নং হাদিস
عَنْ سَهْلِ بن سَعْدٍ
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ،
فَإِنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَمَثَلِ قَوْمٍ نَزَلُوا بَطْنَ وَادٍ
فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتّٰـى حَمَلُوا مَا أَنْضَجُوا بِهِ
خُبْزَهُمْ، وَإِنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يَأْخُذْ بِهَا
صَاحِبُهَا تُهْلِكْهُ
সাহল বিন সাদ (রাঃ) কর্তৃক
বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা ছোট ছোট তুচ্ছ পাপ থেকেও
দূরে থেকো। কেননা, ছোট ও তুচ্ছ গোনাহসমূহের উপমা হল এরূপ, যেরূপ একদল লোক (সফরে গিয়ে)
এক উপত্যকার মাঝে (বিশ্রাম নিতে) নামল। অতঃপর এ একটা কাঠ, ও একটা কাঠ এনে জমা করল।
এভাবে অবশেষে তারা এত কাঠ জমা করল, যদ্দ্বারা তারা তাদের রুটি পাকিয়ে নিতে পারল। আর
ছোট ছোট তুচ্ছ পাপের পাপীকে যখন ধরা হবে তখন তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে।
(অর্থ্যাৎ একটি একটি
ছোট ছোট লাকড়ি যখন অনেক হয়ে যায় সে লাকড়ি দিয়ে যেমন রান্না সম্পন্ন করা সম্ভব তেমনি
ছোট ছোট পাপসমুহও যখন একত্র হবে সবগুলি মিলে সে পাপিকে ধ্বংস করার জন্য যথেস্ট হবে।
(আহমাদ ২২৮০৮, ত্বাবারানী ৫৭৩৯, বাইহাকীর শুআবুল
ইমান, সহীহুল জামে’ ২৬৮৬)
অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং ছোট গুনাহ থেকেও
বেঁচে থাকা তারপর প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমাদের আমলনামা আল্লাহর সামনে পেশ করা
হবে, আমলনামা যেন গুনাহমুক্ত ভাবে আল্লাহর কাছে পৌঁছে সে জন্য কি করবেন? হাদীস শরীফে
আছে
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم:
«تُعْرَضُ الأَعْمَالُ فِي كُلِّ اثْنَيْنِ وَخَمْيسٍ، فَيَغْفِرُ
اللهُ لِكُلِّ امْرِئٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئاً
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার
আমলসমূহ পেশ করা হয়। সুতরাং প্রত্যেক সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যে আল্লাহর
সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করেনি।
সে জন্য প্রত্যেক বৃহস্পতিবার
ও সোমবার আসরের পর দোয়া করবেন, হে মাবুদ আমি যদি নিজের অজান্তে কোন শিরিক করে থাকি
তাহলে তওবা করছি হে আল্লাহ আমার আমলনামা আজ আপনার সামনে যাবে যদি আমার কোন শিরিকের
গুনাহ হয়ে থাকে আমাকে মাফ করে দিন। যাতে শিরিকমুক্ত আমলনামা যেন আল্লাহ সামনে পৌঁছে।
যেহেতু আল্লাহ শিরিকের অপরাধ ক্ষমা করেন না তাই প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার
এই দোয়া বেশী বেশী করবেন।
এছাড়া আরো ১টি অপরাধ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেননা। সেটা হল এক ভায়ের সাথে
যদি অন্য ভায়ের মাঝে হিংসা বিদ্বেষ থাকে
، إِلاَّ امْرَءاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ،
فَيَقُولُ : اتْرُكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا» . رواه مسلم
আর সেই ব্যক্তিকেও
ক্ষমা করা হবেনা, যার সাথে তার অন্য মুসলিম ভাইয়ের শত্রুতা থাকে হিংসা বিদ্বেষ থাকে।
তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এদের দুজনকে সন্ধি করা একে অপরের সাথে হিংসা বিদ্বেষ
ভুলে সংশোধণ হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। (মুসলিম)
মুসলিম ২৫৬৫, তিরমিযী ৭৪৭, ২০২৩, আবূ দাউদ
৪৯১৬, ইবনু মাজাহ ১৭৪০, আহমাদ ৭৫৮৩, ৮১৬১, ৮৯৪৬, ৯৯০২, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮৬, ১৬৮৭
দেখুন মুসলমান শিরিক থেকে বেঁচে থাকতে পারে, যদিও ভুলে হয়ে যায় তার জন্য
অপশন আছে তওবা করা, কিন্তু আরো একটি দোষ যদি আমাদের মাঝে থাকে তাহলেও আমাদের ক্ষমা
নাই, আর সে দোষটা প্রায় সকলের মধ্যেই পাওয়া যায়।
এক ব্যবসায়ী পাশের ব্যবসায়ীকে হিংসা করে, আপন ভাই বাইকে সহ্য করতে পারেনা।
এক ভাই একটু ভালোভাবে চললে আরেক ভাই সহ্য করতে পারেনা, সব সময় কামনা করে ভাই যেন বিপদে
পরে। সুতরাং যাদের মনের ভিতর কোন মুসলমান ভায়ের প্রতি বিদ্বেষ থাকে তারা বৃহস্পতিবার
ও সোমবার দিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন আর নিজে নিজে বলবেন হে আল্লাহ আমি আমার ভায়ের
প্রতি বিদ্বেষ রাখতাম আজ সোমবার দিন আমি তওবা করছি আমি আমার ভাইয়ের প্রতি কোনদিন আর
বিদ্বেষ পোষন করবনা।
অতএব সবশেষ কথা হল বড় গুনাহ ছোট গুনাহ সব গুনাহকে পাহাড়ের মত মনে করতে হবে,
গুনাহ হয়ে গেলে গুনাহ মাফ চাইতে হবে, শিরিকমুক্ত থাকতে হবে, এবং কোন মুসলমান ভায়ের
প্রতি বিদ্বেষ পোষন করা যাবেনা, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার স্পেশাল ভাবে তওবা করে
নিতে হবে যেন গুনাহমুক্ত একটি ফ্রেশ আমলনামা আল্লাহর দরবারে পৌঁছায়।
কোন মন্তব্য নেই