তাহাজ্জুদ নামাজের ১০০% সহিহ নিয়ম। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত বরকত। তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাত।

 

তাহাজ্জুদের আযব ফজিলত নতুন নিয়ম সব আশা পুরণ হবে ভাগ্য বদলে যাবে

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম



প্রিয় বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম যুগে যুগে মানুষ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আসছে, এই নামাজের এমন বিষ্ময়কর ফজিলত আছে যা আজকালকার বেশীরভাগ মানুষ জানেনা, অধিকাংশ মানুষ তাহাজ্জুদ এর রাকাতে ভুল করে, নামাজের তরিকায় ভুল করে, রাকাত করে পড়বে নাকি রাকাত পড়বে তাতে ভুল করে, এবং ৯৯% মানুষ তাহাজ্জুদের যে দোয়া তা জানেনা আজ আমি এই ভিডিও জুড়ে তাহাজ্জুদ পড়ার সঠিক নিয়ম, তাহাজ্জুদের সঠিক রাকাত, তাহাজ্জুদ কখন পড়তে হবে, তাহাজ্জুদের পর কি দোয়া করতে হবে কোন দোয়া পড়লে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে কপাল খুলে যাবে কোন নিয়মে পড়লে আপনার সকল দোয়া কবুল হবে কোন নিয়মে পড়লে আপনার মনের সব আশা পুরণ হবে বিস্তারিত জানতে হলে আজকের ভিডিওটি শেষ পযন্ত দেখার অনুরোধ হইল

প্রিয় বন্ধুরা মনে রাখবেন, সকল নফল নামাজের তাজ সালতানাত হল তাহাজ্জুদ নামাজ

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا

তাহাজ্জুদ উচ্চ পর্যায়ের আমল

বুখারী শরীফের হাদিস হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) স্বপ্ন দেখলেন - তখন লোকেরা স্বপ্ন দেখে তা রাসুলুল্লাহ () কে শুনাতেন আর রাসুলে করিম () তাবির করতেন তারা কোন ভুল স্বপ্ন শুনাতে পারতেন না কারন তিনি অহির মাধ্যমে সব জানতে পারতেন

ইবনে উমর যেহেতু নওজোয়ান ছিলেন তাই তিনিও আকাংখা করতেন তিনি যেন ভালো ভালো স্বপ্ন দেখেন আর সে স্বপ্ন হুজুরের সমীপে বয়ান করবেন তিনি নিজের আকাংখা অনুযায়ী একদিন একটি স্বপ্ন দেখলেন জন লোক তাকে পাকড়াও করে নিয়ে গেলেন এবং তারা তাকে একটি আগুনের কুয়াতে নিক্ষেপ করল তিনি খুবই ভয় পেয়ে গেলেন আর খুবই চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলেন যে আমাকে বাঁচাও তিনি হঠাৎ দেখতে পেলেন সে কুয়ারমুখ বন্ধ ফলে যারা কুয়াতে নিক্ষেপ করছেন তাদের অসুবিধা হচ্ছে এমন সময় হঠাৎ করে একজন ৩য় লোককে দেখা গেল আর সে ৩য় ব্যক্তি বললেন তুমি ভয় করিওনা আর তিনি ওদের প্রশ্ন করছেন একে কেন জাহান্নামে নিক্ষেপ করছ? তাকে ছেড়ে দাও ফলে তারা তাকে ছেড়ে দিল এতটুকু দেখে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল তিনি সকালে নিজের বোন হাফসাকে এই স্বপ্নের কথা বললেন হাফসা হলেন উম্মুল মুমিনিন হযরত হাফসা নবী করিম () কে বললেন আমার ভাই আবদুল্লাহ স্বপ্ন দেখেছে সে স্বপ্ন শুনার পর হুজুর () এক আযব কথা বললেন (নেমার রাজুলু আবদুল্লাহি, লাও কা-মা লাইলান,) আবদুল্লাহ অনেক উত্তম একজন লোক, কাশ সে যদি রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে?

রাতের এবাদতের স্বল্পতার কারনে ধরনের পেরেশানি আসে এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যদি একজন লোক সকল এবাদত করে আর রাতে উঠে তাহাজ্জুদ না পড়ে তাহলে তার জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার সম্ভাবনা আছে

আপনার কি ওজর  আছে? আপনি রাতে ঘুমান আর সকালে জাগ্রত হন? অথচ আজ থেকে ৫০/১০০ বছর আগেও মানুষ অজু করার জন্য অনেক দুরে পুকুরে নদীতে চলে যেত, মুফতি জারওয়ালী বলেন আমি এমন বুযুগকে জানি যার বয়স ১০৪ বছর ছিল তিনি আমাদের এলাকায় মসজিদে ওয়াজ করতে আসলেন, রাতে যে সব লোক তাঁর খেদমত করেছিল তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তিনি রাতে অজু করার জন্য নদীতে যাবেন- তাকে আমরা ২/৩ মাইল দুরে নদীর কিনারায় নিয়ে গেলাম। সে যুগে বতমানের মত এত সহজ পাইপ সিস্টেম এটাচ বাথরুমে সিস্টেম ছিলনা। আপনারা একটু ৫০/৬০ বছর পূর্বের নকশা চিন্তা করে দেখুন। আপনি আন্দাজ করতে পারবেন আপনার ঘরে এটাচ বাথরুম আছে সুন্দর পানির পাইপ লাইনের সিস্টেম আছে, কোন কিছুর কমতি নাই। কিন্তু আফসুসের বিষয় হল এত সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও আপনার রাতসমুহ নাউজুবিল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহ অমুসলিমদের রাতের মত কেটে যায়।

প্রিয় ভাই রাতে উঠে যান- আল্লাহ বলেন

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا

রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ুন এটা হল নফল তবে অনেক বড় কাজের নফল এটি। এর বদলায় আমি রব আপনাকে মকামে মাহমুদ দান করব।

পয়গাম্বরের তাহাজ্জুদের বদৌলতে মকামে মাহমুদ অর্জীত হল। আর উম্মত তাহাজ্জুদ পড়লে হুজুর (দ) এর শাফায়াত নসিব হবে।

আর কোন এমন আমল নাই যার জন্য মকামে মাহমুদের পুরস্কার ঘোষনা আছে। আর যদি উম্মত তাহাজ্জুদ পড়ে তাদের জন্য আরো সুসংবাদ

وَقُل رَّبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَل لِّي مِن لَّدُنكَ سُلْطَانًا نَّصِيرًا

বলুনঃ হে পালনকর্তা! আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে এবং আমাকে বের করুন সত্যরূপে এবং দান করুন আমাকে নিজের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য। [সুরা বনী-ইসরাঈল - ১৭:৮০]


وَقُلْ جَاء الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [সুরা বনী-ইসরাঈল - ১৭:৮১]

এর মাঝেও তাহাজ্জুদের দখল আছে, তাহাজ্জুদ গুজার বান্দার দোয়া দ্রুত কবুল হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত করে পড়তে হয়? ৪ রাকাত করে নাকি ২ রাকাত করে?

জনাব নবী করিম (দ) যখন এশারের নামাজ পড়ে ঘরে তশরীফ নিয়ে যেতেন তিনি ৮ রাকাত পড়তেন আম্মা জান আয়শা (রা) ফরমান তিনি প্রথমে ৪ রাকাত তারপর আবার ৪ রাকাত একত্রে পড়তেন। অর্থ্যাৎ ৪ রাকাতের নিয়ত করতেন। আম্মাজান বলেন তিনি কত সুন্দর ও দীঘ করে সে নামাজ পড়তেন তা বলার মত না

মুহাদ্দিসিন কেরাম বলেন নফল ২ /২ রাকাত পড়া আপযল, যেমন তারাবী ২/২ করে পড়া হয়, আওয়াবিন ২/২ রাকাত করে পড়া হয়,

মুফতি জরওয়ালী বলেন আমি ১৯৮৪ সালে আমি আমার উস্তাদের সাথে জেলখানায় ছিলাম, আমি জেল খানায় ২/২ রাকাত করে এশারের পর নামাজ পড়তাম তখন আমার উস্তাদ বললেন তুমি কি ২/২ করে পড়? আমি বললাম জি হযরত। তখন আমার উস্তাদ আমাকে বললেন তুমি ৪/৪ করে পড়, তখন আমি উনার কথা মত ৪/৪ রাকাত করে পড়া শুরু করলাম তাতে এর মজা ও এতে যে শান্তি তা বেড়ে গেল।আমি হযরতকে এ কথা বললে তিনি খুব খুশি হলেন।

তবে এটা জানা যায়নি যে এ ৮ রাকাতে রাসুলে আকরাম (দ) কোন সুরা পড়তেন?

আর আমাদের প্রিয় নবী যে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন ৯৯% রেওয়ায়েত হল তা ১২ রাকাত।আর এই তাহাজ্জুদ হুজুর (দ) রাতের শেষাংশে পড়তেন। প্রথমাংশে যে ৮ রাকাত পড়তেন তা হল কিয়ামুল লাইল।

সে জন্য ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ) ও বলেন তাহাজ্জুদ ১২ রাকাত। (ফাছাল্লা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা আওতারা) ৬ বার ২/২ রাকাত করে পড়তেন এবং সবশেষে বিতির পড়তেন। আর বিতির নামাজ এর পর আর কোন নফল নামাজ ছাবেত নাই। এরপর হুজুর (দ) ২ রাকাত ফজরের সুন্নত পড়তেন।

সুতরাং এই কথা সুস্পষ্ট যে কিয়ামুল লাইল হল ৮ রাকাত আর তা হল রাতের প্রথম অংশে। আর কিয়ামুল লাইল হল ২/২ রাকাত করে যেমন জমহুর বলেন, আর ৪/৪ করে পড়া যায় যেমন আহনাফ বলেন। আর তাহাজ্জুদ নিশ্চিতভাবে ২/২ রাকাত করে পড়তে হবে। এবং ১২ রাকাত পড়তে হবে। আর কিয়ামুল লাইল ও তাহাজ্জুদ পড়ুয়ারা বিতির নামাজ সবার শেষে পড়বেন। যেমন পয়গাম্বর হকুম দিয়েছেন তোমার শেষ নামাজ যেন বিতির হয়।

মুফতি জারওয়ালী (রহ) বলেন যারা তাহাজ্জুদ ১২ রাকাতের কম পড়ে তারা মুলত নিজের ইচ্ছেমত পড়ে। যারা বুখারী পড়েন তারা একটু লজ্জা করা উচিত, কারন এই রেওয়ায়েত বুখারীতে ১০০ জায়গায় আছে। (ফাছাল্লা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা রাকাআতাইন, ছুম্মা আওতারা)

সে জন্য আজ থেকে তাহাজ্জুদ ২/২ রাকাত করে রাতের শেষাংশে মোট ১২ রাকাত পড়বেন এবং সবশেষে বিতির পড়বেন এর পর হুজুর (দ) একটি দোয়া পড়তেন।

হুজুর (দ) তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উঠে ১টি দোয়া পড়তেন বুখারী শরীফের ৬৩১৭ নং হাদিসে দোয়াটি আছে যা অত্যন্ত বরকতময় দোয়া। যারা তাহাজ্জুদ পড়েন তাদের উচিত দোয়াটি পড়া মুখস্থ না পারলে দেখে দেখে পড়বেন

‏ "‏ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ، وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ ـ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ ‏"‏‏.‏

ইয়া আল্লাহ! সন্মুখে প্রশংসা আপনারই জন্য, আপনি রক্ষক আসমান ও যমীনের এবং যা কিছু এগুলোর মধ্যে আছে, আপনিই তাদের নূর। আর যাবতীয় প্রশংসা শুধু আপনারই। আসমান যমীন এবং এ দুএর মধ্যে যা আছে, এসব কিছুকে সুদৃঢ় ও কায়েম রাখার একমাত্র মালিক আপনই। আর সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আপনারই। আপনিই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার কথা সত্য, আখিরাতে আপনার সাক্ষাত লাভ করা সত্য, বেহেশত সত্য, দোযখ সত্য, কিয়ামত সত্য, পয়গাম্বরগন সত্য, এবং মুহাম্মদ সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনারই কাছে আত্মসমর্পন করেছি। আমি একমাত্র আপনারই উপর ভরসা রাখি। একমাত্র আপনারই উপর ঈমান এনেছি। আপনারই দিকে ফিরে চলছি। শত্রুদের সাথে আপনারই খাতিরে শত্রুতা করিআপনারই নিকট বিচার চাই। অতএব আমার আগের পরের এবং লুকায়িত প্রকাশ্য গুনাহ আপনি মাফ করে দিন। আপনিই কাউকে এগিয়ে দাতা, আর কাউকে পিছিয়ে দাতা আপনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই।

যেহেতু হাদীস সমুহের মধ্যে প্রিয় নবীর তাহাজ্জুদের সঠিক তরিকা আছে উম্মত হিসেবে যদি আমরা ১০০% বিশুদ্ধ তরিকাটি ফলো করি তাই আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.