সুরা মুলক এর ফজিলত ও আমল সুরা মুলক এর নতুন ওজিফা।
সুরা মুলক এর নতুন
ওজিফা। সুরা মুলক এর ফজিলত ও আমল
যারা প্রতি রাতে সুরা মুলক পড়েন তাদের জন্য সুখবর, আজ সুরা মুলক সম্পকে এমন ওজিফা বলব যা আপনার জন্য নতুন হবে, আশা করি যারা আমল করেন টুক টাক আমল করার চেষ্টা করেন আজকের টপিকসটি তাদের জন্য খুবই উপকারী হবে।
সুরা মুলক এর আয়াত সংখ্যা ৩০, পূর্বের কোন কোন বুযুর্গানে দ্বিন প্রতি মাসের শুরুতে এই ৩০ আয়াত বিশিষ্ট সুরাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পড়তেন, যাতে ৩০ আয়াতের বরকতে ৩০ দিন সুন্দর ও নিরাপদে কাটে।
এই সুরাটি আমাদের প্রিয় নবী করিম (দ) নিয়মিত রাতে ঘুমানের আগে আলিফ লাম মিম সিজদা ও সুরা মুলক তেলাওয়াত করতেন।
আল্লামা আলুসি তার তফসিরের কিতাব রুহুল মাআনিতে লিখেছেন - আমি ৯ বছর বয়সে জানতে পারি যে রাতে ঘুমানোর আগে এই সুরাটি পড়তে হয় সেদিন থেকে আজ আমি বৃদ্ধ অবস্থায় উপনিত হয়েছি কোনদিন আমি রাতে এই সুরা মুলক পড়া মিস করি নাই।
হুজুর পাক (দ) এর তামান্না ছিল যে তিনি চাইতেন এই সুরা যেন প্রত্যেক উম্মত মুখস্থ করে। যাদের ৩০ আয়াতের এই সুরা মুখস্থ আছ তারা মুলত মহানবীর মনের তামান্না পুরণ করেছেন, আর যাদের মুখস্ত নাই তারা যদি লেগে থাকেন মাত্র ১ মাসের মধ্যেই ইনশা আল্লাহ মুখস্থ হয়ে যাবে। প্রতিদিন ১ আয়াত করে মুখস্থ করলে ১ মাসে এই সুরাটি মুখস্থ হয়ে যাবে।
এই সুরাটি হাশরের মাঠে এই সুরা তেলাওয়াতকারীর পক্ষে ওকালতি করবে,
আমলকারীকে জান্নাতে না
নেয়া পর্যন্ত তার পক্ষে লড়তে থাকবে। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন-
কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, যা তার আমলকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করানো
পর্যন্ত তার পক্ষে ওকালতি করেছে, তার পক্ষে লড়েছে। তা হল, সূরা তাবারাকা (সূরামুলক)।
-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৩৬৫৪; আলমুজামুস সগীর, তবারানী, হাদীস ৪৯০;
প্রিয় বন্ধুরা আপনারা জেনে অবাক হবেন এই সুরা মুলক কবর আযাব থেকেও এর তেলাওয়াতকারীকে রক্ষা করবে
অথচ এই কবর আযাব থেকে স্বয়ং নবীজি পযন্ত পানাহ চাইতেন।
কবরের আযাব অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষ ছাড়া
অন্যান্য প্রাণী কবরের আযাব বুঝতে পারে, শুনতে
পারে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষ দাফন করতে ভয় পাবে; নইলে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, তিনি যেন তোমাদের কবরের আযাব শোনান। নবীজী আমাদেরকে কবরের
আযাব থেকে পানাহ চাইতে বলেছেন। যায়েদ ইবনে ছাবেত রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
تَعَوّذُوا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
তোমরা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয়
প্রার্থনা কর। -সহীহ
মুসলিম, হাদীস ২৮৬৭
নবীজী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। আয়েশা রা.
বলেন, একবার এক ইহুদী নারী তার
কাছে এল। সে কবরের আযাব প্রসঙ্গে আলোচনা করল এবং বলল, আল্লাহ আপনাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। নবীজী এলে
আয়েশা রা. তাঁকে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। নবীজী উত্তরে বললেন, হাঁ, কবরের আযাব
(সত্য)।
আয়েশা রা. বলেন-
فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بَعْدُ صَلّى صَلاَةً إِلّا تَعَوّذَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ.
এর পর থেকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, প্রতি
নামাযের পরই তিনি কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। -সহীহ
বুখারী, হাদীস ১৩৭২
নবীজী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী ভাষায় কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন তাও
বর্ণিত হয়েছে হাদীস শরীফে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআয় বলতেন-
اللّهُمّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ النّارِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَحْيَا وَالمَمَاتِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدّجّالِ.
হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয়
প্রার্থনা করছি। জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আরো আশ্রয়
প্রার্থনা করছি, জীবন-মৃত্যু ও
দাজ্জালের ফিতনা থেকে। -সহীহ
বুখারী, হাদীস ১৩৭৭
কবরের
আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার সাথে সাথে একটি আমলও আমাদেরকে কবরের আযাব
থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে। তা হল, সূরা
মুলকের আমল। এ সূরা তার আমলকারীর জন্য কবরের আযাবের সামনে প্রতিবন্ধক হয়ে
দাঁড়াবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-
(সূরা মুলকের আমলকারী) ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হবে, (আযাবের)
ফিরিশতারা তার পায়ের দিক থেকে আসবে; তখন পা
বলবে, এদিক দিয়ে তোমরা তার
পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। সে (আমার উপর ভর করে) নামাযে দাঁড়িয়ে সূরা মুলক
তিলাওয়াত করত। এরপর বুক অথবা পেটের দিক থেকে এলে তা বলবে, এদিক থেকেও তোমরা তাকে কিছু করতে পারবে না; সে তো সূরা মুলক তিলাওয়াত করত (আমার মাঝে সূরা মুলক ধারণ
করত)। মাথার দিক থেকে এলে বলবে, আমার দিক
থেকেও তোমাদের তার পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব নয়; সে তো সূরা মুলক তিলাওয়াত করত (আমার মাঝে সূরা মুলক সংরক্ষণ
করত)।
ইবনে মাসউদ রা. বলেন, এ সূরা ‘মানিআহ’-বাধা দানকারী; ব্যক্তি থেকে কবরের আযাব রুখে দেয়।... যে ব্যক্তি রাতে এটি
তিলাওয়াত করল সে অনেক ভালো ও বড় কাজ করল। -মুসতাদরাকে
হাকেম, হাদীস ৩৮৩৯; শুআবুল ঈমান বায়হাকী, হাদীস ২২৭৯
অপর বননায় আছে ফেরেশতা যখন সুরা মুলক তেলাওয়াত কারীকে আযাব দেয়ার জন্য আসবে তখন সুরা মুলক একটি পাখির মত আসবে আর তার পাখাসমুহ দিয়ে তাকে ঢেকে নিবে, যেমন পিতা সন্তানকে মারতে চাইলে মা মাঝে চলে আসে ঠিক মায়ের মত করে সুরা মুলক তার তেলাওয়াতকারীকে ফেরেশতাদের আযাব থেকে রক্ষা করবে।
সে জন্য আজ থেকে নিয়ত করুন সুরা মুলক যাদের মুখস্থা আছে তারা এশারের পর এই সুরাটি পড়ে নিবেন আর যাদের মুখস্থ নাই তারা প্রতিদিন দেখে দেখে পড়বেন তাহলে দেখবেন এক সময় মুখস্থ হয়ে গেছে।
কোন মন্তব্য নেই