হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর জীবনের সবচেয়ে বড় বড় ৫টি বরকতের দোয়া ও ওজিফা
হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর জীবনের সবচেয়ে
বড় বড় ৫টি বরকতের দোয়া ও ওজিফা
আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আজকের ওজিফাটি খুবই দামী। কারন প্রতিটি ওজিফা সহি বুখারী ও মুসলিম শরীফ এর হাদীস থেকে বয়ান করব ইনশা আল্লাহ তাই প্রত্যেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই শুনবেন। তাহলে নিজেও দামী হতে পারবেন নিজের পরিবারকেও দামী বানাতে পারবেন। খুব মনযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত শুনতে হবে তাহলে আপনি ওজিফাগুলি বুঝতে পারবেন, অর্ধেক শুনলে ওজিফা বুঝতে পারবেন না।
সহি বুখারী শরীরে ৭০৯৪ নং হাদিসের বর্ণনা, ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি (দোয়া করে) বললেনঃ اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَأْمِنَا اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বারকাত দাও। হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য আমাদের ইয়ামানে বরকত দাও। লোকেরা বলল, আমাদের নজদের জন্যও দোয়া করুন। নবী করিম (দ) বললেন, اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَأْمِنَا اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي يَمَنِنَا হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য বরকত দাও আমাদের ইয়ামানে বরকত দাও। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নজদের জন্যও দোয়া করুন। (বর্ণনাকারী বলেন) তৃতীয়বারে নবীজি ফরমালেন সেখানে তো প্রচুর পরিমাণে ভূমিকম্প হবে আর সেখানে ফিতনা হবে। আর সেখান হতে শয়তানের শিং উদিত হবে।
আবু হুরায়রা (রা) ইয়েমেন দেশের লোক ছিলেন, আমাদের নবীজি ইয়েমেনের জন্য দোয়া করেছেন ফলে আবু হুরায়রায় (রা) ইয়েমেনবাসী হিসেবে সে দোয়ার অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন।
এবার আসুন আবু হুরায়রার খাদ্যের জন্য প্রিয় নবীর দোয়া-
তিরমিজি শরীফের ৩৮৩৯ নং হাদিস আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি কয়েকটি খেজুরসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ খেজুরগুলোতে বারাকাত হওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট দুআ করুন। তিনি খেজুরগুলো জড়ো করলেন, তারপর আমার জন্য খেজুরগুলোয় বারাকাত হওয়ার দু’আ করলেন, তারপর আমাকে বললেনঃ " خُذْهُنَّ وَاجْعَلْهُنَّ فِي مِزْوَدِكَ هَذَا أَوْ فِي هَذَا الْمِزْوَدِ كُلَّمَا أَرَدْتَ أَنْ تَأْخُذَ مِنْهُ شَيْئًا فَأَدْخِلْ فِيهِ يَدَكَ فَخُذْهُ وَلاَ تَنْثُرْهُ نَثْرًا " . এগুলো নাও এবং তোমার এই থলেতে রাখ। আর যখনই তা হতে তুমি কিছু খেজুর নিতে চাও, সে সময় থলের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিবে এবং কখনও থলেটি ঝেড়ে ফেল না। এরপর আমি উক্ত থলে হতে এত এত ওয়াসাক (এক ওয়াসাক সমান ৫ মনের সমান) খেজুর আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় দান করেছি। আর এ হতে আমরা নিজেরাও খেতাম এবং অন্যকেও খাওয়াতাম। থলেটি আমার কোমর হতে কখনো আলাদা হয়নি। অবশেষে উসমান (রাযিঃ) যে দিন শাহাদাত বরণ করেন সেদিন আমার (কোমর) হতে থলেটি পড়ে যায়।
ছোট্ট একটা খেজুরের থলে। সেখান থেকে আবু হুরায়রা রা. নেন আর খান; এক মুঠ, দুই মুঠ, দশ মুঠ। এক কেজি, দুই কেজি, দশ কেজি; ৫ মন, ১০ মন, ২০মন ছোট্ট সেই থলে থেকে আবু হুরায়রা রা. নিতেই থাকেন; নিজে খান, অন্যদের খাওয়ান- তবু ফুরোয় না থলের খেজুর। এই বরকতময় থলেটি সেদিন হারিয়ে গেল যেদিন হযরত উসমান (রা) শহিদ হলেন, এখানে একটা বড় ধরনের বার্তা আমাদের জন্য রয়েছে তা হল যখন মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করে মুসলমান মুসলমান রক্তপাত করে তখন আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত উঠে যায়।
মুসলিম শরিফের ৬২৯০ নং হাদিস আবূ কাসীর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) রিওয়ায়াত করেছেন যে, আমি আমার মাকে ইসলামের দিকে আহবান করতাম, তখন তিনি মুশরিকা ছিলেন। একদা আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালে তখন তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে আমাকে এমন কথা শুনালেন, যা আমার নিকট অনেক অপছন্দনীয় মনে হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম আর তিনি আমার দা’ওয়াত অস্বীকার করে আসছেন। তারপর আমি তাকে আজ দা’ওয়াত দেয়াতে তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে এমন কথা শুনালেন, যা আমি সর্বদাই অপছন্দ করি। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "হে আল্লাহ! আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করো।"
তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর কারণে আমি খুশী মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরে পৌছলাম তখন তার দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারপর তিনি বললেন, আবূ হুরাইরাহ্! একটু দাঁড়াও (থামো)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং শরীরে চাদর দিলেন। আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন, তারপর বাড়ীর দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন, “হে আবূ হুরাইরাহ্! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রসূল।”
তিনি বলেন, তখন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম। তারপর তার নিকট গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সুখবর শুনুন। আল্লাহ আপনার দু’আ কবুল করেছেন এবং আবূ হুরাইরার মাকে হিদায়াতপ্রাপ্ত করেছেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ও তার প্রশংসা করলেন। আর বললেন, উত্তম’। আবু হুরায়রা বলেন, তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করেন এবং তাদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ "হে আল্লাহ! তোমার এ বান্দা আবূ হুরাইরাকে এবং তার মাকে মু’মিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করে দাও এবং তাদের নিকটও মুমিন বান্দাদের প্রিয়পাত্র করে দাও।" তারপর এমন কোন মু’মিন বান্দা পয়দা হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে কিংবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালবাসেনি।
আবু হুরায়রা (রা) এর বর্ননাকৃত হাদিসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি, তিনি মাত্র ৩ বছর নবী করিম (দ) এর সাথে ছিলেন, তার এত অধিক পরিমাণ হাদিস বণনা দেখে খোদ সাহাবীরাও অবাক, কারন তাঁর মেধাশক্তির জন্যও নবী করিম (দ) দোয়া করেছেন যেমন
মুসলিম শরিফের ২৪৯২ নং হাদিস আ’রাজ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা বলছ যে, আবূ হুরাইরাহ্ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক হাদীস রিওয়ায়াত করছে। আর আল্লাহই হিসাব গ্রহণকারী। আমি ছিলাম একজন নিরীহ লোক। আমি সর্বদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেবায় থাকতাম (খেয়ে না খেয়ে তার সাহচর্যে থাকতাম)। তখন মুহাজিরগণ বাজারে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতেন এবং আনসারগণ তাদের ধনসম্পদের সংরক্ষণ ও হিফাযাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন। একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে লোক তার বস্ত্রের আঁচল বিছিয়ে দিবে সে আমার নিকট হতে যা কিছু শুনবে তা ভুলবে না। আমি আমার কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে দিলাম এবং তিনি হাদীস রিওয়ায়াত করলেন। তারপর আমি সে বস্ত্রটা আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম। তখন হতে আমি তার কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি তার কিছুই ভুলে যাইনি।
বুখারী শরীফের ১১৯ নং হাদিসে আছে আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বললেনঃ তোমার চাদর মেলে ধর। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দু’হাত খাবল করে তাতে কিছু ঢেলে দেয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। অতঃপর আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি
সুতরাং আবু হুরায়রার শহরের জন্যও নবীজীর (দ) বরকতের দোয়া আছে, আবু হুরায়রার পরিবারের জন্যও নবীজির (দ) বরকতের দোয়া আছে, আবু হুরায়রার খাদ্যের মধ্যেও নবীজি (দ) এর বরকতের দোয়া আছে, আবু হুরায়রার জ্ঞানের মধ্যেও নবীজি (দ) এর বরকতের দোয়া আছে। আবু হুরায়রা ও তার মাকে মহব্বত করার জন্যও নবীজি (দ) এর দোয়া আছে,
অতএব তিনি তার জীবন তার হায়াত তার রিজিক তার জ্ঞান সবই বরকতময় মুলত প্রিয় নবীজি (দ) এর দোয়ার কারনে। আমাদেরও কিন্তু নবীজির দোয়া নবীজির ভালোবাসা প্রাপ্তির সুযোগ আছে তা হল আবু হুরায়রাকে ভালবাসার মাধ্যমে, সাহাবীদের ভালবাসার মাধ্যমে, নবীজির হাদীস মুখস্থ করার মাধ্যমে, নবীজির শরীয়তকে ভালোবাসার মাধ্যমে, নবীজির যে সব ওয়ারিশ তথা হক্কানি আলেম উলামা আছেন তাদেরকে অন্তর থেকে ভালোবাসার মাধ্যমে, তাদের ওয়াজ নিসহত শুনে সে মোতাবেক আমল করার মাধ্যমে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও সে রকম বরকত দিয়ে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন
কোন মন্তব্য নেই