যাদের ঘরে বিপদ আপদ লেগেই থাকে। বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া। বিপদ থেকে বাঁচার আমল

 

যাদের ঘরে বিপদ আপদ লেগেই থাকে

অনেকের মুখে শুনা যায় ঘরে সব সময় বিপদ বালা মসিবত লেগেই আছে, একটার পর একটা বিপদ। যাদের সাথে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাদের ব্যপারে নবী করিম () এরশাদ করেন তিরমিজি শরীফের ২৩৯৯ নং হাদিসের বননা

نْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَا يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ ‏"

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্ তাআলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।

এখন যদি এমন বিপদের কথা আপনি লোকজনকে বলে বেড়ান তাহলে তাতে আপনার কোন লাভ হবেনা, বরং আপনি যদি একটু ধৈর্য্য ধারন করেন তাহলে মৃত্যুর পর যখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবেন তখন আপনি গুনাহমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। মুসলিম শরীফের ৬৪৬২ নং হাদিস

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَأَبِي، هُرَيْرَةَ أَنَّهُمَا سَمِعَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ مَا يُصِيبُ الْمُؤْمِنَ مِنْ وَصَبٍ وَلاَ نَصَبٍ وَلاَ سَقَمٍ وَلاَ حَزَنٍ حَتَّى الْهَمِّ يُهَمُّهُ إِلاَّ كُفِّرَ بِهِ مِنْ سَيِّئَاتِهِ ‏"‏ ‏.

আবু সাঈদ আল খুদরী ও আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, কোন ঈমানদার ব্যক্তির এমন কোন ব্যথা-বেদনা, রোগ-ব্যাধি, দুঃখ-কষ্ট পৌছে না, এমনকি দুর্ভাবনা পর্যন্ত, যার প্রতিদানে তার কোন গুনাহ ক্ষমা করা হয় না।

যদি সামান্য টেনশনের কারনে গুনাহ মাফ হয় তাহলে যাদের বড় বড় বিপদ আসে, সন্তান মারা যায় তাদের জন্য কি আছে? যেমন- তিরমিজি শরীফের ১০২১ নং হাদিস

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার কোন সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ্ তাআলা তার ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় আল্লাহ্‌ তায়ালা প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। পুনরায় তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরী কর এবং তার নাম রাখ বাইতুল হামদবা প্রশংসালয়।

মুসলিম শরীফের ৭৩১০ নং হাদিসের বর্ণনা আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাদীস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তাত্থেকে আপনি আমাদের শিখাবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্রিত হবে। সে মোতাবেক তারা একত্রিত হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন। এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (মৃত্যুবরণ করে) তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নামের মাঝে পর্দা হয়ে যাবে। তাদের মাঝ থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দুজন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা কথাটি দুদুবার জিজ্ঞেস করলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দুজন হলেও, দুজন হলেও, দুজন হলেও।

নাসাই শরীফের ২০৯২.নং হাদিসের বর্ণনা হারুন ইবনু যায়দ অর্থাৎ আবূ যারকা মুআবিয়ার পিতা কুররা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বসতেন তখন সাহাবীদের অনেকে তার কাছে এসে বসতেন। তাদের মধ্যে এক জনের অল্প বয়স্ক একটি ছেলে ছিল। তিনি তার ছেলেটিকে পেছনের দিক থেকে নিজের সামনে এনে বসাতেন। অতঃপর ছেলেটি মৃত্যুবরণ করল। তিনি বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন। তার ছেলের কথা মনে করে তিনি মজলিসে উপস্থিত হতে পারতেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে না দেখে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমি অমুক ব্যক্তিকে কেন দেখছি না? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তার ছোট ছেলেটিকে দেখেছিলেন সে মৃত্যূবরণ করেছে।

পরে তার সাথে সাক্ষাৎ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার ছোট ছেলেটির কি হয়েছে? সে ব্যক্তি বললো, ছেলেটির মৃত্যূ হয়েছে। তখন তিনি তাকে সান্তনা দিয়ে ধৈর্যধারণ করতে বললেন। তারপর তিনি বললেন যে, হে অমুক! তোমার কাছে কোনটি পছন্দনীয়- তার দ্বারা তোমার পার্থিব জীবন সুখময় করা না কাল কিয়ামতে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে তাকে তথায়ই পাওয়া, তোমার সেখানে পৌছে তোমার জন্য দরজা খুলে দেওয়া? সে বললো, হে আল্লাহর রাসুল বরং সে আমার জান্নাতের দরজায় গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দেবে এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। তিনি বললেন, তাহলে তা-ই তোমার জন্য হবে।

তাহলে সন্তানের মৃত্যু সহ যখন আল্লাহ আমাদেরকে অন্যান্য পরীক্ষায় ফেলেন, আর এসব পরীক্ষায় যদি ধৈর্য্য ধারন করা যায় তার পুরস্কার হল আল্লাহর জান্নাত। আর সে কথাটা আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৫৫,১৫৬ ও ১৫৭ নং আয়াতে বয়ান করেছেন

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। [সুরা বাকারা - ২:১৫৫]

الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ

যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। [সুরা বাকারা - ২:১৫৬]

তাহলে এই ২ আয়াতে বলা হয়েছে বিপদে ২টি কাজ করতে হবে প্রথম কাজ হল সবর করা আর ২য় কাজ হল (ইন্না লিল্লাহি ওযাইন্না ইলাইহি রাজিউন) পড়া। এই ২টি কাজ করলে এর পুরস্কার কি হবে তা পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বয়ান করেছেন

أُولَـئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ

তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। [সুরা বাকারা - ২:১৫৭]

আল্লাহ তায়ালা আমাদের যাদের ঘরে যাদের জীবনে বেশী বেশী বিপদ আপদ আসে তখন তাতে সবর করার এবং কারো মৃত্যুতে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলার তৌফিক দান করুন, তাতে আমাদের জন্য থাকবে জান্নাতে বালাখানা, থাকবে জাহান্নামের মাঝে পর্দা, থাকবে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত, এবং গুনাহ মুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.