সুরা তাওবার শেষ ২ আয়াতের আযব ফজিলত, হযরত শিবলি (রহ) এর ঘটনা
সুরা তাওবার শেষ ২ আয়াতের আযব ফজিলত, হযরত শিবলি (রহ) এর ঘটনা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
এ দুটি আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত যে বিষয়বস্তু তুলে
ধরেছেন, এর প্রথম যে
আয়াতটি
অর্থ্যাৎ ১২৮ নং আয়াত
لَقَدۡ
جَآءَکُمۡ
رَسُوۡلٌ
مِّنۡ
اَنۡفُسِکُمۡ
عَزِیۡزٌ
عَلَیۡہِ
مَا
عَنِتُّمۡ
حَرِیۡصٌ
عَلَیۡکُمۡ
بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ
رَءُوۡفٌ
رَّحِیۡمٌ
এ আয়াতটির সম্পর্ক হুজুর পাক (দ) এর জাতে আকদসের সাথে আর ২য়
আয়াত ১২৯ নং আয়াত
فَاِنۡ
تَوَلَّوۡا
فَقُلۡ
حَسۡبِیَ
اللّٰہُ
۫٭ۖ
لَاۤ
اِلٰہَ
اِلَّا
ہُوَ
ؕ
عَلَیۡہِ
تَوَکَّلۡتُ
وَ
ہُوَ
رَبُّ
الۡعَرۡشِ
الۡعَظِیۡمِ
এই ১২৯ নং আয়াতের সম্পর্ক আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের সাথে।
আর এই ২টি আয়াতের সম্পর্ক বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুজায়মা বিন সাবিত
(রা) এর সাথে
প্রথমে জানা দরকার হযরত হুজায়মা (রা) কে?
হযরত সৈয়্যদিনা হুজায়মা বিন সাবিত আনসারি (রা) সে
সৌভাগ্যবান সাহাবী
যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ৩টি স্পেশাল সম্মানে সম্মানিত করেছেন
প্রথম সম্মান হল একদিন হুজায়মা (রা) হুজুর
(দ) এর দরবারে এসে আরজ করল এয়া রাসুলাল্লাহ আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি
আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি নামাজ পড়ছি, আর নামাজের সিজদায় যখন যাচ্ছি আমি আপনার
কপাল মোবারকে সিজদা করছি
নবী করিম (দ) সাথে সাথে শুয়ে গেলেন আর হুজায়মাকে বললেন
হুজায়মা তুমি যা স্বপ্ন দেখেছ তা বাস্তবায়ন কর।
অতঃপর হযরত হুজায়মা (রা) হুজুর (দ) এর কপালে সিজদা করলেন
এবং চুমু খেলেন।
সুতরাং হুজায়মা (রা) সে সাহাবী যিনি হুজুর (দ) এর কপাল
মোবারকে সিজদা করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন
হযরত হুযায়মা (রা) এর ২য় নেয়ামত হল তাঁর একজনের সাক্ষিকে ২
জনের সাক্ষির সমান বলে নবীজি ঘোষনা করেছেন
যেখানে ২জন সাক্ষির প্রয়োজন যেমন বিয়েতে ২ জন সাক্ষি লাগে কিন্তু
হযরত হুজায়মার এমন বৈশিস্ট ছিল তিনি ১ জন সাক্ষি থাকলেই যথেষ্ট।
হযরত হুজায়মা (রা) এর ৩য় সম্মান হল যখন হযরত আবু বকর
সিদ্দিক (রা) কুরআন
সংকলনের সিদ্ধান্ত নিলেন
নিয়ম করলেন প্রত্যেক আয়াত বা নুসখার জন্য ২ জন সাহাবীর
সাক্ষি লাগবে,
এভাবে হযরত অনেক মেহনতের পর পবিত্র কুরআন এর সবগুলি আয়াত
সুরা ২জন সাক্ষির সাক্ষ্য সাপেক্ষে একত্রিত করা হল
কিন্তু যখন সুরা তাওবার ১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত এর কপি হযরত
হুযায়মা (রা) নিয়ে আসলেন
হযরত হুযায়মার এই আয়াতের পক্ষে ২য় আরেকজন সাক্ষি পাওয়া যাচ্ছিলনা
তখন হযরত আবু বকর (রা) প্রিয় নবীর সে বাণী বয়ান করে বলেন
আমি আল্লাহর রাসুল (দ) কে বলতে শুনেছি
হযরত হুযায়মা (রা) যেখানে একা সাক্ষি দিবে তার সে সাক্ষি দুইজনের
সাক্ষির বরাবর হবে। সুবহানাল্লাহ
অতএব সুরা তাওবার ১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত সে দুটি আয়াত যা
একমাত্র হযরত হুজায়মা (রা) এর একক সাক্ষির ভিত্তিতে সুরা তাওবাতে শামিল করা হয়েছে
এখন আমি আপনাদেরকে এই ২টি আয়াতের একটি আমল বলব আপনারা জিন্দেগীতে
এই আমল ছাড়বেন না
হযরত আবু বকর মুজাহিদ (রহ) অনেক বড় অলি আল্লাহ ছিলেন, তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদি ও শিবলি (রহ) এর
যুগের অলি ছিলেন
হযরত শিবলি (রহ) হলেন হযরত জুনায়েদ বুগদাদির মুরিদ ছিলেন
একদিন হযরত শিবলি (রহ) হযরত আবু বকর মুজাহিদ (রহ) এর মসজিদে
গেলেন
আবু বকর তখন হাদিসের দরস দিচ্ছিলেন, কিন্তু
যখনই তিনি শিবলি (রহ) কে দেখলেন
তিনি পাঠদান বন্ধ করে শিবলি (রহ) এর জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন এবং
শিবলিকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তার কপালে চুমু খেলেন
এরপর আবু বকর আবার পাঠদান আরম্ভ করলেন, আর শিবলি (রহ) নামাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন
এখন ছাত্ররা আবু বকরকে প্রশ্ন করলেন শায়খ আপনি যখন কুরআন হাদিস পড়ান
তখন যত বড় মাপের লোক আসুক না কেন তাকে গুরুত্ব দেন না
কিন্তু আজকে একজন সাধারন দরবেশ এসেছে তার সম্মানার্থে আপনি পাঠদান
বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেলেন কারন কি?
তখন আবু বকর মুজাহিদ (রহ) বললেন, আমি আজ সে কাজটি করেছি যে কাজটি কামলিওয়ালা
নবী করেছেন,
গত রাতে আমি স্বপ্ন দেখলাম, কামলিওয়ালা নবীর মাহফিল চলছে, এমন মাহফিলে শিবলি যখন প্রবেশ করল , আল্লাহর রাসুল
(দ)
সকলকে ছেড়ে শিবলিকে অভ্যর্থনা জানালেন। তার কপালে চুমু
দিলেন, আমি সে নবীর
উম্মত হয়ে শিবলিকে অভ্যর্থনা না জানিয়ে কিভাবে বসে থাকব?
আমি আল্লাহর রাসুল (দ) কে সুয়াল করলাম এয়া রাসুলাল্লাহ
শিবলির প্রতি আপনি এত বড় এহসান কেন করলেন?
তখন আল্লাহর প্রিয় হাবিব (দ) জবাব দিলেন শিবলি যখনই নামাজ
পড়ে নামাজের পর সে পাঠ করে
লাক্বাদ জা-আকুম রাসুলুম মিন আনফুসিকুম আযীযুন আলাইহি মা-আনিত্তুম
হারিসুন আলাইকুম বিল মুমিনীনা রাউফুর রাহীম ।
ফা ইং তাওয়াল্লাও ফাক্বুল হাসবিয়াল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা-
হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কাল্তু ওয়া হুয়া রাব্বুল আ’রশিল
আজি-মি।
এরপর সে তিন বার পাঠ করে (ছাল্লাল্লাহু আলাইকা এয়া
মুহাম্মদ)
অতএব আপনিও প্রত্যেক ফরয নামাজের পর সুরা তওবার ১২৮ ও ১২৯
নং আয়াত পাঠ করবেন এবং ৩ বার দরুদ শরীফ পড়বেন
আপনি যদি এই আমলটি নিয়মিত করেন আর কামলিওয়ালা নবী যদি আপনার
উপর রাজি হয়ে যান তাহলে
যার উপর নবী রাজি তার উপর আল্লাহও রাজি, ফলে আপনার আর কোন পেরেশানি, কোন সমস্যা
কোন দুঃখ, কোন অভাব, কোন টেনশন, কোন বিপদ
কি আর বাকী থাকবে?
এই আমলের আমেল হতে মাত্র ৭দিন লাগে, আপনি পরপর ৭দিন প্রত্যেক ফরয নামাজের পর এই
আয়াত ২টি
৭ বার করে পড়বেন এবং ৩ বার দরুদ শরীফ পড়বেন, এভাবে ৭ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ৮ম দিন থেকে
১ বার আয়াত পড়বেন ৩ বার দরুদ পড়বেন
তাহলে আপনি এই ওজিফাটির আমেল হয়ে যেতে পারবেন।
আর আমেল হলে আপনি নিজেও এর উপকার পাবেন এবং অন্যকেও এর
দ্বারা ফায়দা পৌঁছাতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই